বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের মোকামে লেগেছে যেন ইলিশের মেলা। বিভিন্ন সাইজের ইলিশ উঠেছে মোকামে। তিনশ গ্রাম থেকে প্রায় দুই কেজি ওজনের ইলিশ মেলবে এখানে। সেই ইলিশকে কেন্দ্র করে বরিশালের সবচেয়ে বড় এই মাছের আড়তে ক্রেতাদের ভিড়। আড়তদার, মৎস্য শ্রমিক ও ক্রেতাদের ভিড়ে পুরো এলাকা গিজ গিজ করছে। ভিড় ঠেলে এক আড়ত থেকে অন্য আড়তে যেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
ভিড় বাড়ার ব্যাপারে ক্রেতারা জানান, মাস খানেক আগেও আকাশছোঁয়া দামের কারণে ইলিশের ধারে কাছেও ভিড়তে পারতো না মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্তরা। সেই কাঙ্ক্ষিত ইলিশ এখন তাদের নাগালের মধ্যে। ইলিশের দাম কমেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েক বছরের মধ্যে আজ মঙ্গলবার সর্বনিম্ন দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। এভাবে মোকামে ইলিশ ঢুকতে থাকলে দাম কমার আরো সম্ভাবনা দেখছেন আড়তদাররা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বরিশাল অঞ্চলের ইলিশের চাহিদা সারা বছরই থাকে সারাদেশে। দেশের বাইরেও রয়েছে এর খ্যাতি। সামুদ্রিক ইলিশ লবণাক্ত হওয়ায় বরিশাল অঞ্চলের মিঠা পানির রূপালি ইলিশের কদর একটু বেশি। এ কারণে গত পহেলা বৈশাখ বরিশালের পোর্ট রোডের মোকামে সোয়া কেজি থেকে দেড় কেজির বড় সাইজের ইলিশের মণের দাম উঠেছিল ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ৪ হাজার টাকা। এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছিল পহেলা বৈশাখ ১ লাখ ৫ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়েছিল ২ হাজার ৬২৫ টাকা।
তবে সেই দাম অর্ধেকেরও বেশি কমে আজ মঙ্গলবার বিক্রি হচ্ছে সোয়া কেজি থেকে দেড় কেজি সাইজের ইলিশের মণ ৮০ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ২ হাজার টাকা। তবে এ সাইজের ইলিশের সরবরাহ ছিল কম। এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৪০ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ১ হাজার টাকা।
ইজারাদার সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ ধরে বরিশাল মোকামে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মণ ইলিশ এসেছে। সরবরাহ বেশি থাকায় কমেছে দামও।
মঙ্গলবার বরিশাল মোকামে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশে সয়লাব আড়তগুলো। ক্রেতাদেরও ভিড়। ইলিশের কেনা-বেচা হচ্ছে সেখানে। অন্যদিকে ইলিশ ককশিটে বরফ দিয়ে প্যাকেটজাত করছেন শ্রমিকরা। প্রতিটি আড়তের সামনে শত শত ককশিট প্যাকেটের স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আড়ত থেকে ককশিটে (বিশেষ প্যাকেট) বরফ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে শত শত মণ ইলিশ পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
বরিশাল আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত কুমার দাস মনু জানান, ইলিশের সরবরাহ প্রচুর। চারদিকে শুধু ইলিশ। পোর্ট রোডের মোকামে লেগেছে যেন ইলিশের মেলা। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে আজ ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশি। ইলিশের সরবরাহ বেশি থাকায় গত কয়েক বছরের মধ্যে আজ মঙ্গলবার সর্বনিম্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। সোয়া কেজি সাইজের ইলিশের মণ বিক্রি হচ্ছে ৪৮ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা। রফতানিযোগ্য এলসি আকারের (৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম) প্রতি মণ ২৬ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ৬৫০ টাকা। ভেলকা আকারের (৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম) ১৬ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ৪০০ টাকা। গোটরা আকারের (২৫০ গ্রাম থেকে ৩৫০ গ্রাম) প্রতি মণ ১২ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়ে ৩০০ টাকা। এবং জাটকা প্রতি মণ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার টাকায়।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল দাস জানান, মা-ইলিশের সুরক্ষা ও ডিম পাড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারায় এ সফলতা এসেছে। পাশাপাশি আছে সরকারের জাটকা নিধন বন্ধ অভিযান। এ দুই কর্মসূচির সফলতাই ইলিশের সংখ্যা বাড়তে বড় ভূমিকা রেখেছে।