ঢাকা ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসলাম আমাকে বাছাই করেছে : সুসান কারল্যান্ড

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০১:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • ৪৩২ বার

বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ানের প্রতিদিনের কথপোকথনে শালীনতা, পরিমিতিবোধ বা সংযম শব্দটি ব্যবহৃত হয় না। কিন্তু সুসান কারল্যান্ড এই ধারণাটিকে সারাক্ষণই নিজের বিবেচনায় রাখেন। তিনি দীর্ঘদিনের ধর্মান্তরিত মুসলিম এবং অস্ট্রেলিয়ার একজন উদীয়মান গণ বুদ্ধিজীবি। এছাড়া তার আরেকটি বড় পরিচয় হলো তিনি গোল্ড লোগি পুরস্কারজয়ী বিখ্যাত টেলিভিশন উপস্থাপক ওয়ালিদ আলির সুন্দরী স্ত্রী। আয়েশা নামে তার ১৩ বছরের একটি মেয়ে ও জায়েদ নামে ৯ বছরের একটি ছেলে আছে।

একটি ফটোশুট ইভেন্টের শেষে নিজের কালো প্যাটেন্ট লেদার শু গুলোর ফিতা বাঁধতে বাঁধতে সানডে লাইফকে তিনি বলেন, “মুসলিমদের জন্য মনের ইচ্ছা বা নিয়তটাই সবার আগে বিবেচ্য বিষয়। একজন মুসলিম যত বেশি জনসম্মুখে আসবে ততই নিজেকে তার জিজ্ঞেস করতে হবে “আমার নিয়তটাই কি এমন যে আমি একটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ পাতায় থাকতে চাই এবং সকলেই আমার দিকে তাকিয়ে থাকুক সেটা কামনা করি?” যদি তাই হয় তাহলে তা ইসলামের দৃষ্টিতে সমস্যাযুক্ত।

কিন্তু জনসম্মুখে আসার ব্যাপারে কারো নিয়ত যদি হয় এমন, “আমি আসলে ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে নিজের ছবি দেখাটা খুব একটা উপভোগ করি না। তবে আরো সংযোগশীল সমাজ সৃষ্টি করা আমার একটি লক্ষ্য।” তাহলে ভিন্ন কথা।
ফ্রান্সে বুরকিনির ওপর স্বল্পকালীন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কারল্যান্ডের মত হলো, “রাজনৈতিক বিজয়ের জন্য নারীর শরীরকে একটি যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহারের সেই পুরোনো লড়াইয়েরই অংশ এটি। অনেক দেশেই দেহ ঢেকে রাখার জন্য নারীদের ওপর যে জোর-জবরদস্তি চালানো হয় তাকে আমি একটি সমস্যা হিসেবেই

গণ্য করি।”

কিন্তু সাবেক বেলে নাচের এই শিক্ষার্থী নিজে অবশ্য হিজাব পরেন। তিনি হিজাব পরে ফ্যাশন শোতেও অংশগ্রহণ করেন।

কারল্যান্ড বলেন, “আচরণ এবং পোশাকের ক্ষেত্রে শালীনতা, পরিমিতিবোধ ও সংযমের ব্যাপারে ইসলামের যে মূল্যবোধ তাতে আমি অনেক প্রজ্ঞার ছাপ দেখতে পাই। এগুলো এমন ধরনের সব সিদ্ধান্ত যা লোককে নিজেই নিজেদের জন্য গ্রহণ করতে হবে এবং কারো ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।”

ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি আঁটোসাঁটো নেভি প্যান্ট, সাদা শার্ট, ধুসর জ্যাকেট এবং ধুসর সুতির স্কার্ফ পরতেন। ১৯ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই তিনি তার মাথা ঢেকে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আর এখন ৩৭ বছর বয়সে এসে তিনি বলছেন, এমনকি তার নারীবাদি ধ্যান ধারণার সঙ্গেও হিজাব পরার বিষয়টির কোনো অসঙ্গতি নেই!

তিনি বলেন, “হিজাব পরে আমার কোনো সমস্যাই হচ্ছে না। হিজাব পরেই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করি। সাঁতার কাটি। ভ্রমণে যাই। হিজাব পরেই আমি দুবার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে স্কুবা ডাইভিংয়ে গিয়েছি। আর হিজাবের মূল উদ্দেশ্যই হলো সামাজিক গতিশীলতা বাড়ানো।” চলতি বছরে সমাজবিজ্ঞানে নতুন পিএইচডি ডিগ্রি করার পর কারল্যান্ড এখন মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল সেন্টার ফর অস্ট্রেলিয়ান স্টাডিজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন।

তিনি এখন তার ডক্টরেট থিসিসের ওপর ভিত্তি করে একটি বইও লিখছেন। বইটির নাম ফাইটিং হিসলাম। হিসলাম শব্দটি তিনি ইসলামের নামে অনৈসলামিক আচার-আচরণের প্রতি ব্যাঙ্গ করার জন্য ব্যবহার করেছেন। বইটি লেখার জন্য তিনি অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মুসলিম নারী ধর্ম বিশেষজ্ঞ, সমাজকর্মী এবং লেখকদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এবং মুসলিম সম্প্রদায়ে তারা কীভাবে লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন সে ব্যাপারেও কথা বলেছেন। এতে নারীরা যে ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করেই তাদের অধিকারগুলো আদায়ের জন্য লড়াই করতে পারেন সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

কারল্যান্ড মনে করেন সমযোগ্যতা সম্পন্ন এবং ব্যক্তিগত পছন্দের পুরষকে বিয়ে করার ব্যাপারেও ইসলামে কোনো বাধা নেই। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের শহরতলীতে একটি খ্রিস্টান পরিবারে বেড়ে ওঠা কার‌ল্যান্ড কিশোর বয়সেই নিজ ধর্মের ভেতরেই গির্জা পরিবর্তন করেন। কিশোর বয়সেই তিনি ইউনাইটিং চার্চ থেকে ইভানজেলিক্যাল ব্যাপটিস্ট চার্চে যোগ দেন। আর ১৭ বছর বয়সেই তিনি ইসলামের প্রতি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তিনি ইসলামকে একটি বর্বর ধর্ম নয় বরং অনেক বেশি মানবিক ও জ্ঞানগর্ভ ধর্ম হিসেবেই উপলব্ধি করেন।

এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম নারীদের একটি গ্রুপের সন্ধান পান। যার দু্ই বছর পরই তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হন। শিশু বয়সেই কারল্যান্ড চার্চের ওপর বিরক্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু শক্তিশালিভাবে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে শুরু করেন। কারল্যান্ড বলেন, অল্প বয়সেই আমি জীবন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, একটি নৈতিক জীবন-যাপনের অর্থ কী এবং আমরা কোথায় যাচ্ছি এসব বিষয় নিয়ে ভাবা শুরু করি। আমি আমার সংস্কৃতি এবং পরিবারের শিক্ষার বিপরীতে গিয়ে যৌক্তিক ও ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী জীবন-যাপন শুরু করি।”-ডেইলি সান

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ইসলাম আমাকে বাছাই করেছে : সুসান কারল্যান্ড

আপডেট টাইম : ১০:০১:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ানের প্রতিদিনের কথপোকথনে শালীনতা, পরিমিতিবোধ বা সংযম শব্দটি ব্যবহৃত হয় না। কিন্তু সুসান কারল্যান্ড এই ধারণাটিকে সারাক্ষণই নিজের বিবেচনায় রাখেন। তিনি দীর্ঘদিনের ধর্মান্তরিত মুসলিম এবং অস্ট্রেলিয়ার একজন উদীয়মান গণ বুদ্ধিজীবি। এছাড়া তার আরেকটি বড় পরিচয় হলো তিনি গোল্ড লোগি পুরস্কারজয়ী বিখ্যাত টেলিভিশন উপস্থাপক ওয়ালিদ আলির সুন্দরী স্ত্রী। আয়েশা নামে তার ১৩ বছরের একটি মেয়ে ও জায়েদ নামে ৯ বছরের একটি ছেলে আছে।

একটি ফটোশুট ইভেন্টের শেষে নিজের কালো প্যাটেন্ট লেদার শু গুলোর ফিতা বাঁধতে বাঁধতে সানডে লাইফকে তিনি বলেন, “মুসলিমদের জন্য মনের ইচ্ছা বা নিয়তটাই সবার আগে বিবেচ্য বিষয়। একজন মুসলিম যত বেশি জনসম্মুখে আসবে ততই নিজেকে তার জিজ্ঞেস করতে হবে “আমার নিয়তটাই কি এমন যে আমি একটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ পাতায় থাকতে চাই এবং সকলেই আমার দিকে তাকিয়ে থাকুক সেটা কামনা করি?” যদি তাই হয় তাহলে তা ইসলামের দৃষ্টিতে সমস্যাযুক্ত।

কিন্তু জনসম্মুখে আসার ব্যাপারে কারো নিয়ত যদি হয় এমন, “আমি আসলে ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে নিজের ছবি দেখাটা খুব একটা উপভোগ করি না। তবে আরো সংযোগশীল সমাজ সৃষ্টি করা আমার একটি লক্ষ্য।” তাহলে ভিন্ন কথা।
ফ্রান্সে বুরকিনির ওপর স্বল্পকালীন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কারল্যান্ডের মত হলো, “রাজনৈতিক বিজয়ের জন্য নারীর শরীরকে একটি যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহারের সেই পুরোনো লড়াইয়েরই অংশ এটি। অনেক দেশেই দেহ ঢেকে রাখার জন্য নারীদের ওপর যে জোর-জবরদস্তি চালানো হয় তাকে আমি একটি সমস্যা হিসেবেই

গণ্য করি।”

কিন্তু সাবেক বেলে নাচের এই শিক্ষার্থী নিজে অবশ্য হিজাব পরেন। তিনি হিজাব পরে ফ্যাশন শোতেও অংশগ্রহণ করেন।

কারল্যান্ড বলেন, “আচরণ এবং পোশাকের ক্ষেত্রে শালীনতা, পরিমিতিবোধ ও সংযমের ব্যাপারে ইসলামের যে মূল্যবোধ তাতে আমি অনেক প্রজ্ঞার ছাপ দেখতে পাই। এগুলো এমন ধরনের সব সিদ্ধান্ত যা লোককে নিজেই নিজেদের জন্য গ্রহণ করতে হবে এবং কারো ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।”

ইসলাম গ্রহণের আগে তিনি আঁটোসাঁটো নেভি প্যান্ট, সাদা শার্ট, ধুসর জ্যাকেট এবং ধুসর সুতির স্কার্ফ পরতেন। ১৯ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই তিনি তার মাথা ঢেকে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আর এখন ৩৭ বছর বয়সে এসে তিনি বলছেন, এমনকি তার নারীবাদি ধ্যান ধারণার সঙ্গেও হিজাব পরার বিষয়টির কোনো অসঙ্গতি নেই!

তিনি বলেন, “হিজাব পরে আমার কোনো সমস্যাই হচ্ছে না। হিজাব পরেই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করি। সাঁতার কাটি। ভ্রমণে যাই। হিজাব পরেই আমি দুবার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে স্কুবা ডাইভিংয়ে গিয়েছি। আর হিজাবের মূল উদ্দেশ্যই হলো সামাজিক গতিশীলতা বাড়ানো।” চলতি বছরে সমাজবিজ্ঞানে নতুন পিএইচডি ডিগ্রি করার পর কারল্যান্ড এখন মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল সেন্টার ফর অস্ট্রেলিয়ান স্টাডিজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন।

তিনি এখন তার ডক্টরেট থিসিসের ওপর ভিত্তি করে একটি বইও লিখছেন। বইটির নাম ফাইটিং হিসলাম। হিসলাম শব্দটি তিনি ইসলামের নামে অনৈসলামিক আচার-আচরণের প্রতি ব্যাঙ্গ করার জন্য ব্যবহার করেছেন। বইটি লেখার জন্য তিনি অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের মুসলিম নারী ধর্ম বিশেষজ্ঞ, সমাজকর্মী এবং লেখকদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এবং মুসলিম সম্প্রদায়ে তারা কীভাবে লিঙ্গ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন সে ব্যাপারেও কথা বলেছেন। এতে নারীরা যে ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করেই তাদের অধিকারগুলো আদায়ের জন্য লড়াই করতে পারেন সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়।

কারল্যান্ড মনে করেন সমযোগ্যতা সম্পন্ন এবং ব্যক্তিগত পছন্দের পুরষকে বিয়ে করার ব্যাপারেও ইসলামে কোনো বাধা নেই। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের শহরতলীতে একটি খ্রিস্টান পরিবারে বেড়ে ওঠা কার‌ল্যান্ড কিশোর বয়সেই নিজ ধর্মের ভেতরেই গির্জা পরিবর্তন করেন। কিশোর বয়সেই তিনি ইউনাইটিং চার্চ থেকে ইভানজেলিক্যাল ব্যাপটিস্ট চার্চে যোগ দেন। আর ১৭ বছর বয়সেই তিনি ইসলামের প্রতি বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তিনি ইসলামকে একটি বর্বর ধর্ম নয় বরং অনেক বেশি মানবিক ও জ্ঞানগর্ভ ধর্ম হিসেবেই উপলব্ধি করেন।

এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম নারীদের একটি গ্রুপের সন্ধান পান। যার দু্ই বছর পরই তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হন। শিশু বয়সেই কারল্যান্ড চার্চের ওপর বিরক্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু শক্তিশালিভাবে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে শুরু করেন। কারল্যান্ড বলেন, অল্প বয়সেই আমি জীবন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, একটি নৈতিক জীবন-যাপনের অর্থ কী এবং আমরা কোথায় যাচ্ছি এসব বিষয় নিয়ে ভাবা শুরু করি। আমি আমার সংস্কৃতি এবং পরিবারের শিক্ষার বিপরীতে গিয়ে যৌক্তিক ও ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী জীবন-যাপন শুরু করি।”-ডেইলি সান