বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে থাকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থার আয়ের বড় উৎস এটি। এবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালেরও দায়িত্ব পেতে যাচ্ছে বিমান। বিমানকে এ দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি চিঠি দিয়ে অবগত করেছে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষ। তবে এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ ও ২ নম্বর টার্মিনাল চালাতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছে বিমান। আগের চেয়ে উন্নতি হলেও বদনাম ঘুচাতে পারেনি পুরোপুরি। থার্ড টার্মিনালে বিমানকে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া যৌক্তিক নয়। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য সংস্থাটির কাছে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম থাকলেও জনবল নেই।
গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমানকে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়, আগামী দুই বছরের জন্য বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। দুই বছরের মধ্যে যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে না পারে, সেক্ষেত্রে বিদেশি স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে বিমানের সঙ্গে দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দিতে হবে।
১৯৭২ সাল থেকে দেশের সব বিমানবন্দরে এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করে আসছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। নিজেদের ফ্লাইটের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি ৩৫টির মতো এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের সেবা দিচ্ছে তারা। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং
বলতে যাত্রীর বোর্ডিং পাস ইস্যু, ব্যাগেজ আনা-নেওয়া, কার্গোর মালামাল ওঠানো-নামানো, এয়ারক্রাফটের সব ধরনের সার্ভিসকে বোঝায়। বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার কারা হবে, তাদের কীভাবে এবং কী কী সার্ভিস দিতে হবে, সেই সার্ভিস দিয়ে রাজস্ব আয় কত হবে সেগুলো নির্ধারণে পিপিপির মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স কর্পোরেশনকে (আইএফসি) অ্যাডভাইজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। প্রিলিমিনারি রিপোর্টে থার্ড টার্মিনালের প্রাইভেট সেক্টর পার্টনারশিপের (পিএসপি) জন্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে মনোনয়ন করা হয়েছিল। তবে আপাতত দুই বছরের জন্য এই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে। আইএফসির সাউথ এশিয়ার হাব লিডার মোয়াজ্জেম মেকানকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে পিপিপি কর্তৃপক্ষ।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. সাফিকুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিতে বিমান প্রস্তুত। ১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৬০০ কোটি টাকার সরঞ্জাম চলে এসেছে। আরও ৪০০ কোটি টাকার সরঞ্জাম আসার পথে। জনবলের দিক থেকেও বিমান প্রস্তুত। কার্গো হেল্পার হিসেবে আগামী সপ্তাহে ১০০ জন যোগ দিচ্ছেন। কার্গো ও জিএসইতে আরও জনবল যুক্ত হচ্ছে। সুতরাং, বলা যায় সেবা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
হ্যান্ডলিং সেবার বদনাম প্রসঙ্গে বিমান এমডি বলেন, বর্তমান বিমানবন্দরের ভেতরে অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। জায়গার স্বল্পতা প্রকট। এ সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিমানকর্মীরা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন। আর থার্ড টার্মিনাল অত্যাধুনিক। রয়েছে বিপুল জায়গা। সেখানে কাজ করতে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। মানের দিক থেকে আরও বেশি হবে।
এদিকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মফিদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, থার্ড টার্মিনাল নিয়ে প্রত্যাশা আন্তর্জাতিক মানের সেবা। বর্তমানে এয়ারলাইন্স অপারেটর ও যাত্রীরা সন্তুষ্ট নন। যদিও বিমান আগের তুলনায় উন্নতি করেছে। এটাও ঠিক উন্নত বিশে^র মতো সার্ভিস দেওয়ার যোগ্যতা এ দেশের কারও নেই। এ জন্যই পিপিপি কর্তৃপক্ষ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর নিয়োগ দিয়েছিল। উদ্দেশ্য সেবা ও রাজস্ব বৃদ্ধি। উন্নত সেবা দিতে না পারলে ঝুঁকি রয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, যাত্রী ও কার্গো দুটো সেবার বিষয় এখানে। অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত এ থার্ড টার্মিনালে বিমান কতটুকু গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সুবিধা দিতে পারবে, সে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এখনও সেই সক্ষমতা বিমানের তৈরি হয়নি। এটাই বাস্তবতা। আমি মনে করি, দেশের বাইরে থেকে প্রতিষ্ঠান যুক্ত করা উচিত। তবেই এ টার্মিনালে বিভিন্ন অপারেটর ও যাত্রীদের কাক্সিক্ষত সেবা সম্ভব।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্যাসেঞ্জার হ্যান্ডলিং কোনোভাবে করলেও কার্গো হ্যান্ডলিং করার মতো এখনও সক্ষম হয়নি বিমানের। নিয়মিত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং চার্জ দিলেও বিমান পূর্ণাঙ্গ সাপোর্ট দিতে পারছে না। অনেক অনুরোধ করেও কর্মী পাওয়া যায় না। ফ্লাইটের আগে সহযোগিতা করার জন্য তারা একজন বা সর্বোচ্চ দুজনকে অ্যাসাইন করে থাকে, যা একটি বড় ফ্লাইটের জন্য পর্যাপ্ত নয়। বিমানের পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় বিমানবন্দরে অনেক বেশি নিজস্ব কর্মী নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছে অপারেটররা। যেমনÑ এয়ার অ্যারাবিয়া যাত্রীদের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার জন্য প্রতি ফ্লাইটে বিমানকে ২ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার পরিশোধ করে এবং কার্গোর জন্য প্রতি কেজিতে অতিরিক্ত শূন্য দশমিক শূন্য ৭ সেন্ট (মার্কিন ডলার) চার্জ প্রদান করে। এসব ব্যয় সত্ত্বেও তাদের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য মাত্র দুই থেকে তিনজন কর্মী সরবরাহ করে বিমান, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।