ঢাকা ০৬:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমেই যে ৭ কাজ করবেন ট্রাম্প

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪
  • ১১ বার

ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন করেছেন তিনি, অনেকেরই মতামত। হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাওয়ার মাত্র চার বছর পর অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন তার।

গত মঙ্গলবার কোটি কোটি আমেরিকানবাসীর ভোটে ফের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাম্প।

জয়ের আগে নির্বাচন প্রচারণায় নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর মধ্যে ছিল অভিবাসন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও অর্থনীতি সংক্রান্ত বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য। আসুন জেনে নেওয়া যাক নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে যে সাতটি কাজ করতে চান ট্রাম্প –

অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে দেওয়া

নির্বাচনী প্রচারণাকালে ট্রাম্প যে কথাটি বারবার উচ্চারণ করেছিলেন, তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করবেন তিনি। এছাড়াও মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শেষ করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তবে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলেছেন, যে পরিমাণ অভিবাসীকে ট্রাম্প ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন, ‘তা বাস্তবায়ন করতে গেলে বিশাল আইনগত ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এছাড়া এটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতিও কমিয়ে দিতে পারে।’

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ 

রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেনকে শত শত কোটি ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর কড়া সমালোচনা করে আসছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ক্ষমতায় এলে সমঝোতার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই যুদ্ধ বন্ধ করবেন তিনি। সেই সঙ্গে লেবাননের যুদ্ধও থামানোর পক্ষে ট্রাম্প। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরকারকে গাজার যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানালেও ফিলিস্তিনে গাজা যুদ্ধের ক্ষেত্রে নিজেকে ইসরায়েলের একজন কড়া সমর্থক হিসেবেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

অর্থনীতিতে মনোযোগ

বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে নিত্যপণ্যের দাম রেকর্ড পরিমাণ উচ্চতায় ওঠার কারণে ট্রাম্প ইতোমধ্যেই মূল্যস্ফীতি থামানোর পাশাপাশি কর কমানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার নির্বাচনী প্রচারণায়। এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে বিদেশি পণ্যের ওপর নতুনভাবে অন্তত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চান তিনি। আর চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়াতে চান অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ। এর ফলে ভবিষ্যতে পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।

জলবায়ু নীতিতে কাটছাঁট

গত ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পরিবেশ সুরক্ষা-সংক্রান্ত নানা আইন বাতিল করেছিলেন ট্রাম্প। তখন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রথম দেশ হিসেবে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবারও জলবায়ু নীতিতে কাটছাঁট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্পকে সহায়তা করা। ইলেকট্রিক গাড়ির বিরোধী ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জীবাশ্ম জ্বালানির উত্তোলন বাড়ানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

গর্ভপাতের অধিকার রদ

কমলা হ্যারিসের সঙ্গে নির্বাচনী বিতর্কের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে গর্ভপাতের অধিকার রদ সংক্রান্ত আইনে স্বাক্ষর করবেন না। এর আগে ২০২২ সালে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকারকে খারিজ করে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়ের পক্ষে ছিলেন আদালতের রক্ষণশীল বিচারপতিদের অধিকাংশ। এবার ট্রাম্প সেই রায় বাতিলের করার ইঙ্গিত করে গর্ভপাতের অধিকার রদ বিষয়ক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

৬ জানুয়ারির দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা

২০২০ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই নির্বাচনের ফলাফল বদলাতে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালান ট্রাম্পের সমর্থকেরা। এতে কয়েকজনের মৃত্যু হয়। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাধাতে সমর্থকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছিলেন, দাঙ্গা অভিযোগে তুলে তার শত শত সমর্থককে রাজনৈতিক বন্দী করা হয়েছে। ক্ষমতায় গেলে তাদের কয়েকজনকে ‘মুক্তি’ দেবেন তিনি।

বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথকে চাকরিচ্যুত

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলার তদন্ত করছেন মার্কিন কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথ। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গায় উসকানি দেওয়া এবং সরকারি গোপন নথি সরানোর অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওই দুটি মামলা হয়েছিল। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ট্রাম্প এক সময় বলেছিলেন, ট্রাম্প এক সময় বলেছিলেন, হোয়াইট হাউসে বসার ‘দুই সেকেন্ডে’এর মধ্যেই জ্যাক স্মিথকে চাকরিচ্যুত করবেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ কাঁধে নিয়েই এবার ক্ষমতায় ফিরেছেন ট্রাম্প। এখন অপেক্ষার পালা, তার এই প্রতিশ্রুতি তিনি কার্যকর করবেন কিনা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথমেই যে ৭ কাজ করবেন ট্রাম্প

আপডেট টাইম : ১০:০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪

ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন করেছেন তিনি, অনেকেরই মতামত। হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাওয়ার মাত্র চার বছর পর অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন তার।

গত মঙ্গলবার কোটি কোটি আমেরিকানবাসীর ভোটে ফের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাম্প।

জয়ের আগে নির্বাচন প্রচারণায় নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এর মধ্যে ছিল অভিবাসন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও অর্থনীতি সংক্রান্ত বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য। আসুন জেনে নেওয়া যাক নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে যে সাতটি কাজ করতে চান ট্রাম্প –

অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে দেওয়া

নির্বাচনী প্রচারণাকালে ট্রাম্প যে কথাটি বারবার উচ্চারণ করেছিলেন, তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করবেন তিনি। এছাড়াও মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শেষ করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তবে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলেছেন, যে পরিমাণ অভিবাসীকে ট্রাম্প ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন, ‘তা বাস্তবায়ন করতে গেলে বিশাল আইনগত ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। এছাড়া এটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতিও কমিয়ে দিতে পারে।’

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ 

রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেনকে শত শত কোটি ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর কড়া সমালোচনা করে আসছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ক্ষমতায় এলে সমঝোতার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই যুদ্ধ বন্ধ করবেন তিনি। সেই সঙ্গে লেবাননের যুদ্ধও থামানোর পক্ষে ট্রাম্প। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরকারকে গাজার যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানালেও ফিলিস্তিনে গাজা যুদ্ধের ক্ষেত্রে নিজেকে ইসরায়েলের একজন কড়া সমর্থক হিসেবেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

অর্থনীতিতে মনোযোগ

বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে নিত্যপণ্যের দাম রেকর্ড পরিমাণ উচ্চতায় ওঠার কারণে ট্রাম্প ইতোমধ্যেই মূল্যস্ফীতি থামানোর পাশাপাশি কর কমানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার নির্বাচনী প্রচারণায়। এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে বিদেশি পণ্যের ওপর নতুনভাবে অন্তত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চান তিনি। আর চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়াতে চান অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ। এর ফলে ভবিষ্যতে পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।

জলবায়ু নীতিতে কাটছাঁট

গত ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পরিবেশ সুরক্ষা-সংক্রান্ত নানা আইন বাতিল করেছিলেন ট্রাম্প। তখন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রথম দেশ হিসেবে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবারও জলবায়ু নীতিতে কাটছাঁট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি শিল্পকে সহায়তা করা। ইলেকট্রিক গাড়ির বিরোধী ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জীবাশ্ম জ্বালানির উত্তোলন বাড়ানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

গর্ভপাতের অধিকার রদ

কমলা হ্যারিসের সঙ্গে নির্বাচনী বিতর্কের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে গর্ভপাতের অধিকার রদ সংক্রান্ত আইনে স্বাক্ষর করবেন না। এর আগে ২০২২ সালে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকারকে খারিজ করে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়ের পক্ষে ছিলেন আদালতের রক্ষণশীল বিচারপতিদের অধিকাংশ। এবার ট্রাম্প সেই রায় বাতিলের করার ইঙ্গিত করে গর্ভপাতের অধিকার রদ বিষয়ক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

৬ জানুয়ারির দাঙ্গাকারীদের ক্ষমা

২০২০ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই নির্বাচনের ফলাফল বদলাতে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালান ট্রাম্পের সমর্থকেরা। এতে কয়েকজনের মৃত্যু হয়। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাধাতে সমর্থকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছিলেন, দাঙ্গা অভিযোগে তুলে তার শত শত সমর্থককে রাজনৈতিক বন্দী করা হয়েছে। ক্ষমতায় গেলে তাদের কয়েকজনকে ‘মুক্তি’ দেবেন তিনি।

বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথকে চাকরিচ্যুত

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি মামলার তদন্ত করছেন মার্কিন কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথ। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গায় উসকানি দেওয়া এবং সরকারি গোপন নথি সরানোর অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওই দুটি মামলা হয়েছিল। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ট্রাম্প এক সময় বলেছিলেন, ট্রাম্প এক সময় বলেছিলেন, হোয়াইট হাউসে বসার ‘দুই সেকেন্ডে’এর মধ্যেই জ্যাক স্মিথকে চাকরিচ্যুত করবেন তিনি।

শেষ পর্যন্ত ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ কাঁধে নিয়েই এবার ক্ষমতায় ফিরেছেন ট্রাম্প। এখন অপেক্ষার পালা, তার এই প্রতিশ্রুতি তিনি কার্যকর করবেন কিনা।