বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেছেন, কোনো ব্যক্তির কলমের খোঁচা দিয়ে সংবিধান বদলানো যাবে না। একজন ব্যক্তি যদি মনে করেন, প্রেসিডেন্টও যদি মনে করেন যে এটা ভুল, এটা তারও উচিৎ হবে না যে কলমের খোঁচা দিয়ে এটাকে পরিবর্তন করা। জনগণের মতামত ওনাকে জানতে হবে। যখন দেখা যাবে যে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার মত গড়ে উঠেছে, তখন সংবিধানে হাত দেওয়া যেতে পারে।
সংবিধান দিবস উপলক্ষে সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সংবিধান জনগণের জন্য এবং জনগণই এটার হেফাজতকারী। প্রতিটি জনগণই কিন্তু ক্ষমতার মালিক হিসেবে ভূমিকা রাখে। আমরা যদি মনে করি যে, এভাবে সংবিধানের ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্ট ব্যাখ্যা করছে। কোনো ভুল হলে আমরা ধারণা রাখতে পারি। আমরা বিষয়টা তুলে ধরবো এবং একটা ঐক্যমত গড়ে তুলবো এবং ঐক্যমতের ভিত্তিতে যেটা করণীয় সেটা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের ভূমিকা হলো সতর্ক থাকা। যেভাবে সংবিধানের ব্যাখ্যা করা হবে, যেভাবে কোর্টের কাছে তুলে ধরা হবে, সব ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকার যদি মনে করে যে ভুল হয়েছে তাহলে ভুলকে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে যে ভুল হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের যে পবিত্রতার কথা আমরা বলি, মৌলিক আইনের যে কথা আমরা বলি, সব আইনের উর্ধ্বে সংবিধান। তাই যেনতেনভাবে এটাতে হাত দেওয়া যায় না।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সংবিধান বিশ্লেষক ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘দেশ ও রাষ্ট্র চালাতে গেলে সব সরকারেরই সমস্যা হয়। কিন্তু সমস্যায় পড়ে এই যে এতবার, গত ৫২ বছরে বিভিন্ন নামে ১২ বার সরকার পদ্ধতির পরিবর্তন আমরা করেছি। এটা আমরা কেন জানি করেই চলেছি। এগুলো রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনা সম্পর্কে আমাদের অপরিপক্কতার বহিঃপ্রকাশ। সমস্যায় পড়লেই আমরা সমাধান খুঁজি সরকার পদ্ধতি পরিবর্তনের। এটা পৃথিবীর আর কোথাও হয় না।’
সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ।