ঢাকা ১০:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুদ্ধাপরাধের বিচার আওয়ামী লীগকে কী সুবিধে দেবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৪:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • ৪০৬ বার

বাংলাদেশে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং দন্ড কার্যকর করার রাজনৈতিক পরিণতি নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বিবিসিকে বলেছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়েছে, এবং এটি দলকে ভবিষ্যতে অনেক রাজনৈতিক সুবিধে দেবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অনেক অভিযোগ এখনও রয়ে গেছে, ফলে ইস্যুটি জিইয়ে রাখার সুযোগ আওয়ামী লীগের কাছে রয়েছে। তবে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর, এর রাজনৈতিক গুরুত্ব কমে যাবে বলে তারা মনে করছেন।

আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার অঙ্গীকারকে অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছিল। এই ইস্যুতে তখন আওয়ামী লীগ তরুণদের একটা বড় অংশের সমর্থন পেয়েছিল বলে দলটির নেতা-কর্মিরা মনে করেন। সেই ভোটের ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন বিশ্লেষণেও তা দেখা গেছে।

সর্বশেষ জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের অধ্যায় শেষ হলো। সেই প্র্রেক্ষাপটে ভবিষ্যত রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের জন্য এটি আর ইস্যু হিসেবে থাকে কিনা, এই প্রশ্ন এখন আলোচনায় আসছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আকতার হোসাইন বলেন, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করতে পারার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ হওয়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি বড় সাফল্য বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলছিলেন, “এখানে গণহত্যা হয়েছে বা যুদ্ধাপরাধ হয়েছে। এটি যে প্রমাণ হয়েছে,ফলে এর বিচার অব্যাহত রেখে আওয়ামী লীগ ইস্যুটিকে ধরে রাখতে পারে। এছাড়া সন্ত্রাস বা জঙ্গী তৎপরতার ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধের যোগসূত্রের যে কথা এসেছে, সেটাকেও আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। ফলে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু থাকতে পারে।”

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকে মনে করেন, তাদের রাজনীতির অগ্রাধিকারের তালিকায় যুদ্ধারাধের বিচারের ইস্যুটির অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু এই বিচার করার সাফল্যটা তাদের ঘরে এসেছে। ভবিষ্যত রাজনীতিতে এই সাফল্যই তাদের জন্য বড় সহায়ক হবে বলে তারা বিশ্বাস করেন। তবে নাসিম আকতার হোসাইন যেমনটা বলছিলেন যে, এই বিচার অব্যাহত রাখার মাধ্যমে ইস্যু জিইয়ে সুযোগ রয়েছে। তেমনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ আলম লেনিন বলেছেন, সারাদেশের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার অব্যাহত আছে এবং থাকবে।ইস্যুটির গুরুত্ব কমে গেলেও এর প্রভাব রাজনীতিতে থাকবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলছিলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাদেশেই মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে। সেগুলোর বিচার করা না হলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রশ্ন থাকবে। সে কারণে এই বিচার অব্যাহত থাকবে। ফলে ইস্যুটি হারিয়ে যাবে না।”

বিশ্লেষকদের অনেকে আবার মনে করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয় ভবিষ্যতে সেভাবে ইস্যু হিসেবে থাকবে না। সেখানে আওয়ামী লীগ এর সাফল্যটাকেই পুঁজি করে তা সামনে আনতে চাইবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেছেন, সামনে এগুনোর জন্য আওয়ামী লীগকে নতুন ইস্যু আনতে হবে।

“আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সাফল্যটাকে তুলে ধরতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য নতুন অনেক ইস্যু আসবে, সেগুলোর দিকে তখন তাদের নজর দিতে হবে।”

তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়ার নেতার সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, গুরুত্ব কমে গেলেও তারা এই ইস্যু তাদের তালিকায় থাকবে।-বিবিসি বাংলা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যুদ্ধাপরাধের বিচার আওয়ামী লীগকে কী সুবিধে দেবে

আপডেট টাইম : ১১:৫৪:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং দন্ড কার্যকর করার রাজনৈতিক পরিণতি নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বিবিসিকে বলেছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়েছে, এবং এটি দলকে ভবিষ্যতে অনেক রাজনৈতিক সুবিধে দেবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অনেক অভিযোগ এখনও রয়ে গেছে, ফলে ইস্যুটি জিইয়ে রাখার সুযোগ আওয়ামী লীগের কাছে রয়েছে। তবে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পর, এর রাজনৈতিক গুরুত্ব কমে যাবে বলে তারা মনে করছেন।

আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার অঙ্গীকারকে অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছিল। এই ইস্যুতে তখন আওয়ামী লীগ তরুণদের একটা বড় অংশের সমর্থন পেয়েছিল বলে দলটির নেতা-কর্মিরা মনে করেন। সেই ভোটের ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন বিশ্লেষণেও তা দেখা গেছে।

সর্বশেষ জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের অধ্যায় শেষ হলো। সেই প্র্রেক্ষাপটে ভবিষ্যত রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের জন্য এটি আর ইস্যু হিসেবে থাকে কিনা, এই প্রশ্ন এখন আলোচনায় আসছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আকতার হোসাইন বলেন, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করতে পারার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ হওয়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি বড় সাফল্য বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলছিলেন, “এখানে গণহত্যা হয়েছে বা যুদ্ধাপরাধ হয়েছে। এটি যে প্রমাণ হয়েছে,ফলে এর বিচার অব্যাহত রেখে আওয়ামী লীগ ইস্যুটিকে ধরে রাখতে পারে। এছাড়া সন্ত্রাস বা জঙ্গী তৎপরতার ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধের যোগসূত্রের যে কথা এসেছে, সেটাকেও আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। ফলে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু থাকতে পারে।”

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকে মনে করেন, তাদের রাজনীতির অগ্রাধিকারের তালিকায় যুদ্ধারাধের বিচারের ইস্যুটির অবস্থান পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু এই বিচার করার সাফল্যটা তাদের ঘরে এসেছে। ভবিষ্যত রাজনীতিতে এই সাফল্যই তাদের জন্য বড় সহায়ক হবে বলে তারা বিশ্বাস করেন। তবে নাসিম আকতার হোসাইন যেমনটা বলছিলেন যে, এই বিচার অব্যাহত রাখার মাধ্যমে ইস্যু জিইয়ে সুযোগ রয়েছে। তেমনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ আলম লেনিন বলেছেন, সারাদেশের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার অব্যাহত আছে এবং থাকবে।ইস্যুটির গুরুত্ব কমে গেলেও এর প্রভাব রাজনীতিতে থাকবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলছিলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাদেশেই মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে। সেগুলোর বিচার করা না হলে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রশ্ন থাকবে। সে কারণে এই বিচার অব্যাহত থাকবে। ফলে ইস্যুটি হারিয়ে যাবে না।”

বিশ্লেষকদের অনেকে আবার মনে করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয় ভবিষ্যতে সেভাবে ইস্যু হিসেবে থাকবে না। সেখানে আওয়ামী লীগ এর সাফল্যটাকেই পুঁজি করে তা সামনে আনতে চাইবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেছেন, সামনে এগুনোর জন্য আওয়ামী লীগকে নতুন ইস্যু আনতে হবে।

“আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সাফল্যটাকে তুলে ধরতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য নতুন অনেক ইস্যু আসবে, সেগুলোর দিকে তখন তাদের নজর দিতে হবে।”

তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়ার নেতার সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, গুরুত্ব কমে গেলেও তারা এই ইস্যু তাদের তালিকায় থাকবে।-বিবিসি বাংলা