ঢাকা ১০:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মীর কাসেমের এত সম্পদের কী হবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৩:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • ৩৫০ বার

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য চলছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। এই ধনকুবের জামায়াত নেতাকে দলটির খুঁটি বলে মনে করা হয়। বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার সুযোগে হাজার-কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন এই যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিস্ট নিয়োগ ও আর্থিক লেনদেনের নেতৃত্বেও ছিলেন মীর কাসেম। যদিও সরকারের সর্বোচ্চ তৎপরতায় কোন ফায়দা হয়নি শেষ পর্যন্ত। তবে মীর কাসেমের ফাঁসির পর সেসব সম্পদ কী হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে আলোচনা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর স্থায়ীভাবে ঢাকায় আসেন মীর কাসেম। এরপর অনুকূল পরিবেশ না থাকায় সেখান থেকে সৌদি আরবে গিয়ে রাজাকারদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য বিপুল অর্থ সহায়তা জোগাড় করেন তিনি। পরে ওই অর্থ নিজেই ভোগ করতে থাকেন পুরোটা, গড়ে তোলেন এনজিও। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর দেশে ফিরে আসা মীর কাসেম মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সাহায্যপুষ্ট রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী নামের এনজিওর কান্ট্রি ডিরেক্টর হন। সেই এনজিওর অর্থে তিনি একের পর এক গড়ে তোলেন ব্যবসায়িক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সেই থেকে জামায়াতের সাংগঠনিক ব্যয় নির্বাহে সবচেয়ে বেশি অর্থের জোগানদাতা মীর কাসেম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিস্ট নিয়োগ ও আর্থিক লেনদেনের নেতৃত্বেও ছিলেন হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক মীর কাসেম আলী।

জানা গেছে, কেবল জামায়াত নেতাদের মধ্যেই নয়, গত তিন দশকে দেশের অন্যতম বড় ব্যবসায়ীতে পরিণত হন মীর কাসেম আলী। ব্যাংক, হাসপাতাল, কৃষি ব্যবসা, গণমাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয়, ওষুধশিল্পসহ বিভিন্ন খাতে বিস্তার করেন তার ব্যবসা। এসব ব্যবসা থেকে বিপুল আয়ের বড় একটি অংশ তিনি ব্যয় করতেন জামায়াতের রাজনীতির পেছনে, বিভিন্ন নামে গড়া ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে।

সূত্র জানায়, বেশকিছু আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক মীর কাসেমের সম্পদ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু সে তুলনায় তার ব্যক্তি নামে সম্পদ কম দেখানো হয়েছে। তার তত্ত্বাবধানের বেশির ভাগ সম্পদই বিভিন্ন কোম্পানি, ট্রাস্ট ও বেসরকারি সংস্থার নামে রয়েছে। ঢাকা কর অঞ্চল-৫-এর সার্কেল ৫০-এর করদাতা মীর কাসেম আলীর কর শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএন নম্বর হলো ০৭৬-১০৩-৯৬৬৩। তিনি ঢাকার মিরপুরের দক্ষিণ মনিপুরে ২৮৭ নম্বর প্লটের বহুতল ভবন পেয়েছেন পৈতৃকসূত্রে। এ ছাড়া তার ব্যক্তি নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একতা সোসাইটির ৫ কাঠা জমি ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চালায় সাড়ে ১২ শতক জমি রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মীর কাসেমের ধানমন্ডির বহুতল ভবন কেয়ারী প্লাজার অবিক্রীত ১৭৮.৬৯ বর্গমিটারের মালিক। বাকি অংশ ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মোট ২৭ হাজার ২৭৭টি শেয়ার রয়েছে তার নিজ নামে। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১০০টি এবং দুই ছেলে-তিন মেয়ের নামে রয়েছে ৫০০টি। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ২ হাজার ১১৩টি শেয়ার, কেয়ারী লিমিটেডের ১৪ হাজার শেয়ার, কেয়ারী টেলিকমের ১০ হাজার, কেয়ারী ট্যুরস অ্যান্ড সার্ভিসেসের ১ হাজার শেয়ার, কেয়ারী ঝর্না লিমিটেডের ২০টি, কেয়ারী তাজ লিমিটেডের ৫টি, কেয়ারী সান লিমিটেডের ৫টি, কেয়ারী স্প্রিং লিমিটেডের ২০টি, সেভেল স্কাই লিমিটেডের ১০০, মীর আলী লিমিটেডের ২৫টি এবং দিগন্ত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের ১০০টি শেয়ার রয়েছে মীর কাসেম আলীর নামে।

এছাড়া, তিনি কেয়ারী লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ইবনে সিনা ট্রাস্টের সদস্য (প্রশাসন), ইবনে সিনা হাসপাতালের পরিচালক, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের পরিচালক, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্টের সদস্য ও ফুয়াদ আল খতিব চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের সদস্য। তিনি ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন, রাবেতা আল আলম আল ইসলামী, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট, ফুয়াদ আল খতিব চ্যারিটি ফাউন্ডেশন এবং অ্যাসোসিয়েশন অব মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার এজেন্সিসের বিভিন্ন বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিতির জন্য নিয়মিত ভাতা পেতেন। এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদে আছেন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসম্যান চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, আল্লামা ইকবাল সংসদ, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি, সেন্টার ফর স্ট্রাটেজি অ্যান্ড পিস, বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইসলামিক ট্রাস্ট ও ইসলামিক ইকোনমিক্স রিসার্চ সেন্টারের।

সূত্র জানায়, মীর কাসেম আলীর ২০১০ সালের আয়কর রিটার্নে ব্যক্তিগত ঘোষিত মোট পরিসম্পদ ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩২৪ টাকা। এর মধ্যে তার নামে থাকা শেয়ারগুলোর মূল্য ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ঢাকার বাড়ি ও জমির দাম মাত্র কয়েক লাখ টাকা করে উল্লেখ করা হয়েছে রিটার্নে। সে সময় তার বার্ষিক আয় ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৫২৯ এবং ব্যাংকে ছিল ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭০১ টাকা। তবে মীর কাসেম আলী-সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের অঙ্কগুলোও বড় এবং এর কোনোটিই খেলাপি নয়। কেয়ারী লিমিটেডের নামে ঋণ ৬০ কোটি ৯৩ লাখ, ইবনে সিনা ট্রাস্টের নামে ৫০ কোটি, ইবনে সিনা হাসপাতালের ৬ কোটি ৩৪ লাখ, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের ২০ কোটি, দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের নামে ৪১ কোটি ৩৫ লাখ, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়ালের ২৩ কোটি ৭৫ লাখ এবং ফুয়াদ আল খতিবের নামে ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।

যদিও ২০১২ সালের ১৭ জুন যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তার নাম বাতিল করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘একাত্তর-পরবর্তী সময়ে জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংগঠন মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালায় যে বাংলাদেশে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় হাজার হাজার মসজিদ, মাদ্রাসা ভেঙে ফেলেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদ-মাদ্রাসা পুনরায় নির্মাণ ও মৃত রাজাকার-আলবদরদের পরিবার পরিচালনার জন্য তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনেক অর্থ সহযোগিতা পায়। এসব অর্থ লেনদেনের লবিস্ট হিসেবে কাজ করে আলবদর কমান্ডার মীর কাসেম। তখনই মীর কাসেম হয়ে ওঠে অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থীরাই ক্ষমতায় ছিল বেশি সময়। মীর কাসেমও এই সুযোগে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আরো অর্থ আনার সুযোগ পায়। সেই অর্থ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে তার পরিমাণ হাজার গুণে বৃদ্ধি করে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জামায়াতের অর্থের স্তম্ভ হলো মীর কাসেম আলী। বাংলাদেশে জঙ্গি হামলায় তার অর্থ ব্যবহৃত হচ্ছে। তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। তার পতনের মাধ্যমে জামায়াতের অর্থের স্তম্ভ ভেঙে পড়ল।’

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আদালত গণমানুষকে সন্তুষ্ট করেছে। দেশের মানুষ তার মৃত্যুর জন্যই অপেক্ষা করছে। টাকার জোরে আইনকে প্রভাবিত করা যায় না, তা আবারও প্রমাণ হলো। অপরাধী মীর কাসেম আলীকে রক্ষা করতে দেশ-বিদেশের অনেকেই ষড়যন্ত্র করে আসছিল। কোনো ষড়যন্ত্রই ধোপে টেকেনি।’

ধনসম্পদের বিষয়ে মীর কাসেম আলীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের রায়ে তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত নেই। মীর কাসেম আলী এ দেশের নাগরিক। আদালত তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছেন। তার মানে এই নয় যে, তাঁর সম্পত্তি সরকারের অধীনে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। কাসেম আলীর সম্পত্তি তাঁর সন্তানরাই দেখাশোনা করবেন। রায় কার্যকর হলে তাঁর উত্তরাধিকাররা এসব সম্পত্তির মালিক হবেন। এ জন্য ইসলামের সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি রয়েছে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মীর কাসেমের এত সম্পদের কী হবে

আপডেট টাইম : ১২:৪৩:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য চলছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। এই ধনকুবের জামায়াত নেতাকে দলটির খুঁটি বলে মনে করা হয়। বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার সুযোগে হাজার-কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন এই যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিস্ট নিয়োগ ও আর্থিক লেনদেনের নেতৃত্বেও ছিলেন মীর কাসেম। যদিও সরকারের সর্বোচ্চ তৎপরতায় কোন ফায়দা হয়নি শেষ পর্যন্ত। তবে মীর কাসেমের ফাঁসির পর সেসব সম্পদ কী হবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে আলোচনা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর স্থায়ীভাবে ঢাকায় আসেন মীর কাসেম। এরপর অনুকূল পরিবেশ না থাকায় সেখান থেকে সৌদি আরবে গিয়ে রাজাকারদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য বিপুল অর্থ সহায়তা জোগাড় করেন তিনি। পরে ওই অর্থ নিজেই ভোগ করতে থাকেন পুরোটা, গড়ে তোলেন এনজিও। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর দেশে ফিরে আসা মীর কাসেম মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনৈতিক সাহায্যপুষ্ট রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী নামের এনজিওর কান্ট্রি ডিরেক্টর হন। সেই এনজিওর অর্থে তিনি একের পর এক গড়ে তোলেন ব্যবসায়িক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সেই থেকে জামায়াতের সাংগঠনিক ব্যয় নির্বাহে সবচেয়ে বেশি অর্থের জোগানদাতা মীর কাসেম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিস্ট নিয়োগ ও আর্থিক লেনদেনের নেতৃত্বেও ছিলেন হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক মীর কাসেম আলী।

জানা গেছে, কেবল জামায়াত নেতাদের মধ্যেই নয়, গত তিন দশকে দেশের অন্যতম বড় ব্যবসায়ীতে পরিণত হন মীর কাসেম আলী। ব্যাংক, হাসপাতাল, কৃষি ব্যবসা, গণমাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয়, ওষুধশিল্পসহ বিভিন্ন খাতে বিস্তার করেন তার ব্যবসা। এসব ব্যবসা থেকে বিপুল আয়ের বড় একটি অংশ তিনি ব্যয় করতেন জামায়াতের রাজনীতির পেছনে, বিভিন্ন নামে গড়া ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে।

সূত্র জানায়, বেশকিছু আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক মীর কাসেমের সম্পদ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু সে তুলনায় তার ব্যক্তি নামে সম্পদ কম দেখানো হয়েছে। তার তত্ত্বাবধানের বেশির ভাগ সম্পদই বিভিন্ন কোম্পানি, ট্রাস্ট ও বেসরকারি সংস্থার নামে রয়েছে। ঢাকা কর অঞ্চল-৫-এর সার্কেল ৫০-এর করদাতা মীর কাসেম আলীর কর শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএন নম্বর হলো ০৭৬-১০৩-৯৬৬৩। তিনি ঢাকার মিরপুরের দক্ষিণ মনিপুরে ২৮৭ নম্বর প্লটের বহুতল ভবন পেয়েছেন পৈতৃকসূত্রে। এ ছাড়া তার ব্যক্তি নামে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একতা সোসাইটির ৫ কাঠা জমি ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চালায় সাড়ে ১২ শতক জমি রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মীর কাসেমের ধানমন্ডির বহুতল ভবন কেয়ারী প্লাজার অবিক্রীত ১৭৮.৬৯ বর্গমিটারের মালিক। বাকি অংশ ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মোট ২৭ হাজার ২৭৭টি শেয়ার রয়েছে তার নিজ নামে। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১০০টি এবং দুই ছেলে-তিন মেয়ের নামে রয়েছে ৫০০টি। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ২ হাজার ১১৩টি শেয়ার, কেয়ারী লিমিটেডের ১৪ হাজার শেয়ার, কেয়ারী টেলিকমের ১০ হাজার, কেয়ারী ট্যুরস অ্যান্ড সার্ভিসেসের ১ হাজার শেয়ার, কেয়ারী ঝর্না লিমিটেডের ২০টি, কেয়ারী তাজ লিমিটেডের ৫টি, কেয়ারী সান লিমিটেডের ৫টি, কেয়ারী স্প্রিং লিমিটেডের ২০টি, সেভেল স্কাই লিমিটেডের ১০০, মীর আলী লিমিটেডের ২৫টি এবং দিগন্ত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের ১০০টি শেয়ার রয়েছে মীর কাসেম আলীর নামে।

এছাড়া, তিনি কেয়ারী লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ইবনে সিনা ট্রাস্টের সদস্য (প্রশাসন), ইবনে সিনা হাসপাতালের পরিচালক, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের পরিচালক, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্টের সদস্য ও ফুয়াদ আল খতিব চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের সদস্য। তিনি ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন, রাবেতা আল আলম আল ইসলামী, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট, ফুয়াদ আল খতিব চ্যারিটি ফাউন্ডেশন এবং অ্যাসোসিয়েশন অব মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার এজেন্সিসের বিভিন্ন বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিতির জন্য নিয়মিত ভাতা পেতেন। এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদে আছেন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসম্যান চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, আল্লামা ইকবাল সংসদ, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি, সেন্টার ফর স্ট্রাটেজি অ্যান্ড পিস, বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ইসলামিক ট্রাস্ট ও ইসলামিক ইকোনমিক্স রিসার্চ সেন্টারের।

সূত্র জানায়, মীর কাসেম আলীর ২০১০ সালের আয়কর রিটার্নে ব্যক্তিগত ঘোষিত মোট পরিসম্পদ ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩২৪ টাকা। এর মধ্যে তার নামে থাকা শেয়ারগুলোর মূল্য ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ঢাকার বাড়ি ও জমির দাম মাত্র কয়েক লাখ টাকা করে উল্লেখ করা হয়েছে রিটার্নে। সে সময় তার বার্ষিক আয় ছিল ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৫২৯ এবং ব্যাংকে ছিল ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭০১ টাকা। তবে মীর কাসেম আলী-সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের অঙ্কগুলোও বড় এবং এর কোনোটিই খেলাপি নয়। কেয়ারী লিমিটেডের নামে ঋণ ৬০ কোটি ৯৩ লাখ, ইবনে সিনা ট্রাস্টের নামে ৫০ কোটি, ইবনে সিনা হাসপাতালের ৬ কোটি ৩৪ লাখ, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের ২০ কোটি, দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের নামে ৪১ কোটি ৩৫ লাখ, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়ালের ২৩ কোটি ৭৫ লাখ এবং ফুয়াদ আল খতিবের নামে ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।

যদিও ২০১২ সালের ১৭ জুন যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে তার নাম বাতিল করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘একাত্তর-পরবর্তী সময়ে জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংগঠন মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালায় যে বাংলাদেশে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় হাজার হাজার মসজিদ, মাদ্রাসা ভেঙে ফেলেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। ক্ষতিগ্রস্ত মসজিদ-মাদ্রাসা পুনরায় নির্মাণ ও মৃত রাজাকার-আলবদরদের পরিবার পরিচালনার জন্য তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনেক অর্থ সহযোগিতা পায়। এসব অর্থ লেনদেনের লবিস্ট হিসেবে কাজ করে আলবদর কমান্ডার মীর কাসেম। তখনই মীর কাসেম হয়ে ওঠে অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থীরাই ক্ষমতায় ছিল বেশি সময়। মীর কাসেমও এই সুযোগে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আরো অর্থ আনার সুযোগ পায়। সেই অর্থ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে তার পরিমাণ হাজার গুণে বৃদ্ধি করে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জামায়াতের অর্থের স্তম্ভ হলো মীর কাসেম আলী। বাংলাদেশে জঙ্গি হামলায় তার অর্থ ব্যবহৃত হচ্ছে। তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। তার পতনের মাধ্যমে জামায়াতের অর্থের স্তম্ভ ভেঙে পড়ল।’

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আদালত গণমানুষকে সন্তুষ্ট করেছে। দেশের মানুষ তার মৃত্যুর জন্যই অপেক্ষা করছে। টাকার জোরে আইনকে প্রভাবিত করা যায় না, তা আবারও প্রমাণ হলো। অপরাধী মীর কাসেম আলীকে রক্ষা করতে দেশ-বিদেশের অনেকেই ষড়যন্ত্র করে আসছিল। কোনো ষড়যন্ত্রই ধোপে টেকেনি।’

ধনসম্পদের বিষয়ে মীর কাসেম আলীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের রায়ে তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত নেই। মীর কাসেম আলী এ দেশের নাগরিক। আদালত তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছেন। তার মানে এই নয় যে, তাঁর সম্পত্তি সরকারের অধীনে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। কাসেম আলীর সম্পত্তি তাঁর সন্তানরাই দেখাশোনা করবেন। রায় কার্যকর হলে তাঁর উত্তরাধিকাররা এসব সম্পত্তির মালিক হবেন। এ জন্য ইসলামের সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি রয়েছে।’