ঢাকা ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার প্রভাব পাবনায় হাজার একর জমির আখ পানির নিচে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৫:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • ৩১৫ বার

আকস্মিকভাবে পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় পাবনা সুগার মিলের এখতিয়ারাধীন দেড় সহস্রাধিক একর জমিতে আবাদ করা আখ তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া এসব জমি পদ্মা নদীর পাড়ে সাঁড়া, রূপপুর, সাহাপুর, কামালপুর, চরকামালপুর, লক্ষ্মীকুণ্ডা, পাকশীসহ আশপাশের এলাকার। এ অবস্থায় সামনের মাড়াই মৌসুমে আখ সংকটের আশঙ্কা করছে মিল কর্তৃপক্ষ।

পাবনা সুগার মিলের কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চলতি আবাদ মৌসুমে মিলের অধীনে চার হাজার ১১৫ একর জমিতে আখ রোপণ করা হয়েছে। মিলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) সায়েদুর রহমান জানান, আবাদকৃত জমির মধ্যে এক হাজার ৭০০ একর জমির আখ তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাহাপুর ও লক্ষ্মীকুণ্ডা এলাকার ১৮৭ একর জমির আখ। সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়ায় পানি নেমে যাওয়ার পরও এসব আখ আর কোনো কাজে আসবে না। আর পানি বেশি দিন স্থায়ী হলে বাকি জমির আখেরও একই অবস্থা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কাই যদি সত্যি হয় তাহলে আগামী মাড়াই মৌসুমে আখ সংকটে মিলের লোকসানের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে লক্ষ্মীকুণ্ডা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত আখচাষি নাসির উদ্দিন জানান, চলতি আবাদ মৌসুমে পাবনা সুগার মিল থেকে আখের বীজ ও ঋণ নিয়ে চরের প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে তিনি আখ রোপণ করেন। ভালো আবহাওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছিল। হঠাৎ বন্যায় নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীপাড়ের পুরো নিচু এলাকা ডুবে গেছে। এতে অন্যদের মতো তাঁর রোপণকৃত সব আখ তলিয়ে গেছে। এখন সময়মতো সুগার মিলে আখ সরবরাহ করতে না পারলে আর্থিকভাবে তাঁকে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। একই ধরনের কথা জানালেন আখচাষি নজরুল ইসলাম, মোক্তার হোসেন, আনিসুর রহমান, আব্দুল মান্নান, আতিয়ার হোসেনসহ অন্যরা। নিজেদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে এসব আখচাষি জানান, পানিতে ডুবে থাকা আখ ইতিমধ্যে লালচে রং ধারণ করেছে। পানি আরো এক সপ্তাহ স্থায়ী হলে আবাদকৃত সব আখই নষ্ট হয়ে যাবে।

পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন জানালেন, বন্যার পানিতে আখের জমি তলিয়ে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে শুধু চাষিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, মিলেরও ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে রোপণ মৌসুম শুরু হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পানিতে না ডোবা জমিতে নতুন করে আখ রোপণ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক লিয়াকত আলী পাবনা সুগার মিলের আখ রোপণ মৌসুমের উদ্বোধন করেন।

পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগ জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে পদ্মায় পানি কমেছে। পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে হাইড্রোলজির পানি পরিমাপক আব্দুল হামিদ কালের কণ্ঠকে জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত পদ্মা নদীর এই পয়েন্টে বিপত্সীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। তিনি জানান, নদী তীরবর্তী নিচু জমিগুলো তলিয়ে যাওয়ায় ফসলহানির একটা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে দ্রুতই পানি নেমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার প্রভাব পাবনায় হাজার একর জমির আখ পানির নিচে

আপডেট টাইম : ১২:২৫:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আকস্মিকভাবে পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় পাবনা সুগার মিলের এখতিয়ারাধীন দেড় সহস্রাধিক একর জমিতে আবাদ করা আখ তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া এসব জমি পদ্মা নদীর পাড়ে সাঁড়া, রূপপুর, সাহাপুর, কামালপুর, চরকামালপুর, লক্ষ্মীকুণ্ডা, পাকশীসহ আশপাশের এলাকার। এ অবস্থায় সামনের মাড়াই মৌসুমে আখ সংকটের আশঙ্কা করছে মিল কর্তৃপক্ষ।

পাবনা সুগার মিলের কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চলতি আবাদ মৌসুমে মিলের অধীনে চার হাজার ১১৫ একর জমিতে আখ রোপণ করা হয়েছে। মিলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) সায়েদুর রহমান জানান, আবাদকৃত জমির মধ্যে এক হাজার ৭০০ একর জমির আখ তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাহাপুর ও লক্ষ্মীকুণ্ডা এলাকার ১৮৭ একর জমির আখ। সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়ায় পানি নেমে যাওয়ার পরও এসব আখ আর কোনো কাজে আসবে না। আর পানি বেশি দিন স্থায়ী হলে বাকি জমির আখেরও একই অবস্থা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কাই যদি সত্যি হয় তাহলে আগামী মাড়াই মৌসুমে আখ সংকটে মিলের লোকসানের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে।

সরেজমিন পরিদর্শনকালে লক্ষ্মীকুণ্ডা এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত আখচাষি নাসির উদ্দিন জানান, চলতি আবাদ মৌসুমে পাবনা সুগার মিল থেকে আখের বীজ ও ঋণ নিয়ে চরের প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে তিনি আখ রোপণ করেন। ভালো আবহাওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছিল। হঠাৎ বন্যায় নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীপাড়ের পুরো নিচু এলাকা ডুবে গেছে। এতে অন্যদের মতো তাঁর রোপণকৃত সব আখ তলিয়ে গেছে। এখন সময়মতো সুগার মিলে আখ সরবরাহ করতে না পারলে আর্থিকভাবে তাঁকে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। একই ধরনের কথা জানালেন আখচাষি নজরুল ইসলাম, মোক্তার হোসেন, আনিসুর রহমান, আব্দুল মান্নান, আতিয়ার হোসেনসহ অন্যরা। নিজেদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে এসব আখচাষি জানান, পানিতে ডুবে থাকা আখ ইতিমধ্যে লালচে রং ধারণ করেছে। পানি আরো এক সপ্তাহ স্থায়ী হলে আবাদকৃত সব আখই নষ্ট হয়ে যাবে।

পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন জানালেন, বন্যার পানিতে আখের জমি তলিয়ে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে শুধু চাষিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, মিলেরও ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে রোপণ মৌসুম শুরু হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পানিতে না ডোবা জমিতে নতুন করে আখ রোপণ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক লিয়াকত আলী পাবনা সুগার মিলের আখ রোপণ মৌসুমের উদ্বোধন করেন।

পাবনা হাইড্রোলজি বিভাগ জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে পদ্মায় পানি কমেছে। পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে হাইড্রোলজির পানি পরিমাপক আব্দুল হামিদ কালের কণ্ঠকে জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত পদ্মা নদীর এই পয়েন্টে বিপত্সীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। তিনি জানান, নদী তীরবর্তী নিচু জমিগুলো তলিয়ে যাওয়ায় ফসলহানির একটা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে দ্রুতই পানি নেমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।