ঢাকা ০৮:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লালপুরের চরে কৃষিতে কোটি টাকার ক্ষতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৫:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • ৪৮৯ বার

ভারত ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ায় পানি বৃদ্ধির কারণে নাটোরের লালপুরের পদ্মার চরে চাষ করা শাকসবজি, পাট, আখ, আউশ ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা। তবে প্রকৃত ক্ষতি আরো অনেক বেশি বলে দাবি করছে স্থানীয় কৃষকরা।

লালপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, উপজেলার পদ্মার চরে মোট তিন হাজার ২৪০ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ায় আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে চরের শাকসবজি, আউশ ধান, পাট, কুমড়ার ক্ষেত তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে সবজি ৭০ হেক্টর, আউশ ধান ৩৫ হেক্টর এবং পাট ২০ হেক্টর। তবে চরে আখ বেশি চাষ হলেও এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই।

উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নওসাড়াপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস পেশায় সরকারি চাকরিজীবী। পদ্মার চরে ২০ বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো তিনি থাই পেয়ারা ও লেবু বাগান করেছিলেন। কিন্তু ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ায় তাঁর বাগান দুটি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। কিছুদিন আগেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাঁর বাগানের পেয়ারার ভালো দাম বললেও এখন আর কোনো গ্রাহক মিলছে না। এতে তিনি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘১৯৮৮ সালের পর চরে কখনো বন্যার পানি ওঠেনি। এবার হঠাৎ করেই পানি বৃদ্ধির কারণে সব তলিয়ে গেছে। পেয়ারাসহ গাছ মরে যাচ্ছে। আকস্মিক এই বন্যায় প্রায় আট লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সহায়তা পেলে এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতো।’

শুধু আব্দুল কুদ্দুস নন, ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার প্রভাবে কুমড়ার ক্ষেত, পাট, আখ, আউশ ধানসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে চরের অন্যান্য কৃষক। ফসল হারিয়ে তারা এখন দিশাহারা।

নওসাড়া চরের কৃষক হেলাল মোল্লা বলেন, ‘চরে যা ছিল সব ধুয়েমুছে চলে গেছে। যেটুকু ফসলের আশা করেছিলাম সবটুকু পানিতে ভেসে গেছে। এখন দুই চোখে অন্ধকার দেখছি।’

একই চরের আরেক কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, ‘চরে এই মৌসুমে কুমড়ার চাষ হয় ব্যাপকভাবে। কিন্তু পানিতে সব তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। হাজার হাজার টাকা খরচ করে এক টাকাও পাওয়া যাবে না আর। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তার দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে পদ্মার চর এবং নদীর পারে গড়ে ওঠা থাই পেয়ারা ও লেবু বাগান প্লাবিত হয়ে পড়েছে। আর প্লাবিত ফল বাগানের কোনো পরিসংখ্যানও নেই কৃষি বিভাগের কাছে। কৃষি বিভাগ বলছে, ফল বাগানে পানি ঢুকলেও গাছ নষ্ট হবে না। পানি নেমে যাওয়ার পর বাগানগুলো আবার গড়ে উঠবে।

লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘পুরো চর সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। উঠতি ফসলের মধ্যে আউশ ধান ও পাট কাটা চলছিল। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সবজি ক্ষেতের। প্রাথমিকভাবে কৃষি বিভাগ এক কোটি টাকার ক্ষতি নিরূপণ করেছে।’

নাটোরের জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি নিরূপণের জন্য স্থানীয় কৃষি বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

লালপুরের চরে কৃষিতে কোটি টাকার ক্ষতি

আপডেট টাইম : ১২:১৫:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ভারত ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ায় পানি বৃদ্ধির কারণে নাটোরের লালপুরের পদ্মার চরে চাষ করা শাকসবজি, পাট, আখ, আউশ ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা। তবে প্রকৃত ক্ষতি আরো অনেক বেশি বলে দাবি করছে স্থানীয় কৃষকরা।

লালপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, উপজেলার পদ্মার চরে মোট তিন হাজার ২৪০ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ায় আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে চরের শাকসবজি, আউশ ধান, পাট, কুমড়ার ক্ষেত তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে সবজি ৭০ হেক্টর, আউশ ধান ৩৫ হেক্টর এবং পাট ২০ হেক্টর। তবে চরে আখ বেশি চাষ হলেও এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই।

উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নওসাড়াপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস পেশায় সরকারি চাকরিজীবী। পদ্মার চরে ২০ বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো তিনি থাই পেয়ারা ও লেবু বাগান করেছিলেন। কিন্তু ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ায় তাঁর বাগান দুটি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। কিছুদিন আগেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাঁর বাগানের পেয়ারার ভালো দাম বললেও এখন আর কোনো গ্রাহক মিলছে না। এতে তিনি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘১৯৮৮ সালের পর চরে কখনো বন্যার পানি ওঠেনি। এবার হঠাৎ করেই পানি বৃদ্ধির কারণে সব তলিয়ে গেছে। পেয়ারাসহ গাছ মরে যাচ্ছে। আকস্মিক এই বন্যায় প্রায় আট লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সহায়তা পেলে এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতো।’

শুধু আব্দুল কুদ্দুস নন, ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার প্রভাবে কুমড়ার ক্ষেত, পাট, আখ, আউশ ধানসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে চরের অন্যান্য কৃষক। ফসল হারিয়ে তারা এখন দিশাহারা।

নওসাড়া চরের কৃষক হেলাল মোল্লা বলেন, ‘চরে যা ছিল সব ধুয়েমুছে চলে গেছে। যেটুকু ফসলের আশা করেছিলাম সবটুকু পানিতে ভেসে গেছে। এখন দুই চোখে অন্ধকার দেখছি।’

একই চরের আরেক কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, ‘চরে এই মৌসুমে কুমড়ার চাষ হয় ব্যাপকভাবে। কিন্তু পানিতে সব তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। হাজার হাজার টাকা খরচ করে এক টাকাও পাওয়া যাবে না আর। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তার দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে পদ্মার চর এবং নদীর পারে গড়ে ওঠা থাই পেয়ারা ও লেবু বাগান প্লাবিত হয়ে পড়েছে। আর প্লাবিত ফল বাগানের কোনো পরিসংখ্যানও নেই কৃষি বিভাগের কাছে। কৃষি বিভাগ বলছে, ফল বাগানে পানি ঢুকলেও গাছ নষ্ট হবে না। পানি নেমে যাওয়ার পর বাগানগুলো আবার গড়ে উঠবে।

লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলাম খান বলেন, ‘পুরো চর সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। উঠতি ফসলের মধ্যে আউশ ধান ও পাট কাটা চলছিল। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সবজি ক্ষেতের। প্রাথমিকভাবে কৃষি বিভাগ এক কোটি টাকার ক্ষতি নিরূপণ করেছে।’

নাটোরের জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি নিরূপণের জন্য স্থানীয় কৃষি বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।