ঢাকা ১০:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • ২৮৭ বার

মুক্তিযুদ্ধকালে আল বদর বাহিনীর কমান্ডার ও বর্তমানে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে।

আজ শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ঢাকার অদূরে গাজীপুরের কাশিমপুর-২ কারাগারে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। জেলার নাশির আহমেদ মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফাঁসি কার্যকরে দায়িত্বে ছিলেন চার জল্লাদ। এরা হলেন- শাহজাহান, রিপন, দীন ইসলাম ও শাহীন। ফাঁসির আগে জল্লাদ শাহজাহানের নেতৃত্বে মঞ্চ ঘিরে শনিবার সন্ধ্যার পর দুই দফা মহড়া হয়।

ষষ্ঠ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের মধ্যে ষষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে মীর কাসেমের শাস্তি কার্যকর করা হলো। এর আগে পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। তাদের মধ্যে চার জনই জামায়াতের শীর্ষ নেতা। এর আগে যে পাঁচ জনের দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তাদের সবাইকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। কাশিমপুর কারাগারে কোনো যুদ্ধাপরাধীর এই প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো।

কর্মকর্তাদের কারাগারে প্রবেশ
রাত সাড়ে ৯টায় কারাগারে প্রবেশ করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএসম আলম ও সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দার খান। পরে সিভিল সার্জন কারাগারের চিকিৎসককে নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষী করতে মীর কাসেম আলীর সেলে যান। তার আগে মীর কাসেম আলীকে গোসল করিয়েছেন ইমাম বেলাল উদ্দিন। এর আগে দুপুর ২টার দিকে কারাগারে প্রবেশ করেন অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন্স) কর্নেল ইকবাল কবীর, বিকেল ৪টায় প্রবেশ করেন ঢাকা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন্স) গোলাম হায়দার। সন্ধ্যা ৭টার দিকে কারাগারে যান আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।

স্বজনদের সাক্ষাৎ
আজ বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে শেষ দেখা করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের ৪০ থেকে ৪৫ জন সদস্য কারাগারে প্রবেশ করে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের সদস্যরা সোয়া ৪টায় দেখা করার সুযোগ পান। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় পরিবারের সদস্যরা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে মীর কাসেমের স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি (মীর কাসেম) মৃত্যুকে ভয় করেন না। মীর কাসেম শেষ মুহূর্তে আইনজীবী ছেলের সঙ্গে দেখা না হওয়ায় আক্ষেপ করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা সাক্ষাতের পর কারাগারের বাইরে এসে কাসেমপত্নী সাংবাদিকদের আরও বলেন, যারা ফাঁসি দিচ্ছে তারা জয়ী হবে না। এই মৃত্যু ইসলামের জন্য মৃত্যু। এই মৃত্যু শহীদের শামিল। এর আগে মীর কাসেমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাঁর পরিবারের সদস্যদের ডাকে কারা কর্তৃপক্ষ।

কারাগার এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর ঘিরে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কারাফটক ও এর আশপাশের এলাকায় ৪ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কারাগার এলাকাসহ গাজীপুরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় গাজীপুরজুড়ে টহল দিতে শুরু করেছেন ৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলাম বলেন, পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি ৪ প্লাটুন বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখা হয়েছে। এছাড়া গাজীপুরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান
শাহবাগে অবস্থান করছে গণজাগরণ মঞ্চ। আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তারা শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেয়। রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তারা এখানে অবস্থান করবে। মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর রায় কার্যকরের মাধ্যমে জাতির আশা আকাঙ্খা বাস্তবায়িত হবে। দুই বছর আগে তার ফাঁসির রায় হয়েছে। এই রায় কার্যকরের মাধ্যমে ইসলামী ছাত্রসংঘের সাবেক নেতা এবং ইসলামী ছাত্রশিরিবের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে তাদের যোগের অবসান ঘটবে।

মীর কাসেমের যে অভিযোগে প্রাণদণ্ড
অভিযোগ ১১ : ১৯৭১ সালে ঈদুল ফিতরের পরের যে কোনো একদিন মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরের কোনো এক অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। তাকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হলে আরো পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

* রিভিউ রায় লিখেছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। এর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন বেঞ্চের বাকি চার বিচারক।

* আপিলের রায়ে ১১ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির রায় বহাল থাকে। রিভিউ খারিজ হওয়ায় সেই দণ্ডই এখন তার প্রাপ্য।

* ৪, ৬ ও ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে কাসেমকে খালাস দেয় আপিল বিভাগ। আর ২, ৩, ৭, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মোট ৫৮ বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকে। রিভিউ আবেদনে ১১ নম্বর ছাড়া আর কোনো অভিযোগের বিষয়ে যুক্তি দেয়নি আসামিপক্ষ।

* রায়ে বলা হয়, মীর কাসেমের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। তাকে দোষী সাব‌্যস্ত করার সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে। রিভিউ আবেদন খারিজ করা হল।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর কাসেম ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অর্থাৎ মজলিসে শূরার সদস্য হিসেবে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলে নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার যুদ্ধাপরাধের বিচার।

মীর কাসেম আলী এ মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেমকে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তানের খান সেনাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হওয়া ‘বাঙালি খান’ হিসাবে, যিনি সে সময় জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান, তা উঠে এসেছে ট্রাইব‌্যুনাল ও আপিল বিভাগের রায়ে।

একাত্তরে মীর কাসেমের নির্দেশেই চট্টগ্রাম টেলিগ্রাফ অফিস সংলগ্ন এলাকায় হিন্দু মালিকানাধীন মহামায়া ভবন দখল করে নাম দেওয়া হয় ডালিম হোটেল। সেখানে গড়ে তোলা হয় বদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঘাঁটি এবং বন্দিশিবির। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে সেই ডালিম হোটেলকে বলা হয় ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর

আপডেট টাইম : ১২:০৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মুক্তিযুদ্ধকালে আল বদর বাহিনীর কমান্ডার ও বর্তমানে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসির দণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে।

আজ শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিটে ঢাকার অদূরে গাজীপুরের কাশিমপুর-২ কারাগারে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। জেলার নাশির আহমেদ মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফাঁসি কার্যকরে দায়িত্বে ছিলেন চার জল্লাদ। এরা হলেন- শাহজাহান, রিপন, দীন ইসলাম ও শাহীন। ফাঁসির আগে জল্লাদ শাহজাহানের নেতৃত্বে মঞ্চ ঘিরে শনিবার সন্ধ্যার পর দুই দফা মহড়া হয়।

ষষ্ঠ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের মধ্যে ষষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে মীর কাসেমের শাস্তি কার্যকর করা হলো। এর আগে পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। তাদের মধ্যে চার জনই জামায়াতের শীর্ষ নেতা। এর আগে যে পাঁচ জনের দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, তাদের সবাইকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। কাশিমপুর কারাগারে কোনো যুদ্ধাপরাধীর এই প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো।

কর্মকর্তাদের কারাগারে প্রবেশ
রাত সাড়ে ৯টায় কারাগারে প্রবেশ করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএসম আলম ও সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দার খান। পরে সিভিল সার্জন কারাগারের চিকিৎসককে নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষী করতে মীর কাসেম আলীর সেলে যান। তার আগে মীর কাসেম আলীকে গোসল করিয়েছেন ইমাম বেলাল উদ্দিন। এর আগে দুপুর ২টার দিকে কারাগারে প্রবেশ করেন অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন্স) কর্নেল ইকবাল কবীর, বিকেল ৪টায় প্রবেশ করেন ঢাকা বিভাগের ডিআইজি (প্রিজন্স) গোলাম হায়দার। সন্ধ্যা ৭টার দিকে কারাগারে যান আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন।

স্বজনদের সাক্ষাৎ
আজ বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে শেষ দেখা করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের ৪০ থেকে ৪৫ জন সদস্য কারাগারে প্রবেশ করে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের সদস্যরা সোয়া ৪টায় দেখা করার সুযোগ পান। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় পরিবারের সদস্যরা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে মীর কাসেমের স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি (মীর কাসেম) মৃত্যুকে ভয় করেন না। মীর কাসেম শেষ মুহূর্তে আইনজীবী ছেলের সঙ্গে দেখা না হওয়ায় আক্ষেপ করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা সাক্ষাতের পর কারাগারের বাইরে এসে কাসেমপত্নী সাংবাদিকদের আরও বলেন, যারা ফাঁসি দিচ্ছে তারা জয়ী হবে না। এই মৃত্যু ইসলামের জন্য মৃত্যু। এই মৃত্যু শহীদের শামিল। এর আগে মীর কাসেমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তাঁর পরিবারের সদস্যদের ডাকে কারা কর্তৃপক্ষ।

কারাগার এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর ঘিরে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কারাফটক ও এর আশপাশের এলাকায় ৪ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কারাগার এলাকাসহ গাজীপুরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় গাজীপুরজুড়ে টহল দিতে শুরু করেছেন ৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলাম বলেন, পুলিশ-র‌্যাবের পাশাপাশি ৪ প্লাটুন বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখা হয়েছে। এছাড়া গাজীপুরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান
শাহবাগে অবস্থান করছে গণজাগরণ মঞ্চ। আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তারা শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেয়। রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত তারা এখানে অবস্থান করবে। মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর রায় কার্যকরের মাধ্যমে জাতির আশা আকাঙ্খা বাস্তবায়িত হবে। দুই বছর আগে তার ফাঁসির রায় হয়েছে। এই রায় কার্যকরের মাধ্যমে ইসলামী ছাত্রসংঘের সাবেক নেতা এবং ইসলামী ছাত্রশিরিবের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে তাদের যোগের অবসান ঘটবে।

মীর কাসেমের যে অভিযোগে প্রাণদণ্ড
অভিযোগ ১১ : ১৯৭১ সালে ঈদুল ফিতরের পরের যে কোনো একদিন মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরের কোনো এক অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। তাকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হলে আরো পাঁচজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

* রিভিউ রায় লিখেছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। এর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন বেঞ্চের বাকি চার বিচারক।

* আপিলের রায়ে ১১ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির রায় বহাল থাকে। রিভিউ খারিজ হওয়ায় সেই দণ্ডই এখন তার প্রাপ্য।

* ৪, ৬ ও ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে কাসেমকে খালাস দেয় আপিল বিভাগ। আর ২, ৩, ৭, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মোট ৫৮ বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকে। রিভিউ আবেদনে ১১ নম্বর ছাড়া আর কোনো অভিযোগের বিষয়ে যুক্তি দেয়নি আসামিপক্ষ।

* রায়ে বলা হয়, মীর কাসেমের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। তাকে দোষী সাব‌্যস্ত করার সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে। রিভিউ আবেদন খারিজ করা হল।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর কাসেম ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অর্থাৎ মজলিসে শূরার সদস্য হিসেবে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলে নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার যুদ্ধাপরাধের বিচার।

মীর কাসেম আলী এ মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেমকে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তানের খান সেনাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হওয়া ‘বাঙালি খান’ হিসাবে, যিনি সে সময় জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান, তা উঠে এসেছে ট্রাইব‌্যুনাল ও আপিল বিভাগের রায়ে।

একাত্তরে মীর কাসেমের নির্দেশেই চট্টগ্রাম টেলিগ্রাফ অফিস সংলগ্ন এলাকায় হিন্দু মালিকানাধীন মহামায়া ভবন দখল করে নাম দেওয়া হয় ডালিম হোটেল। সেখানে গড়ে তোলা হয় বদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঘাঁটি এবং বন্দিশিবির। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে সেই ডালিম হোটেলকে বলা হয় ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’।