ঢাকা ০১:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ০ বার
ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে চীনের প্রভাব। অন্যদিকে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন ও গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ। বিশ্বমঞ্চে এই টালমাটাল পরিস্থিতির মাঝেই আগামী ২১ সেপ্টেম্বর কোয়াড বৈঠকে যোগ দিতে আমেরিকা গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার ৩ দিনের এই মার্কিন সফরে কোয়াড বৈঠকের দিকেই বাড়তি নজর বিশ্বের।

আগামী ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ দিন আমেরিকা সফর করবেন মোদি। সফর-সূচি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ২১ সেপ্টেম্বর কোয়াড সামিটে অংশ নেবেন। ২২ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় ভারতীয় সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। এবং ২৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসংঘের বৈঠকে। তবে এই সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এই কোয়াড বৈঠক। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও আমেরিকা এই চার দেশ নিয়ে গঠিত কোয়াড। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের আগ্রাসনকে সামাল দিতে হাতে হাত রেখেছিল এই দেশগুলি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বার বার অভিযোগ উঠেছে, কোয়াড ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। গত জানুয়ারি মাসে কোয়াড বৈঠক হলেও তাতে যোগ দেয়নি আমেরিকা। বরং ভারতকে বাদ দিয়ে তৈরি হয় নয়া সংগঠন ‘স্কোয়াড’। এখানে জায়গা পায় ফিলিপিন্স। এর পর কোয়াডের অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে।

কূটনৈতিক মহলের দাবি, কোয়াডের অন্তর্ভুক্ত হলেও ভারত নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান ছিল আমেরিকা। একাধিকবার এই জোটের সামরিক মহড়ায় সাগরে শক্তি প্রদর্শন করেছে নয়াদিল্লী। কিন্তু কোয়াডে থাকলেও সরাসরি চীনের সঙ্গে লড়াই যেতে চায় না ভারত। এমনকি রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বকেও খুব একটা ভালো নজরে দেখে না ওয়াশিংটন। এদিকে, নিজস্ব বিদেশনীতির জন্য পশ্চিমা বিশ্বের সমস্ত সিদ্ধান্তে সায় দেয় না ভারত। তাই কোনওদিন যদি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ায় আমেরিকা, তাহলে ভারত কতটা পাশে থাকবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই কারণে স্কোয়াডে ভারতকে রাখেনি আমেরিকা। কোয়াডও চলে যায় খানিক ব্যাকফুটে। তবে বর্তমান সময়ে যেভাবে দক্ষিণ চীন সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে বেইজিং। তাইওয়ান সীমান্তে সামরিক মহড়া তীব্র করেছে লাল ফৌজ। তাতে চিন্তা বেড়েছে আমেরিকার। সেই অবস্থায় কোয়াডের এই বৈঠক নিশ্চিতভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ।

জানা যাচ্ছে, এই বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে দেশগুলি। কোয়াড সদস্যভুক্ত দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হতে তার। ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্র বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এই বৈঠকে শুধু বিশ্বমঞ্চে দুই দেশের ‘অংশীদারিত্ব’ জোরদার হবে না, ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের’ ভীতও মজবুত হবে।

মোদি ও বাইডেনের এই বৈঠকে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক এবং ড্রাগ ফ্রেমওয়ার্ক সম্পর্কিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এছাড়া কোয়াড বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসবে রাশিয়া-ইউক্রেন ও গাজা ইসরাইল যুদ্ধ পরিস্থিতি। সেখানে ভারতের তরফে স্পষ্ট বার্তা থাকবে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের।

পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। যেখানে খালিস্তানি জঙ্গি পান্নুনের বিষয়ও উঠে আসবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাম্প্রতিক রাশিয়া ও ইউক্রেন সফর সংক্রান্ত তথ্যও ভাগ করে নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। অন্যদিকে আমেরিকার তরফে জানানো হয়েছে, কোয়াড আগের তুলনায় অনেক বেশি কৌশলগত-ভাবে ঐক্যবদ্ধ ও প্রাসঙ্গিক। ভারতে অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী কোয়াড বৈঠক।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর, চীনকে ঠেকাতে কোয়াড কি এখনও প্রাসঙ্গিক

আপডেট টাইম : ১১:০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে চীনের প্রভাব। অন্যদিকে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন ও গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ। বিশ্বমঞ্চে এই টালমাটাল পরিস্থিতির মাঝেই আগামী ২১ সেপ্টেম্বর কোয়াড বৈঠকে যোগ দিতে আমেরিকা গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার ৩ দিনের এই মার্কিন সফরে কোয়াড বৈঠকের দিকেই বাড়তি নজর বিশ্বের।

আগামী ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ দিন আমেরিকা সফর করবেন মোদি। সফর-সূচি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ২১ সেপ্টেম্বর কোয়াড সামিটে অংশ নেবেন। ২২ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় ভারতীয় সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। এবং ২৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসংঘের বৈঠকে। তবে এই সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এই কোয়াড বৈঠক। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও আমেরিকা এই চার দেশ নিয়ে গঠিত কোয়াড। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের আগ্রাসনকে সামাল দিতে হাতে হাত রেখেছিল এই দেশগুলি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বার বার অভিযোগ উঠেছে, কোয়াড ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। গত জানুয়ারি মাসে কোয়াড বৈঠক হলেও তাতে যোগ দেয়নি আমেরিকা। বরং ভারতকে বাদ দিয়ে তৈরি হয় নয়া সংগঠন ‘স্কোয়াড’। এখানে জায়গা পায় ফিলিপিন্স। এর পর কোয়াডের অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে।

কূটনৈতিক মহলের দাবি, কোয়াডের অন্তর্ভুক্ত হলেও ভারত নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান ছিল আমেরিকা। একাধিকবার এই জোটের সামরিক মহড়ায় সাগরে শক্তি প্রদর্শন করেছে নয়াদিল্লী। কিন্তু কোয়াডে থাকলেও সরাসরি চীনের সঙ্গে লড়াই যেতে চায় না ভারত। এমনকি রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বকেও খুব একটা ভালো নজরে দেখে না ওয়াশিংটন। এদিকে, নিজস্ব বিদেশনীতির জন্য পশ্চিমা বিশ্বের সমস্ত সিদ্ধান্তে সায় দেয় না ভারত। তাই কোনওদিন যদি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ায় আমেরিকা, তাহলে ভারত কতটা পাশে থাকবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই কারণে স্কোয়াডে ভারতকে রাখেনি আমেরিকা। কোয়াডও চলে যায় খানিক ব্যাকফুটে। তবে বর্তমান সময়ে যেভাবে দক্ষিণ চীন সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে বেইজিং। তাইওয়ান সীমান্তে সামরিক মহড়া তীব্র করেছে লাল ফৌজ। তাতে চিন্তা বেড়েছে আমেরিকার। সেই অবস্থায় কোয়াডের এই বৈঠক নিশ্চিতভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ।

জানা যাচ্ছে, এই বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে দেশগুলি। কোয়াড সদস্যভুক্ত দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হতে তার। ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্র বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এই বৈঠকে শুধু বিশ্বমঞ্চে দুই দেশের ‘অংশীদারিত্ব’ জোরদার হবে না, ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের’ ভীতও মজবুত হবে।

মোদি ও বাইডেনের এই বৈঠকে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক এবং ড্রাগ ফ্রেমওয়ার্ক সম্পর্কিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এছাড়া কোয়াড বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসবে রাশিয়া-ইউক্রেন ও গাজা ইসরাইল যুদ্ধ পরিস্থিতি। সেখানে ভারতের তরফে স্পষ্ট বার্তা থাকবে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের।

পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। যেখানে খালিস্তানি জঙ্গি পান্নুনের বিষয়ও উঠে আসবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাম্প্রতিক রাশিয়া ও ইউক্রেন সফর সংক্রান্ত তথ্যও ভাগ করে নেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। অন্যদিকে আমেরিকার তরফে জানানো হয়েছে, কোয়াড আগের তুলনায় অনেক বেশি কৌশলগত-ভাবে ঐক্যবদ্ধ ও প্রাসঙ্গিক। ভারতে অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী কোয়াড বৈঠক।