ঢাকা ১২:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

রাশিয়ার ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র কতটা বিধ্বংসী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
  • ২ বার

ইউক্রেনের দিনিপ্রো শহরে বৃহস্পতিবার হামলা চালায় একটি রুশ বিমান। এ হামলাকে অস্বাভাবিক হামলা বলে দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। মূলত এই হামলার মাধ্যমে এমন এক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, যা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তবে পশ্চিমা কর্মকর্তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা বলেন, ‘এ ধরনের হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক সতর্কতা জারি করত।’

এদিকে হামলার কয়েক ঘণ্টা পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে জানান, রাশিয়া ‘‘নতুন ধাঁচের মাঝারি-পাল্লার’’ একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে; যার কোড নাম ওরেশনিক। রুশ ভাষায় এর অর্থ হ্যাজেল গাছ।

হ্যাজেল গাছ বেশ বড় আকারের ঝোপ জাতীয় গাছ। যার পাতা চারদিকে গুচ্ছ হয়ে ছড়িয়ে থাকে। গাছটির অবয়বের সাথে বিস্ফোরণের সাদৃশ্য রয়েছে।

এদিন প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্রটি ম্যাক-১০ (শব্দের গতির দশ গুণ)। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার গতিতে চলেছে।’

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বর্তমানে এই অস্ত্রটি প্রতিহত করার কোনো উপায় নেই। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই ক্ষেপণাস্ত্রটির পরীক্ষা চলতে থাকবে।’

হামলা প্রসঙ্গে পুতিনের ভাষ্য, ‘দিনিপ্রোয় একটি বড় সামরিক-শিল্প স্থাপনায় এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। শিল্প স্থাপনাটি সামরিক সরঞ্জাম ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহৃত হতো।’

ক্ষেপণাস্ত্রের বর্ণনা

ইউক্রেনীয় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি এক ধরনের নতুন আইসিবিএম, যার নাম কেদর, রুশ ভাষায় যার অর্থ সিডার গাছ।

এ সংস্থা আরও জানায়, এটি ম্যাক ১১ গতিতে এগিয়েছে এবং উৎক্ষেপণ স্থল রাশিয়ার আস্ট্রাখান থেকে ১,০০০ কিমি (৬২০ মাইল) দূরে অবস্থিত ইউক্রেনের দিনিপ্রোতে পৌঁছাতে ১৫ মিনিট সময় নিয়েছে।

তারা জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রটিতে ছয়টি ওয়ারহেড ছিল, প্রতিটিতে আরও ছয়টি সাব-মিউনিশন ছিল।

ওয়ারহেড হল ক্ষেপণাস্ত্রের সম্মুখ অংশ যাতে বিস্ফোরক এজেন্ট থাকে এবং সাব মিউনিশন হল বিস্ফোরক, যা ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেড থেকে ছাড়া হয়।

এগুলো একটি ক্যানিস্টারে থাকে যা পরে মধ্য-আকাশে খুলে যায় এবং বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে বিস্ফোরিত হয়।

এদিকে পুতিনও জানান, ওরেশনিকের গতি ম্যাক ১০ (প্রায় ২.৫-৩ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড)। এই গতি ও ক্ষেপণাস্ত্রের মাঝপথে গতিপথ পরিবর্তনের ক্ষমতা একে কার্যত অনাক্রমণীয় করে তুলেছে। আধুনিক কোনো বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম নয়।

ক্ষমতা ও ধ্বংসাত্মকতা

ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষমতার ব্যাপারে সামরিক বিশেষজ্ঞ ইগর কোরোচেঙ্কো বলেন, ‘ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রে তিন থেকে ছয়টি পৃথকভাবে নিয়ন্ত্রিত ওয়ারহেড থাকতে পারে। ইউক্রেনে ব্যবহৃত ওয়ারহেডগুলো প্রচলিত ছিল। তবে এটি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘সমসাময়িক রুশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রকৌশলের এক অনন্য সৃষ্টি’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।’

ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রের গতি

রাশিয়ার সামরিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওরেশনিকের পাল্লা ৩,০০০-৫,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

এদিকে ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যমের সূত্র থেকে জানা যায়, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি কপুস্তিন ইয়ার রেঞ্জ থেকে নিক্ষেপ করা হয়, যা দনিপ্রো থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সামরিক বিশ্লেষক দিমিত্রি করনেভ এটিকে রাশিয়ার মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম যুদ্ধক্ষেত্র ব্যবহার বলে উল্লেখ করেছেন।

ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের চুক্তি 

১৯৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ৫০০-৫,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। তবে ২০১৯ সালে দুই পক্ষই চুক্তি থেকে সরে আসে। পুতিন জানিয়েছেন, রাশিয়া পরবর্তী সময়ে মধ্যম ও স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

সর্বশেষ খবর, ওরেশনিকের মতো নতুন প্রজন্মের মরণঘাতি ভয়ংকর এই অস্ত্র ইউরোপজুড়ে ইতোমধ্যেই নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশকে হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সরকারি চাকরিতে ২২ হাজার নতুন নিয়োগের ঘোষণা আসছে

রাশিয়ার ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র কতটা বিধ্বংসী

আপডেট টাইম : ১১:০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

ইউক্রেনের দিনিপ্রো শহরে বৃহস্পতিবার হামলা চালায় একটি রুশ বিমান। এ হামলাকে অস্বাভাবিক হামলা বলে দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। মূলত এই হামলার মাধ্যমে এমন এক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, যা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) সঙ্গে তুলনা করেছেন।

তবে পশ্চিমা কর্মকর্তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা বলেন, ‘এ ধরনের হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক সতর্কতা জারি করত।’

এদিকে হামলার কয়েক ঘণ্টা পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে জানান, রাশিয়া ‘‘নতুন ধাঁচের মাঝারি-পাল্লার’’ একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে; যার কোড নাম ওরেশনিক। রুশ ভাষায় এর অর্থ হ্যাজেল গাছ।

হ্যাজেল গাছ বেশ বড় আকারের ঝোপ জাতীয় গাছ। যার পাতা চারদিকে গুচ্ছ হয়ে ছড়িয়ে থাকে। গাছটির অবয়বের সাথে বিস্ফোরণের সাদৃশ্য রয়েছে।

এদিন প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্রটি ম্যাক-১০ (শব্দের গতির দশ গুণ)। অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার গতিতে চলেছে।’

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বর্তমানে এই অস্ত্রটি প্রতিহত করার কোনো উপায় নেই। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই ক্ষেপণাস্ত্রটির পরীক্ষা চলতে থাকবে।’

হামলা প্রসঙ্গে পুতিনের ভাষ্য, ‘দিনিপ্রোয় একটি বড় সামরিক-শিল্প স্থাপনায় এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। শিল্প স্থাপনাটি সামরিক সরঞ্জাম ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহৃত হতো।’

ক্ষেপণাস্ত্রের বর্ণনা

ইউক্রেনীয় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি এক ধরনের নতুন আইসিবিএম, যার নাম কেদর, রুশ ভাষায় যার অর্থ সিডার গাছ।

এ সংস্থা আরও জানায়, এটি ম্যাক ১১ গতিতে এগিয়েছে এবং উৎক্ষেপণ স্থল রাশিয়ার আস্ট্রাখান থেকে ১,০০০ কিমি (৬২০ মাইল) দূরে অবস্থিত ইউক্রেনের দিনিপ্রোতে পৌঁছাতে ১৫ মিনিট সময় নিয়েছে।

তারা জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রটিতে ছয়টি ওয়ারহেড ছিল, প্রতিটিতে আরও ছয়টি সাব-মিউনিশন ছিল।

ওয়ারহেড হল ক্ষেপণাস্ত্রের সম্মুখ অংশ যাতে বিস্ফোরক এজেন্ট থাকে এবং সাব মিউনিশন হল বিস্ফোরক, যা ক্ষেপণাস্ত্রের ওয়ারহেড থেকে ছাড়া হয়।

এগুলো একটি ক্যানিস্টারে থাকে যা পরে মধ্য-আকাশে খুলে যায় এবং বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে বিস্ফোরিত হয়।

এদিকে পুতিনও জানান, ওরেশনিকের গতি ম্যাক ১০ (প্রায় ২.৫-৩ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড)। এই গতি ও ক্ষেপণাস্ত্রের মাঝপথে গতিপথ পরিবর্তনের ক্ষমতা একে কার্যত অনাক্রমণীয় করে তুলেছে। আধুনিক কোনো বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম নয়।

ক্ষমতা ও ধ্বংসাত্মকতা

ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষমতার ব্যাপারে সামরিক বিশেষজ্ঞ ইগর কোরোচেঙ্কো বলেন, ‘ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রে তিন থেকে ছয়টি পৃথকভাবে নিয়ন্ত্রিত ওয়ারহেড থাকতে পারে। ইউক্রেনে ব্যবহৃত ওয়ারহেডগুলো প্রচলিত ছিল। তবে এটি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘সমসাময়িক রুশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রকৌশলের এক অনন্য সৃষ্টি’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।’

ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রের গতি

রাশিয়ার সামরিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওরেশনিকের পাল্লা ৩,০০০-৫,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

এদিকে ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যমের সূত্র থেকে জানা যায়, এই ক্ষেপণাস্ত্রটি কপুস্তিন ইয়ার রেঞ্জ থেকে নিক্ষেপ করা হয়, যা দনিপ্রো থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সামরিক বিশ্লেষক দিমিত্রি করনেভ এটিকে রাশিয়ার মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম যুদ্ধক্ষেত্র ব্যবহার বলে উল্লেখ করেছেন।

ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের চুক্তি 

১৯৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ৫০০-৫,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। তবে ২০১৯ সালে দুই পক্ষই চুক্তি থেকে সরে আসে। পুতিন জানিয়েছেন, রাশিয়া পরবর্তী সময়ে মধ্যম ও স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

সর্বশেষ খবর, ওরেশনিকের মতো নতুন প্রজন্মের মরণঘাতি ভয়ংকর এই অস্ত্র ইউরোপজুড়ে ইতোমধ্যেই নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশকে হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে।