ঢাকা ০৪:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নতুন বিতর্ক: মায়া কি মন্ত্রিত্ব ছাড়ছেন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৩১:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুন ২০১৫
  • ৩৪০ বার
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি ও নারায়ণগঞ্জ র‌্যাবের সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদের গ্রেপ্তার নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
জামাতা তারেক সাঈদকে বাঁচাতে গিয়েই দৃশ্যত তিনি বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন।গণমাধ্যমে তখন তাঁকে নিয়ে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।
সে সময় তার পদত্যাগের গুঞ্জনও উঠেছিল। তখন মন্ত্রিসভার একাধিক বৈঠকে যোগদান থেকেও বিরত ছিলেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
শেষ পর্যন্ত মায়া মন্ত্রিত্ব রক্ষা করতে পারলেও মেয়ের স্বামীর শেষ রক্ষা হয়নি, চাকরি হারিয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে তারেক সাঈদকে।
দীর্ঘ দিন পর গতকাল রবিবার আদালতের একটি রায়কে ঘিরে ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মায়া ফের বিতর্কের মধ্যে পড়লেন।এই বিতর্কেও তাঁর মন্ত্রিত্ব নিয়ে ফের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
২০০৭ সালের একটি দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতে তার বিরুদ্ধে দেয়া ১৩ বছর সাজা হাইকোর্ট খালাস দেয়ার পর আপিল বিভাগ তা বাতিল করে পুনরায় শুনানির নির্দেশ দেয়ার পরই মায়ার মন্ত্রিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে।
আইনজ্ঞ ও রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, মন্ত্রিত্বে থাকার বিষয়ে আইনগত কোনো বাধা না থাকলে নৈতিকতার বিচারে মায়ার এই পদে থাকা উচিত নয়।তার মন্ত্রিত্ব ছাড়া উচিত।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে মায়া হাইকোর্টে আপিল করেন।
২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ দুর্নীতির মামলা থেকে তাঁকে খালাস দেন। পরে হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় দুদক। আপিল বিভাগ খালাসের আদেশ বাতিল করে মামলাটির ফের শুনানির আদেশ দেন।
এরফলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদকের আগের সাজা বহাল থাকল।
এ অবস্থায় মায়ার মন্ত্রিত্ব নিয়ে নৈতিক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, তার মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেয়া উচিত। কারণ আইনী দৃষ্টিতে তিনি এখন অভিযুক্ত আসামি। যদিও মন্ত্রী হিসেবে থাকার বিষয়ে আইনী কোনো বাধা নেই। কিন্তু নৈতিক অবস্থান থেকে তিনি মন্ত্রি হিসেবে থাকতে পারেন না। স্বেচ্ছায় তার মন্ত্রী পদ ছেড়ে দেয়া উচিত।
জানতে চাইলে প্রবীণ আইনজীবী ব্যরিস্টার রফিক-উল-হক  বলেন, মন্ত্রী হিসেবে থাকতে আইনী কোনো বাধা নেই। কিন্তু নৈতিক অবস্থান থেকে তার মন্ত্রী থাকা উচিত নয়। স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব ছাড়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন  মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেছেন, ‘মন্ত্রিত্ব থাকা না থাকার বিষয়ে মায়া চৌধুরীই ভাল বলতে পারবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া  বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের কাগজপত্র এখনও হাতে পাইনি। আদেশের কপি হাতে পেলেই আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে বাকি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সেনা-সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৩ জুন রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির এই মামলাটি করে দুদক। ওই বছরের ২৫ অক্টোবর মায়া, তাঁর স্ত্রী পারভীন চৌধুরী, দুই ছেলে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী ও রাশেদুল হোসেন চৌধুরী এবং সাজেদুলের স্ত্রী সুবর্ণা চৌধুরীকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২ কোটি ৯৭ লাখ ৯ হাজার টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। ৫ কোটি ৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জন করে ৬ কোটি ২৯ লাখ ২৩ হাজার টাকার সম্পদ নিজেদের দখলে রেখেছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালত মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়। একই সঙ্গে তাকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার বাকি আসামিদের খালাস দেয়া হয়।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

নতুন বিতর্ক: মায়া কি মন্ত্রিত্ব ছাড়ছেন

আপডেট টাইম : ০৩:৩১:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুন ২০১৫
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি ও নারায়ণগঞ্জ র‌্যাবের সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদের গ্রেপ্তার নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
জামাতা তারেক সাঈদকে বাঁচাতে গিয়েই দৃশ্যত তিনি বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন।গণমাধ্যমে তখন তাঁকে নিয়ে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।
সে সময় তার পদত্যাগের গুঞ্জনও উঠেছিল। তখন মন্ত্রিসভার একাধিক বৈঠকে যোগদান থেকেও বিরত ছিলেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
শেষ পর্যন্ত মায়া মন্ত্রিত্ব রক্ষা করতে পারলেও মেয়ের স্বামীর শেষ রক্ষা হয়নি, চাকরি হারিয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে তারেক সাঈদকে।
দীর্ঘ দিন পর গতকাল রবিবার আদালতের একটি রায়কে ঘিরে ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মায়া ফের বিতর্কের মধ্যে পড়লেন।এই বিতর্কেও তাঁর মন্ত্রিত্ব নিয়ে ফের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
২০০৭ সালের একটি দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতে তার বিরুদ্ধে দেয়া ১৩ বছর সাজা হাইকোর্ট খালাস দেয়ার পর আপিল বিভাগ তা বাতিল করে পুনরায় শুনানির নির্দেশ দেয়ার পরই মায়ার মন্ত্রিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে।
আইনজ্ঞ ও রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, মন্ত্রিত্বে থাকার বিষয়ে আইনগত কোনো বাধা না থাকলে নৈতিকতার বিচারে মায়ার এই পদে থাকা উচিত নয়।তার মন্ত্রিত্ব ছাড়া উচিত।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে মায়া হাইকোর্টে আপিল করেন।
২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ দুর্নীতির মামলা থেকে তাঁকে খালাস দেন। পরে হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় দুদক। আপিল বিভাগ খালাসের আদেশ বাতিল করে মামলাটির ফের শুনানির আদেশ দেন।
এরফলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদকের আগের সাজা বহাল থাকল।
এ অবস্থায় মায়ার মন্ত্রিত্ব নিয়ে নৈতিক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, তার মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেয়া উচিত। কারণ আইনী দৃষ্টিতে তিনি এখন অভিযুক্ত আসামি। যদিও মন্ত্রী হিসেবে থাকার বিষয়ে আইনী কোনো বাধা নেই। কিন্তু নৈতিক অবস্থান থেকে তিনি মন্ত্রি হিসেবে থাকতে পারেন না। স্বেচ্ছায় তার মন্ত্রী পদ ছেড়ে দেয়া উচিত।
জানতে চাইলে প্রবীণ আইনজীবী ব্যরিস্টার রফিক-উল-হক  বলেন, মন্ত্রী হিসেবে থাকতে আইনী কোনো বাধা নেই। কিন্তু নৈতিক অবস্থান থেকে তার মন্ত্রী থাকা উচিত নয়। স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব ছাড়া উচিত বলে আমি মনে করি।’
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন  মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেছেন, ‘মন্ত্রিত্ব থাকা না থাকার বিষয়ে মায়া চৌধুরীই ভাল বলতে পারবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া  বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের কাগজপত্র এখনও হাতে পাইনি। আদেশের কপি হাতে পেলেই আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে বাকি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সেনা-সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৩ জুন রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির এই মামলাটি করে দুদক। ওই বছরের ২৫ অক্টোবর মায়া, তাঁর স্ত্রী পারভীন চৌধুরী, দুই ছেলে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী ও রাশেদুল হোসেন চৌধুরী এবং সাজেদুলের স্ত্রী সুবর্ণা চৌধুরীকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২ কোটি ৯৭ লাখ ৯ হাজার টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। ৫ কোটি ৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জন করে ৬ কোটি ২৯ লাখ ২৩ হাজার টাকার সম্পদ নিজেদের দখলে রেখেছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালত মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়। একই সঙ্গে তাকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার বাকি আসামিদের খালাস দেয়া হয়।