ঢাকা ০১:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিকতায় বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ অগাস্ট ২০১৬
  • ২২৪ বার

সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশার নাম। ঝুঁকিপূর্ণও বটে। এ পেশায় পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ নিতান্তই কম। নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ নূরজাহান বেগমের হাত ধরেই মূলত বাঙালি নারীদের সাংবাদিকতা জগতে প্রবেশ। প্রায় দুই দশক আগেও সাংবাদিকতায় নারীদের হার ছিল শতকরা ৭ শতাংশ। তবে আশার কথা হলো নারী সাংবাদিকরা এখন সে অবস্থান থেকে এগিয়েছে অনেক দূর। গত ১০ বছরে সাংবাদিকতায় নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে লক্ষ্যণীয় হারে। নারীরা এখন অন্য পেশার মতো সাংবাদিকতাকেও স্থায়ী পেশা হিসেবে নিচ্ছে। এই অগ্রসরতার পেছনে রয়েছে সদিচ্ছা ও বিভিন্ন পর্যায়ের সঠিক উদ্যোগ।

পিআইবি ও নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবছর নবীন নারী সাংবাদিকদের জন্য আয়োজন করা হয় সাংবাদিকতায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ। যা তাদেরকে সাংবাদিক হিসেবে দক্ষ, প্রতিষ্ঠিত ও আগ্রহী হতে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা রাখে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংবাদিকতা শিক্ষায় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামের পর সম্প্রতি জগন্নাথ এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ খোলা হয়েছে। এখন অনেকগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ রয়েছে। নিঃসন্দেহে এই ব্যপ্তি সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনার ব্যাপক আগ্রহের কারণেই ঘটেছে।

এ সব সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে এ পেশার ক্ষেত্র। এ পেশার পরিধি এখন শুধু সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশন চ্যানেলেই সীমাবদ্ধ নেই; সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এফ. এম. রেডিও, কমিউনিটি রেডিও এবং অনলাইন মিডিয়া। প্রতিটি গণমাধ্যমই এখন নারী সাংবাদিকদের দীপ্ত পদচারণায় মুখর। বিকাশমান সাংবাদিকতার সব বিভাগেই নারীদের উপস্থিতি পুরুষদের চাইতে কোনো অংশে কম নয়।

তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত পিআইডি গাইড হিসেবে পরিচিত টেলিফোন নির্দেশিকার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইংরেজি, বাংলা ও অনলাইন পত্রিকাসহ প্রায় ২০০ গণমাধ্যমে কর্মরত নারী সম্পাদক রয়েছেন মোট ছয়জন। যদিও এদের সবাই সম্পাদক হয়েছেন মালিকানা সূত্রে, সাংবাদিকতার সূত্রে নয়। আর তালিকাভুক্ত ২৫টি টেলিভিশনের মধ্যে নারী সিইও রয়েছেন একটিতে, নারী বার্তা প্রধান রয়েছেন দুটিতে।

বেসরকারি টেলিভিশনের গত দেড় যুগের ইতিহাসে নারীদের প্রাধান্য দেখা গেছে মূলত সংবাদ উপস্থাপনায়, সাংবাদিকতা করতে করতে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় পদে আসীন হয়েছে মাত্র দুয়েকজন। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে যে, প্রারম্ভিক পর্যায় থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত দীর্ঘ যাত্রাপথে অনেকেই থেমে যান বা হারিয়ে যান। ফলে, সংখ্যাগত দিকদিয়ে শুরুটা যতখানি, শীর্ষপর্যায়ে তার তুলনায় যৎসামান্যই। তবে আশার বিষয় এই যে, এ সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এমনকি এই একই চিত্র সাংবাদিকদের বড় দুটি সংগঠন জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নারী সদস্য সংখ্যার ক্ষেত্রেও। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিউজে) এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

নারী সাংবাদিকতা নারীর ক্ষমতায়নে কিভাবে প্রভাব ফেলতে পারে এই বিষয়ে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা মিনু বলেন ‘নারীর ক্ষমতায়নই হচ্ছে সকল ক্ষেত্রে নারীর বৈষম্য দূর করে নারীর সাংবাদিক হয়ে ওঠা। একজন নারী সাংবাদিক তার দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমেই প্রতিনিয়ত সমাজকে সচেতন করে, সরকারকে সচেতন করে, দেশকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে, কর্মসংস্থানে তথা সকল পর্যায়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায়। নারী সাংবাদিকরা সমাজে নারীর অবস্থান তুলে ধরার মধ্যদিয়ে সবাইকে সচেতন করে এবং সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ভূমিকা পালন করে; যা বর্তমান সরকারের অনেক পদক্ষেপের মধ্যামেই পরিলক্ষিত।’

ফরিদা বখতিয়ারা, সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন এফ. এম. রেডিও প্রতিষ্ঠানে। তিনি মনে করেন, অনেক নারী সাংবাদিকতায় অনেক আগ্রহ নিয়ে আসেন এই ভেবে যে, গণমাধ্যমে কাজের ধরন ভিন্ন এবং এই কর্মক্ষেত্রে থেকে পরিচিতি লাভ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। তারা অনেকেই ভুলে যান যে, এ পেশার কর্মক্ষেত্রে দু’টি বিষয় বিশেষ মনোযোগ দাবি করে। এক. এই পেশায় অনেক পরিশ্রম করতে হয়, যখন সব ঘটনার শেষ, মূলত সেখান থেকেই সাংবাদিকতা পেশায় জড়িতদের কাজ শুরু। দুই. ধৈর্য ধরে লেগে থাকা, যা অনেকেই শেষ পর্যন্ত পারেন না বা থাকেন না। অনেক বাধা আসবে কিন্তু এ ক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা থাকলে সব বাধাই অতিক্রম করা সম্ভব। আর সাংবাদিকতায় নারীর ক্ষমতায়ন হয় দুইভাবে। তার নিজস্ব আইডেন্টিটি’র মাধ্যমে এবং সর্বোপরি পরিবার তথা সামাজিকভাবে তার নিজস্ব স্ট্যাটাসের মাধ্যমে, যেখানে অর্থনৈতিকভাবে একজন নারীর ক্ষমতায়িত হওয়া অন্যতম। পাশাপাশি সাংবাদিকতার মাধ্যমে একজন নারী অন্য অনেক নারীর সফলতার গল্প তুলে ধরছেন, যা অনেককেই অনুপ্রাণিত করছে। কিন্তু এতকিছুর পরেও এ পেশায় শেষ পর্যন্ত অনেকেই টিকে থাকছেন না বলেই সাংবাদিকতা পেশার নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে যথেষ্ট সংখ্যক নারী উপস্থিতি নেই বলে তিনি মনে করেন।

দিলারা হোসেন, কাজ করছেন হেলথ রিপোর্টার হিসেবে। তিনি বলেন, নারীরা এখন অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে এসেছে, সাংবাদিকতা তার মধ্যে অন্যতম। এ পেশা অবশ্যই একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় এ পেশায়, যা একজন নারীর ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। একজন নারী সাংবাদিকই পারেন প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সঠিক অবস্থান তুলে ধরতে, যা সেই নারী সাংবাদিক তথা সব নারী সমাজকেই ক্ষমতায়িত করতে ভূমিকা রাখে। নারী সাংবাদিকতা পেশায় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই সে ক্ষমতায়িত; ফলে তথাকথিত এই পুরুষ শাষিত সমাজের অনেক সংকটময় ঘটনাও এখন নারীরাই জনসম্মুখে তুলে ধরছেন, যা নারীর ক্ষমতায়িত হওয়ার কারণেই বলে তিনি মনে করেন।

সাংবাদিকতায় নারীর সরব অংশগ্রহণ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সে কথা অনস্বীকার্য। মনে রাখা প্রয়োজন যে, সংখ্যাগত দিক দিয়ে এমনকি সাংবাদিকতার নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে আমাদের যেতে হবে বহুদূর। আর সে লক্ষ্যে প্রয়োজন সামগ্রিক অগ্রসর মনোভাব, প্রয়োজন সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে প্রগতির পথে চলা। আমাদের প্রত্যাশা সেই পথ চলায় পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্র সামানভাবে অংশগ্রহণ করবে এবং উন্নত রাষ্ট্র গঠনে নারী সাংবাদিকরা অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন তাদের নিজস্ব ক্ষমতায়নের মধ্যদিয়ে। -বাসস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাংবাদিকতায় বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ

আপডেট টাইম : ১২:২৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ অগাস্ট ২০১৬

সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশার নাম। ঝুঁকিপূর্ণও বটে। এ পেশায় পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ নিতান্তই কম। নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ নূরজাহান বেগমের হাত ধরেই মূলত বাঙালি নারীদের সাংবাদিকতা জগতে প্রবেশ। প্রায় দুই দশক আগেও সাংবাদিকতায় নারীদের হার ছিল শতকরা ৭ শতাংশ। তবে আশার কথা হলো নারী সাংবাদিকরা এখন সে অবস্থান থেকে এগিয়েছে অনেক দূর। গত ১০ বছরে সাংবাদিকতায় নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে লক্ষ্যণীয় হারে। নারীরা এখন অন্য পেশার মতো সাংবাদিকতাকেও স্থায়ী পেশা হিসেবে নিচ্ছে। এই অগ্রসরতার পেছনে রয়েছে সদিচ্ছা ও বিভিন্ন পর্যায়ের সঠিক উদ্যোগ।

পিআইবি ও নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবছর নবীন নারী সাংবাদিকদের জন্য আয়োজন করা হয় সাংবাদিকতায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ। যা তাদেরকে সাংবাদিক হিসেবে দক্ষ, প্রতিষ্ঠিত ও আগ্রহী হতে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা রাখে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংবাদিকতা শিক্ষায় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামের পর সম্প্রতি জগন্নাথ এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ খোলা হয়েছে। এখন অনেকগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ রয়েছে। নিঃসন্দেহে এই ব্যপ্তি সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনার ব্যাপক আগ্রহের কারণেই ঘটেছে।

এ সব সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে এ পেশার ক্ষেত্র। এ পেশার পরিধি এখন শুধু সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশন চ্যানেলেই সীমাবদ্ধ নেই; সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এফ. এম. রেডিও, কমিউনিটি রেডিও এবং অনলাইন মিডিয়া। প্রতিটি গণমাধ্যমই এখন নারী সাংবাদিকদের দীপ্ত পদচারণায় মুখর। বিকাশমান সাংবাদিকতার সব বিভাগেই নারীদের উপস্থিতি পুরুষদের চাইতে কোনো অংশে কম নয়।

তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত পিআইডি গাইড হিসেবে পরিচিত টেলিফোন নির্দেশিকার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইংরেজি, বাংলা ও অনলাইন পত্রিকাসহ প্রায় ২০০ গণমাধ্যমে কর্মরত নারী সম্পাদক রয়েছেন মোট ছয়জন। যদিও এদের সবাই সম্পাদক হয়েছেন মালিকানা সূত্রে, সাংবাদিকতার সূত্রে নয়। আর তালিকাভুক্ত ২৫টি টেলিভিশনের মধ্যে নারী সিইও রয়েছেন একটিতে, নারী বার্তা প্রধান রয়েছেন দুটিতে।

বেসরকারি টেলিভিশনের গত দেড় যুগের ইতিহাসে নারীদের প্রাধান্য দেখা গেছে মূলত সংবাদ উপস্থাপনায়, সাংবাদিকতা করতে করতে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় পদে আসীন হয়েছে মাত্র দুয়েকজন। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে যে, প্রারম্ভিক পর্যায় থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত দীর্ঘ যাত্রাপথে অনেকেই থেমে যান বা হারিয়ে যান। ফলে, সংখ্যাগত দিকদিয়ে শুরুটা যতখানি, শীর্ষপর্যায়ে তার তুলনায় যৎসামান্যই। তবে আশার বিষয় এই যে, এ সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এমনকি এই একই চিত্র সাংবাদিকদের বড় দুটি সংগঠন জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নারী সদস্য সংখ্যার ক্ষেত্রেও। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিউজে) এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

নারী সাংবাদিকতা নারীর ক্ষমতায়নে কিভাবে প্রভাব ফেলতে পারে এই বিষয়ে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা মিনু বলেন ‘নারীর ক্ষমতায়নই হচ্ছে সকল ক্ষেত্রে নারীর বৈষম্য দূর করে নারীর সাংবাদিক হয়ে ওঠা। একজন নারী সাংবাদিক তার দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমেই প্রতিনিয়ত সমাজকে সচেতন করে, সরকারকে সচেতন করে, দেশকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে, কর্মসংস্থানে তথা সকল পর্যায়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায়। নারী সাংবাদিকরা সমাজে নারীর অবস্থান তুলে ধরার মধ্যদিয়ে সবাইকে সচেতন করে এবং সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ভূমিকা পালন করে; যা বর্তমান সরকারের অনেক পদক্ষেপের মধ্যামেই পরিলক্ষিত।’

ফরিদা বখতিয়ারা, সিনিয়র স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবে কাজ করছেন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে। দীর্ঘদিন কাজ করেছেন এফ. এম. রেডিও প্রতিষ্ঠানে। তিনি মনে করেন, অনেক নারী সাংবাদিকতায় অনেক আগ্রহ নিয়ে আসেন এই ভেবে যে, গণমাধ্যমে কাজের ধরন ভিন্ন এবং এই কর্মক্ষেত্রে থেকে পরিচিতি লাভ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। তারা অনেকেই ভুলে যান যে, এ পেশার কর্মক্ষেত্রে দু’টি বিষয় বিশেষ মনোযোগ দাবি করে। এক. এই পেশায় অনেক পরিশ্রম করতে হয়, যখন সব ঘটনার শেষ, মূলত সেখান থেকেই সাংবাদিকতা পেশায় জড়িতদের কাজ শুরু। দুই. ধৈর্য ধরে লেগে থাকা, যা অনেকেই শেষ পর্যন্ত পারেন না বা থাকেন না। অনেক বাধা আসবে কিন্তু এ ক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা থাকলে সব বাধাই অতিক্রম করা সম্ভব। আর সাংবাদিকতায় নারীর ক্ষমতায়ন হয় দুইভাবে। তার নিজস্ব আইডেন্টিটি’র মাধ্যমে এবং সর্বোপরি পরিবার তথা সামাজিকভাবে তার নিজস্ব স্ট্যাটাসের মাধ্যমে, যেখানে অর্থনৈতিকভাবে একজন নারীর ক্ষমতায়িত হওয়া অন্যতম। পাশাপাশি সাংবাদিকতার মাধ্যমে একজন নারী অন্য অনেক নারীর সফলতার গল্প তুলে ধরছেন, যা অনেককেই অনুপ্রাণিত করছে। কিন্তু এতকিছুর পরেও এ পেশায় শেষ পর্যন্ত অনেকেই টিকে থাকছেন না বলেই সাংবাদিকতা পেশার নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে যথেষ্ট সংখ্যক নারী উপস্থিতি নেই বলে তিনি মনে করেন।

দিলারা হোসেন, কাজ করছেন হেলথ রিপোর্টার হিসেবে। তিনি বলেন, নারীরা এখন অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে এসেছে, সাংবাদিকতা তার মধ্যে অন্যতম। এ পেশা অবশ্যই একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় এ পেশায়, যা একজন নারীর ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। একজন নারী সাংবাদিকই পারেন প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সঠিক অবস্থান তুলে ধরতে, যা সেই নারী সাংবাদিক তথা সব নারী সমাজকেই ক্ষমতায়িত করতে ভূমিকা রাখে। নারী সাংবাদিকতা পেশায় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই সে ক্ষমতায়িত; ফলে তথাকথিত এই পুরুষ শাষিত সমাজের অনেক সংকটময় ঘটনাও এখন নারীরাই জনসম্মুখে তুলে ধরছেন, যা নারীর ক্ষমতায়িত হওয়ার কারণেই বলে তিনি মনে করেন।

সাংবাদিকতায় নারীর সরব অংশগ্রহণ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সে কথা অনস্বীকার্য। মনে রাখা প্রয়োজন যে, সংখ্যাগত দিক দিয়ে এমনকি সাংবাদিকতার নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে আমাদের যেতে হবে বহুদূর। আর সে লক্ষ্যে প্রয়োজন সামগ্রিক অগ্রসর মনোভাব, প্রয়োজন সংকীর্ণতা থেকে বের হয়ে প্রগতির পথে চলা। আমাদের প্রত্যাশা সেই পথ চলায় পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্র সামানভাবে অংশগ্রহণ করবে এবং উন্নত রাষ্ট্র গঠনে নারী সাংবাদিকরা অন্যতম ভূমিকা পালন করবেন তাদের নিজস্ব ক্ষমতায়নের মধ্যদিয়ে। -বাসস