ভারত ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেওয়ায় পানি আসতে শুরু করেছে পদ্মায়। কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে বিপদসীমার পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে পদ্মার পানি। প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৯০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হয়। পানি কমতে শুরু করার পর হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রাজশাহীর পদ্মা পাড়ের মানুষ। নতুন করে দেখা দিয়েছে ভাঙন। প্লাবিত হচ্ছে পদ্মা পাড়ের নিম্নাঞ্চল।
এদিকে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে রাজশাহী নগরীর কয়েকটি এলাকার পদ্মার তীর রক্ষা প্রকল্প কাজ। ইতোমধ্যেই বুলনপুর এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের নিচে পদ্মার তীর রক্ষা প্রকল্পের চারটি স্থান সামান্য দেবে গেছে। বালির বস্তা ফেলে মাটি ধরে রাখার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এ স্থানগুলো ধসে গেলে শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন জানান, ভারতের বন্যার প্রভাব ও ফারাক্কার গেট খুলে দেয়ার কারণে পদ্মায় হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।
অপরদিকে, পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তলিয়ে যাচ্ছে পদ্মার উভয় তীরের নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে যাচ্ছে স্থাপনা, বাড়িঘর ক্ষেত খামার। সর্বস্ব হারাচ্ছে জনগণ। রাজশাহীতে ভাঙ্গনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পবা উপজেলার হরিপুর ও হরিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম।
কয়েক বছরের মধ্যে এবারই বেশি পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরমধ্যে ভাঙ্গনে পবা উপজেলার হরিয়ানে দু’টি গ্রাম চর খানপুর ও চর খিদিরপুরের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। মধ্যচরেও পানি ওঠায় সেখানকার জনগণ মহা বিপদে পড়েছে। গৃহপালিত পশু নিয়েও পড়েছে বিপাকে। পদ্মার ভাঙনে পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শত শত হেক্টর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলীন হয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের সীমানা পিলারসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
ফলে প্রতিবছরই সীমান্ত নদীগুলোর ভাঙ্গনে মূল্যবান জমি হারাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের অন্য অঞ্চলে নদীর এক তীর ভেঙ্গে অন্য তীরে চর জাগে, দেশের জমি দেশেই থেকে যায়। কিন্তু সীমান্ত নদীর ভাঙ্গনে জমি চলে গেলে সেটা আর ফিরে পাওয়া যায় না। ক্রমাগত ভাঙ্গনে উপজেলার বেশকয়েকটি মৌজার জমি পদ্মা নদীতে তলিয়ে গেছে। আর একটু ভাঙলেই দেশের ভূ-খণ্ড হারাবে।
হরিয়ান ইউনিয়নের চর তারানগর, চরখিদিরপুর, দিয়াড়খিদিরপুর, চর তিতামারি, দিয়াড় শিবনগর, চরবৃন্দাবন, কেশবপুর, চর শ্রীরামপুর ও চর রামপুরের সিংহভাগ জমিই পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাও বিলীন হতে বসেছে।
পদ্মার ভাঙ্গনে এরই মধ্যে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে চর তারানগরে ২শ’ ঘরবাড়ি, চারটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বিতল আশ্রয় কেন্দ্র, খানপুর বিজিবি ক্যাম্প এবং আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১৬৪ ও ১৬৫ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এদিকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চরখিদিরপুরে প্রায় ৪শ’ বাড়ি, একটি বিজিবি ক্যাম্প, একটি পাকা দ্বিতল প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচটি মসজিদ, দু’টি মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১৫৯-এর এস-৩, ৪, ৫ নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এই দুই ওয়ার্ডে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। ভোটার ছিল প্রায় ৩৩শ’। বাড়িঘর জমি জমা পদ্মার গভে বিলিন হওয়ায় সবমিলিয়ে এখন দুই হাজার লোক বসবাস করছে সেখানে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বন্য পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া আছে। নদীর পাড় রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানিয়েছে, ভাঙ্গনের বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। যেখানে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে সেখানেই মেরামত করা হচ্ছে।