বিএনপি ন্যাপ ভাসানী হয়ে যাচ্ছে: জিয়াউদ্দিন বাবলু

জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল (বিএনপি) ন্যাপ (ভাসানীর মতো শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিএনপির বিকল্প হয়ে ওঠবে জাতীয় পার্টি। অপেক্ষা করুন। দেখতে পারবেন।

সম্প্রতি তার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দল ভারত সফর করে। সেখানে ভারতের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী, দেশটির লোকসভার ডেপুটি স্পীকার, রাজ্য সরকারের নেতা, ক্ষমতাসীন বিজেপি, বিরোধি দল কংগ্রেসের নেতৃবৃদ্ধসহ নানা মহলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন।

নিউজ তার মুখোমুখি হয় মঙ্গলবার। জাতীয় পার্টির এই প্রভাবশালী নেতা খোলামেলা কথা বলেন রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে।

সাবেক ডাকসু জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) ও এরশাদের সফল মন্ত্রী মহাজোট গঠনের অন্যতম নেপথ্য রূপকার।
একান্ত সাক্ষাৎকারটি দুই পর্বে প্রকাশ করা হলো। আজ প্রথম পর্ব।

৪৮ বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, বিশ্বে রাজনীতিক দলগুলো টিকে থাকার দুটি পথ রয়েছে। এক, রাজপথে বিপ্লব, আন্দোলন করে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে অংশ নিয়ে। কিন্তু বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ভুল করেছে। তারা গত নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এটি তাদের পাহাড় সমান ভুল। যেমনটি ভুল করেছিলো মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। ১৯৭০ এর নির্বাচনে অংশ নেননি তিনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১৬৭ আসনে জয় লাভ করেছিলো। ভাসানীর শ্লোগান ছিলো, ভোটের বাক্স লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো। সেটি ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিলো। তিনি আন্দোলনেও ভালো করতে পারেননি। তাই বঙ্গবন্ধুর থেকে বড় রাজনীতিক হয়েও ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেছেন। নতুন প্রজন্ম তাকে জানে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। একই ভাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে হারিয়ে যাবে। দলটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। তারা জন বিছিন্ন হয়ে পড়েছে দিন দিন। এভাবে রাজনীতিতে কোন দল টিকে থাকতে পারেনা। তাই বিএনপিও পারবে না।

এরশাদের এই বিশেষ সহকারি মনে করেন, বিএনপির বিকল্প হিসেবে জাতীয় পার্টি সামনে আসবে। আওয়ামী লীগের সামনে রড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আরেকটি দল দেশের গণতন্ত্রের জন্য জরুরি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনের জন্য সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা শিগগিরই দলকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করতে মাঠে নামব।

জাতীয় পার্টি ৪৮ জেলা পর্যায়ে কাউন্সিল করেছে। ১৫টি জেলায় কাউন্সিল বাকি রয়েছে। সেগুলো করা হবে। এছাড়া ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিল করা হবে। আমরা আগামী শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমাবেশ সম্মেলন করব। মানুষের কাছে আমাদের বার্তা পৌছে দিবো। আশা করি সাধারণ মানুষ সাড়া দিবে।

জাতীয় পার্টি আদৌ ভোটের রাজনীতিকে টিকতে পারবে কিনা প্রশ্নে এই রাজনীতিকের জবাব, দেখুন আমাদের দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী দেয়ার সক্ষমতা আছে। আমাদের প্রতিনিটি সংসদীয় আসছে ভোটও রয়েছে। যারা ভোটের রাজনীতিতে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করে। জাতীয় পার্টির ভোটাররা যে দিকে সমর্থন করে, সেই দলই এগিয়ে যায়। তাই আমরা রাজনীতিকে নিয়ামক। আমরা সেভাবেই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে এই নেতা বলেন, আমি এব্যাপারে খুব বেশি কিছু বলতে চাই না। তবে একটি কথা বলব, মানুষ জ্বালাও পোড়াও ও প্রেট্রোল বোমার রাজনীতি সমর্থন করেনা। যে বা যারাই এর সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন। তারেক রহমান ইতোমধ্যে মামলায় দোষী প্রমানিত হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অভিযুক্ত। নারকীয় এই হত্যাকান্ডের দায় তৎকালীন বিএনপি জামায়াত জোট কোন ভাবেই এড়াতে পারেনি। ক্ষমতায় থাকার কারণে দায় বিএনপিকে নিতেই হবে। তাই তারেক রহমান রাজনীতিতে জন সমর্থন পাবে না। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে এভাবে বোমা হামলা করে ২৪ জন মানুষের প্রাণহানির ঘটনা জাতি ভুলতে পারবে না।

ড. জাফরুল্লাহ’র সাম্প্রতিক খোলা চিঠির প্রসঙ্গ টেনে এই জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক বলেন, বিএনপির বুদ্ধিজীরাই বলছে তাদের দিন শেষ। এখান থেকেও অনেক কিছু বুঝতে পারা যায় বিএনপি এখন রাজনৈতিক ভাবে কতটা দূর্বল।
জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে তেমন কোন কথা বলতে চাননি জিয়াউদ্দিন বাবলু। জামায়াতকে সরকার নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করতে পারে কিনা বা করছে না কেন প্রশ্নে বলেন, এটা সরকারের কাজ নয়। এটি নির্বাচন কমিশনের কাজ।
তবে কি নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী নয়? উত্তরে তিন বারের এই সাংসদ বলেন, আমরা গণতন্ত্রের পথে হাটছি। আমাদের গণতন্ত্র বেশি দিনের নয়। ১৯৯১ সালের পর থেকে বলা যায়। তাই নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছুটা ঘাটতি থাকতে পারে, সেটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দূর হবে।
জাতীয় পার্টিতে মাঝে মধ্যেই বিশৃংখলা দেখা যায়, প্রশ্নে বলেন, আপনার কথা ঠিক নয়। জাতীয় পার্টি একটি গণতান্ত্রিক দল। এখানে আমরা খুবই শৃংখলার সঙ্গে রাজনীতি করি। আমাদের দলে গণতন্ত্র চর্চা হয়। তাই নানাজন নানা মত দিতে পারে। আলোচনা সাপেক্ষে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সেটি শেষ পর্যন্ত সবাই মেনে নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতারা রাজনীতি করে থাকে।
সম্প্রতি পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন ঐক্য প্রক্রিয়ার বৈঠকে যোগ দিয়েছে। এটি কি দলীয় সিদ্ধান্ত কিনা প্রশ্নে জাতীয় পার্টির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য সাফ জানিয়ে দেয়, এটি তার ব্যক্তিগত যোগদান। এটি জাতীয় পার্টির দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। তাছাড়া কামাল হোসেন জন-বিছিন্ন মানুষ। তার সঙ্গে জাতীয় পার্টির রাজনীতির আদর্শে মিল নেই। ফলে এমন কোন ঐক্য সমর্থন করবে না জাতীয় পার্টি।
বিএনপি সম্প্রতি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী কনভেনশনের ডাক দিয়েছে, কিভাবে দেখছেন এটি? জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, এটি করতে চাইলে বিএনপিকে সুস্থ রাজনীতির পথে আসতে হবে। তাছাড়া এখন মনে হচ্ছে তারাও কনভেনশন করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটছে। সরকার ইতোমধ্যে একটি ঐক্য প্রক্রিয়ায় গেছে। আমরা জাতীয় পার্টি সরকারের সন্ত্রাসবিরোধি ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকব। সেটি বিএনপিকে বাদ দিয়ে কতটা বাস্তব সম্ভব প্রশ্নে জাতীয় পার্টির এই সাংসদ বলেন, বিএনপি আসতে চাইলে সাধুবাদ জানাবে সরকার। তবে জ্বালাও পোড়াও বন্ধ করে ভালো রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে কথা বলেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। বলেন, বিএনপি এই ঘটনার পর দুই বছর ক্ষমতায় ছিলো। তাদের উচিত ছিলো ঘটনার সঠিক তদন্ত করা। কিন্তু সেটি করেনি। বরং জজ মিয়া নাটক সাজিয়েছে। সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরি করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর