যশোর সদর উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মেহের আলী (৪৫) নামে একজন প্রবাসী নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) রাত ১১ টার দিকে সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের বাদিয়াটোলা পশ্চিম পাড়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
নিহত মেহের আলী ওই এলাকার আব্দুল মালেক মন্ডলের ছেলে। তিনি গত ২৬ জুলাই কুয়েত থেকে দেশে ফিরেছেন। সেখানে দেশটির হাদিয়া নামক স্থানে একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করতেন। বিদেশ যাওয়ার আগে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সংক্রিয় কর্মী ছিলেন। পরিবারের স্বজনের দাবি, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক কোন্দলে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
নিহতর স্বজনেরা জানান, গত দুইদিন ধরে নিহত মেহের আলী যশোর বাহাদুরপুর এলাকার আনোয়ার হোসেন নামে তার এক খালু শ্বশুরের বাড়িতে ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে মেহের তার বাড়িতে ফেরেন। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে বাড়ির কলাপসিবল গেটে তালা মারতে আসেন। পূর্বে থেকে ওৎ পেতে থাকা দুবৃর্ত্তরা এ সময় মাথায় গুলি করে পালিয়ে যান। স্বজনেরা দ্রুত উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আনলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাত দেড়টার দিকে হাসপাতালের মর্গের সামনে নিহতের ছোট ভাই আবু আব্দুল্লাহকে আহাজারি করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার ভাই মেহের আলীসহ তিন ভাই বিদেশে থাকি। বিদেশ যাওয়ার আগে ভাই বিএনপির রাজনীতি করতো। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা মিথ্যা মামলা দিয়ে বিভিন্ন সময়ে জেলও খাটিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ভাইয়ের কাছে নেতাকর্মীরা চাঁদাও দাবি করতো। কিন্তু ভাই দিতে চাইতো না। তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কিছু দ্বন্দ্ব ছিলো। এর মধ্যে দীর্ঘদিন পর গত ২৬ জুলাই আমার ভাই দেশে ফিরেছে। আমি ফিরেছি তার মাস খানিক আগে। সর্বশেষ গত সোমবার আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে সেইসব নেতাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছে শুনেছি। এসব রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করছি। এই হত্যা পূর্বপরিকল্পিত। কেননা আমার ভাইয়ের বাড়ির চারিপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। তবে যারা মেরেছে, তারা আগে থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা কেটে দিয়েছে। ধারণা হচ্ছে- হত্যাকারীরা বাড়ির গেটের সামনে লুকিয়ে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিলেন।
তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের পাঁচ বছর ও দেড় বছর বয়সী দুই শিশু সন্তান রয়েছে। তাদের কি হবে, তারা যে বাবা হারিয়েছে। তারা কারে বাবা বলে ডাকবে। আমার ভাই হত্যার বিচার চাই? আমার ভাইরে কেন মারলো।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. খন্দকার রেজয়ান উদ দারাইম জানান, গুলিবিদ্ধ মেহের আলীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনেন স্বজনেরা। তার মাথার পিছনের দিকে ডান সাইটে গুলি লেগেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কি কারণে হত্যা করা হয়েছে, সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। পুলিশ তদন্ত করছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। অভিযান চলছে।