ঢাকা ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাসিনার সময় শেষ, একদিন আগেই ভারতকে জানায় ওয়াশিংটন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৯:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪
  • ২৪ বার

বাংলাদেশে অস্থিরতা কমানোর জন্য রোববার সংকট মোকাবিলায় নিরাপত্তা বৈঠক আহ্বান করেছিলেন শেখ হাসিনা। তখনও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার সময় শেষ হওয়ার বিষয়টি মানতে রাজি ছিলেন না বলে মনে হচ্ছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি যে জনস্রোতে ভেসে যাবেন—প্রকৃতপক্ষে খুব কম মানুষই তার দ্রুতগতির এমন বিদায় সম্পর্কে ধারণা করতে পেরেছিলেন।

শেষ পর্যন্ত শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কথা শোনার পরিবর্তে পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যদের পরামর্শেই তিনি পালিয়ে যেতে রাজি হয়েছিলেন, বিবিসিকে বলেছেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। শেখ হাসিনা সঠিক সময়ে তার মন স্থির করেন—পালানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জনতা তার বাসভবনে প্রবেশ করে।

রোববার সকালের দিকে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। দেশের শীর্ষ তিন সামরিক প্রধান, জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠকের পরিবেশ ছিল শান্ত। দেশজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলায় প্রধানমন্ত্রীর ওপর কয়েক সপ্তাহ ধরে চাপ বাড়ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ এই সহিংসতায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

কেবল রোববারই কমপক্ষে ৯০ জনের প্রাণহানি ঘটে; যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিক্ষোভকারী এবং তারা নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। তবে ক্রমবর্ধমান সহিংসতায় পুলিশের অনেক সদস্যও নিহত হয়েছেন। বিবিসি বাংলা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে শেখ হাসিনা ‌‌‘‘দুটি বিকল্প’’ খোলা রাখতে চেয়েছিলেন। দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি চলাকালীনও তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলপ্রয়োগ করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন।

তবে সেনা কর্মকর্তারা তাতে রাজি হননি। রোববার দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঠ পর্যায়ের সৈন্য ও সেনা কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশেছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার পর জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছিলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

আলাদাভাবে বৈঠকে সামরিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন, সৈন্যরা বেসামরিক লোকজনের ওপর গুলি চালাতে পারবে না। তবে তারা পুলিশকে নিরাপত্তা সহায়তা দেবে বলে একাধিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে। পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও অভিযোগ করেন, তাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেছে। যদিও গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পরে প্রকাশ পেয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বিবিসিকে বলেন, পুলিশ ক্লান্ত ছিল। আমরা শুনেছি যে তাদের কাছে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ ছিল না। শেখ হাসিনা অবশ্য তাদের কথা শোনেননি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কেউই তার সামনে দ্বিমত পোষণ রাজি ছিলেন না।

বৈঠকের পর শেখ হাসিনা আরও অপ্রতিরোধ্য বার্তা দেন। তিনি বিক্ষোভকারীদের ‘‘সন্ত্রাসী’’ বলে অভিহিত করেন। যাদেরকে তিনি ‘‘অগ্নিসংযোগকারী’’ হিসাবেও বর্ণনা করেন। তাদের প্রতিরোধ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। নিরাপত্তা বাহিনী আশঙ্কা করেছিল, শিগগিরই তাদের হাত ধরে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে যেতে পারে।

রোববারের সহিংসতার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভাইরাল হয়ে যায়। কারণ মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছিল। পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুব শাখার সদস্যদের গুলিতে আহত বিক্ষোভকারীদের ছবি মানুষের মাঝে আরও ক্ষোভের জন্ম দেয়।

সংঘর্ষের ভয়াবহতা স্পষ্ট হওয়ার সাথে সাথে ছাত্র নেতারা কর্তৃপক্ষকে অবাক করে দিয়ে ঢাকামুখী গণমিছিলের কর্মসূচি একদিন এগিয়ে আনার ঘোষণা দেন। গোয়েন্দা তথ্যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, ছাত্রদের দাবিগুলো জনগণকে আকৃষ্ট করেছে এবং পরের দিন হাজার হাজার মানুষ রাজধানীতে নামার পরিকল্পনা করছে। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের থামানোর চেষ্টা করলে আরেকটি রক্তপাত ঘটবে। তাই সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান আবারও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, রোববার সন্ধ্যায় সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধান শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন এবং বিনয়ের সাথে ব্যাখ্যা করেন, মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। সোমবার সকালে ঢাকায় হাজার হাজার লোকের সমাগম হবে। তারা তার বাসস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছেন না।

শেখ হাসিনা তাদের পরামর্শ গ্রহণ করেননি। তবে ঢাকার সাংবাদিকরা বলেছেন, তারা বুঝতে পারছিলেন ক্ষমতার পরিবর্তন হচ্ছে। রোববার রাত নাগাদ অনেক জায়গায় পুলিশ অনুপস্থিত ছিল এবং অসংখ্য নিরাপত্তা ব্যারিকেড খালি ছিল।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘‘তিনি অনড় ছিলেন। পদত্যাগ করবেন না বা দেশ ছাড়তেও রাজি ছিলেন না তিনি। তিন বাহিনীর প্রধান তার কাছে গিয়ে মাঠপর্যায়ে কী ঘটছে তা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন।’’

‘‘তারা বলেছিলেন, সৈন্যদের পক্ষে জনতার ওপর গুলি চালানো কঠিন হবে। তারা বলেন, আমাদের সেনারাও দেশের অংশ। তারা গ্রাম থেকে এসেছেন, তারা নিজেদের লোকজনের ওপর গুলি চালাবেন না।’’

সোমবার সকাল থেকেই ঢাকামুখী জনতার ভিড় শুরু হয়। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আবারও শেখ হাসিনার বাসভবনে গিয়ে তাকে পরিস্থিতির গভীরতা ব্যাখ্যা করছিলেন। লোকজন কারফিউ ভাঙছে এবং ইতিমধ্যে সহিংসতা শুরু হয়ে গেছে।

ঢাকার অনেক জায়গা থেকে পুলিশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে এবং জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাকে বলেছিলেন, তারা জনতাকে রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে পৌঁছানো থেকে বেশিক্ষণ আটকাতে পারবেন না। সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা বা তার বেশি সময় পর্যন্ত তা সম্ভব হতে পারে।

সেই মুহূর্তে সামরিক প্রধানরা শেখ হাসিনাকে বোঝানোর জন্য পরিবারের সদস্যদের মধ্যস্থতা করতে আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। পুলিশ ও তিন বাহিনীর প্রধান তখন শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা সিদ্দিকের সাথে আলোচনা করেন। তিনি তার বড় বোনকে চলে যেতে রাজি করাতে পারেন কি না, সেই বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন।

‘‘কর্মকর্তারা শেখ রেহানার সাথে অন্য একটি কক্ষে আলোচনা করেন। তারা তাকে শেখ হাসিনার কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে বলেন। শেখ রেহানা তখন তার বড় বোনের সাথে কথা বলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তখনও ক্ষমতা ধরে রাখতে অনড় ছিলেন।’’

তারপর বিদেশে থাকা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ও মেয়ে সায়মা ফোনে তার সাথে কথা বলেন এবং তাকে চলে যেতে বলেন। পারিবারিক এই আলোচনার সময় সেনাপ্রধান সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বৈবাহিক সূত্রে শেখ হাসিনার আত্মীয়।

মঙ্গলবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘‘আমার মা মোটেও দেশ ছেড়ে যেতে চাননি। আমাদের তাকে রাজি করাতে হয়েছিল।’’ তবে তার মা শনিবার সন্ধ্যায থেকে পদত্যাগ করার কথা ভাবতে শুরু করেন বলে জানান তিনি।

সজীব ওয়াজেদ বলেন, আমরা পরিবারের সদস্যরা তাকে অনুরোধ করেছিলাম। আমরা তাকে বলেছিলাম, এই জনতা সহিংসতার জন্য বেরিয়েছে এবং তারা তোমাকে হত্যা করবে। আমাদের তোমাকে নিরাপদে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে জনতার পৌঁছাতে যতটুকু সময় লেগেছিল, তার হাতে ততটুকুই সময় ছিল। তারা কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই গনভবন থেকে বেরিয়ে যান।

‘‘গতকাল আমি তাকে দিল্লিতে ফোন দিয়েছিলাম। তিনি ভালো আছেন। কিন্তু তিনি খুবই হতাশ। বাংলাদেশের জনগণ তাকে খুবই নিরাশ করেছে।’’

একাধিক সূত্র জানায়, সোমবার সকালের দিকে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয়ের জন্য অনুরোধ জানাতে দিল্লিতে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার দীর্ঘ কর্মজীবনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারতের কাছ থেকেও দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

একদিন আগে ওয়াশিংটন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বলেছিল, ‘‘শেখ হাসিনার সময় শেষ। তার সামনে আরও কোনও বিকল্প নেই।’’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) যখন বুঝতে পেরেছিলেন সেনাবাহিনী তাকে সমর্থন করছে না, তখন তিনি পদত্যাগ করেন। লোকজন কারফিউ ভাঙতে যাচ্ছিল এবং তার বাসভবন অভিমুখে মিছিল করতে ঢাকায় জড়ো হচ্ছিল।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনিচ্ছা স্বত্তেও পদত্যাগ পত্রে নথিতে স্বাক্ষর করতে রাজি হন শেখ হাসিনা। তবে কীভাবে তাকে নিরাপদে দেশ থেকে বের করা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্যেষ্ঠ একজন সামরিক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, শেখ হাসিনা কখন পদত্যাগপত্রে সই করেছেন, বাসভবন থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে কখন চড়েছিলেন তা কেবল স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স, প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট এবং সেনাসদর দপ্তরের কিছু জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা জানতেন। পুরো ব্যাপারটা করা হয়েছিল অত্যন্ত গোপনে।

স্থানীয় সময় সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। যাতে শেখ হাসিনার গতিবিধির কোনও খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে না পড়ে। তিনি পালিয়ে যাওয়ার পরই পুনরায় ইন্টারনেট সংযোগ সচল করে দেওয়া হয়।

সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনাকে নিরাপদে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়। তার গাড়িবহরে হামলা হতে পারে, এমন উদ্বেগ ছিল। তাই পুরো পথ ফাঁকা করা হয়েছিল এবং প্রস্থান পয়েন্ট সুরক্ষিত করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে সড়কপথে নিয়ে যাওয়া নিরাপদ ছিল না। এর পরিবর্তে একটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়।

সজীব ওয়াজেদ বলেন, প্রস্থানের মুহূর্ত পর্যন্ত শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে চড়তে অনিচ্ছুক ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন আমার খালা চলে যাক। আমার মা হেলিকপ্টারে উঠতে চাননি। আমি ফোন করে মাকে রাজি করিয়েছিলাম। আমার খালাকে বলেছিলাম, তাকেও চলে যেতে হবে।

তিনি বলেন, শেষে তারা তাই করেন। তাদের গণভবন থেকে বাংলাদেশি বিমান বাহিনীর একটি সি-১৩০ হারকিউলিস বিমানে চড়েন। যা আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল।

সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, তার ধারণা তারা ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় গিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে তাদের দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কর্মকর্তারা বলেন, এর মাঝেই ভারতের সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং তারা এই রুট দিয়ে ট্রানজিট দিতে সম্মত হয়। কিন্তু অন্যান্য বিবরণ বলছে, তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার একটি বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে বিমানে করে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা যে রুটেই যান না কেন, স্থানীয় সময় বেলা দেড়টায় শেখ হাসিনা, তার বোন ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এমপি সালমান ফজলুর রহমানকে উড়োজাহাজ থেকে বিমানে স্থানান্তর করা হয়েছিল, যেটি তাদের দিল্লিতে নিয়ে যায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, চার কিংবা পাঁচটি স্যুটকেস উড়োজাহাজে নেওয়ার জন্য মাটিতে অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল। তিনি যেসব জিনিসপত্র রেখে গেছেন সেসবের বেশিরভাগই জনতা তার বাসভবনে ঢুকে নিয়ে যায়। এই ঘটনা যখন ঘটেছে তখন তিনি মাঝ-আকাশে ছিলেন।

কয়েক ঘণ্টা পর উড়োজাহাজটি দিল্লিতে অবতরণ করে। যদিও উড়োজাহাজটির যাত্রীদের গন্তব্য অস্পষ্ট ছিল। ঢাকায় ইন্টারনেট আবারও চালু হয় এবং দেশজুড়ে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান উপলক্ষে উদযাপন শুরু হয়েছিল।

একসময় শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্রী হিসেবে দেখা হলেও পরে ইন্টারনেট বন্ধ রেখে পলাতক ব্যক্তির মতো পালিয়ে যান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হাসিনার সময় শেষ, একদিন আগেই ভারতকে জানায় ওয়াশিংটন

আপডেট টাইম : ০৯:৪৯:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০২৪

বাংলাদেশে অস্থিরতা কমানোর জন্য রোববার সংকট মোকাবিলায় নিরাপত্তা বৈঠক আহ্বান করেছিলেন শেখ হাসিনা। তখনও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার সময় শেষ হওয়ার বিষয়টি মানতে রাজি ছিলেন না বলে মনে হচ্ছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি যে জনস্রোতে ভেসে যাবেন—প্রকৃতপক্ষে খুব কম মানুষই তার দ্রুতগতির এমন বিদায় সম্পর্কে ধারণা করতে পেরেছিলেন।

শেষ পর্যন্ত শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কথা শোনার পরিবর্তে পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যদের পরামর্শেই তিনি পালিয়ে যেতে রাজি হয়েছিলেন, বিবিসিকে বলেছেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। শেখ হাসিনা সঠিক সময়ে তার মন স্থির করেন—পালানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জনতা তার বাসভবনে প্রবেশ করে।

রোববার সকালের দিকে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। দেশের শীর্ষ তিন সামরিক প্রধান, জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও পুলিশ কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠকের পরিবেশ ছিল শান্ত। দেশজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলায় প্রধানমন্ত্রীর ওপর কয়েক সপ্তাহ ধরে চাপ বাড়ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ এই সহিংসতায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

কেবল রোববারই কমপক্ষে ৯০ জনের প্রাণহানি ঘটে; যাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিক্ষোভকারী এবং তারা নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। তবে ক্রমবর্ধমান সহিংসতায় পুলিশের অনেক সদস্যও নিহত হয়েছেন। বিবিসি বাংলা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে শেখ হাসিনা ‌‌‘‘দুটি বিকল্প’’ খোলা রাখতে চেয়েছিলেন। দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি চলাকালীনও তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বলপ্রয়োগ করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন।

তবে সেনা কর্মকর্তারা তাতে রাজি হননি। রোববার দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঠ পর্যায়ের সৈন্য ও সেনা কর্মকর্তারা সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশেছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার পর জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছিলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

আলাদাভাবে বৈঠকে সামরিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন, সৈন্যরা বেসামরিক লোকজনের ওপর গুলি চালাতে পারবে না। তবে তারা পুলিশকে নিরাপত্তা সহায়তা দেবে বলে একাধিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে। পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও অভিযোগ করেন, তাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেছে। যদিও গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পরে প্রকাশ পেয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বিবিসিকে বলেন, পুলিশ ক্লান্ত ছিল। আমরা শুনেছি যে তাদের কাছে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ ছিল না। শেখ হাসিনা অবশ্য তাদের কথা শোনেননি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কেউই তার সামনে দ্বিমত পোষণ রাজি ছিলেন না।

বৈঠকের পর শেখ হাসিনা আরও অপ্রতিরোধ্য বার্তা দেন। তিনি বিক্ষোভকারীদের ‘‘সন্ত্রাসী’’ বলে অভিহিত করেন। যাদেরকে তিনি ‘‘অগ্নিসংযোগকারী’’ হিসাবেও বর্ণনা করেন। তাদের প্রতিরোধ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। নিরাপত্তা বাহিনী আশঙ্কা করেছিল, শিগগিরই তাদের হাত ধরে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে যেতে পারে।

রোববারের সহিংসতার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভাইরাল হয়ে যায়। কারণ মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছিল। পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুব শাখার সদস্যদের গুলিতে আহত বিক্ষোভকারীদের ছবি মানুষের মাঝে আরও ক্ষোভের জন্ম দেয়।

সংঘর্ষের ভয়াবহতা স্পষ্ট হওয়ার সাথে সাথে ছাত্র নেতারা কর্তৃপক্ষকে অবাক করে দিয়ে ঢাকামুখী গণমিছিলের কর্মসূচি একদিন এগিয়ে আনার ঘোষণা দেন। গোয়েন্দা তথ্যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, ছাত্রদের দাবিগুলো জনগণকে আকৃষ্ট করেছে এবং পরের দিন হাজার হাজার মানুষ রাজধানীতে নামার পরিকল্পনা করছে। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের থামানোর চেষ্টা করলে আরেকটি রক্তপাত ঘটবে। তাই সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান আবারও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, রোববার সন্ধ্যায় সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধান শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন এবং বিনয়ের সাথে ব্যাখ্যা করেন, মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। সোমবার সকালে ঢাকায় হাজার হাজার লোকের সমাগম হবে। তারা তার বাসস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছেন না।

শেখ হাসিনা তাদের পরামর্শ গ্রহণ করেননি। তবে ঢাকার সাংবাদিকরা বলেছেন, তারা বুঝতে পারছিলেন ক্ষমতার পরিবর্তন হচ্ছে। রোববার রাত নাগাদ অনেক জায়গায় পুলিশ অনুপস্থিত ছিল এবং অসংখ্য নিরাপত্তা ব্যারিকেড খালি ছিল।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘‘তিনি অনড় ছিলেন। পদত্যাগ করবেন না বা দেশ ছাড়তেও রাজি ছিলেন না তিনি। তিন বাহিনীর প্রধান তার কাছে গিয়ে মাঠপর্যায়ে কী ঘটছে তা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন।’’

‘‘তারা বলেছিলেন, সৈন্যদের পক্ষে জনতার ওপর গুলি চালানো কঠিন হবে। তারা বলেন, আমাদের সেনারাও দেশের অংশ। তারা গ্রাম থেকে এসেছেন, তারা নিজেদের লোকজনের ওপর গুলি চালাবেন না।’’

সোমবার সকাল থেকেই ঢাকামুখী জনতার ভিড় শুরু হয়। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আবারও শেখ হাসিনার বাসভবনে গিয়ে তাকে পরিস্থিতির গভীরতা ব্যাখ্যা করছিলেন। লোকজন কারফিউ ভাঙছে এবং ইতিমধ্যে সহিংসতা শুরু হয়ে গেছে।

ঢাকার অনেক জায়গা থেকে পুলিশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে এবং জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তাকে বলেছিলেন, তারা জনতাকে রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে পৌঁছানো থেকে বেশিক্ষণ আটকাতে পারবেন না। সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা বা তার বেশি সময় পর্যন্ত তা সম্ভব হতে পারে।

সেই মুহূর্তে সামরিক প্রধানরা শেখ হাসিনাকে বোঝানোর জন্য পরিবারের সদস্যদের মধ্যস্থতা করতে আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। পুলিশ ও তিন বাহিনীর প্রধান তখন শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা সিদ্দিকের সাথে আলোচনা করেন। তিনি তার বড় বোনকে চলে যেতে রাজি করাতে পারেন কি না, সেই বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন।

‘‘কর্মকর্তারা শেখ রেহানার সাথে অন্য একটি কক্ষে আলোচনা করেন। তারা তাকে শেখ হাসিনার কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে বলেন। শেখ রেহানা তখন তার বড় বোনের সাথে কথা বলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তখনও ক্ষমতা ধরে রাখতে অনড় ছিলেন।’’

তারপর বিদেশে থাকা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ও মেয়ে সায়মা ফোনে তার সাথে কথা বলেন এবং তাকে চলে যেতে বলেন। পারিবারিক এই আলোচনার সময় সেনাপ্রধান সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বৈবাহিক সূত্রে শেখ হাসিনার আত্মীয়।

মঙ্গলবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘‘আমার মা মোটেও দেশ ছেড়ে যেতে চাননি। আমাদের তাকে রাজি করাতে হয়েছিল।’’ তবে তার মা শনিবার সন্ধ্যায থেকে পদত্যাগ করার কথা ভাবতে শুরু করেন বলে জানান তিনি।

সজীব ওয়াজেদ বলেন, আমরা পরিবারের সদস্যরা তাকে অনুরোধ করেছিলাম। আমরা তাকে বলেছিলাম, এই জনতা সহিংসতার জন্য বেরিয়েছে এবং তারা তোমাকে হত্যা করবে। আমাদের তোমাকে নিরাপদে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে জনতার পৌঁছাতে যতটুকু সময় লেগেছিল, তার হাতে ততটুকুই সময় ছিল। তারা কোনও প্রস্তুতি ছাড়াই গনভবন থেকে বেরিয়ে যান।

‘‘গতকাল আমি তাকে দিল্লিতে ফোন দিয়েছিলাম। তিনি ভালো আছেন। কিন্তু তিনি খুবই হতাশ। বাংলাদেশের জনগণ তাকে খুবই নিরাশ করেছে।’’

একাধিক সূত্র জানায়, সোমবার সকালের দিকে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয়ের জন্য অনুরোধ জানাতে দিল্লিতে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার দীর্ঘ কর্মজীবনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারতের কাছ থেকেও দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

একদিন আগে ওয়াশিংটন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বলেছিল, ‘‘শেখ হাসিনার সময় শেষ। তার সামনে আরও কোনও বিকল্প নেই।’’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) যখন বুঝতে পেরেছিলেন সেনাবাহিনী তাকে সমর্থন করছে না, তখন তিনি পদত্যাগ করেন। লোকজন কারফিউ ভাঙতে যাচ্ছিল এবং তার বাসভবন অভিমুখে মিছিল করতে ঢাকায় জড়ো হচ্ছিল।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনিচ্ছা স্বত্তেও পদত্যাগ পত্রে নথিতে স্বাক্ষর করতে রাজি হন শেখ হাসিনা। তবে কীভাবে তাকে নিরাপদে দেশ থেকে বের করা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্যেষ্ঠ একজন সামরিক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, শেখ হাসিনা কখন পদত্যাগপত্রে সই করেছেন, বাসভবন থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে কখন চড়েছিলেন তা কেবল স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স, প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট এবং সেনাসদর দপ্তরের কিছু জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা জানতেন। পুরো ব্যাপারটা করা হয়েছিল অত্যন্ত গোপনে।

স্থানীয় সময় সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। যাতে শেখ হাসিনার গতিবিধির কোনও খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে না পড়ে। তিনি পালিয়ে যাওয়ার পরই পুনরায় ইন্টারনেট সংযোগ সচল করে দেওয়া হয়।

সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনাকে নিরাপদে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়। তার গাড়িবহরে হামলা হতে পারে, এমন উদ্বেগ ছিল। তাই পুরো পথ ফাঁকা করা হয়েছিল এবং প্রস্থান পয়েন্ট সুরক্ষিত করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে সড়কপথে নিয়ে যাওয়া নিরাপদ ছিল না। এর পরিবর্তে একটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়।

সজীব ওয়াজেদ বলেন, প্রস্থানের মুহূর্ত পর্যন্ত শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে চড়তে অনিচ্ছুক ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন আমার খালা চলে যাক। আমার মা হেলিকপ্টারে উঠতে চাননি। আমি ফোন করে মাকে রাজি করিয়েছিলাম। আমার খালাকে বলেছিলাম, তাকেও চলে যেতে হবে।

তিনি বলেন, শেষে তারা তাই করেন। তাদের গণভবন থেকে বাংলাদেশি বিমান বাহিনীর একটি সি-১৩০ হারকিউলিস বিমানে চড়েন। যা আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল।

সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, তার ধারণা তারা ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় গিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে তাদের দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কর্মকর্তারা বলেন, এর মাঝেই ভারতের সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং তারা এই রুট দিয়ে ট্রানজিট দিতে সম্মত হয়। কিন্তু অন্যান্য বিবরণ বলছে, তাকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার একটি বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে বিমানে করে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা যে রুটেই যান না কেন, স্থানীয় সময় বেলা দেড়টায় শেখ হাসিনা, তার বোন ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এমপি সালমান ফজলুর রহমানকে উড়োজাহাজ থেকে বিমানে স্থানান্তর করা হয়েছিল, যেটি তাদের দিল্লিতে নিয়ে যায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, চার কিংবা পাঁচটি স্যুটকেস উড়োজাহাজে নেওয়ার জন্য মাটিতে অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল। তিনি যেসব জিনিসপত্র রেখে গেছেন সেসবের বেশিরভাগই জনতা তার বাসভবনে ঢুকে নিয়ে যায়। এই ঘটনা যখন ঘটেছে তখন তিনি মাঝ-আকাশে ছিলেন।

কয়েক ঘণ্টা পর উড়োজাহাজটি দিল্লিতে অবতরণ করে। যদিও উড়োজাহাজটির যাত্রীদের গন্তব্য অস্পষ্ট ছিল। ঢাকায় ইন্টারনেট আবারও চালু হয় এবং দেশজুড়ে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান উপলক্ষে উদযাপন শুরু হয়েছিল।

একসময় শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্রী হিসেবে দেখা হলেও পরে ইন্টারনেট বন্ধ রেখে পলাতক ব্যক্তির মতো পালিয়ে যান তিনি।