প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণভবনের দরজা শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না। তাদের আর কী কী দাবি বাকি আছে—আমি সেটাও শুনতে চাই এবং যেটা আমার সাধ্যের মধ্যে আছে সেটা আমি পূরণ করতে চাই। গতকাল শনিবার গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ‘একদফা’ দাবি নিয়ে তাদের আলোচনায় বসতে রাজি আছেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। গতকাল রাতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের শীর্ষ তিন নেতা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাদের এ কথা জানান।
পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আবারও বলছি, আন্দোলনকারীরা চাইলে আমি এখনো আলোচনায় রাজি। তারা যে কোনো সময় (গণভবনে) আসতে পারে। দরকার হলে তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়েও আসতে পারে। আন্দোলনের সময় হওয়া প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিল করার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম-২০০৮ সালের আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল। এরপর অনেক চিন্তাভাবনা করে সর্বজনীন পেনশন স্কিমটা আমরা চালু করেছি। এতে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুবিধা আমরা দিয়েছি।
কারও দাবির অপেক্ষা না করে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই, যারা এর সঙ্গে জড়িত, সে পুলিশই হোক বা অন্য যে কেউ—যারা অস্ত্রধারী ও জ্বালা-পোড়াওসহ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের সেসব ঘটনার তদন্ত ও বিচার হোক। শুধু ঢাকা নয়, যেসব জায়গায় এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ হয়েছে, সেগুলোর তদন্ত করে যথাযথ বিচার হবে। রংপুরে একটা ঘটনা ঘটেছে। যে পুলিশ সদস্য দায়ী তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। এ ঘটনার বিচার হবেই।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আমরা মেনে নিয়েছি (কোটার দাবি পূরণ)। এখন আরও কিছু দাবি আছে কি না, সেটা আমি শুনতে চাই। আপনাদের সামনে আমি বলতে চাই, দেশবাসীরও জানা উচিত, আমি কখনোই আমার দরজা বন্ধ করিনি। গণভবনের দরজা খোলা।
এদিকে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। এরপরও কোনো কিছু থাকলে তিনি আলোচনায় বসতে রাজি আছেন। এমনকি একদফা দাবি নিয়েও।
গণভবন সূত্র জানায়, প্রথমে গণভবনে প্রবেশ করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। এরপরই প্রবেশ করেন জোটের আরেক শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে কী কথা হয়েছে—জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়েছেন এবং তাদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছেন। তাদের যদি কোনো দাবি বাদ থাকে, সেগুলোও মেনে নেবেন। এমনকি তারা (আন্দোলনকারীরা) একদফা দাবি নিয়ে আলোচনা করতে চাইলেও প্রধানমন্ত্রী রাজি আছেন।’
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, দেশের সার্বিক পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। সমস্যা কীভাবে সমাধান হবে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি সহনশীলতার সঙ্গে মেনে নিয়েছেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা যেন হয়রানির শিকার না হয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন খুলে দেওয়া যায়, সে বিষয়ে চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রধানমন্ত্রী সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, সাক্ষাতে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় আন্দোলনে উসকানিদাতা কয়েক মন্ত্রীরও সমালোচনা করেন জোট নেতারা।