ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনের নেতা ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর আলোচনায় হতে যাচ্ছেন পরবর্তী হামাস প্রধান? তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এরই মধ্যে উঠে এসেছে হামাসের কয়েকজন ত্যাগী নেতার নাম। যার মধ্যে খালেদ মেশাল, ইয়াহিয়া সিনওয়ার, মোহাম্মদ দেইফ, মারওয়ান ইসা অন্যতম।
পশ্চিম তীরের একটি গ্রামে জন্ম খালেদ মেশাল ‘আবু আল-ওয়ালিদ’র। হামাসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এর রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য। ১৯৯৬ এবং ২০১৭ সালের মধ্যে তিনি রাজনৈতিক ব্যুরোর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০০৪ সালে শেখ আহমেদ ইয়াসিনের মৃত্যুর পর এর নেতা নিযুক্ত হন।
গাজা উপত্যকায় হামাস আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। তিনি মাজদ নামে পরিচিত হামাসের নিরাপত্তা পরিষেবার প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৬২ সালে জন্ম নেয়া এই নেতা এখন পর্যন্ত তিনবার গ্রেফতার হয়েছেন। ১৯৮৮ সালে তৃতীয়বার গ্রেফতারের পর হামাসের এই নেতাকে চারবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। তবে হামাস-ইসরাইল বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে তিনি মুক্তি পান এবং গাজায় ফিরে আসেন। ২০১৭ সালে গাজা উপত্যকায় স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান নিযুক্ত হন।
হামাসের সামরিক শাখা ইজ আল-দিন আল-কাসেম ব্রিগেডের নেতৃত্ব রয়েছেন মোহাম্মদ দেইফ। তিনি এমন একজন ছায়া ব্যক্তিত্ব যিনি ফিলিস্তিনিদের কাছে ‘দ্য মাস্টারমাইন্ড’ এবং ইসরাইলিদের কাছে ‘দ্য ক্যাট উইথ নাইন লাইভস’ নামে পরিচিত। যখন হামাসের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়, তিনি বিনা দ্বিধায় এই দলে যোগ দেন।
মোহাম্মদ দেইফের ডানহাত নামে পরিচিত মারওয়ান ইসা। তিনি ইজ আল-দিন আল-কাসেম ব্রিগেডসের ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ এবং হামাসের রাজনৈতিক ও সামরিক ব্যুরোর সদস্য। খুব কম বয়সে হামাসের কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘প্রথম ইন্তিফাদা’ চলাকালীন ইসরাইলি বাহিনী তাকে আটক করে এবং এরপর পাঁচ বছর বন্দি রেখেছিল।
১৯৪৫ সালে জন্ম নেন মাহমুদ জাহার। ১৯৯২ সালে ইসরাইল থেকে মারজ আল-জুহুরে নির্বাসিত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিও ছিলেন, যেখানে তিনি পুরো এক বছর কাটিয়েছেন। ইসরাইল ২০০৩ সালে গাজা শহরের রিমাল এলাকায় জাহারের বাড়িতে এফ-১৬ বিমান থেকে অর্ধটন ওজনের একটি বোমা ফেলে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। হামলায় তিনি সামান্য আহত হলেও তার বড় ছেলে খালেদের মৃত্যু হয়।
এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে খালেদ মেশালকের নাম। খালেদ মেশাল ১৯৯৭ সালের দিকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছিলেনে ইসরায়েলের হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে ফিরে। ইসরায়েলের চররা সে সময় জর্ডানের রাজধানী আম্মনে মেশালের কার্যালয়ের বাইরে রাস্তায় তাকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করতে চেয়েছিল।
জর্ডানের তৎকালীন রাজা হুসেইন তখন বিষের প্রতিষেধক সরবরাহ করা না হলে হত্যার চেষ্টাকারীদের ফাঁসি দেওয়া এবং ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছিলেন।
ইসরায়েল জর্ডানের রাজার দাবি মেনে নিয়েছিল এবং একইসঙ্গে তারা হামাস নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনকেও মুক্তি দিয়েছিল। যদিও সাত বছর পর গাজায় তাকে হত্যা করে তারা।
ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে ইরান-সমর্থিত হামাস একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। তাদের দাবি, ইসরায়েলের ধ্বংসের জন্য এই গোষ্ঠী লড়াই করছে।
কিন্তু ফিলিস্তিনি সমর্থকদের কাছে, খালেদ মেশাল ও হামাসের অন্যান্য নেতারা ইসরায়েলি দখলদারিত্ব থেকে ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করে যাওয়া নেতা।
১৯৯০ দশকের শেষের দিক থেকে হামাসের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন মেশাল। যদিও তিনি মূলত নির্বাসনে থেকে কাজ করে আসছিলেন।