‘হত্যার পরিকল্পনার’ কথা জানতে পেরে গত শনিবার (২৯ জুন) সন্ধ্যার পর রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়্যেদুল হক ওরফে ব্যারিস্টার সুমন। এ ঘটনার চার দিন হয়ে গেলেও রহস্যের জট খুলতে পারেনি পুলিশ। এ অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি।
এমন পরিস্থিতিতে আরও অনেকবার পড়েছেন উল্লেখ করে মঙ্গলবার (২ জুলাই) সংসদ সদস্য সায়্যেদুল হক বলেন, ‘এবার বিষয়টি ভিন্ন। কারণ, আমার থানার ওসি এসে যখন আমাকে এ ঘটনাটি জানান এবং এ তথ্য প্রদানকারীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলিয়ে দেন, তখনই আমি ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে ঢাকায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।’
তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি সোচ্চার। দুর্নীতিবাজদের নিয়ে সংসদে আমি কথা বলেছি, এমনকি প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের সামনেও কথা বলেছি। এখন কারা আমার এ কাজের ওপর ক্ষুব্ধ, এ বিষয়টি আমার পক্ষে চিহ্নিত করা কঠিন। আইনি প্রক্রিয়া হিসেবে আমি জিডি করেছেন। এখন পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব এ ঘটনার গভীরতা ও এর রহস্য উদ্ঘাটনের ব্যবস্থা নেওয়া।
ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার পরিকল্পনার ব্যাপারে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় বলেন, গত ২৮ জুন রাতে অজ্ঞাত পরিচয়ে এক ব্যক্তি প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে কল করে তার কাছে ব্যারিস্টার সুমনের ফোন নম্বর চান। তখন ওসি ওই ব্যক্তির কাছে জানতে চান, কেন তার নম্বর প্রয়োজন? উত্তরে ওই ব্যক্তি জানান, ব্যারিস্টার সুমনের সঙ্গে জরুরি কথা বলতে চান তিনি। এ ফোন নম্বর না দিলে আত্মহত্যা করবেন। ওসি সংসদ সদস্যের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে ওই ব্যক্তিকে ফোন নম্বরটি দেননি। এর কিছুক্ষণ পরই ওই ব্যক্তি হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠান এবং পরে তা ডিলিট করে দেন। এর কিছুক্ষণ পর আবারও একটি খুদে বার্তা পাঠান ওই ব্যক্তি। তাতে লেখা ছিল, ব্যারিস্টার সুমনের কিছু শত্রু আছে, যারা তার ক্ষতি করতে পারে। এটিও পরে ডিলিট করে দেওয়া হয়।
ওসি হিল্লোল রায় জানান, এ বার্তা পেয়ে তিনি কিছুটা নড়েচড়ে বসেন। তিনি এর পরদিন (২৯ জুন) সংসদ সদস্যের চুনারুঘাটের বাড়িতে গিয়ে দেখা করে বিষয়টি ব্যারিস্টার সুমনকে জানান। তখন ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির ফোন নম্বরটি নিয়ে তার সঙ্গে প্রায় ১০ থেকে ১২ মিনিট কথা বলেন তিনি।
ওই কথোপকথনের বিষয়ে সংসদ সদস্য সায়েদুল হক সুমন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার সঙ্গে কথা বলে জানায়, কন্ট্রাক্ট কিলারদের কিছু সদস্য আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে। এর পেছনে দেশের বড় বড় কিছু লোক জড়িত। এ কন্ট্রাক্ট কিলারদের মধ্যে ওই ব্যক্তিটিও ছিল। যখন সে আমার নাম শুনতে পায়, তখনই সে এ কন্ট্রাক্ট কিলিং থেকে সরে আসে। কারণ, ওই ব্যক্তি আমাকে পছন্দ করে ও আমার একজন ভক্ত। পাশাপাশি সে একজন সিলেটি। সে সিলেটি দরদি হয়েই এ গোপনীয়তা আমাকে জানাতেই ওসির কাছে ফোন নম্বরটি চেয়েছিল।’
এদিকে ব্যারিস্টার সুমনকে ‘হত্যার পরিকল্পনা’ সামনে আসার পর থেকেই তদন্তে নেমেছে পুলিশ। হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে পুলিশ সদর দপ্তরও।