ঢাকা ১১:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরের শস্য ও মাছের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্থের আশঙ্কা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৮:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪
  • ৫৫ বার

দেশের হাওরাঞ্চলে এবার মাছের প্রজনন বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রজনন বিঘ্নিত হওয়ায় হাওরে দেশী মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। সাধারণত বৈশাখে হাওরে নতুন পানি আসে। এ সময়ে দেশী মাছের প্রজনন হয়। তবে এবার বৈশাখে তেমন বৃষ্টি হয়নি। জ্যৈষ্ঠে কিছুটা বৃষ্টিপাত দেখা গেলেও হাওরে নতুন পানি আসেনি। আর যা এসেছে তা পাহাড়ি ঢলের পানি। তাও যৎসামান্য। সময়মতো নতুন পানি না পেয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ প্রজনন করতে পারেনি। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সংশয় রয়েছে। মৎস্যজীবী এবং মৎস্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এ বছর মাছের প্রজনন পিছিয়ে গেছে। এটি অশনিসংকেত। মূলত হাওরে অপরিকল্পিত বাঁধ দেয়ায় পানি প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে দেশী মাছের প্রজনন হচ্ছে না। যার এবার মাছের প্রজনন পিছিয়ে যাবে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশীয় প্রজাতির মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। ২০২২ সালে দফায় দফায় বন্যায় প্লাবিত হয় সুনামগঞ্জ জেলা। পানিতে ভরা ছিল নদণ্ডনদীসহ হাওরগুলো। ২০২২ সালের আগে বেশির ভাগ সময় সুরমা-কুশিয়ারাসহ জেলার প্রায় সব নদণ্ডনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে ছিল। এমনকি মরা নদীগুলোর পানিও সমতল ছিল। বর্তমান সময়ের চেয়ে দেড়-দুই মিটার পানি বেশি ছিল নদণ্ডনদীতে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাওরে সময়মতো পানির দেখা মিলছে না। সূত্র জানায়, হাওরাঞ্চলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার টন। চলতি বছর ১ লাখ ১৫ হাজার টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে হাওরগুলোয় ১ হাজার কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হওয়ার কথা। তবে সময়মতো বৃষ্টিপাত ও পানি না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ এবার সীমান্তঘেঁষা ভারতের মেঘালয় ও বারাক অঞ্চলে ভারি বৃষ্টি হয়নি। সেখানে ভারি বৃষ্টি হলেই সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চলতি বছর মেঘালয় ও বারাক অঞ্চলে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদণ্ডনদীতে পানি বাড়েনি। ফলে এর প্রভাব পড়ছে হাওরে মাছ উৎপাদনে। বন্যায় হাওরাঞ্চলে দৃশ্যমান কিছু ক্ষতি হলেও দীর্ঘমেয়াদে উপকার পান জেলে ও কৃষকরা, যা এবার হয়নি। এদিকে হাওর নিয়ে কাজ করা সংগঠন হাওর এরিয়া আপলিফটমেন্ট সোসাইটির (হাউস) নির্বাহী পরিচালক সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, এ বছর বন্যা তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত ভালো করে বৃষ্টিও হয়নি। হাওরে নতুন পানি না আসায় মাছের প্রজনন বিঘ্নিত হচ্ছে। একই সঙ্গে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোয় ফিশ প্লাসের ব্যবস্থা না থাকায় মাছের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আগামী কয়েক বছর অভিন্ন থাকতে পারে। এরপর হয়তো স্থায়ী রূপ পাবে এবং ঋতুচক্র পুরো পাল্টে যেতে পারে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামছুল করিম জানান, হাওরাঞ্চলে সময়মতো নতুন পানি না আসায় মাছ প্রজনন করতে পারছে না। এটি অশনিসংকেত। এসবের মূল কারণ হাওরে অপ্রয়োজনীয় ফসল রক্ষা বাঁধ। এজন্য দেশী জাতের মাছগুলো ডিম ছাড়ার জন্য কাক্সিক্ষত স্থানে পরিভ্রমণ করতে পারছে না। এ বছর মাছের প্রজনন পিছিয়ে যাবে হয়তো। চলতি বছর ১ লাখ ১৫ হাজার টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলার হাওরগুলোয় ১ হাজার কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হওয়ার কথা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হাওরের শস্য ও মাছের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্থের আশঙ্কা

আপডেট টাইম : ১১:১৮:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪

দেশের হাওরাঞ্চলে এবার মাছের প্রজনন বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রজনন বিঘ্নিত হওয়ায় হাওরে দেশী মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। সাধারণত বৈশাখে হাওরে নতুন পানি আসে। এ সময়ে দেশী মাছের প্রজনন হয়। তবে এবার বৈশাখে তেমন বৃষ্টি হয়নি। জ্যৈষ্ঠে কিছুটা বৃষ্টিপাত দেখা গেলেও হাওরে নতুন পানি আসেনি। আর যা এসেছে তা পাহাড়ি ঢলের পানি। তাও যৎসামান্য। সময়মতো নতুন পানি না পেয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ প্রজনন করতে পারেনি। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সংশয় রয়েছে। মৎস্যজীবী এবং মৎস্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এ বছর মাছের প্রজনন পিছিয়ে গেছে। এটি অশনিসংকেত। মূলত হাওরে অপরিকল্পিত বাঁধ দেয়ায় পানি প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে দেশী মাছের প্রজনন হচ্ছে না। যার এবার মাছের প্রজনন পিছিয়ে যাবে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশীয় প্রজাতির মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। ২০২২ সালে দফায় দফায় বন্যায় প্লাবিত হয় সুনামগঞ্জ জেলা। পানিতে ভরা ছিল নদণ্ডনদীসহ হাওরগুলো। ২০২২ সালের আগে বেশির ভাগ সময় সুরমা-কুশিয়ারাসহ জেলার প্রায় সব নদণ্ডনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে ছিল। এমনকি মরা নদীগুলোর পানিও সমতল ছিল। বর্তমান সময়ের চেয়ে দেড়-দুই মিটার পানি বেশি ছিল নদণ্ডনদীতে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাওরে সময়মতো পানির দেখা মিলছে না। সূত্র জানায়, হাওরাঞ্চলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার টন। চলতি বছর ১ লাখ ১৫ হাজার টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে হাওরগুলোয় ১ হাজার কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হওয়ার কথা। তবে সময়মতো বৃষ্টিপাত ও পানি না হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ এবার সীমান্তঘেঁষা ভারতের মেঘালয় ও বারাক অঞ্চলে ভারি বৃষ্টি হয়নি। সেখানে ভারি বৃষ্টি হলেই সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চলতি বছর মেঘালয় ও বারাক অঞ্চলে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদণ্ডনদীতে পানি বাড়েনি। ফলে এর প্রভাব পড়ছে হাওরে মাছ উৎপাদনে। বন্যায় হাওরাঞ্চলে দৃশ্যমান কিছু ক্ষতি হলেও দীর্ঘমেয়াদে উপকার পান জেলে ও কৃষকরা, যা এবার হয়নি। এদিকে হাওর নিয়ে কাজ করা সংগঠন হাওর এরিয়া আপলিফটমেন্ট সোসাইটির (হাউস) নির্বাহী পরিচালক সালেহিন চৌধুরী শুভ বলেন, এ বছর বন্যা তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত ভালো করে বৃষ্টিও হয়নি। হাওরে নতুন পানি না আসায় মাছের প্রজনন বিঘ্নিত হচ্ছে। একই সঙ্গে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোয় ফিশ প্লাসের ব্যবস্থা না থাকায় মাছের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আগামী কয়েক বছর অভিন্ন থাকতে পারে। এরপর হয়তো স্থায়ী রূপ পাবে এবং ঋতুচক্র পুরো পাল্টে যেতে পারে। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামছুল করিম জানান, হাওরাঞ্চলে সময়মতো নতুন পানি না আসায় মাছ প্রজনন করতে পারছে না। এটি অশনিসংকেত। এসবের মূল কারণ হাওরে অপ্রয়োজনীয় ফসল রক্ষা বাঁধ। এজন্য দেশী জাতের মাছগুলো ডিম ছাড়ার জন্য কাক্সিক্ষত স্থানে পরিভ্রমণ করতে পারছে না। এ বছর মাছের প্রজনন পিছিয়ে যাবে হয়তো। চলতি বছর ১ লাখ ১৫ হাজার টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলার হাওরগুলোয় ১ হাজার কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হওয়ার কথা।