ঢাকা ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪
  • ৪২ বার

দেশে কয়েকটি শ্রেণির মধ্যে দুর্নীতি, অপব্যয় ও অনিয়মের ব্যাপারটি ক্রমেই প্রকাশিত হচ্ছে, হচ্ছে আলোচিতও। সম্প্রতি বেশ কয়েকজনের দুর্নীতির মাধ্যমে সীমাহীন সম্পদ গড়ার খবর জনমনে মিশ্র ধারণারও জন্ম দিয়েছে। অবশ্য যাদের দুর্নীতির খবর প্রকাশ পেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দুর্নীতির এ তো আংশিক চিত্র মাত্র! এমন অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ সমাজের বিভিন্ন স্তরে অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদশালী হচ্ছেন। এদের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? বস্তুত শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীই নয়, বেসরকারি খাতে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও প্রতারণা করা, ভেজাল মেশানো, সিন্ডিকেট গড়ে তোলা ইত্যাদির নজির আমরা দেখছি। আবার রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও দুর্নীতির ছাপ লক্ষণীয়। সম্প্রতি দুর্নীতির বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারপ্রধান জানিয়েছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। যারাই দুর্নীতি করবে, সে যেই হোক, তাদের ধরা হবে।

উল্লেখ্য, যে কোনো দেশের জন্যই দুর্নীতি শুধু সামাজিক শৃঙ্খলাই বিনষ্ট করে না, প্রকট শ্রেণিবৈষম্যেরও জন্ম দেয়। সুশাসনের বিষয়ে জনগণের মধ্যে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করে। পরিতাপের বিষয়, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করলেও সুযোগসন্ধানীরা আইন ও নিয়মের ফাঁকফোকর গলে তাদের কার্যক্রম ঠিকই চালিয়ে যায়। যারা রাষ্ট্রের কর্মী, তাদের কারও কারও মধ্যে সম্পদের হিসাব না দেওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় নিয়োগপ্রাপ্তের তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এরপর পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির বিবরণী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দিতে হয়। শুদ্ধাচার চর্চা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য নিয়মটি জরুরি হলেও এ বিষয়টিতে কেউ আর গুরুত্ব দিতে চান না। ব্যবসায়ী কিংবা রাজনীতিবিদদের কারও কারও মধ্যেও আয়করের বিবরণী জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কৌশলের আশ্রয় নিতে দেখা যায়।

ভুলে গেলে চলবে না, দুর্নীতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থেই এর লাগাম কঠোর হাতে টেনে ধরা বাঞ্ছনীয়। দুর্নীতি রোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি, দুর্নীতি প্রতিরোধে সর্বক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। কারণ দেশবাসীর জীবনমানের উন্নয়নের সঙ্গেও এর একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে নিরপেক্ষ অনুসন্ধান ও প্রমাণসাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপও নিতে হবে। দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কটের বিষয়টিও গুরুত্ব পাওয়া উচিত। তবে কোনো ভুল পদক্ষেপে নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়, কর্তৃপক্ষকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া দরকার। বস্তুত দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ব্যাংক খাতে লুট ও নৈরাজ্য, খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড় দেশের অর্থনীতিতে সংকট বাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশের সব দুর্নীতিবাজকে আইনের আওতায় আনতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তা

আপডেট টাইম : ১০:৩৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪

দেশে কয়েকটি শ্রেণির মধ্যে দুর্নীতি, অপব্যয় ও অনিয়মের ব্যাপারটি ক্রমেই প্রকাশিত হচ্ছে, হচ্ছে আলোচিতও। সম্প্রতি বেশ কয়েকজনের দুর্নীতির মাধ্যমে সীমাহীন সম্পদ গড়ার খবর জনমনে মিশ্র ধারণারও জন্ম দিয়েছে। অবশ্য যাদের দুর্নীতির খবর প্রকাশ পেয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দুর্নীতির এ তো আংশিক চিত্র মাত্র! এমন অনেক দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষ সমাজের বিভিন্ন স্তরে অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদশালী হচ্ছেন। এদের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? বস্তুত শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীই নয়, বেসরকারি খাতে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও প্রতারণা করা, ভেজাল মেশানো, সিন্ডিকেট গড়ে তোলা ইত্যাদির নজির আমরা দেখছি। আবার রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও দুর্নীতির ছাপ লক্ষণীয়। সম্প্রতি দুর্নীতির বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারপ্রধান জানিয়েছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। যারাই দুর্নীতি করবে, সে যেই হোক, তাদের ধরা হবে।

উল্লেখ্য, যে কোনো দেশের জন্যই দুর্নীতি শুধু সামাজিক শৃঙ্খলাই বিনষ্ট করে না, প্রকট শ্রেণিবৈষম্যেরও জন্ম দেয়। সুশাসনের বিষয়ে জনগণের মধ্যে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করে। পরিতাপের বিষয়, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করলেও সুযোগসন্ধানীরা আইন ও নিয়মের ফাঁকফোকর গলে তাদের কার্যক্রম ঠিকই চালিয়ে যায়। যারা রাষ্ট্রের কর্মী, তাদের কারও কারও মধ্যে সম্পদের হিসাব না দেওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। বিদ্যমান বিধিমালা অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময় নিয়োগপ্রাপ্তের তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এরপর পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির বিবরণী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দিতে হয়। শুদ্ধাচার চর্চা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য নিয়মটি জরুরি হলেও এ বিষয়টিতে কেউ আর গুরুত্ব দিতে চান না। ব্যবসায়ী কিংবা রাজনীতিবিদদের কারও কারও মধ্যেও আয়করের বিবরণী জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে কৌশলের আশ্রয় নিতে দেখা যায়।

ভুলে গেলে চলবে না, দুর্নীতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থেই এর লাগাম কঠোর হাতে টেনে ধরা বাঞ্ছনীয়। দুর্নীতি রোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি, দুর্নীতি প্রতিরোধে সর্বক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ বাড়াতে হবে। কারণ দেশবাসীর জীবনমানের উন্নয়নের সঙ্গেও এর একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে। কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে নিরপেক্ষ অনুসন্ধান ও প্রমাণসাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপও নিতে হবে। দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কটের বিষয়টিও গুরুত্ব পাওয়া উচিত। তবে কোনো ভুল পদক্ষেপে নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয়, কর্তৃপক্ষকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া দরকার। বস্তুত দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ব্যাংক খাতে লুট ও নৈরাজ্য, খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড় দেশের অর্থনীতিতে সংকট বাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দেশের সব দুর্নীতিবাজকে আইনের আওতায় আনতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।