ঢাকা ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪, ৯ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেঁসে যাচ্ছেন প্রভাবশালী স্থানীয় কয়েক নেতা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৭:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪
  • ৭ বার

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে ফেঁসে যাচ্ছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েক নেতা। তাদের মধ্যে জেলার শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতাও আছেন। এমপি আনারের বিরোধীপক্ষ হিসাবে পরিচিত এসব নেতা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনেরও ঘনিষ্ঠ। হত্যা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে খুনিদের টাকা দেওয়াসহ সব পর্যায়ে সম্পৃক্ততা আছে তাদের। আনার হত্যায় গ্রেফতার চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লার আদালতে দায় স্বীকার করে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার নাম। যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন ওইসব নেতা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ৫ জুন দ্বিতীয় দফার রিমান্ড শেষে শিমুলের দেওয়া জবানবন্দির পর থেকেই পালটে যায় এমপি আনার হত্যার তদন্তের প্রেক্ষাপট। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু। তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, শিমুলের জবানবন্দিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম উঠে আসে। এর পর থেকেই নজরদারির আওতায় আছেন তারা। শিমুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হত্যা মিশন বাস্তবায়নের পর তাকে দুই কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল কাজী কামাল আহমেদ বাবুর। আর বাবুর পেছনে ছিলেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী আরেক নেতা। শিমুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে ডিবি ওই নেতার সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবুর রাজনৈতিক গুরু জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদুল করিম মিন্টু। ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক এই মেয়রের ডান হাত হিসাবে পরিচিত বাবু। আওয়ামী লীগ নেতা বাবুকে ডিবি গ্রেফতারের পর থেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন মিন্টু।

এমপির স্বজনদেরও দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ জড়িত। ২০১৭ সালেও বিরোধী পক্ষ এমপি আনারকে হত্যাচেষ্টা করে। সে ঘটনায় থানায় মামলা হয়, আসামিরাও সব স্বীকার করে। তবে মামলাটি পরে মীমাংসা করা হয়। আনারের ভাই এনামুল হক ইমান সোমবার যুগান্তরকে বলেন, গ্রেফতার বাবুর সব থেকে ঘনিষ্ঠ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু। এছাড়া হত্যার মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামন শাহীনেরও ঘনিষ্ঠ এই মিন্টু। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি, আনারকে হত্যার পেছনে মিন্টুর হাত থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে আনারের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন আব্দুর রশীদ খোকন। খোকনের পক্ষে কাজ করেন সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী। তারা এক জনসভায় প্রকাশ্যে বক্তব্য দেয় বঙ্গের মাটিতে জায়গা হবে না আনারের। মিন্টু নির্বাচন ছাড়া টানা ১২ বছর মেয়র ছিলেন। মেয়র পদ হারানোর পেছনে আনারকে দায়ী করে আসছিল মিন্টু। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মিন্টুকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। নাম প্রকাশ না করে ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, চরমপন্থি নেতা শিমুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কাজী কামাল আহমেদ বাবুর পেছনে রয়েছে অপর এক আওয়ামী লীগ নেতা, যার সঙ্গে সরাসরি কথা হয়নি শিমুলের। ওই নেতাই বাবুকে দিয়ে দুই কোটি টাকা পৌঁছে দিতে চেয়েছে শিমুলের কাছে।’

তবে রিমান্ডে বাবু সব অস্বীকার করছে উল্লেখ করে ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, বাবু রিমান্ডে দাবি করেছে শিমুল তার কাছে দুই কোটি টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। এজন্য সে শিমুলকে টাকা দিতে চেয়েছিল। তবে শিমুলের ফোন থেকে তার হোয়াটসঅ্যাপে আসা এমপি আনারের ছবি ও হত্যার বিষয়ে বিভিন্ন কথোপকথনের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি বাবু।

এদিকে এমপি আনার হত্যার ঘটনায় অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখনো বলছি, আমরা সত্যের কাছাকাছি এসে গিয়েছি। মরদেহের বিষয়টি নিশ্চিত হলেই আমরা আপনাদের কাছে অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারব। মরদেহ নিশ্চিত হওয়ার জন্য যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের জবানবন্দি শুনেছি। তারা বলেছে যে, মরদেহ তারা খণ্ড-বিখণ্ড করেছে। কোথায় রেখেছে, সেটা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। ভারতীয় ও আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী সেখানে গিয়েছিল, সেখান থেকে তারা যেগুলো পেয়েছেন সেগুলো উদ্ধার করেছেন। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত হতে পারব না যে এগুলো তার মরদেহের অংশ।’

মূল আসামি শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তাকে গ্রেফতার করতে না পারলে বিচার কোথায় হবে সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন, মামলা দুটো হয়েছে। যেখানে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে একটি মামলা হয়েছে। আর ওই সংসদ সদস্যের মেয়ে ঢাকায় একটি মামলা করেছেন। ভারতে যেহেতু ঘটনা ঘটেছে, আসামিকে ফেরত নেওয়া ও বন্দি করার দায়িত্ব তাদের। আমি যতটুকু জানি, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দিবিনিময় চুক্তি আছে। সেক্ষেত্রে হয়তো সেই সুবিধা ভারত সরকার পাবে। আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দিবিনিময় চুক্তি নেই। তবে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসাবে আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সব কাজেই তারা সহযোগিতা করছেন এবং ভবিষ্যতে করবেন।

গত ১২ মে ভারতে যান এমপি আনার। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। তবে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাবার সন্দেহভাজন হত্যাকারীর নাম জানিয়েছেন ডরিন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে বাবার সন্দেহভাজন হত্যাকারীর নাম-পরিচয় জানিয়েছেন আনারের মেয়ে ডরিন। মামলার তদন্তে ডিবির প্রতি সন্তুষ্ট হলেও ডিবির এক কর্মকর্তার ব্যাপারে তিনি অভিযোগ করেছেন। সোমবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। জানা গেছে, ঝিনাইদহের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে বাবার হত্যার বেনিফিশিয়ারি হিসাবে হত্যাকারী সন্দেহ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন ডরিন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সে তার বাবার হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাবে এটাই স্বাভাবিক। সে সন্দেহভাজনদের নাম বলেছে। আমরা তার বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। এছাড়া ডরিন অভিযোগ করেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা না হয়েও তদন্তে নাক গলানো ডিবির এডিসি শাহিদুর রহমান রিপন তার বাবার হত্যাকারীদের কৌশলে গ্রেফতার এড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। আসামি শিমুলের বক্তব্য সঠিকভাবে রেকর্ড করতে দেননি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বরিশাল জেলায় বদলির পরও কেন সে এতদিন ছাড়পত্র নেয়নি এবং কী উদ্দেশ্যে নিজেকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে পরিচয় দিয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হবে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ফেঁসে যাচ্ছেন প্রভাবশালী স্থানীয় কয়েক নেতা

আপডেট টাইম : ১০:৪৭:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে ফেঁসে যাচ্ছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েক নেতা। তাদের মধ্যে জেলার শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতাও আছেন। এমপি আনারের বিরোধীপক্ষ হিসাবে পরিচিত এসব নেতা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনেরও ঘনিষ্ঠ। হত্যা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে খুনিদের টাকা দেওয়াসহ সব পর্যায়ে সম্পৃক্ততা আছে তাদের। আনার হত্যায় গ্রেফতার চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লার আদালতে দায় স্বীকার করে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার নাম। যে কোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন ওইসব নেতা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গত ৫ জুন দ্বিতীয় দফার রিমান্ড শেষে শিমুলের দেওয়া জবানবন্দির পর থেকেই পালটে যায় এমপি আনার হত্যার তদন্তের প্রেক্ষাপট। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু। তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, শিমুলের জবানবন্দিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম উঠে আসে। এর পর থেকেই নজরদারির আওতায় আছেন তারা। শিমুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হত্যা মিশন বাস্তবায়নের পর তাকে দুই কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল কাজী কামাল আহমেদ বাবুর। আর বাবুর পেছনে ছিলেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী আরেক নেতা। শিমুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে ডিবি ওই নেতার সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবুর রাজনৈতিক গুরু জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদুল করিম মিন্টু। ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক এই মেয়রের ডান হাত হিসাবে পরিচিত বাবু। আওয়ামী লীগ নেতা বাবুকে ডিবি গ্রেফতারের পর থেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন মিন্টু।

এমপির স্বজনদেরও দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ জড়িত। ২০১৭ সালেও বিরোধী পক্ষ এমপি আনারকে হত্যাচেষ্টা করে। সে ঘটনায় থানায় মামলা হয়, আসামিরাও সব স্বীকার করে। তবে মামলাটি পরে মীমাংসা করা হয়। আনারের ভাই এনামুল হক ইমান সোমবার যুগান্তরকে বলেন, গ্রেফতার বাবুর সব থেকে ঘনিষ্ঠ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু। এছাড়া হত্যার মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামন শাহীনেরও ঘনিষ্ঠ এই মিন্টু। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি, আনারকে হত্যার পেছনে মিন্টুর হাত থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে আনারের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন আব্দুর রশীদ খোকন। খোকনের পক্ষে কাজ করেন সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী। তারা এক জনসভায় প্রকাশ্যে বক্তব্য দেয় বঙ্গের মাটিতে জায়গা হবে না আনারের। মিন্টু নির্বাচন ছাড়া টানা ১২ বছর মেয়র ছিলেন। মেয়র পদ হারানোর পেছনে আনারকে দায়ী করে আসছিল মিন্টু। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মিন্টুকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। নাম প্রকাশ না করে ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, চরমপন্থি নেতা শিমুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কাজী কামাল আহমেদ বাবুর পেছনে রয়েছে অপর এক আওয়ামী লীগ নেতা, যার সঙ্গে সরাসরি কথা হয়নি শিমুলের। ওই নেতাই বাবুকে দিয়ে দুই কোটি টাকা পৌঁছে দিতে চেয়েছে শিমুলের কাছে।’

তবে রিমান্ডে বাবু সব অস্বীকার করছে উল্লেখ করে ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, বাবু রিমান্ডে দাবি করেছে শিমুল তার কাছে দুই কোটি টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। এজন্য সে শিমুলকে টাকা দিতে চেয়েছিল। তবে শিমুলের ফোন থেকে তার হোয়াটসঅ্যাপে আসা এমপি আনারের ছবি ও হত্যার বিষয়ে বিভিন্ন কথোপকথনের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি বাবু।

এদিকে এমপি আনার হত্যার ঘটনায় অনেকেই গ্রেফতার হতে পারেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখনো বলছি, আমরা সত্যের কাছাকাছি এসে গিয়েছি। মরদেহের বিষয়টি নিশ্চিত হলেই আমরা আপনাদের কাছে অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারব। মরদেহ নিশ্চিত হওয়ার জন্য যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের জবানবন্দি শুনেছি। তারা বলেছে যে, মরদেহ তারা খণ্ড-বিখণ্ড করেছে। কোথায় রেখেছে, সেটা নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। ভারতীয় ও আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী সেখানে গিয়েছিল, সেখান থেকে তারা যেগুলো পেয়েছেন সেগুলো উদ্ধার করেছেন। ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত হতে পারব না যে এগুলো তার মরদেহের অংশ।’

মূল আসামি শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তাকে গ্রেফতার করতে না পারলে বিচার কোথায় হবে সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন, মামলা দুটো হয়েছে। যেখানে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে একটি মামলা হয়েছে। আর ওই সংসদ সদস্যের মেয়ে ঢাকায় একটি মামলা করেছেন। ভারতে যেহেতু ঘটনা ঘটেছে, আসামিকে ফেরত নেওয়া ও বন্দি করার দায়িত্ব তাদের। আমি যতটুকু জানি, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দিবিনিময় চুক্তি আছে। সেক্ষেত্রে হয়তো সেই সুবিধা ভারত সরকার পাবে। আমাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দিবিনিময় চুক্তি নেই। তবে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসাবে আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সব কাজেই তারা সহযোগিতা করছেন এবং ভবিষ্যতে করবেন।

গত ১২ মে ভারতে যান এমপি আনার। পরদিন ১৩ মে কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। তবে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে ২২ মে। ওইদিন রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাবার সন্দেহভাজন হত্যাকারীর নাম জানিয়েছেন ডরিন : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে বাবার সন্দেহভাজন হত্যাকারীর নাম-পরিচয় জানিয়েছেন আনারের মেয়ে ডরিন। মামলার তদন্তে ডিবির প্রতি সন্তুষ্ট হলেও ডিবির এক কর্মকর্তার ব্যাপারে তিনি অভিযোগ করেছেন। সোমবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। জানা গেছে, ঝিনাইদহের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে বাবার হত্যার বেনিফিশিয়ারি হিসাবে হত্যাকারী সন্দেহ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন ডরিন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সে তার বাবার হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাবে এটাই স্বাভাবিক। সে সন্দেহভাজনদের নাম বলেছে। আমরা তার বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। এছাড়া ডরিন অভিযোগ করেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা না হয়েও তদন্তে নাক গলানো ডিবির এডিসি শাহিদুর রহমান রিপন তার বাবার হত্যাকারীদের কৌশলে গ্রেফতার এড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। আসামি শিমুলের বক্তব্য সঠিকভাবে রেকর্ড করতে দেননি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বরিশাল জেলায় বদলির পরও কেন সে এতদিন ছাড়পত্র নেয়নি এবং কী উদ্দেশ্যে নিজেকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে পরিচয় দিয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হবে।