ঢাকা ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক: ১২তম দিনে গড়ালো কপ২৯ সম্মেলন ঢাকাবাসীকে যেকোনো উপায়ে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস ৫ আগস্টের পর ভুয়া মামলা তদন্তসাপেক্ষে প্রত্যাহার হবে, জানালেন নতুন আইজিপি আলেম সমাজের সাথে ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক রয়েছে বিএনপির: ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির জুয়ার অ্যাপের প্রচারে নাম লেখালেন বুবলীও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত’- তোফায়েল আহমেদ আমরা যা করতে চাই, জনগণকে সাথে নিয়ে করতে চাই : তারেক রহমান বহু নেতার শাসন আমরা দেখেছি, পরিবর্তন দেখিনি : ফয়জুল করীম গ্যাসের জন্য আ.লীগ আমলে ২০ কোটি টাকা ঘুস দিয়েছি : বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাংলাদেশের টাকা উড়ছে বিশ্বজুয়ায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৩৯:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুন ২০১৫
  • ৪১০ বার

সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে জুয়ার আসরে উড়ছে বাংলাদেশের টাকা। দেশের শীর্ষ জুয়াড়িরা বৈধ-অবৈধ পথে টাকা নিয়ে এসব আসরে বড় দানে খেলছেন। ৫ হাজার ডলার-পাউন্ড থেকে শুরু করে ১০ লাখ ডলার-পাউন্ডেও খেলছেন অনেকেই। নামি ক্যাসিনোয় বাংলাদেশি জুয়াড়িদের জাঁকালো উপস্থিতি উন্নত বিশ্বের অনেক জুয়াড়িকেই চমকে দিয়েছে। অবিশ্বাস্য মনে করছেন কেউ কেউ। বাংলাদেশের মতো নিু আয়ের দেশ থেকে গিয়ে বিশ্বের নামিদামি জুয়ার আসরে টাকা ওড়ানোর ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক হলে অবৈধ পন্থায় এসব টাকা পাচার হওয়া বন্ধ করা সম্ভব বলেও মনে করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে গতকাল বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনেকেই অবৈধ পন্থায় বিদেশে টাকা পাচার করে সেকেন্ড হোম বানাচ্ছেন, ক্যাসিনোয় জুয়া খেলছেন। বিদেশে নানাভাবে টাকা ওড়াচ্ছেন বাংলাদেশিরা। এদের ব্যাপারে সরকারকে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে। দেশের ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউটগুলো সতর্ক থাকলে বিশেষ করে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সজাগ দৃষ্টি থাকলে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা নিয়ন্ত্রণ করা অনেকাংশেই সম্ভব। হুন্ডি বা অবৈধ অন্য কোনো পন্থায় বিদেশে পাচার হওয়া টাকা রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। আবার নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভবও নয়।’ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যারা অবৈধ পন্থায় দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অনেকে ক্যাসিনোতে বসেই কোটি কোটি টাকা ওড়াচ্ছেন। বিদেশে সেকেন্ড হোমও তৈরি করছেন। অধিকাংশ টাকাই অবৈধ এবং অবৈধ পন্থায় বাংলাদেশ থেকে পাচার করা। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের সদস্য বাংলাদেশ। যেসব দেশে এসব টাকা যাচ্ছে তারাও এ কনভেনশনের সদস্য। আমাদের দেশ থেকে যেসব টাকা পাচার হচ্ছে, তা তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে পাঠানো হলে তারা এ টাকা ফেরত পাঠাতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এটা অসম্ভব নয়।’ জানা গেছে, বাংলাদেশি জুয়াড়িদের বড় একটি অংশই যান সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে স্যান্ড ক্যাসিনো ক্লাবে। প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে দেখা যায় এ ক্লাবে। তারা গিয়ে ওঠেনও মেরিনা বে হোটেলে। দিনভর ঘুমিয়ে নিয়ে রাতভর বসে যান জুয়ার আসরে। সর্বোচ্চ ১০ লাখ ডলারেও খেলতে দেখা গেছে অনেক জুয়াড়িকে। নতুন গজিয়ে ওঠা ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের সংখ্যাই বেশি। শুধু মেরিনা বে-তেই নয়, জুয়াড়িরা উঠছেন সিঙ্গাপুরের অন্যান্য হোটেলেও। সেখানে গিয়ে দুই হাতে টাকা ওড়ান তারা। অনেকে প্রতিযোগিতা করেন চীনা জুয়াড়িদের সঙ্গেও। জানা যায়, হোটেল মেরিনা বে-তে সর্বোচ্চ দামে খেলা জুয়াড়িদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা দুই শতাধিক। এর মধ্যে অন্তত ২৫ জন আছেন যারা বড় বড় দানে খেলেন। জুয়ার এসব টাকা কেউ নেন হুন্ডি করে আবার কেউ আমদানি-রপ্তানির ওভার ইনভয়েসিং (মিথ্যা ঘোষণা) করে।

জানা গেছে, শুধু সিঙ্গাপুরেই নয়, লন্ডনের ক্যাসিনোতেও দেখা যায় বাংলাদেশি জুয়াড়িদের। দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস ও আটলান্টিক সিটির বিশাল জুয়ার আসরে। সেখানেও উড়ছে বাংলাদেশি টাকা।টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা টাকা আইনি প্রক্রিয়ায় সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনা হয়েছে। জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশ হওয়ায় সিঙ্গাপুরও সহযোগিতা করেছে। সরকারের আগ্রহ থাকলে সব দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা অসম্ভব নয়। এ জন্য সরকারের পাঁচটি সংস্থাকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। এগুলো হলো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এসব প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করলে আইনিভাবে সব দেশ থেকেই পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক: ১২তম দিনে গড়ালো কপ২৯ সম্মেলন

বাংলাদেশের টাকা উড়ছে বিশ্বজুয়ায়

আপডেট টাইম : ০৬:৩৯:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুন ২০১৫

সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে জুয়ার আসরে উড়ছে বাংলাদেশের টাকা। দেশের শীর্ষ জুয়াড়িরা বৈধ-অবৈধ পথে টাকা নিয়ে এসব আসরে বড় দানে খেলছেন। ৫ হাজার ডলার-পাউন্ড থেকে শুরু করে ১০ লাখ ডলার-পাউন্ডেও খেলছেন অনেকেই। নামি ক্যাসিনোয় বাংলাদেশি জুয়াড়িদের জাঁকালো উপস্থিতি উন্নত বিশ্বের অনেক জুয়াড়িকেই চমকে দিয়েছে। অবিশ্বাস্য মনে করছেন কেউ কেউ। বাংলাদেশের মতো নিু আয়ের দেশ থেকে গিয়ে বিশ্বের নামিদামি জুয়ার আসরে টাকা ওড়ানোর ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক হলে অবৈধ পন্থায় এসব টাকা পাচার হওয়া বন্ধ করা সম্ভব বলেও মনে করেন তারা।

এ প্রসঙ্গে গতকাল বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনেকেই অবৈধ পন্থায় বিদেশে টাকা পাচার করে সেকেন্ড হোম বানাচ্ছেন, ক্যাসিনোয় জুয়া খেলছেন। বিদেশে নানাভাবে টাকা ওড়াচ্ছেন বাংলাদেশিরা। এদের ব্যাপারে সরকারকে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে। দেশের ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউটগুলো সতর্ক থাকলে বিশেষ করে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সজাগ দৃষ্টি থাকলে বিদেশে পাচার হওয়া টাকা নিয়ন্ত্রণ করা অনেকাংশেই সম্ভব। হুন্ডি বা অবৈধ অন্য কোনো পন্থায় বিদেশে পাচার হওয়া টাকা রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। আবার নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভবও নয়।’ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যারা অবৈধ পন্থায় দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অনেকে ক্যাসিনোতে বসেই কোটি কোটি টাকা ওড়াচ্ছেন। বিদেশে সেকেন্ড হোমও তৈরি করছেন। অধিকাংশ টাকাই অবৈধ এবং অবৈধ পন্থায় বাংলাদেশ থেকে পাচার করা। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের সদস্য বাংলাদেশ। যেসব দেশে এসব টাকা যাচ্ছে তারাও এ কনভেনশনের সদস্য। আমাদের দেশ থেকে যেসব টাকা পাচার হচ্ছে, তা তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে পাঠানো হলে তারা এ টাকা ফেরত পাঠাতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এটা অসম্ভব নয়।’ জানা গেছে, বাংলাদেশি জুয়াড়িদের বড় একটি অংশই যান সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে স্যান্ড ক্যাসিনো ক্লাবে। প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে দেখা যায় এ ক্লাবে। তারা গিয়ে ওঠেনও মেরিনা বে হোটেলে। দিনভর ঘুমিয়ে নিয়ে রাতভর বসে যান জুয়ার আসরে। সর্বোচ্চ ১০ লাখ ডলারেও খেলতে দেখা গেছে অনেক জুয়াড়িকে। নতুন গজিয়ে ওঠা ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের সংখ্যাই বেশি। শুধু মেরিনা বে-তেই নয়, জুয়াড়িরা উঠছেন সিঙ্গাপুরের অন্যান্য হোটেলেও। সেখানে গিয়ে দুই হাতে টাকা ওড়ান তারা। অনেকে প্রতিযোগিতা করেন চীনা জুয়াড়িদের সঙ্গেও। জানা যায়, হোটেল মেরিনা বে-তে সর্বোচ্চ দামে খেলা জুয়াড়িদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা দুই শতাধিক। এর মধ্যে অন্তত ২৫ জন আছেন যারা বড় বড় দানে খেলেন। জুয়ার এসব টাকা কেউ নেন হুন্ডি করে আবার কেউ আমদানি-রপ্তানির ওভার ইনভয়েসিং (মিথ্যা ঘোষণা) করে।

জানা গেছে, শুধু সিঙ্গাপুরেই নয়, লন্ডনের ক্যাসিনোতেও দেখা যায় বাংলাদেশি জুয়াড়িদের। দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস ও আটলান্টিক সিটির বিশাল জুয়ার আসরে। সেখানেও উড়ছে বাংলাদেশি টাকা।টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা টাকা আইনি প্রক্রিয়ায় সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনা হয়েছে। জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশ হওয়ায় সিঙ্গাপুরও সহযোগিতা করেছে। সরকারের আগ্রহ থাকলে সব দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা অসম্ভব নয়। এ জন্য সরকারের পাঁচটি সংস্থাকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। এগুলো হলো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এসব প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করলে আইনিভাবে সব দেশ থেকেই পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা সম্ভব।