অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন এবং তার ছেলে মো. ফয়সাল আবেদীনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮ এর বিচারক মো. বদরুল আলম ভূঞার আদালতে মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান সাক্ষ্য দেন। তবে, এদিন তার সাক্ষ্য শেষ হয়নি। বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের আইনজীবী নুরুল ইসলাম দুলাল সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি রাখার আবেদন করেন। তিনি কারণ হিসেবে জানান, মামলা বাতিল চেয়ে তিনি উচ্চ আদালতে যাবেন। পরে আদালত আগামী ৩০ জুন অবশিষ্ট সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন।
এদিন বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে আইনজীবী হাজিরা দেন। তার ছেলে ফয়সাল আবেদীন পলাতক আছেন। দুদকের আইনজীবী রেজাউল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ৩১ মে ওই দুজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন আদালত। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই মামলা দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক গোলাম মাওলা গত বছর দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের মোট সম্পদ ১ কোটি ৩২ লাখ ৩৯ হাজার ১৭৪ টাকার। ১৯৮২-১৯৮৩ করবর্ষ থেকে ২০১০-১১ করবর্ষ পর্যন্ত পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে তার ব্যয় হয়েছে ৬৪ লাখ ৭৪ হাজার ৩৯ টাকা। পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ অর্জিত সম্পদ ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ২১৩ টাকার। এর বিপরীতে আয়ের উৎস পাওয়া যায় ১ কোটি ৮৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩০৪ টাকার। তার আয়ের তুলনায় ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৯০৯ টাকার বেশি সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।
আরও জানা গেছে, বিচারপতি জয়নুল আবেদীন তার ছেলেকে ২৬ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছিলেন বলে ঘোষণা দেন, যা তার ছেলে ফয়সাল আবেদীনের আয়কর নথিতে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু, বিচারপতির আয়কর রিটার্নে ২৬ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া এবং ফেরত পাওয়ার কোনো তথ্য নেই। বিচারপতির দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে দাখিল করা ব্যাংক স্টেটমেন্টে (২০০৫-২০০৬ এবং ২০০৬-২০০৭ অর্থবছর) তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬ লাখ টাকা উত্তোলনের তথ্য নেই। ফয়সাল আবেদীনের আয়কর নথিতে তার দায় ক্রমান্বয়ে পরিশোধ দেখানো হলেও বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের কাছে টাকা পরিশোধের কোনো দালিলিক প্রমাণ পাওয়া পাওয়া যায়নি। যা থেকে দুদক প্রমাণ পেয়েছে, সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন তার অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বৈধ করার জন্য ২৬ লাখ টাকা তার ছেলে ফয়সাল আবেদীনের ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করেন।মো. জয়নুল আবেদীন তার স্ত্রীর নামে ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ থাকার হিসাব দাখিল করেন।
দুদকের তদন্তে জানা গেছে, ৩৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯০৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে নিজ দখলে রাখা এবং ছেলে ফয়সাল আবেদীনকে ফ্ল্যাট কেনার জন্য দেওয়া ২৬ লাখ টাকা নিজ আয়কর নথিতে ও দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে প্রদর্শন না করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন তিনি। মো. ফয়সাল আবেদীন পিতার ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ২৬ লাখ টাকা জেনে-শুনে বৈধ করার জন্য সম্পত্তি ক্রয় ও দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।
সাবেক এ বিচারপতি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সময় জুডিশিয়ারি তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।