ঢাকা ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক: ১২তম দিনে গড়ালো কপ২৯ সম্মেলন ঢাকাবাসীকে যেকোনো উপায়ে নিরাপদ রাখতে হবে : ডিএমপি কমিশনার বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস ৫ আগস্টের পর ভুয়া মামলা তদন্তসাপেক্ষে প্রত্যাহার হবে, জানালেন নতুন আইজিপি আলেম সমাজের সাথে ঐতিহাসিক সুসম্পর্ক রয়েছে বিএনপির: ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির জুয়ার অ্যাপের প্রচারে নাম লেখালেন বুবলীও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত’- তোফায়েল আহমেদ আমরা যা করতে চাই, জনগণকে সাথে নিয়ে করতে চাই : তারেক রহমান বহু নেতার শাসন আমরা দেখেছি, পরিবর্তন দেখিনি : ফয়জুল করীম গ্যাসের জন্য আ.লীগ আমলে ২০ কোটি টাকা ঘুস দিয়েছি : বাণিজ্য উপদেষ্টা

কূটনৈতিক লড়াইয়ে দুই দল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪৪:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুন ২০১৫
  • ৩৩৪ বার

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কূটনীতিতে মনোযোগী হয়। সেই ধারা এখনো জোর তৎপরতার সঙ্গে অব্যাহত রাখা হয়েছে। প্রথমে বহির্বিশ্বের আস্থা বাড়ানোর চ্যালেঞ্জে সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়া সরকার বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব শক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে মনোযোগী হয়েছে। পূর্বমুখী কূটনীতিকে প্রাধান্য দিলেও এতটুকু মনোযোগ হারায়নি পশ্চিমমুখী কূটনীতি। এ কারণেই জাপান থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত সবার সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়েছে। সর্বশেষ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের পর এখন সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবে সরকার। আগেই সফর করে গেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু দ্বিপক্ষীয় নয়, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক জোট এবং সংস্থাগুলোকেও দেওয়া হচ্ছে সমান গুরুত্ব। আঞ্চলিক জোট ও সংস্থাগুলোয় ঢাকাকে নেতৃত্বের আসনে নিয়ে আসার চেষ্টার পাশাপাশি সব আন্তর্জাতিক জোট ও সংস্থায় বাংলাদেশের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে। জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুন মাসে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রথমে জাপান ও পরে চীন সফর করেন। এ দুই সফরের মাধ্যমে সরকারের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি সামনে চলে আসে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। শুধু তাই নয়, জাপান সফরে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আমন্ত্রণে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা আসেন। শেখ হাসিনার জাপান সফরে দুই দেশের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যে নতুন অংশীদারিত্বে পৌঁছায় শিনজো আবের সফরে সেই সম্পর্ক আরও জোরদার হয়। পাশাপাশি চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বছরের কর্মসূচি পালনের নানান আয়োজন চলছে। ইতিমধ্যেই গত মাসের শেষ সপ্তাহে সফর করে গেছেন চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ানডং। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংও আসবেন বাংলাদেশে। সেপ্টেম্বরে কেকিয়াংয়ের সফরের প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে চলতি বছরই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফর করবেন এমন ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে। এই ধারাবাহিক ভিভিআইপি সফরের মাধ্যমেই চীনের প্রস্তাবিত ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ শিরোনামে একটি আঞ্চলিক কানেকটিভিটি স্থাপনে বাংলাদেশ যুক্ত হতে যাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য সফর হলে নিঃসন্দেহে বেশ কিছু বড় উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা পাবে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের তিন মাসের মধ্যে চীনের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর কূটনীতিতেও আনবে নতুন মাত্রা। কূটনৈতিক সূত্রমতে, বিশ্বের অন্য শক্তি রাশিয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্ক বরাবরই ভালো। গত মেয়াদের মাঝামাঝি থেকে এ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। সে সময় রাশিয়া সফরও করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় ছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মতো বৃহৎ অংশীদারিত্ব চলছে। আর গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে দুটো দেশের কাছ থেকে সব ধরনের সমর্থন পেয়েছে তার মধ্যে একটি রাশিয়া, অপরটি ভারত। ভারতে তখন কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় ছিল। বর্তমানে সেখানে বিজেপি সরকার ক্ষমতায়। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক সম্পর্ক ছিল, কিন্তু বিজেপির সঙ্গে সে ধরনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাই ধারণা করা হচ্ছিল, মোদি সরকারের সঙ্গে তেমন নিবিড় সহযোগিতা থাকবে না শেখ হাসিনা সরকারের। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে মোদির ঢাকা সফরে। মোদি তার ভাষণেই আওয়ামী লীগের ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। হাসিনার উন্নয়ন নীতির সঙ্গে নিজের নীতির মিলের কথাও বলেছেন মোদি। অন্যদিকে পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের টানাপোড়েনের সমাপ্তি ঘটেছে সরকারের বর্তমান মেয়াদে। আগের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার পর নতুন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট এসেছেন। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদেও নিয়োগ দেওয়া হয় এতদিন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ হিসেবে থাকা এম জিয়াউদ্দিনকে। এখন বিভিন্ন ফোরামে নিয়মিত বৈঠক চলছে।

সর্বশেষ গত ফেব্র“য়ারিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী হোয়াইট হাউসের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেন মাহমুদ আলী। এদিকে সরকারের কূটনীতি পরিচালনার টিমও এখন বেশ শক্তিশালী। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন কূটনৈতিক ইস্যুগুলো। ষাটের দশকে পেশাদার কূটনীতিকের ক্যারিয়ার শুরু করা মাহমুদ আলী এখন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আছেন তরুণ শাহরিয়ার আলম। সচিব হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়েছে দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করা শহীদুল হককে। গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে কাজ করছেন দীর্ঘ কূটনৈতিক ক্যারিয়ারের কূটনীতিকরা। শুধু তাই নয়, সাবেক কূটনীতিকদেরও কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ জন্য সাবেক কূটনীতিকদের ফোরামের সঙ্গে চুক্তি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 

তৎপরতায় নতুন মাত্রা বিএনপির

মাহমুদ আজহার

দল গোছানোর পাশাপাশি নতুন করে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে সবার্ধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ভারতকে বাইরে রেখে কোনো ধরনের কূটনীতিই সফলতার মুখ দেখবে না। বিগত কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে একাধিকবার এমন চেষ্টা চালিয়েও কূটনৈতিক সাফল্যের মুখ দেখেনি দলটি। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির সঙ্গে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বৈঠকে সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন করে আশাবাদী হয়ে উঠেছে বিএনপি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্ব এবং মধ্যপাচ্যেও কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর জোর চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি সরকারের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে তিন মাসের টানা আন্দোলনে বিএনপির কূটনৈতিক উইং ভেঙে পড়ে। কূটনৈতিক মহলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানকে গুলি করে তার গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আরেক উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদের গাড়িও পোড়ানো হয়। এ ছাড়া সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাসায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এরা সবাই বিএনপির পক্ষে কূটনৈতিক মহলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ সময় গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন খালেদা জিয়া। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদরা বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎও করেন। গুলশান কার্যালয়ে কূটনীতি সংশ্লিষ্ট ওইসব নেতা যাতায়াত কমিয়ে দেন। অবশ্য সম্প্রতি শমসের মবিন চৌধুরী মুক্তি পেয়েছেন। এখন তারা আবারও বিএনপির কূটনীতি দেখভাল করছেন।

সূত্র জানায়, চলতি বছর কঠোর কোনো আন্দোলন কর্মসূচিতে না গিয়ে বিএনপি দল গোছানোর পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতায় মনোযোগ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঈদের পরই দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু হবে। এর আগেই নতুনভাবে ‘ফরেন ডিপ্লোমেসি’ বাড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে নতুনভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি বিএনপির অবস্থান তুলে ধরছেন বলে জানা গেছে।এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে বিএনপির কূটনীতিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ ছাড়া বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। প্রয়োজন দক্ষ কূটনীতি। ধাপে ধাপে বিশ্বের সব দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তবে ভারতকে উপেক্ষা করে কোনো কূটনীতিই হওয়া উচিত নয়। ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা জরুরি। এক্ষেত্রে যে আস্থার সংকট রয়েছে তা কাটাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত বৈঠক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন তিনি।সূত্রমতে, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের বড় একটি অংশজুড়েই ছিল সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার ও দেশটির জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলেছেন বিএনপির প্রতিনিধিরা। বৈঠকে উপস্থিত দলীয় নেতারা জানান, মোদিও তাদের আশ্বস্ত করেছেন, ভারত এখন কোনো দলের সঙ্গে নয়, সরকার ও জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। বিএনপিও জানিয়েছে, সরকার ও জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক না বাড়ানো হলে কোনো সম্পর্কই বেশি দিন টেকসই হবে না।  জানা যায়, ঢাকার পাশাপাশি লন্ডন থেকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারতের সর্বশেষ নির্বাচনের আগে থেকেই বিজেপির সঙ্গে তার একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানা যায়।

সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেখা-সাক্ষাতে তারই ভূমিকা বেশি ছিল বলে বিএনপির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গেও তারেক রহমানের যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।  বাংলাদেশে বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতায় যুক্ত রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, ড. এম ওসমান ফারুক, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ও সাংবাদিক শফিক রেহমান। এ ছাড়াও তরুণ প্রজন্মের দুই নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ বিএনপির আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। এ দুজনের সঙ্গে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকারের তরুণ নেতৃত্বের যোগাযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও আড়ালে থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.), সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন নেতা বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতায় যুক্ত।বিএনপি নেতারা জানান, সবার অংশগ্রহণে একটি জাতীয় নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপে রাখতেই কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া গেল বছর ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনসহ সর্বশেষ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট ‘ডাকাতির’ চিত্রও কূটনৈতিক মহলে তুলে ধরছে বিএনপি। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন, হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টিও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা হচ্ছে।বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির সব দেশের সঙ্গেই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। বিএনপিও সে চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। তাই এদেশের সরকারের পাশাপাশি জনগণের সঙ্গেও আমাদের একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। অনেকেই প্রত্যক্ষভাবে বিএনপির আন্তর্জাতিক কূটনীতি দেখভাল করছেন। আবার কেউ কেউ আড়ালে থেকেও কাজ করে যাচ্ছেন। তবে দক্ষ ও মেধাবীদের কূটনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক: ১২তম দিনে গড়ালো কপ২৯ সম্মেলন

কূটনৈতিক লড়াইয়ে দুই দল

আপডেট টাইম : ০৪:৪৪:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুন ২০১৫

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কূটনীতিতে মনোযোগী হয়। সেই ধারা এখনো জোর তৎপরতার সঙ্গে অব্যাহত রাখা হয়েছে। প্রথমে বহির্বিশ্বের আস্থা বাড়ানোর চ্যালেঞ্জে সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়া সরকার বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব শক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিতে মনোযোগী হয়েছে। পূর্বমুখী কূটনীতিকে প্রাধান্য দিলেও এতটুকু মনোযোগ হারায়নি পশ্চিমমুখী কূটনীতি। এ কারণেই জাপান থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত সবার সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়েছে। সর্বশেষ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের পর এখন সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবে সরকার। আগেই সফর করে গেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু দ্বিপক্ষীয় নয়, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক জোট এবং সংস্থাগুলোকেও দেওয়া হচ্ছে সমান গুরুত্ব। আঞ্চলিক জোট ও সংস্থাগুলোয় ঢাকাকে নেতৃত্বের আসনে নিয়ে আসার চেষ্টার পাশাপাশি সব আন্তর্জাতিক জোট ও সংস্থায় বাংলাদেশের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে। জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুন মাসে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রথমে জাপান ও পরে চীন সফর করেন। এ দুই সফরের মাধ্যমে সরকারের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি সামনে চলে আসে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। শুধু তাই নয়, জাপান সফরে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আমন্ত্রণে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকা আসেন। শেখ হাসিনার জাপান সফরে দুই দেশের বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যে নতুন অংশীদারিত্বে পৌঁছায় শিনজো আবের সফরে সেই সম্পর্ক আরও জোরদার হয়। পাশাপাশি চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বছরের কর্মসূচি পালনের নানান আয়োজন চলছে। ইতিমধ্যেই গত মাসের শেষ সপ্তাহে সফর করে গেছেন চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী লিউ ইয়ানডং। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংও আসবেন বাংলাদেশে। সেপ্টেম্বরে কেকিয়াংয়ের সফরের প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে চলতি বছরই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফর করবেন এমন ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে। এই ধারাবাহিক ভিভিআইপি সফরের মাধ্যমেই চীনের প্রস্তাবিত ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ শিরোনামে একটি আঞ্চলিক কানেকটিভিটি স্থাপনে বাংলাদেশ যুক্ত হতে যাচ্ছে।

এ ছাড়া চীনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য সফর হলে নিঃসন্দেহে বেশ কিছু বড় উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা পাবে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের তিন মাসের মধ্যে চীনের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর কূটনীতিতেও আনবে নতুন মাত্রা। কূটনৈতিক সূত্রমতে, বিশ্বের অন্য শক্তি রাশিয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্ক বরাবরই ভালো। গত মেয়াদের মাঝামাঝি থেকে এ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। সে সময় রাশিয়া সফরও করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় ছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মতো বৃহৎ অংশীদারিত্ব চলছে। আর গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে দুটো দেশের কাছ থেকে সব ধরনের সমর্থন পেয়েছে তার মধ্যে একটি রাশিয়া, অপরটি ভারত। ভারতে তখন কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় ছিল। বর্তমানে সেখানে বিজেপি সরকার ক্ষমতায়। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক সম্পর্ক ছিল, কিন্তু বিজেপির সঙ্গে সে ধরনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাই ধারণা করা হচ্ছিল, মোদি সরকারের সঙ্গে তেমন নিবিড় সহযোগিতা থাকবে না শেখ হাসিনা সরকারের। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে মোদির ঢাকা সফরে। মোদি তার ভাষণেই আওয়ামী লীগের ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। হাসিনার উন্নয়ন নীতির সঙ্গে নিজের নীতির মিলের কথাও বলেছেন মোদি। অন্যদিকে পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের টানাপোড়েনের সমাপ্তি ঘটেছে সরকারের বর্তমান মেয়াদে। আগের রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার পর নতুন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট এসেছেন। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদেও নিয়োগ দেওয়া হয় এতদিন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ হিসেবে থাকা এম জিয়াউদ্দিনকে। এখন বিভিন্ন ফোরামে নিয়মিত বৈঠক চলছে।

সর্বশেষ গত ফেব্র“য়ারিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী হোয়াইট হাউসের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেন মাহমুদ আলী। এদিকে সরকারের কূটনীতি পরিচালনার টিমও এখন বেশ শক্তিশালী। প্রধানমন্ত্রী নিজেই সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন কূটনৈতিক ইস্যুগুলো। ষাটের দশকে পেশাদার কূটনীতিকের ক্যারিয়ার শুরু করা মাহমুদ আলী এখন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আছেন তরুণ শাহরিয়ার আলম। সচিব হিসেবে ফিরিয়ে আনা হয়েছে দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করা শহীদুল হককে। গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে কাজ করছেন দীর্ঘ কূটনৈতিক ক্যারিয়ারের কূটনীতিকরা। শুধু তাই নয়, সাবেক কূটনীতিকদেরও কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ জন্য সাবেক কূটনীতিকদের ফোরামের সঙ্গে চুক্তি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

 

তৎপরতায় নতুন মাত্রা বিএনপির

মাহমুদ আজহার

দল গোছানোর পাশাপাশি নতুন করে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি। এক্ষেত্রে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে সবার্ধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ভারতকে বাইরে রেখে কোনো ধরনের কূটনীতিই সফলতার মুখ দেখবে না। বিগত কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে একাধিকবার এমন চেষ্টা চালিয়েও কূটনৈতিক সাফল্যের মুখ দেখেনি দলটি। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির সঙ্গে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বৈঠকে সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন করে আশাবাদী হয়ে উঠেছে বিএনপি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্ব এবং মধ্যপাচ্যেও কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর জোর চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি সরকারের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে তিন মাসের টানা আন্দোলনে বিএনপির কূটনৈতিক উইং ভেঙে পড়ে। কূটনৈতিক মহলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানকে গুলি করে তার গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আরেক উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদের গাড়িও পোড়ানো হয়। এ ছাড়া সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাসায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এরা সবাই বিএনপির পক্ষে কূটনৈতিক মহলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ সময় গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন খালেদা জিয়া। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদরা বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎও করেন। গুলশান কার্যালয়ে কূটনীতি সংশ্লিষ্ট ওইসব নেতা যাতায়াত কমিয়ে দেন। অবশ্য সম্প্রতি শমসের মবিন চৌধুরী মুক্তি পেয়েছেন। এখন তারা আবারও বিএনপির কূটনীতি দেখভাল করছেন।

সূত্র জানায়, চলতি বছর কঠোর কোনো আন্দোলন কর্মসূচিতে না গিয়ে বিএনপি দল গোছানোর পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতায় মনোযোগ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঈদের পরই দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু হবে। এর আগেই নতুনভাবে ‘ফরেন ডিপ্লোমেসি’ বাড়িয়ে দিয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে নতুনভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি বিএনপির অবস্থান তুলে ধরছেন বলে জানা গেছে।এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে বিএনপির কূটনীতিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ ছাড়া বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। প্রয়োজন দক্ষ কূটনীতি। ধাপে ধাপে বিশ্বের সব দেশের সঙ্গেই যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তবে ভারতকে উপেক্ষা করে কোনো কূটনীতিই হওয়া উচিত নয়। ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা জরুরি। এক্ষেত্রে যে আস্থার সংকট রয়েছে তা কাটাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত বৈঠক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন তিনি।সূত্রমতে, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের বড় একটি অংশজুড়েই ছিল সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার ও দেশটির জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলেছেন বিএনপির প্রতিনিধিরা। বৈঠকে উপস্থিত দলীয় নেতারা জানান, মোদিও তাদের আশ্বস্ত করেছেন, ভারত এখন কোনো দলের সঙ্গে নয়, সরকার ও জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। বিএনপিও জানিয়েছে, সরকার ও জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক না বাড়ানো হলে কোনো সম্পর্কই বেশি দিন টেকসই হবে না।  জানা যায়, ঢাকার পাশাপাশি লন্ডন থেকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও প্রভাবশালী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারতের সর্বশেষ নির্বাচনের আগে থেকেই বিজেপির সঙ্গে তার একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানা যায়।

সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেখা-সাক্ষাতে তারই ভূমিকা বেশি ছিল বলে বিএনপির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গেও তারেক রহমানের যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।  বাংলাদেশে বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতায় যুক্ত রয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, ড. এম ওসমান ফারুক, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ ও সাংবাদিক শফিক রেহমান। এ ছাড়াও তরুণ প্রজন্মের দুই নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ বিএনপির আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। এ দুজনের সঙ্গে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকারের তরুণ নেতৃত্বের যোগাযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও আড়ালে থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.), সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোর্শেদ খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন নেতা বিএনপির কূটনৈতিক তৎপরতায় যুক্ত।বিএনপি নেতারা জানান, সবার অংশগ্রহণে একটি জাতীয় নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপে রাখতেই কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া গেল বছর ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনসহ সর্বশেষ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট ‘ডাকাতির’ চিত্রও কূটনৈতিক মহলে তুলে ধরছে বিএনপি। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন, হামলা-মামলা ও গ্রেফতারের বিষয়টিও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা হচ্ছে।বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির সব দেশের সঙ্গেই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। বিএনপিও সে চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। তাই এদেশের সরকারের পাশাপাশি জনগণের সঙ্গেও আমাদের একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। অনেকেই প্রত্যক্ষভাবে বিএনপির আন্তর্জাতিক কূটনীতি দেখভাল করছেন। আবার কেউ কেউ আড়ালে থেকেও কাজ করে যাচ্ছেন। তবে দক্ষ ও মেধাবীদের কূটনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া উচিত।’