ঢাকা ১০:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কবে মিলবে জাহাজ ও নাবিকদের মুক্তি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৬:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০২৪
  • ৫৪ বার

তেইশ দিনেও সোমালিয়া উপকূলে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ও এর নাবিকদের মুক্তি মেলেনি। জাহাজটি ঘিরে একদিকে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের নজরদারি চলছে, অন্যদিকে চলছে দস্যুদের সঙ্গে মালিকপক্ষের সমঝোতা প্রক্রিয়া। সরকারও নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে তৎপর। তবে সেই সমঝোতা প্রকৃতপক্ষে কতদূর এগিয়েছে, সে বিষয়ে কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। মালিকপক্ষ বলছে, সমঝোতায় অগ্রগতি হচ্ছে। তবে জিম্মিদশার অবসান কবে নাগাদ হবে, সেই দিনক্ষণ এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।

এদিকে দিন যত যাচ্ছে, ততই দীর্ঘ হচ্ছে প্রতীক্ষার প্রহর। কবে মিলবে মুখে হাসি ফোটার মতো একটি ভালো খবর, কখন ফিরবেন জিম্মিরা-এ আশায় বুক বেঁধে আছেন পরিবারের সদস্যরা। তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না।

জাহাজে নাবিকরা মানসিক নির্যাতনের মধ্যে আছেন জানিয়ে আতিকুল্লাহ খানের ছোট ভাই আসিফ নূর মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রতি শুক্রবার জাহাজে থাকা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়। মুক্তির বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, নাবিকরা এর কিছুই জানেন না। তারা ফোন করে এ বিষয়ে আমাদের কাছে উলটো জানতে চান। আমরা জাহাজ মালিকপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন, সবরকম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব নাবিকদের দেশে নিয়ে আসা হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। সময় লাগবে। আমরা তাদের ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধরে আছি, অপেক্ষা করছি। এছড়া আমাদের তো আর কিছু করারও নেই।’

তিনি জানান, শুক্রবার আতিকুল্লাহ খানের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কথা হয়েছে। ওই সময় আতিকুল্লাহ জানিয়েছিলেন, পানির সমস্যা হচ্ছে। পানি রেশনিং করে ব্যবহার করতে দিচ্ছে জলদস্যুরা। তবে নাবিকরা এখনো জাহাজের খাবার খাচ্ছেন। এছাড়া দস্যুরা দুম্বা ও খাসি নিয়ে আসছে জাহাজে। কখনো ব্রিজ, কখনো কেবিনে থাকতে দেওয়া হচ্ছে। শারীরিক কোনো নির্যাতন করা হচ্ছে না; কিন্তু তারা মানসিক নির্যাতনের মধ্যে আছেন। চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ পরিবারের লোকজনের খোঁজখবর নিয়েছেন, সবার জন্য ঈদের কাপড় কিনে নিতে বলেছেন।

১২ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগর এলাকায় জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আব্দুল্লাহ। দস্যুরা দুটি নৌযানে করে এসে চলন্ত জাহাজে উঠে পড়ে। পরে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। একপর্যায়ে তারা এমভি আব্দুল্লাহকে সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায়। প্রথমে গারাকাড উপকূলে নিয়ে রাখলেও পরবর্তী সময়ে ভারতীয় নৌবাহিনী ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের যুদ্ধজাহাজের টহলের মুখে কয়েক দফা স্থান পরিবর্তন করে। গারাকাড থেকে নিয়ে যাওয়া হয় গদবজিরান উপকূলে। বর্তমানে জাহাজটি পান্টল্যান্ড প্রদেশের নুগাল অঞ্চলের জিফল উপকূলের দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে। জাহাজে ২৩ জন নাবিক আছেন। সবাই বাংলাদেশি। দস্যুরা তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখেছে। জাহাজ জিম্মি করার ৯ দিনের মাথায় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জাহাজ-মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জলদস্যুরা। এরপর থেকে অব্যাহত আছে আলাপ-আলোচনা।

এমভি আব্দুল্লাহ চট্টগ্রামের কবীর গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এর আগে ২০১০ সালে এই প্রতিষ্ঠানের আরও একটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’ জিম্মি করেছিল সোমালি জলদসুরা। ওই জাহাজে ২৫ জন নাবিক ও ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জন ছিলেন। আলাপ-আলোচনাসহ নানা উদ্যোগের পর ১০০ দিনের মাথায় ওই জাহাজ ছেড়ে দিয়েছিল জলদস্যুরা। এরপর নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ওই সময় মুক্তিপণের বিনিময়ে দস্যুরা নাবিকদের ছেড়ে দিয়েছিল বলে প্রচার রয়েছে। সাধারণত মুক্তিপণের জন্যই সোমালি জলদস্যুরা জাহাজ ছিনতাই করে থাকে।

এমভি আব্দুল্লাহ প্রসঙ্গে এসআর শিপিংয়ের সিইও মেহেরুল করিম যুগান্তরকে বলেন, ‘জলদস্যুদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। অগ্রগতি ভালোই হচ্ছে। আমি ঠিক দিনক্ষণ বলতে পারব না, কবে এর (জিম্মিদশার) সমাপ্তি হবে। কিন্তু অগ্রগতি হচ্ছে।’

ঈদের আগে মুক্তি সম্ভব হবে হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক বলা সম্ভব নয়। আমাদের চেষ্টা অবশ্যই থাকবে। যত দ্রুত সম্ভব নাবিকদের ফিরিয়ে আনা যায়, সেই চেষ্টা করছি। নাবিকরা ভালো আছেন, সুস্থ আছেন।’

এমভি জাহান মণির চেয়ে আরও কম সময়ে এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকরা মুক্তি পাবেন বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘যখন জাহাজটি সোমালিয়ান জলসীমা থেকে ছেড়ে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আসবে, তখনই বোঝা যাবে এটি জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়েছে। এর আগ পর্যন্ত শুধু এতটুকুই শোনা যাবে-সমঝোতা চলছে। তবে কম সময়ের মধ্যেই একটা সুরাহা হয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী। কারণ, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যে গ্যাপটা কমে গেলেই সমাধান হয়ে যাবে।’

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কবে মিলবে জাহাজ ও নাবিকদের মুক্তি

আপডেট টাইম : ১০:৪৬:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ এপ্রিল ২০২৪

তেইশ দিনেও সোমালিয়া উপকূলে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ও এর নাবিকদের মুক্তি মেলেনি। জাহাজটি ঘিরে একদিকে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের নজরদারি চলছে, অন্যদিকে চলছে দস্যুদের সঙ্গে মালিকপক্ষের সমঝোতা প্রক্রিয়া। সরকারও নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে তৎপর। তবে সেই সমঝোতা প্রকৃতপক্ষে কতদূর এগিয়েছে, সে বিষয়ে কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। মালিকপক্ষ বলছে, সমঝোতায় অগ্রগতি হচ্ছে। তবে জিম্মিদশার অবসান কবে নাগাদ হবে, সেই দিনক্ষণ এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।

এদিকে দিন যত যাচ্ছে, ততই দীর্ঘ হচ্ছে প্রতীক্ষার প্রহর। কবে মিলবে মুখে হাসি ফোটার মতো একটি ভালো খবর, কখন ফিরবেন জিম্মিরা-এ আশায় বুক বেঁধে আছেন পরিবারের সদস্যরা। তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না।

জাহাজে নাবিকরা মানসিক নির্যাতনের মধ্যে আছেন জানিয়ে আতিকুল্লাহ খানের ছোট ভাই আসিফ নূর মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রতি শুক্রবার জাহাজে থাকা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়। মুক্তির বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, নাবিকরা এর কিছুই জানেন না। তারা ফোন করে এ বিষয়ে আমাদের কাছে উলটো জানতে চান। আমরা জাহাজ মালিকপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন, সবরকম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব নাবিকদের দেশে নিয়ে আসা হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। সময় লাগবে। আমরা তাদের ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধরে আছি, অপেক্ষা করছি। এছড়া আমাদের তো আর কিছু করারও নেই।’

তিনি জানান, শুক্রবার আতিকুল্লাহ খানের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কথা হয়েছে। ওই সময় আতিকুল্লাহ জানিয়েছিলেন, পানির সমস্যা হচ্ছে। পানি রেশনিং করে ব্যবহার করতে দিচ্ছে জলদস্যুরা। তবে নাবিকরা এখনো জাহাজের খাবার খাচ্ছেন। এছাড়া দস্যুরা দুম্বা ও খাসি নিয়ে আসছে জাহাজে। কখনো ব্রিজ, কখনো কেবিনে থাকতে দেওয়া হচ্ছে। শারীরিক কোনো নির্যাতন করা হচ্ছে না; কিন্তু তারা মানসিক নির্যাতনের মধ্যে আছেন। চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ পরিবারের লোকজনের খোঁজখবর নিয়েছেন, সবার জন্য ঈদের কাপড় কিনে নিতে বলেছেন।

১২ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগর এলাকায় জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আব্দুল্লাহ। দস্যুরা দুটি নৌযানে করে এসে চলন্ত জাহাজে উঠে পড়ে। পরে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। একপর্যায়ে তারা এমভি আব্দুল্লাহকে সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায়। প্রথমে গারাকাড উপকূলে নিয়ে রাখলেও পরবর্তী সময়ে ভারতীয় নৌবাহিনী ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেভাল ফোর্সের যুদ্ধজাহাজের টহলের মুখে কয়েক দফা স্থান পরিবর্তন করে। গারাকাড থেকে নিয়ে যাওয়া হয় গদবজিরান উপকূলে। বর্তমানে জাহাজটি পান্টল্যান্ড প্রদেশের নুগাল অঞ্চলের জিফল উপকূলের দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছে। জাহাজে ২৩ জন নাবিক আছেন। সবাই বাংলাদেশি। দস্যুরা তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রেখেছে। জাহাজ জিম্মি করার ৯ দিনের মাথায় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জাহাজ-মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে জলদস্যুরা। এরপর থেকে অব্যাহত আছে আলাপ-আলোচনা।

এমভি আব্দুল্লাহ চট্টগ্রামের কবীর গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন। এর আগে ২০১০ সালে এই প্রতিষ্ঠানের আরও একটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’ জিম্মি করেছিল সোমালি জলদসুরা। ওই জাহাজে ২৫ জন নাবিক ও ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জন ছিলেন। আলাপ-আলোচনাসহ নানা উদ্যোগের পর ১০০ দিনের মাথায় ওই জাহাজ ছেড়ে দিয়েছিল জলদস্যুরা। এরপর নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ওই সময় মুক্তিপণের বিনিময়ে দস্যুরা নাবিকদের ছেড়ে দিয়েছিল বলে প্রচার রয়েছে। সাধারণত মুক্তিপণের জন্যই সোমালি জলদস্যুরা জাহাজ ছিনতাই করে থাকে।

এমভি আব্দুল্লাহ প্রসঙ্গে এসআর শিপিংয়ের সিইও মেহেরুল করিম যুগান্তরকে বলেন, ‘জলদস্যুদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। অগ্রগতি ভালোই হচ্ছে। আমি ঠিক দিনক্ষণ বলতে পারব না, কবে এর (জিম্মিদশার) সমাপ্তি হবে। কিন্তু অগ্রগতি হচ্ছে।’

ঈদের আগে মুক্তি সম্ভব হবে হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক বলা সম্ভব নয়। আমাদের চেষ্টা অবশ্যই থাকবে। যত দ্রুত সম্ভব নাবিকদের ফিরিয়ে আনা যায়, সেই চেষ্টা করছি। নাবিকরা ভালো আছেন, সুস্থ আছেন।’

এমভি জাহান মণির চেয়ে আরও কম সময়ে এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকরা মুক্তি পাবেন বলে ধারণা করছেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘যখন জাহাজটি সোমালিয়ান জলসীমা থেকে ছেড়ে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আসবে, তখনই বোঝা যাবে এটি জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়েছে। এর আগ পর্যন্ত শুধু এতটুকুই শোনা যাবে-সমঝোতা চলছে। তবে কম সময়ের মধ্যেই একটা সুরাহা হয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী। কারণ, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন চাওয়া আর পাওয়ার মধ্যে গ্যাপটা কমে গেলেই সমাধান হয়ে যাবে।’