ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত চলছে
আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান হলেন ফায়ার সার্ভিসের (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সদস্যসচিব ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ঢাকা বিভাগ) মো. সালেহ উদ্দিন।
সিআইডির তদন্তও শেষ হয়নি
জানতে চাইলে গতকাল শনিবার সিআইডির পুলিশ সুপার আজাদ রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষা চলছে। আগুন নেভার পর ১৫টি আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
সিআইডি কর্তৃপক্ষ বলছে, মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে তারা একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছে। তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়ে তা যাচাই করছে তারা।
সিআইডি বলছে, তদন্তের এ পর্যায়ে তারা অনেকটাই নিশ্চিত যে নিচতলার ‘চুমুক’ নামের পানীয়ের দোকানের একটি ইলেকট্রিক কেটলি থেকে আগুন লাগে। এ ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের মধ্যে দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনার তদন্ত এখানেই শেষ নয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য আরো যাচাই-বাছাই করা হবে।
গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, কেটলিতে হঠাৎ আগুন ধরে গিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে। চেষ্টা করেও কিছুতেই আগুন নিভছিল না। এক পর্যায়ে তা পুরো দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। তখন তাঁরা প্রাণে বাঁচতে নিজেরা বের হয়ে যান। জিজ্ঞাসাবাদ করা পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘চুমুক’ দোকানের আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ হতে পারে বৈদ্যুতিক তার ও দোকানটিতে থাকা গ্যাসের চুলা। দোকানটির পাশের দরজা ও সিঁড়ির কাছে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ হয়ে আগুন আরো ছড়িয়ে পড়ে।
‘শুরুতে আগুন নেভানোর চেষ্টা হয়নি’
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, চায়ের দোকান চুমুকসহ ভবনটির সাততলা পর্যন্ত যেসব খাবার দোকান রয়েছে সেগুলোর রান্নাঘরে গ্যাসের চুলা ছিল। শুরুতেই আগুন নেভানোর তেমন চেষ্টা করা হয়নি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস সেখানে পৌঁছানোর আগেই ব্যাপক ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। ভবনটিতে আটকে পড়া অনেকে ওই ধোঁয়ায় মারা যান।
ভবন মালিকেরও দায় আছে
তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অগ্নিকাণ্ডের দায় ভবন মালিকপক্ষেরও রয়েছে। তাদের সঠিক তদারকির অভাব ও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভবনটির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আগেই অগ্নিনিরাপত্তাসংক্রান্ত নোটিশ দেওয়া হলেও তোয়াক্কা না করে কার্যক্রম চলমান রেখেছে তারা। সাততলা ভবনটিতে এতগুলো রেস্তোরাঁ থাকলেও কার্যত কোনো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। নামমাত্র দুই-তিনটা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ছিল। ভবনের একমাত্র সরু সিঁড়িটিকে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান মালপত্র রাখার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করছিল। এ ছাড়া জরুরি সিঁড়ি না থাকায় বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে থাকা তিনটি অত্যাধুনিক মইয়ের মধ্যে দুটি ভবনটিতে ঠিকমতো ব্যবহার করা যায়নি। ফলে আটকে পড়া লোকজনকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া যায়নি। মূলত এসব কারণেই এত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এখনো হা-হুতাশ করছে মানুষ
গতকাল বেইলি রোডে পোড়া ভবনটির সামনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মানুষ দুঃখ প্রকাশ করছেন। তাঁদের একজন মো. শাহজাহান। তিনি বলেন, ‘শুনেছি এই ভবনে আগুনে পুড়ে অনেক মানুষ মারা গেছে। নিজ চোখে ভবনটি দেখার ইচ্ছা ছিল। তাই এসেছি।’
২৯ ফেব্রুয়ারির আগুনের ঘটনার পর থেকে একসময়ের প্রাণবন্ত বেইলি রোড এলাকা এখনো অনেকটা নিষ্প্রাণ। রোজার মধ্যে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেকটাই ক্রেতাশূন্য প্রতিটি দোকান। ক্যাপিটাল বাজারের ম্যানেজার আবদুল আজিজ বললেন, আগুনের পর তাঁদের ব্যবসায় ধস নেমেছে।