ঢাকা ০১:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিয়ের দুই সপ্তাহের মধ্যে নিভে গেল নববধূর প্রাণ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১১:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৬ বার

বিয়ের ১৫ দিনের মধ্যে পৃথিবী ছেড়েছেন চাঁদপুরের মতলব পৌর এলাকার শাহজাহান গাজীর মেয়ে তামান্না আক্তার। মা-বাবার দাবি, তামান্নাকে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছেন, তামান্না আত্মহত্যা করেছেন।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুই পরিবারের কাছ থেকে এমনটি জানা গেছে। গত ১ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার দক্ষিণ নলুয়া গ্রামের মৃধা বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট নলুয়া গ্রামের মৃধা বাড়ি জব্বার মৃধার ছেলে মনির হোসেন মৃধার সঙ্গে তামান্না আক্তারের বিয়ে হয়। সবকিছু ভালোই চলছিল। মনির গেল দুই সপ্তাহে তামান্নাকে নিয়ে একাধিকবার যাওয়া-আসা করেন শ্বশুরবাড়ি। কোনো ধরনের অভিযোগ ছিল না তামান্নার বিরুদ্ধে।
তার মৃত্যুতে পুরো পরিবার এখনও শোকহত। মেয়ের কবরের কাছে কান্না করছেন মা আছমা বেগমসহ নিকটাত্মীয়রা।

মেয়ের নাম নিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা আছমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের মধ্যে কোনো খারাপ কিছু দেখিনি। তাদের কোনো সমস্যার কারণেই আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।’

মেয়ের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না বাবা শাহজাহান। তিনি বলেন, ‘এনজিও থেকে ঋণ, গরু বিক্রি ও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তায় মেয়েকে অনেক ধুমধাম করে এবছর ১৯ আগস্ট বিয়ে দিয়েছি। আমার মেয়েও খুবই আনন্দ উৎফুল্ল ছিল। বিয়ের পরেও কোনো ধরণের সমস্যার কথা শুনতে পাইনি। গত ১ সেপ্টেম্বর আমার মেয়েকে ঠিক কী কারণে হত্যার পর ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে মনির হোসেন পরিবার নিষ্ঠুরভাবে ঝুলিয়ে রাখে, তা বলতে পারছি না। তারা এখন আমার মেয়ের অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে অপবাদ দিচ্ছে। কিন্তু সঠিক তদন্ত করলে আমার মেয়ের বিষয়ে এমন কোনো কিছুই পাওয়া যাবে না। আমি এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

তামান্নার মামা নাজমুল তফাদার বলেন, ‘তামান্নাকে বিয়ে দেওয়ার আগে মনির হোসেন পরিবারের খোঁজ নিয়েছি। তাদের বিষয়ে সবাই ভালো বলেছে। ঘটনার পরে বুঝতে পারলাম এই ছেলের সঙ্গে অন্য কোনো মেয়ের সম্পর্ক থাকতে পারে। তা নাহলে কি কারণে আমার ভাগ্নি হত্যার শিকার হবে। নিশ্চয় কোনো কিছু জানতে পেরেছে এবং কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে তার মৃত্যুর পরে আমরা তার পা মাটিতে লাগানো অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমার বোন জামাতা পড়তে জানেন না এবং মেয়েকে হারিয়ে শোকাহত ছিলেন, যে কারণে ঘটনার বিষয়ে মামলার বাদী হলেও এজহারের বিবরণ পড়তে পারেননি। ফলে থানা থেকে যে এজহার লেখা হয়েছে তাতেই তিনি কোনো রকম স্বাক্ষর দিয়েছেন। ওই এজহারে পুলিশ ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচিত করার অপরাধ লিখেছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২ সেপ্টেম্বর ভাগ্নিকে তার বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়।’

এদিকে তামান্নার স্বামী মনির হোসেনের বড় বোন শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই-ভাবির মধ্যে কোনো সমস্যাই ছিল না। ঘটনার দিন গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ভাবি তামান্না মায়ের সঙ্গে কাজ করেছে। মা তাকে খাইয়ে দিয়েছে। আমি গোসল করতে গিয়েছি। তাকেও গোসল করার জন্য মা ডাকেন। কিন্তু সে আমাদের সেমি পাকা ঘরের দিকে যায়। কিছু সময় পরে আমি ওই ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ পাই। অনেক জোর করে দরজা খুলে দেখি ভাবি ঝুলন্ত অবস্থায়। আমি চিৎকার দিলে বাড়ির সব লোক জড়ো হয়। খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় আমার ভাইকে ঘরে পাওয়া যায়নি। সে আমাদের নিকটের মাস্টার বাজারের দিকে যাচ্ছিল। ফোন দিয়ে জানালে সে ফেরৎ আসে। আমার ভাইয়ের সঙ্গে ভাবির কোনো কিছু হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। শুনেছি, ভাবির সঙ্গে অন্য কোনো ছেলের টিকটক ভিডিও দেখা গেছে। তবে আমার ভাইয়ের স্মার্ট ফোনটি এখন পুলিশের কাছে জব্দ।’

কিছু সময় ওই বাড়িতে অপেক্ষা করে মনির পরিবারের অন্য কাউকেই পাওয়া যায়নি। বাড়ির লোকজন তাদের বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।

মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ‘ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে যায়। সুরতহাল শেষে তামান্নার মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এই ঘটনায় তার বাবা শাহজাহান ২ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা দিয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন আসলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিয়ের দুই সপ্তাহের মধ্যে নিভে গেল নববধূর প্রাণ

আপডেট টাইম : ১১:১১:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিয়ের ১৫ দিনের মধ্যে পৃথিবী ছেড়েছেন চাঁদপুরের মতলব পৌর এলাকার শাহজাহান গাজীর মেয়ে তামান্না আক্তার। মা-বাবার দাবি, তামান্নাকে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলছেন, তামান্না আত্মহত্যা করেছেন।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুই পরিবারের কাছ থেকে এমনটি জানা গেছে। গত ১ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার দক্ষিণ নলুয়া গ্রামের মৃধা বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট নলুয়া গ্রামের মৃধা বাড়ি জব্বার মৃধার ছেলে মনির হোসেন মৃধার সঙ্গে তামান্না আক্তারের বিয়ে হয়। সবকিছু ভালোই চলছিল। মনির গেল দুই সপ্তাহে তামান্নাকে নিয়ে একাধিকবার যাওয়া-আসা করেন শ্বশুরবাড়ি। কোনো ধরনের অভিযোগ ছিল না তামান্নার বিরুদ্ধে।
তার মৃত্যুতে পুরো পরিবার এখনও শোকহত। মেয়ের কবরের কাছে কান্না করছেন মা আছমা বেগমসহ নিকটাত্মীয়রা।

মেয়ের নাম নিয়ে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন মা আছমা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের মধ্যে কোনো খারাপ কিছু দেখিনি। তাদের কোনো সমস্যার কারণেই আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।’

মেয়ের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না বাবা শাহজাহান। তিনি বলেন, ‘এনজিও থেকে ঋণ, গরু বিক্রি ও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তায় মেয়েকে অনেক ধুমধাম করে এবছর ১৯ আগস্ট বিয়ে দিয়েছি। আমার মেয়েও খুবই আনন্দ উৎফুল্ল ছিল। বিয়ের পরেও কোনো ধরণের সমস্যার কথা শুনতে পাইনি। গত ১ সেপ্টেম্বর আমার মেয়েকে ঠিক কী কারণে হত্যার পর ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে মনির হোসেন পরিবার নিষ্ঠুরভাবে ঝুলিয়ে রাখে, তা বলতে পারছি না। তারা এখন আমার মেয়ের অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে অপবাদ দিচ্ছে। কিন্তু সঠিক তদন্ত করলে আমার মেয়ের বিষয়ে এমন কোনো কিছুই পাওয়া যাবে না। আমি এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

তামান্নার মামা নাজমুল তফাদার বলেন, ‘তামান্নাকে বিয়ে দেওয়ার আগে মনির হোসেন পরিবারের খোঁজ নিয়েছি। তাদের বিষয়ে সবাই ভালো বলেছে। ঘটনার পরে বুঝতে পারলাম এই ছেলের সঙ্গে অন্য কোনো মেয়ের সম্পর্ক থাকতে পারে। তা নাহলে কি কারণে আমার ভাগ্নি হত্যার শিকার হবে। নিশ্চয় কোনো কিছু জানতে পেরেছে এবং কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে তার মৃত্যুর পরে আমরা তার পা মাটিতে লাগানো অবস্থায় দেখতে পেয়েছি। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমার বোন জামাতা পড়তে জানেন না এবং মেয়েকে হারিয়ে শোকাহত ছিলেন, যে কারণে ঘটনার বিষয়ে মামলার বাদী হলেও এজহারের বিবরণ পড়তে পারেননি। ফলে থানা থেকে যে এজহার লেখা হয়েছে তাতেই তিনি কোনো রকম স্বাক্ষর দিয়েছেন। ওই এজহারে পুলিশ ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচিত করার অপরাধ লিখেছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২ সেপ্টেম্বর ভাগ্নিকে তার বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়।’

এদিকে তামান্নার স্বামী মনির হোসেনের বড় বোন শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই-ভাবির মধ্যে কোনো সমস্যাই ছিল না। ঘটনার দিন গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ভাবি তামান্না মায়ের সঙ্গে কাজ করেছে। মা তাকে খাইয়ে দিয়েছে। আমি গোসল করতে গিয়েছি। তাকেও গোসল করার জন্য মা ডাকেন। কিন্তু সে আমাদের সেমি পাকা ঘরের দিকে যায়। কিছু সময় পরে আমি ওই ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ পাই। অনেক জোর করে দরজা খুলে দেখি ভাবি ঝুলন্ত অবস্থায়। আমি চিৎকার দিলে বাড়ির সব লোক জড়ো হয়। খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় আমার ভাইকে ঘরে পাওয়া যায়নি। সে আমাদের নিকটের মাস্টার বাজারের দিকে যাচ্ছিল। ফোন দিয়ে জানালে সে ফেরৎ আসে। আমার ভাইয়ের সঙ্গে ভাবির কোনো কিছু হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। শুনেছি, ভাবির সঙ্গে অন্য কোনো ছেলের টিকটক ভিডিও দেখা গেছে। তবে আমার ভাইয়ের স্মার্ট ফোনটি এখন পুলিশের কাছে জব্দ।’

কিছু সময় ওই বাড়িতে অপেক্ষা করে মনির পরিবারের অন্য কাউকেই পাওয়া যায়নি। বাড়ির লোকজন তাদের বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।

মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ‘ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে যায়। সুরতহাল শেষে তামান্নার মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এই ঘটনায় তার বাবা শাহজাহান ২ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা দিয়েছে। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন আসলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’