ঢাকা ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় কী পরিবর্তন হবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২০:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
  • ৪২ বার

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের চালানো হামলার পর থেকে গাজায় যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তারপর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) উভয় পক্ষের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে সফলভাবে একটি প্রস্তাব পাস করেছে।

প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধবিরতি ‘অবিলম্বে বলবৎ’ করা উচিত এবং ‘একটা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে রমজান মাসের প্রতি সব পক্ষেরই শ্রদ্ধা দেখানো উচিত’।

এখন এই প্রস্তাবনা মেনে চলা বাধ্যতামূলক কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারের মাঝে বিতর্ক রয়েছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২৭২৮ নং প্রস্তাবে সকল জিম্মিকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ১৪টি রাষ্ট্র প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। কেউই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়নি, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র এবার ভোটদান থেকে বিরত ছিল।

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু ভেটো দেয়নি, বরং ইসরাইলের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা করেছে।

এর আগে নিরাপত্তা পরিষদের তিনটি খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং মোট দু’বার ভেটো দেওয়া থেকে বিরত ছিল।

আগে তারা বলেছিল যে ওই প্রস্তাবগুলো জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি সুনিশ্চিত করবে না অথবা প্রস্তাবগুলোতে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার বিষয়ে যথাযথ নিন্দা জানানো হয়নি।

সর্বশেষ প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদের ১০ অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষে মোজাম্বিক উপস্থাপন করে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের দূত গিলাদ এরদান অবশ্য এই প্রস্তাবকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।

জাতিসংঘ সনদের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা বর্তমান সনদ অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সম্মত।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বলা আছে: জাতিসংঘে পাশ হওয়া প্রস্তাবগুলোর মাঝে যেগুলো নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন পেয়ে থাকে, সেগুলো মেনে চলার আইনি বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৭২৮ নম্বর প্রস্তাবকে বাধ্যতামূলক নয় বলে বর্ণনা করেছে।

তাদের যুক্তি, ওই প্রস্তাবে ‘যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ কথাগুলির পরিবর্তে বরং ‘যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করা হয়েছে’ অভিব্যক্তিটি ব্যবহার করা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারও সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি একটি বাধ্যতামূলক প্রস্তাব নয়।’ কিন্তু জাতিসংঘের অন্য কর্মকর্তারা বলছেন উল্টো কথা।

জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মানা বাধ্যতামূলক।

২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মার্ক লায়াল-গ্রান্ট বিবিসি রেডিও-র ‘ফোর পিএম’ প্রোগ্রামে বলেন যে, এই প্রস্তাবনা পাসের অর্থ ইসরাইল এখন মূলত পরবর্তী ১৫ দিনের জন্য সামরিক অভিযান বন্ধ রাখতে একটি বাধ্যবাধকতার অধীনে থাকবে।

তিনি যোগ করেছেন, এই প্রস্তাবনাটি আইনত ইসরাইলের জন্য বাধ্যতামূলক, কিন্তু হামাসের জন্য নয়। কারণ ফিলিস্তিনি গ্রুপটি একটি রাষ্ট্র নয়।

জাতিসংঘের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক বলেন যে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনাগুলো আন্তর্জাতিক আইন, সুতরাং, এগুলো আন্তর্জাতিক আইনের মতোই বাধ্যতামূলক।

সদস্য দেশগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রস্তাব মানতে বাধ্য করার অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার জাতিসংঘ সনদের সপ্তম অধ্যায়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হেইতিতে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বহুজাতিক পুলিশ বাহিনী পাঠাতে এটি ব্যবহার করা হয়েছিলো।

লেবাননের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল (এসটিএল) গঠনেও অধ্যায় সাতকে ব্যবহার করা হয়েছিল।

২০০৫ সালে লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির হত্যাকাণ্ড এবং ২০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের তদন্ত ও বিচারের সময় এটির ব্যবহার হয়েছিলো।

২০০৬ সালে এই সপ্তম অধ্যায়ের অধীনেই ইরানকে অন্যান্য দেশে অস্ত্র সরবরাহ করা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং এ বিষয়ে দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।

প্যাট্রিক জোহানসনের নর্ডিক জার্নাল অফ ইন্টারন্যাশনাল ল’তে প্রকাশিত লেখা অনুযায়ী : নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা ‘একটি সপ্তম অধ্যায় প্রস্তাবনা’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে যদি ‘বিবেচনাধীন পরিস্থিতি মানুষের শান্তির জন্য হুমকি, শান্তি লঙ্ঘন বা আগ্রাসনের মতো ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়’।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্থায়ী পর্যবেক্ষক রিয়াদ মনসুর এই অধ্যায়টি ব্যবহার করানোর জন্য চেষ্টা করেছেন।

‘আমরা নিরাপত্তা পরিষদে এসেছি। এখন তারা বলছেন এটি বাধ্যতামূলক নয়। সেটা আমরা মানছি না … নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বাধ্যতামূলক।’

তিনি বলেন, ইসরাইল যদি তা বাস্তবায়ন করতে না পারে, তাহলে নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্ব হচ্ছে অধ্যায় সাতকে ব্যবহারের মাধ্যমে তাদেরকে পরিষদের প্রস্তাব মেনে চলতে বাধ্য করা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ব্রাসেলস-ভিত্তিক থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মায়া উঙ্গার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি আইনি কাঠামোর ওপর নির্ভর করে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছে যা হয়তো কেউ কেউ মেনে নিতে পারে।

তিনি সিএনএনকে বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে ‘সিদ্ধান্ত’ বা সপ্তম অধ্যায়ের ‘আহ্বান’ শব্দটি ব্যবহার না করলে প্রস্তাবনাটি বাধ্যতামূলক হবে না।

মঙ্গলবার কাতার বলেছে যে দোহায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলমান আলোচনায় এই প্রস্তাবের তাৎক্ষণিক কোনও প্রভাব পড়বে না।

উপসাগরীয় দেশটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে মধ্যস্থতা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি জানিয়েছেন, আমরা আলোচনায় তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব দেখতে পাইনি। জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তের আগে আলোচনা যেভাবে চলছিল, এখনও সেভাবেই চলছে।

যুদ্ধবিরতির দাবিতে জাতিসংঘের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইল কাতার থেকে তাদের আলোচনাকারী দলকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কাতার এই বিবৃতি দিয়েছে।

এর আগে ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছিলো, সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে সর্বশেষ প্রস্তাবটি হামাস প্রত্যাখ্যান করায় ইসরাইলের যে প্রতিনিধি দল কাতারে আট দিন ধরে আলোচনা করছিলো, তারা দোহা ত্যাগ করেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় কী পরিবর্তন হবে

আপডেট টাইম : ১২:২০:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের চালানো হামলার পর থেকে গাজায় যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তারপর প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) উভয় পক্ষের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে সফলভাবে একটি প্রস্তাব পাস করেছে।

প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছে, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধবিরতি ‘অবিলম্বে বলবৎ’ করা উচিত এবং ‘একটা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে রমজান মাসের প্রতি সব পক্ষেরই শ্রদ্ধা দেখানো উচিত’।

এখন এই প্রস্তাবনা মেনে চলা বাধ্যতামূলক কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারের মাঝে বিতর্ক রয়েছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২৭২৮ নং প্রস্তাবে সকল জিম্মিকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ১৪টি রাষ্ট্র প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। কেউই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়নি, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র এবার ভোটদান থেকে বিরত ছিল।

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু ভেটো দেয়নি, বরং ইসরাইলের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা করেছে।

এর আগে নিরাপত্তা পরিষদের তিনটি খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং মোট দু’বার ভেটো দেওয়া থেকে বিরত ছিল।

আগে তারা বলেছিল যে ওই প্রস্তাবগুলো জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি সুনিশ্চিত করবে না অথবা প্রস্তাবগুলোতে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার বিষয়ে যথাযথ নিন্দা জানানো হয়নি।

সর্বশেষ প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদের ১০ অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষে মোজাম্বিক উপস্থাপন করে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের দূত গিলাদ এরদান অবশ্য এই প্রস্তাবকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন।

জাতিসংঘ সনদের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা বর্তমান সনদ অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সম্মত।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বলা আছে: জাতিসংঘে পাশ হওয়া প্রস্তাবগুলোর মাঝে যেগুলো নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন পেয়ে থাকে, সেগুলো মেনে চলার আইনি বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২৭২৮ নম্বর প্রস্তাবকে বাধ্যতামূলক নয় বলে বর্ণনা করেছে।

তাদের যুক্তি, ওই প্রস্তাবে ‘যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ কথাগুলির পরিবর্তে বরং ‘যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করা হয়েছে’ অভিব্যক্তিটি ব্যবহার করা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারও সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি একটি বাধ্যতামূলক প্রস্তাব নয়।’ কিন্তু জাতিসংঘের অন্য কর্মকর্তারা বলছেন উল্টো কথা।

জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং জুন বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মানা বাধ্যতামূলক।

২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মার্ক লায়াল-গ্রান্ট বিবিসি রেডিও-র ‘ফোর পিএম’ প্রোগ্রামে বলেন যে, এই প্রস্তাবনা পাসের অর্থ ইসরাইল এখন মূলত পরবর্তী ১৫ দিনের জন্য সামরিক অভিযান বন্ধ রাখতে একটি বাধ্যবাধকতার অধীনে থাকবে।

তিনি যোগ করেছেন, এই প্রস্তাবনাটি আইনত ইসরাইলের জন্য বাধ্যতামূলক, কিন্তু হামাসের জন্য নয়। কারণ ফিলিস্তিনি গ্রুপটি একটি রাষ্ট্র নয়।

জাতিসংঘের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক বলেন যে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনাগুলো আন্তর্জাতিক আইন, সুতরাং, এগুলো আন্তর্জাতিক আইনের মতোই বাধ্যতামূলক।

সদস্য দেশগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রস্তাব মানতে বাধ্য করার অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার জাতিসংঘ সনদের সপ্তম অধ্যায়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হেইতিতে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বহুজাতিক পুলিশ বাহিনী পাঠাতে এটি ব্যবহার করা হয়েছিলো।

লেবাননের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল (এসটিএল) গঠনেও অধ্যায় সাতকে ব্যবহার করা হয়েছিল।

২০০৫ সালে লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির হত্যাকাণ্ড এবং ২০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের তদন্ত ও বিচারের সময় এটির ব্যবহার হয়েছিলো।

২০০৬ সালে এই সপ্তম অধ্যায়ের অধীনেই ইরানকে অন্যান্য দেশে অস্ত্র সরবরাহ করা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং এ বিষয়ে দেশটির ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।

প্যাট্রিক জোহানসনের নর্ডিক জার্নাল অফ ইন্টারন্যাশনাল ল’তে প্রকাশিত লেখা অনুযায়ী : নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা ‘একটি সপ্তম অধ্যায় প্রস্তাবনা’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে যদি ‘বিবেচনাধীন পরিস্থিতি মানুষের শান্তির জন্য হুমকি, শান্তি লঙ্ঘন বা আগ্রাসনের মতো ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়’।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্থায়ী পর্যবেক্ষক রিয়াদ মনসুর এই অধ্যায়টি ব্যবহার করানোর জন্য চেষ্টা করেছেন।

‘আমরা নিরাপত্তা পরিষদে এসেছি। এখন তারা বলছেন এটি বাধ্যতামূলক নয়। সেটা আমরা মানছি না … নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব বাধ্যতামূলক।’

তিনি বলেন, ইসরাইল যদি তা বাস্তবায়ন করতে না পারে, তাহলে নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্ব হচ্ছে অধ্যায় সাতকে ব্যবহারের মাধ্যমে তাদেরকে পরিষদের প্রস্তাব মেনে চলতে বাধ্য করা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ব্রাসেলস-ভিত্তিক থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মায়া উঙ্গার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি আইনি কাঠামোর ওপর নির্ভর করে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছে যা হয়তো কেউ কেউ মেনে নিতে পারে।

তিনি সিএনএনকে বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে ‘সিদ্ধান্ত’ বা সপ্তম অধ্যায়ের ‘আহ্বান’ শব্দটি ব্যবহার না করলে প্রস্তাবনাটি বাধ্যতামূলক হবে না।

মঙ্গলবার কাতার বলেছে যে দোহায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে চলমান আলোচনায় এই প্রস্তাবের তাৎক্ষণিক কোনও প্রভাব পড়বে না।

উপসাগরীয় দেশটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে মধ্যস্থতা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি জানিয়েছেন, আমরা আলোচনায় তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব দেখতে পাইনি। জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তের আগে আলোচনা যেভাবে চলছিল, এখনও সেভাবেই চলছে।

যুদ্ধবিরতির দাবিতে জাতিসংঘের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরাইল কাতার থেকে তাদের আলোচনাকারী দলকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কাতার এই বিবৃতি দিয়েছে।

এর আগে ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছিলো, সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে সর্বশেষ প্রস্তাবটি হামাস প্রত্যাখ্যান করায় ইসরাইলের যে প্রতিনিধি দল কাতারে আট দিন ধরে আলোচনা করছিলো, তারা দোহা ত্যাগ করেছে।