আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। আজ থেকে ৫৩ বছর আগে ঘোষিত হয়েছিল এ দেশের স্বাধীনতা। এ এক আনন্দের দিন। তবে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস যেমন গৌরবের, তেমনই বেদনারও। অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। আজ আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই জানা-অজানা শহিদদের, যারা তাদের বর্তমানকে বিসর্জন দিয়ে গেছেন এদেশের ভবিষ্যৎকে সুন্দর করার জন্য। আমরা শ্রদ্ধা জানাই স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সব সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধাকে। আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সেই সব বন্ধুরাষ্ট্র ও বিদেশি নাগরিকদের, যারা মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে আমাদের সহায়তা করেছেন।
মহাকালের বিচারে ৫৩ বছর খুব বড় সময় নয়। তবে এ সময়ের ব্যবধানে কোনো কোনো জাতির অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার নজিরও আছে। আজ আমাদের বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন স্বাধীনতার পর আমরা কতটা এগিয়েছি, কী ছিল আমাদের লক্ষ্য ও প্রত্যাশা, পূরণ হয়েছে কতটা। কোথায় আমাদের ব্যর্থতা, কী এর কারণ। স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য যদি হয় ভৌগোলিকভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বা ভূখণ্ডের অধিকারী হওয়া, তাহলে তা অর্জিত হয়েছে। তবে শুধু এটুকুই মানুষের প্রত্যাশা ছিল না। পাকিস্তানের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে দেশে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তিসহ মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা-এ প্রত্যাশাও ছিল সমান। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের রায় মেনে না নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের দাবি প্রবল হয়ে ওঠে বাঙালির মধ্যে। তবে স্বাধীনতার পর দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেলেও তা হোঁচট খেয়েছে বারবার। বজায় থাকেনি এর ধারাবাহিকতা। ফলে আজও প্রাতিষ্ঠানিকতা পায়নি গণতন্ত্র। রাজনীতিতে ঐকমত্যের অভাব ও অসহিষ্ণুতাও এর বড় কারণ। অন্তত জাতীয় ইস্যুগুলোয় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ঐক্য থাকা প্রয়োজন হলেও কোনো শাসনামলেই তা দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থই হয়ে উঠেছে মুখ্য।
এটা সত্য-দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, নারী উন্নয়ন, শিশুমৃত্যুর হার কমানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে আমাদের। মাথাপিছু আয় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। জঙ্গিবাদের অপতৎপরতা ঠেকিয়ে রাখা গেছে। এর মূল কৃতিত্বের দাবিদার জনগণ। এদেশের মানুষ ধর্মের নামে সহিংসতা সমর্থন করে না। তা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে; গড়ে তুলতে হবে রাজনৈতিক ঐকমত্য। সরকারকে মানবাধিকারের প্রশ্নে হতে হবে অঙ্গীকারবদ্ধ। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে সব বিভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সেই ঐক্যের ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো আমরা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব-এ প্রত্যাশা সবার।
বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছে সন্দেহ নেই। তারপরও বহু মুক্তিযোদ্ধা অসহায় ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সেসব অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া আমাদের সবার কর্তব্য। স্বাধীনতা দিবসে আমাদের পাঠক, লেখক, শুভানুধ্যায়ীসহ সমগ্র দেশবাসীর প্রতি রইল শুভেচ্ছা।