ঢাকা ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরে গ্যাস লিকেজ থেকে আগুন : দগ্ধ আরো একজনের মৃত্যু

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১০:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
  • ৩৪ বার
গাজীপুরের সিলিন্ডারের গ্যাস লিকেজ থেকে লাগা আগুনের ঘটনায় মো: মুনসুর আলী আকন্দ নামে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুইজনে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বার্ণ ইনিস্টিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা: পার্থ শঙ্কর পাল। তিনি বলেন, নিহতের শরীরের শতভাগ দগ্ধ হয়েছিল।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটের পোষ্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (১৬ মার্চ) সকাল সাড়ে আটায় তার মৃত্যু হয়।তার বাড়ি রাজশাহী জেলার। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে কালিয়াকৈর টপস্টার নামক এলাকায় থাকতেন তিনি।

এর আগে গত শুক্রবার (১৫ মার্চ)  সকাল দশ টায়  মো: সোলেমান মোল্লা (৪৫)। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বর্তমানে ২৯ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গত বুধবার ইফতারের আগে কোনাবাড়ী এলাকার টিনশেড কলোনিতে আগুন লাগে।

এতে নারী-শিশুসহ কমবেশি ৩৬ জন দগ্ধ হয়। তাদের মধ্যে ৩২ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।চিকিৎসকরা বলছেন, অগ্নিদগ্ধ ২৯ জন এখনো ইনস্টিটিউটে ভর্তি। এদের মধ্যে ১০ বছর বয়সী সাতটি শিশু, ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছয়জন রয়েছে। দগ্ধদের ১৬ জনের বেশি ব্যক্তির ৫০ শতাংশের বেশি পুড়েছে।

২৬ জনের শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় কাউকেই আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ১২ জন রোগীর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া চারজন রোগী আইসিইউ এবং দুজন এইচডিইউয়ে ভর্তি।কালিয়াকৈরে দগ্ধ হওয়া প্রায় সবাই শ্রমজীবী। বার্ন ইনস্টিটিউটে তাদের স্বজনরা প্রিয়জনের সুস্থ হওয়ার প্রার্থনার পাশাপাশি কেন এমন ঘটনা ঘটল, এ ঘটনায় দায় কার—এসব প্রশ্নও তুলছে।

গতকাল বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউয়ের সামনে মিমি আক্তার নামের এক নারী জানান, এই  আগুনে তাঁর ছেলে সোলাইমানের শরীরের ৮০ শতাংশই পুড়ে গেছে। লাইফ সাপোর্টে (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে) বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। পুড়ে কালো হয়ে যাওয়ায় নিজের সন্তানকেও অচেনা লাগছে। শিশুটির বাবা শফিকুল ইসলাম জানান, ছেলের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে।

ওই আগুনে দগ্ধ হয়ে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক আরিফুল ইসলাম (৩৫) এখন বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি। আরিফুলের স্ত্রী সুমি আক্তার বলেন, তিনিও গার্মেন্টসকর্মী। এখন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। তাঁর সামনেই তাঁর স্বামী দগ্ধ হন। ওই সময় সন্তান নিয়ে ঘরের ভেতর থাকায় তাঁরা রক্ষা পান। তাঁদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাঘায়। আরিফুলের মুখমণ্ডলসহ শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

এই আগুনে দগ্ধ গার্মেন্টসকর্মী মহিদুল (২৫) ও তাঁর স্ত্রী নার্গিস আক্তার (২২)। বার্ন ইনস্টিটিউটে তাঁদের আত্মীয় সিদ্দিক হোসেন বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মহিদুলের ৯৫ শতাংশ ও তাঁর স্ত্রীর ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এই দম্পতির তিন বছর বয়সী ছেলে থাকে গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। মা-বাবার কিছু হলে ছোট শিশুটির কী হবে তা নিয়ে চিন্তিত স্বজনরা।

গ্যাসের আগুনে ১১ বছরের গোলাম রাব্বি ও ১৩ বছরের নাঈম মিয়া দগ্ধ হয়ে এখন সংকটাপন্ন অবস্থায়। রাব্বির বাবা দিনমজুর শাহ আলম জানান, ছেলের শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

নাঈমের দাদা আব্দুস সামাদ বলেন, তাঁর নাতির মুখমণ্ডলসহ শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। নাঈমের বাবা সুজন মিয়া পোশাক কারখানায় কাজ করেন।

৮৫ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ হয়ে ইয়াসিন আরাফাতও (২১) বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি। তাঁর ভাই আব্দুল কাদির জানান,  মাত্র ১৮ দিন আগে ইয়াসিনের একটা ছেলেসন্তান হয়েছে। ঘটনার দিন ইফতার করতে বাসায় যাওয়ার সময় এই বিপদে পড়েন তিনি।

ইফতার করতে বাসায় যাচ্ছিলেন গার্মেন্টসকর্মী আজিজুল হকও। তিনিও দুই পা পুড়ে যাওয়া অবস্থায় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ভাই আসাদুজ্জামান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গাজীপুরে গ্যাস লিকেজ থেকে আগুন : দগ্ধ আরো একজনের মৃত্যু

আপডেট টাইম : ১২:১০:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
গাজীপুরের সিলিন্ডারের গ্যাস লিকেজ থেকে লাগা আগুনের ঘটনায় মো: মুনসুর আলী আকন্দ নামে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুইজনে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বার্ণ ইনিস্টিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা: পার্থ শঙ্কর পাল। তিনি বলেন, নিহতের শরীরের শতভাগ দগ্ধ হয়েছিল।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিউটের পোষ্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (১৬ মার্চ) সকাল সাড়ে আটায় তার মৃত্যু হয়।তার বাড়ি রাজশাহী জেলার। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে কালিয়াকৈর টপস্টার নামক এলাকায় থাকতেন তিনি।

এর আগে গত শুক্রবার (১৫ মার্চ)  সকাল দশ টায়  মো: সোলেমান মোল্লা (৪৫)। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বর্তমানে ২৯ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

গত বুধবার ইফতারের আগে কোনাবাড়ী এলাকার টিনশেড কলোনিতে আগুন লাগে।

এতে নারী-শিশুসহ কমবেশি ৩৬ জন দগ্ধ হয়। তাদের মধ্যে ৩২ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।চিকিৎসকরা বলছেন, অগ্নিদগ্ধ ২৯ জন এখনো ইনস্টিটিউটে ভর্তি। এদের মধ্যে ১০ বছর বয়সী সাতটি শিশু, ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছয়জন রয়েছে। দগ্ধদের ১৬ জনের বেশি ব্যক্তির ৫০ শতাংশের বেশি পুড়েছে।

২৬ জনের শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় কাউকেই আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ১২ জন রোগীর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া চারজন রোগী আইসিইউ এবং দুজন এইচডিইউয়ে ভর্তি।কালিয়াকৈরে দগ্ধ হওয়া প্রায় সবাই শ্রমজীবী। বার্ন ইনস্টিটিউটে তাদের স্বজনরা প্রিয়জনের সুস্থ হওয়ার প্রার্থনার পাশাপাশি কেন এমন ঘটনা ঘটল, এ ঘটনায় দায় কার—এসব প্রশ্নও তুলছে।

গতকাল বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউয়ের সামনে মিমি আক্তার নামের এক নারী জানান, এই  আগুনে তাঁর ছেলে সোলাইমানের শরীরের ৮০ শতাংশই পুড়ে গেছে। লাইফ সাপোর্টে (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে) বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে তাকে। পুড়ে কালো হয়ে যাওয়ায় নিজের সন্তানকেও অচেনা লাগছে। শিশুটির বাবা শফিকুল ইসলাম জানান, ছেলের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে।

ওই আগুনে দগ্ধ হয়ে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক আরিফুল ইসলাম (৩৫) এখন বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি। আরিফুলের স্ত্রী সুমি আক্তার বলেন, তিনিও গার্মেন্টসকর্মী। এখন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। তাঁর সামনেই তাঁর স্বামী দগ্ধ হন। ওই সময় সন্তান নিয়ে ঘরের ভেতর থাকায় তাঁরা রক্ষা পান। তাঁদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাঘায়। আরিফুলের মুখমণ্ডলসহ শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

এই আগুনে দগ্ধ গার্মেন্টসকর্মী মহিদুল (২৫) ও তাঁর স্ত্রী নার্গিস আক্তার (২২)। বার্ন ইনস্টিটিউটে তাঁদের আত্মীয় সিদ্দিক হোসেন বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মহিদুলের ৯৫ শতাংশ ও তাঁর স্ত্রীর ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এই দম্পতির তিন বছর বয়সী ছেলে থাকে গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। মা-বাবার কিছু হলে ছোট শিশুটির কী হবে তা নিয়ে চিন্তিত স্বজনরা।

গ্যাসের আগুনে ১১ বছরের গোলাম রাব্বি ও ১৩ বছরের নাঈম মিয়া দগ্ধ হয়ে এখন সংকটাপন্ন অবস্থায়। রাব্বির বাবা দিনমজুর শাহ আলম জানান, ছেলের শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

নাঈমের দাদা আব্দুস সামাদ বলেন, তাঁর নাতির মুখমণ্ডলসহ শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। নাঈমের বাবা সুজন মিয়া পোশাক কারখানায় কাজ করেন।

৮৫ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ হয়ে ইয়াসিন আরাফাতও (২১) বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি। তাঁর ভাই আব্দুল কাদির জানান,  মাত্র ১৮ দিন আগে ইয়াসিনের একটা ছেলেসন্তান হয়েছে। ঘটনার দিন ইফতার করতে বাসায় যাওয়ার সময় এই বিপদে পড়েন তিনি।

ইফতার করতে বাসায় যাচ্ছিলেন গার্মেন্টসকর্মী আজিজুল হকও। তিনিও দুই পা পুড়ে যাওয়া অবস্থায় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ভাই আসাদুজ্জামান।