ঢাকা ০৭:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তারাবির নামাজে প্রশান্ত হয় মুমিনের হৃদয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
  • ৩৯ বার

পবিত্র রমজানের যেসব ইবাদত বান্দাকে আল্লাহর অনেক বেশি কাছে নিয়ে যায়, তার একটি তারাবি। রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানে সিয়াম ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য রমজানে কিয়াম ফরজ করেছি। (নাসায়ি শরিফ, কিতাবুস সিয়াম)।

আল্লাহ রমজান মাসে দিনে রোজা রাখা ফরজ করেছেন, আর আল্লাহর হাবিব (সা.) রাতে দাঁড়িয়ে (তারাবি) নামাজ পড়াকে সুন্নাত করেছেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নামাজ। আর রমজান মাসে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের বাড়তি নেয়ামত হলো তারাবি।

পবিত্র রমজান মাসে সারা দিন রোজা রেখে রাতে তারাবির নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ইবাদত; যা আল্লাহর কাছে অতি পছন্দনীয়। তারাবি শব্দটি একটি আরবি পরিভাষা। এর আভিধানিক অর্থ হলো আরাম করা, বিশ্রাম করা, ধীরে ধীরে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা ইত্যাদি।

তারাবির নামাজের ফাঁকে ফাঁকে যেহেতু কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নেওয়া হয় এবং নামাজের সময় প্রলম্বিত করে ইবাদতের মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়, এজন্য একে তারাবির নামাজ বলা হয়ে থাকে।

২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, গুরুত্বের দিক থেকে ওয়াজিবের কাছাকাছি। ওজর বা অপারগতা ছাড়া তারাবির নামাজ পরিত্যাগ করা বড় গুনাহ।

পবিত্র কুরআন নাজিলের মাসে নামাজের মাধ্যমে কুরআন খতম অশেষ সওয়াবের। রাসূল (সা.) এরশাদ করেন-‘নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তোমাদের ওপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন এবং আমি মাহে রমজানে মাসব্যাপী আল্লাহর ইবাদতে দাঁড়ানো তোমাদের জন্য সুন্নাত হিসাবে নির্ধারণ করেছি। সুতরাং, যে ব্যক্তি এ মাসে রোজা পালন করবে এবং আল্লাহর সামনে ইমান ও আন্তরিকতাসহ দাঁড়াবে, সে তার গুনাহ থেকে সেদিনের মতোই নিষ্কৃতি লাভ করবে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।’ (নাসায়ি প্রথম খণ্ড, ২৩৯ পৃষ্ঠা)।

বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা (রহ.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন-‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়বে, তার অতীতের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বোখারি, হাদিস নং : ৩৬)।

তারাবি এমন এক সুন্নাত, তা আদায়ের ফলে অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় ২০ রাকাত নামাজ বেশি পড়ার সৌভাগ্য অর্জিত হয়। আর ২০ রাকাত মানে প্রত্যেক তারাবি আদায়কারী বা সিয়াম পালনকারী মাসব্যাপী দৈনিক অতিরিক্ত ৪০টি সিজদা দেওয়ার তাওফিক পাচ্ছেন। যদি পুরো মাসের হিসাব করা হয় এবং মাসকে ৩০ দিন ধরা হয়, তাহলে এক মাসে একজন সিয়ামসাধক অতিরিক্ত এক হাজার ২০০টি সিজদা করার বিশেষ সম্মানে সম্মানিত হলো।

রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা সিজদা করা অবস্থায় যতটা আল্লাহর নিকটবর্তী হয়, অন্য কোনো অবস্থায় এতটা কাছাকাছি হতে পারে না।’ আল্লাহ আরও বলেছেন-‘ওয়াসজুদু ওয়াকতারিব’ (সিজদা কর আরও ঘনিষ্ঠ হও)। (সূরা আলাক-১২)। আল্লাহর নৈকট্যলাভের মাস রমজানে প্রিয় নবি (সা.) আমাদের আল্লাহর আরও ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তারাবির নামাজ দান করেছেন।

আমাদের দেশের প্রতিটি মসজিদেই তারাবির নামাজে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করা হয়। আমরা যারা কুরআন শরিফ পড়তে জানি না বা জানলেও দুনিয়ার ব্যস্ততায় কুরআন তেলাওয়াতের সুযোগ পাই না, তারাবির মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা আমাদের কুরআন তেলাওয়াতের সেই পুণ্যটুকুও দান করেন।

হাদিসে আছে, আল্লাহর হাবিব (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা কোনো কিছুই এত মনোযোগ দিয়ে শুনেন না, যত মনোযোগ দিয়ে শুনেন তার কালামের তেলাওয়াত। তারাবিতে আল্লাহর রহমত বান্দার প্রতি বর্ষিত হয়। আল্লাহ বান্দার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন খুশি হয়ে বান্দাকে নানা পুরস্কারে ভূষিত করেন। তাকে ক্ষমা করে দেন। তিনি নিজেই তার জিম্মাদার হয়ে যান। তাই আমাদের উচিত, প্রতিদিন তারাবির নামাজে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করা। আল্লাহতায়ালা আমাদের তাওফিক দিন! আমিন!

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

তারাবির নামাজে প্রশান্ত হয় মুমিনের হৃদয়

আপডেট টাইম : ১০:৫৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪

পবিত্র রমজানের যেসব ইবাদত বান্দাকে আল্লাহর অনেক বেশি কাছে নিয়ে যায়, তার একটি তারাবি। রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানে সিয়াম ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য রমজানে কিয়াম ফরজ করেছি। (নাসায়ি শরিফ, কিতাবুস সিয়াম)।

আল্লাহ রমজান মাসে দিনে রোজা রাখা ফরজ করেছেন, আর আল্লাহর হাবিব (সা.) রাতে দাঁড়িয়ে (তারাবি) নামাজ পড়াকে সুন্নাত করেছেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নামাজ। আর রমজান মাসে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের বাড়তি নেয়ামত হলো তারাবি।

পবিত্র রমজান মাসে সারা দিন রোজা রেখে রাতে তারাবির নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ইবাদত; যা আল্লাহর কাছে অতি পছন্দনীয়। তারাবি শব্দটি একটি আরবি পরিভাষা। এর আভিধানিক অর্থ হলো আরাম করা, বিশ্রাম করা, ধীরে ধীরে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা ইত্যাদি।

তারাবির নামাজের ফাঁকে ফাঁকে যেহেতু কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নেওয়া হয় এবং নামাজের সময় প্রলম্বিত করে ইবাদতের মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়, এজন্য একে তারাবির নামাজ বলা হয়ে থাকে।

২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, গুরুত্বের দিক থেকে ওয়াজিবের কাছাকাছি। ওজর বা অপারগতা ছাড়া তারাবির নামাজ পরিত্যাগ করা বড় গুনাহ।

পবিত্র কুরআন নাজিলের মাসে নামাজের মাধ্যমে কুরআন খতম অশেষ সওয়াবের। রাসূল (সা.) এরশাদ করেন-‘নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তোমাদের ওপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন এবং আমি মাহে রমজানে মাসব্যাপী আল্লাহর ইবাদতে দাঁড়ানো তোমাদের জন্য সুন্নাত হিসাবে নির্ধারণ করেছি। সুতরাং, যে ব্যক্তি এ মাসে রোজা পালন করবে এবং আল্লাহর সামনে ইমান ও আন্তরিকতাসহ দাঁড়াবে, সে তার গুনাহ থেকে সেদিনের মতোই নিষ্কৃতি লাভ করবে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।’ (নাসায়ি প্রথম খণ্ড, ২৩৯ পৃষ্ঠা)।

বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা (রহ.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন-‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়বে, তার অতীতের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বোখারি, হাদিস নং : ৩৬)।

তারাবি এমন এক সুন্নাত, তা আদায়ের ফলে অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় ২০ রাকাত নামাজ বেশি পড়ার সৌভাগ্য অর্জিত হয়। আর ২০ রাকাত মানে প্রত্যেক তারাবি আদায়কারী বা সিয়াম পালনকারী মাসব্যাপী দৈনিক অতিরিক্ত ৪০টি সিজদা দেওয়ার তাওফিক পাচ্ছেন। যদি পুরো মাসের হিসাব করা হয় এবং মাসকে ৩০ দিন ধরা হয়, তাহলে এক মাসে একজন সিয়ামসাধক অতিরিক্ত এক হাজার ২০০টি সিজদা করার বিশেষ সম্মানে সম্মানিত হলো।

রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা সিজদা করা অবস্থায় যতটা আল্লাহর নিকটবর্তী হয়, অন্য কোনো অবস্থায় এতটা কাছাকাছি হতে পারে না।’ আল্লাহ আরও বলেছেন-‘ওয়াসজুদু ওয়াকতারিব’ (সিজদা কর আরও ঘনিষ্ঠ হও)। (সূরা আলাক-১২)। আল্লাহর নৈকট্যলাভের মাস রমজানে প্রিয় নবি (সা.) আমাদের আল্লাহর আরও ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তারাবির নামাজ দান করেছেন।

আমাদের দেশের প্রতিটি মসজিদেই তারাবির নামাজে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করা হয়। আমরা যারা কুরআন শরিফ পড়তে জানি না বা জানলেও দুনিয়ার ব্যস্ততায় কুরআন তেলাওয়াতের সুযোগ পাই না, তারাবির মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা আমাদের কুরআন তেলাওয়াতের সেই পুণ্যটুকুও দান করেন।

হাদিসে আছে, আল্লাহর হাবিব (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা কোনো কিছুই এত মনোযোগ দিয়ে শুনেন না, যত মনোযোগ দিয়ে শুনেন তার কালামের তেলাওয়াত। তারাবিতে আল্লাহর রহমত বান্দার প্রতি বর্ষিত হয়। আল্লাহ বান্দার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন খুশি হয়ে বান্দাকে নানা পুরস্কারে ভূষিত করেন। তাকে ক্ষমা করে দেন। তিনি নিজেই তার জিম্মাদার হয়ে যান। তাই আমাদের উচিত, প্রতিদিন তারাবির নামাজে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করা। আল্লাহতায়ালা আমাদের তাওফিক দিন! আমিন!