ঢাকা ০৪:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজায় অকাতরে মরছে শিশু, তবু বন্ধ হচ্ছে না ইসরাইলি হামলা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:১৯:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪
  • ৬৪ বার

ভয়ংকর এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ড গাজা। ইসরাইলি হামলায় অকাতরে মরছে মানুষ। নিহতদের বড় একটি অংশই শিশু। ইসরাইলি বাধার কারণে গাজার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ যাচ্ছে না। এতে না খেয়েও মরছে শিশুরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গাজায় এক দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে।

শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপিসহ আরও বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম সেখানকার করুণ দৃশ্য ধারণ করেছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল নিউট্রিশন ক্লাস্টার দুই সপ্তাহ আগে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এতে বলা হয়, গাজার ৯০ শতাংশ ৬ থেকে ১৮ মাস শিশু খাবারের সংকটে রয়েছে। এ ছাড়া গর্ভবতী ও বুকের দুধ খাওয়ানো নারীরা ভুগছেন গুরুতর খাদ্যসংকটে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৫ বছর বয়সি শিশুদের ৯০ শতাংশই কোনো না কোনো ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত।

গাজায় পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তার ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে ইসরাইলকে দুষছেন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো। ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি বলছে, গাজা নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরাইলি বাহিনী। তাই ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা যাতে খাবার ও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম পায় সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব ইসরাইলের। যুদ্ধাঞ্চলে সেখানকার জনগণকে ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে ফেলা এবং খাদ্য সরবরাহে বাধা দেওয়া জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ।

এ নিয়ে ভিন্নকথা বলছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত। তিনিসহ ইসরাইলের শীর্ষ কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনে খাদ্য, জ্বালানি ও পানি সরবরাহ সংঘাতের বাইরে রাখার কথা বলছেন। দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, ‘আমাদের যুদ্ধ হামাসের বিরুদ্ধে, গাজাবাসীর বিরুদ্ধে নয়।’

তবে বাস্তবতা ভিন্ন। জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ত্রাণের বহর গাজার উত্তরাঞ্চলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ইসরাইলে বসানো তল্লাশিচৌকি থেকে তাদের ত্রাণের ১৪টি ট্রাক ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি।

গাজার খাবার সংকট নিয়ে ভয়াবহ চিত্র গত সপ্তাহে সামনে আসে। গাজা শহরে সাহায্য সংস্থার ত্রাণের ট্রাক ঢুকলে ভিড় জমান ফিলিস্তিনিরা। এই ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এতে ১০০ জনের বেশি মারা যায়।

গাজার পরিস্থিতি তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর হিউম্যানিটারিয়ান ইমারজেন্সির পরিচালক ডাবনি ইভান্স এএফপিকে বলেন, বর্তমানে যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, সেখানে পুষ্টিহীনতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজনে বেশ ঘাটতি। তিনি বলেন, তাদের শরীর হাল ছেড়ে দিতে শুরু করেছে। সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে উপযুক্ত যত্ন প্রয়োজন। তাদের যদি শুধু খাবার দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তা হলে তা বিপজ্জনক হতে পারে।

উত্তর গাজার একমাত্র শিশু হাসপাতাল কামাল আদওয়ান হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ইমাদ দারদোনাহ বলেন, ‘যা সরবরাহ আছে তাতে অর্ধেক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া যাবে। আমাদের কাছে শিশুদের দেওয়ার মতো কিছু নেই। আমরা এখন তাদের শুধু স্যালাইন বা চিনির দ্রবণ দিতে পারছি। পুষ্টিহীনতার সমস্যা যদি দীর্ঘায়িত হয় তা হলে মানসিক বিকাশজনিত সমস্যা দেখা দেবে। পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাবে।’

ইউনিসেফের শিশু পুষ্টিবিষয়ক উপদেষ্টা অণু নারায়ণ বলেন, অন্তত কিছু শিশুর ক্ষেত্রে এই সমস্যা তাদের জীবনে দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাব ফেলবে। ফলে দেখা যাবে শিশুর মানসিক বিকাশে দীর্ঘ সময়ে প্রভাব ফেলবে এবং তারা পুরোদমে শারীরিকভাবে সক্ষম হবে না।

কোনো ভূখণ্ডের যদি ২০ শতাংশ মানুষ অতিমাত্রায় খাদ্যসংকট, ৩০ শতাংশ পুষ্টিহীনতা এবং এক হাজার জনে দুজন অনাহারে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়, তাহলে সেই অবস্থাকে ওই অঞ্চলের জন্য দুর্ভিক্ষ বলা হয়। দুই দশকে মাত্র দুইবার আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১১ সালে সোমালিয়ায় এবং ২০১৭ সালে দক্ষিণ সুদানে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। সেই পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে গাজা।

গত অক্টোবরের ৭ তারিখে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস হঠাৎ ইসরাইলে হামলা চালায়। এর পরপরই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ৭ মার্চ এই যুদ্ধের পাঁচ মাস পূর্তি হয়েছে। এ যুদ্ধে ইতিমধ্যে ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে। আর ৮ হাজারের বেশি মানুষ এখনো নিখোঁজ। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনাহার ও পানিশূন্যতায় ১৫টি শিশু মারা গেছে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গাজায় অকাতরে মরছে শিশু, তবু বন্ধ হচ্ছে না ইসরাইলি হামলা

আপডেট টাইম : ০৫:১৯:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

ভয়ংকর এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ড গাজা। ইসরাইলি হামলায় অকাতরে মরছে মানুষ। নিহতদের বড় একটি অংশই শিশু। ইসরাইলি বাধার কারণে গাজার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ যাচ্ছে না। এতে না খেয়েও মরছে শিশুরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গাজায় এক দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে।

শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপিসহ আরও বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম সেখানকার করুণ দৃশ্য ধারণ করেছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল নিউট্রিশন ক্লাস্টার দুই সপ্তাহ আগে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

এতে বলা হয়, গাজার ৯০ শতাংশ ৬ থেকে ১৮ মাস শিশু খাবারের সংকটে রয়েছে। এ ছাড়া গর্ভবতী ও বুকের দুধ খাওয়ানো নারীরা ভুগছেন গুরুতর খাদ্যসংকটে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৫ বছর বয়সি শিশুদের ৯০ শতাংশই কোনো না কোনো ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত।

গাজায় পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তার ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে ইসরাইলকে দুষছেন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো। ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি বলছে, গাজা নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরাইলি বাহিনী। তাই ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা যাতে খাবার ও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম পায় সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব ইসরাইলের। যুদ্ধাঞ্চলে সেখানকার জনগণকে ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে ফেলা এবং খাদ্য সরবরাহে বাধা দেওয়া জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ।

এ নিয়ে ভিন্নকথা বলছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত। তিনিসহ ইসরাইলের শীর্ষ কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনে খাদ্য, জ্বালানি ও পানি সরবরাহ সংঘাতের বাইরে রাখার কথা বলছেন। দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, ‘আমাদের যুদ্ধ হামাসের বিরুদ্ধে, গাজাবাসীর বিরুদ্ধে নয়।’

তবে বাস্তবতা ভিন্ন। জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের ত্রাণের বহর গাজার উত্তরাঞ্চলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ইসরাইলে বসানো তল্লাশিচৌকি থেকে তাদের ত্রাণের ১৪টি ট্রাক ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি।

গাজার খাবার সংকট নিয়ে ভয়াবহ চিত্র গত সপ্তাহে সামনে আসে। গাজা শহরে সাহায্য সংস্থার ত্রাণের ট্রাক ঢুকলে ভিড় জমান ফিলিস্তিনিরা। এই ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এতে ১০০ জনের বেশি মারা যায়।

গাজার পরিস্থিতি তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর হিউম্যানিটারিয়ান ইমারজেন্সির পরিচালক ডাবনি ইভান্স এএফপিকে বলেন, বর্তমানে যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, সেখানে পুষ্টিহীনতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজনে বেশ ঘাটতি। তিনি বলেন, তাদের শরীর হাল ছেড়ে দিতে শুরু করেছে। সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে উপযুক্ত যত্ন প্রয়োজন। তাদের যদি শুধু খাবার দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় তা হলে তা বিপজ্জনক হতে পারে।

উত্তর গাজার একমাত্র শিশু হাসপাতাল কামাল আদওয়ান হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ইমাদ দারদোনাহ বলেন, ‘যা সরবরাহ আছে তাতে অর্ধেক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া যাবে। আমাদের কাছে শিশুদের দেওয়ার মতো কিছু নেই। আমরা এখন তাদের শুধু স্যালাইন বা চিনির দ্রবণ দিতে পারছি। পুষ্টিহীনতার সমস্যা যদি দীর্ঘায়িত হয় তা হলে মানসিক বিকাশজনিত সমস্যা দেখা দেবে। পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাবে।’

ইউনিসেফের শিশু পুষ্টিবিষয়ক উপদেষ্টা অণু নারায়ণ বলেন, অন্তত কিছু শিশুর ক্ষেত্রে এই সমস্যা তাদের জীবনে দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাব ফেলবে। ফলে দেখা যাবে শিশুর মানসিক বিকাশে দীর্ঘ সময়ে প্রভাব ফেলবে এবং তারা পুরোদমে শারীরিকভাবে সক্ষম হবে না।

কোনো ভূখণ্ডের যদি ২০ শতাংশ মানুষ অতিমাত্রায় খাদ্যসংকট, ৩০ শতাংশ পুষ্টিহীনতা এবং এক হাজার জনে দুজন অনাহারে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়, তাহলে সেই অবস্থাকে ওই অঞ্চলের জন্য দুর্ভিক্ষ বলা হয়। দুই দশকে মাত্র দুইবার আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১১ সালে সোমালিয়ায় এবং ২০১৭ সালে দক্ষিণ সুদানে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। সেই পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে গাজা।

গত অক্টোবরের ৭ তারিখে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস হঠাৎ ইসরাইলে হামলা চালায়। এর পরপরই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ৭ মার্চ এই যুদ্ধের পাঁচ মাস পূর্তি হয়েছে। এ যুদ্ধে ইতিমধ্যে ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে। আর ৮ হাজারের বেশি মানুষ এখনো নিখোঁজ। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনাহার ও পানিশূন্যতায় ১৫টি শিশু মারা গেছে।