আবুল কাশেম রুমন,সিলেটঃ সিলেট নগরীতে গরমের আবাস বাড়তেই বেড়েছে মশার উপদ্রব। বেলা ৪টার পর থেকে বাড়তে থাকে মশার যন্ত্রণা। কয়েল, এরোসল, মশা নিয়ন্ত্রণের ওষুধ কোনো কিছুতেই দমন করা যাচ্ছেনা মশার আক্রমণ। সন্ধ্যার পর রাত যত বাড়ে, তখন তীব্র থেকে তীব্রতর হয় মশার জ্বালা। মশার এই আগ্রাসী উৎপাতে বিব্রত নগর কর্তৃপক্ষও। তারা বলছে,পুরো নগরে এক সাথে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান না চালালে দীর্ঘস্থায়ী সুফল মিলবে না।
তবে নগরবাসীর অভিযোগের তীর ছুঁড়ছেন সিসিকের কর্তৃপক্ষের দিকে। সাধারণ মানুষ অভিযোগ করেন সিসিক কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে বেশির ভাগ ঔষুধ বিতরণ করে সরকারি অফিস আদালতে। তবে পাড়া মহল্লায় খুব কম সিসিক ঔষুধ বিতরণ করে ।
মার্চের মধ্যে মশক নিধন অভিযান শুরু করতে না পারলে এপ্রিলে বৃষ্টি শুরু হলে মশা নিয়ন্ত্রণ সাধ্যের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে সিসিক। তাই বিষয়টি নিয়ে তারা বিস্তর একটি কর্ম পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে সেই পরিকল্পনা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এদিকে, নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে নগরীতে মশার উপদ্রব চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মশার যন্ত্রণায় অনেকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। সন্ধ্যার দিকে বাচ্চারা পড়তে বসতে পারছেনা। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, শীতের শেষে মশার উপদ্রব মাথায় রেখে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কোথাও তাদের এ ব্যাপারে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
এদিকে সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা বছরে ৪টি ধাপে পুরো নগরীতে মশক নির্ধন কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল সঙ্কটের কারণে তা ঠিক ভাবে করা সম্ভব হয়না। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের পর্যাপ্ত জনবল নেই। এরই মধ্যে বেড়েছে আরো ১৫টি ওয়ার্ড। ফলে মশকনিধনে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় নিয়ম মাফিক কীটনাশক প্রয়োগ না করায় মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মশা নিয়ন্ত্রণ করতে একটি এলাকায় ১৫ দিন পর একবার করে স্প্রে এবং এর ১৫ দিন পর ফগার মেশিন ব্যবহার করতে হয়। এভাবে ৪ থেকে ৬ বার স্প্রে করতে পারলে দীর্ঘ মেয়াদী ফল পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রয়োজন মাফিক জনবল না থাকায় সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছেনা। স্প্রে করার ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ফগিং করতে হচ্ছে। ফলে অভিযানের সুফল মিলছেনা।
এদিকে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, যে কোন কারণে যে কোন মওসুমে মশার বিস্তার বাড়লেও স্প্রে দিলে কমে যাওয়ার কথা। তবে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে এর বিস্তার বেড়েছে। এক্ষেত্রে সিসিকের ব্যর্থতার পাশাপাশি মানুষের অসচেতনতাকেও দায়ী করছেন অনেকে। নগরীর প্রতিটি এলাকায় ময়লা আবর্জনাবাহী গাড়ি থাকার পরও কিছু মানুষ ড্রেনে ময়লা আবর্জনা ফেলেন। এতে মশার প্রজনন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে নগর কর্তৃপক্ষ ছাড়াও নাগরিকদেরও দায়িত্ব আছে বলে তারা মনে করেন।