ঢাকা ১০:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত ভুল অস্ত্রোপচার, যা ঘটেছিল প্রিয়াঙ্কা সঙ্গে সচিবালয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফের তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন সাবেক সচিব ইসমাইল রিমান্ডে অবশেষে বিল পাস করে ‘শাটডাউন’ এড়াল যুক্তরাষ্ট্র চাঁদাবাজদের ধরতে অভিযান শুরু হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার নির্বাচনের পর নিজের নিয়মিত কাজে ফিরে যাবেন ড. ইউনূস ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত ১৬ জুলাই আন্দোলন বিগত বছরগুলোর অনিয়মের সমষ্টি: ফারুকী তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ‘সড়কে নৈরাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব জড়িত

বিষবৃক্ষ তামাক ছেড়ে কৃষকরা ঝুঁকছেন ফল-সবজি চাষে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৩:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৪
  • ৯০ বার

একযোগে তামাক চাষ ছেড়ে মিশ্রফলের বাগান করছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের কেউপুর গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম, আবু সাঈদ ও মজিবুল হক। তিনজনই এলাকার পরিচিত তামাক চাষি।

তাদের যৌথ বাগানে শোভা পাচ্ছে উচ্চফলনশীল জাতের ভারত সুন্দরী, বল সুন্দরীসহ নানা জাতের কুল গাছ। ভরা মৌসুমে ফলের ভারে নুয়ে পড়ছে গাছগুলো। কুল গাছের ফাঁকে ফাঁকে শুভ্র ফুলের পেয়ারা গাছও উঁকি দিচ্ছে। কিছু কিছু গাছে এরই মধ্যে পেয়ারা ধরতে শুরু করেছে। শুধু এ তিনজনই নয়, জমি এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক তামাক ছেড়ে ফল, বাগান ও সবজি চাষে ঝুঁকছেন উপজেলার অনেক কৃষকই।

তামাক প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত এ উপজেলার বারুইপাড়া, মালিহাদসহ কয়েকটি ইউনিয়নের জমিতে শোভা ছড়াচ্ছে বাহারি ফলের বাগান ও সবজি। ভালো দামে সবজি বিক্রি করে কৃষকদের সংসারে সুদিন ফিরছে। এ এলাকায় তামাক চাষ বন্ধে কৃষকদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ, কৃষি উপকরণ সহায়তাসহ নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবি মৌসুমে উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে বহুবছর ধরেই তামাক চাষ হয়ে আসছে। তামাক ক্রয় কোম্পানির ঋণ সহায়তাসহ নানা সুযোগ-সুবিধায় প্রলুব্ধ হয়ে কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরেই তামাক চাষ করে আসছিল। এছাড়া উৎপাদিত তামাক সহজেই বিক্রি করে টাকা পাওয়ার কারণেও কৃষকরা আগ্রহী ছিল। তবে গেল কয়েক বছর ধরে পরিস্থিতি একটু একটু করে পাল্টাতে শুরু করেছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহযোগিতায় ‘দিশা’ নামে একটি স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা তামাক চাষ বন্ধে কাজ করছে। তারা তামাক চাষের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরে কৃষকদের সচেতন করছে। পাশাপাশি তামাকের মৌসুমে জমিতে অন্য ফসল চাষে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। উচ্চফলনশীল জাতের বীজ ও সারসহ কৃষি উপকরণ দিয়ে সাহায্য করছে।

ফলে উপজেলার দুটি ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার ২০০ কৃষক গেল কয়েক বছর ধরে তামাকের বদলে ফল-সবজিসহ অন্যান্য ফসলের চাষ করছেন। তামাকের চেয়ে এসব ফসল আবাদে লাভ বেশি হওয়ায় অন্য কৃষকরাও ঝুঁকছেন।

কৃষক সাইদুল ইসলাম, আবু সাঈদ ও মজিবুল হক জানান, তারা তিনজন মিলে সাত বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়ে একসঙ্গে কুল ও পেয়ারা বাগান করেছেন। মাত্র ৮ মাস আগে রোপণ করা কুলগাছ থেকে ফল পেতে শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছেন তারা। আরও সাড়ে ৩-৪ লাখ টাকার বিক্রি করতে পারবেন।

অপর কৃষক মজনু মল্লিক, ফারুক হোসেন ও বাহার আলী তামাকের জমিতে চাষ করেছেন ফুলকপি, লাউসহ বিভিন্ন সব্জি। তারা জানান, তামাক চাষে কোম্পানির কাছ থেকে কিছু সাহায্য পাওয়া যায়। তামাক সহজে বিক্রি করে টাকাও পাওয়া যায়। কিন্তু এক জমিতে বারবার তামাক চাষ করলে মাটির ঊর্বরা শক্তি কমে যায়। এছাড়া তামাক চাষে বাড়ির শিশু থেকে থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষকে ভীষণ পরিশ্রম করতে হয়। বর্তমানে বাজারে অনেক উচ্চ ফলনশীল জাতের সব্জি বীজ এসেছে। তাই তামাকের বদলে সবজি চাষ করছেন। একদিকে সবজি চাষে খরচ ও পরিশ্রম দুই-ই কম, অন্যদিকে দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। এতে তারা সবজি চাষ করে তামাকের চেয়ে লাভবান হচ্ছেন।

দিশার প্রকল্প সমন্বয়কারী জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এই এলাকা থেকে তামাককে বিতাড়িত করে কৃষিজমি বাঁচাতে চাই। তাই পিকেএসএফ’র সহযোগিতায় আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা আধুনিক চাষাবাদের কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করার লক্ষ্যে কাজ করছে। কৃষকদের তামাকের বদলে উচ্চ ফলনশীল সবজি চাষে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নানা সহায়তা দিচ্ছে।
পিকেএসএফ’র উপ-ব্যবস্থাপক আব্দুল হাকিম প্রকল্প এলাকা ঘুরে বলেন, ‘কুষ্টিয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলায় তামাকের চাষ হয়। এসব এলাকার কৃষিজমি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে বর্তমান সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কুষ্টিয়াসহ কয়েকটি জেলায় তামাক বিরোধী প্রচারসহ কৃষকদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছি। যাতে কৃষকরা তামাক চাষ থেকে সরে আসেন।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

বিষবৃক্ষ তামাক ছেড়ে কৃষকরা ঝুঁকছেন ফল-সবজি চাষে

আপডেট টাইম : ১০:৫৩:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৪

একযোগে তামাক চাষ ছেড়ে মিশ্রফলের বাগান করছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের কেউপুর গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম, আবু সাঈদ ও মজিবুল হক। তিনজনই এলাকার পরিচিত তামাক চাষি।

তাদের যৌথ বাগানে শোভা পাচ্ছে উচ্চফলনশীল জাতের ভারত সুন্দরী, বল সুন্দরীসহ নানা জাতের কুল গাছ। ভরা মৌসুমে ফলের ভারে নুয়ে পড়ছে গাছগুলো। কুল গাছের ফাঁকে ফাঁকে শুভ্র ফুলের পেয়ারা গাছও উঁকি দিচ্ছে। কিছু কিছু গাছে এরই মধ্যে পেয়ারা ধরতে শুরু করেছে। শুধু এ তিনজনই নয়, জমি এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক তামাক ছেড়ে ফল, বাগান ও সবজি চাষে ঝুঁকছেন উপজেলার অনেক কৃষকই।

তামাক প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত এ উপজেলার বারুইপাড়া, মালিহাদসহ কয়েকটি ইউনিয়নের জমিতে শোভা ছড়াচ্ছে বাহারি ফলের বাগান ও সবজি। ভালো দামে সবজি বিক্রি করে কৃষকদের সংসারে সুদিন ফিরছে। এ এলাকায় তামাক চাষ বন্ধে কৃষকদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ, কৃষি উপকরণ সহায়তাসহ নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবি মৌসুমে উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে বহুবছর ধরেই তামাক চাষ হয়ে আসছে। তামাক ক্রয় কোম্পানির ঋণ সহায়তাসহ নানা সুযোগ-সুবিধায় প্রলুব্ধ হয়ে কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরেই তামাক চাষ করে আসছিল। এছাড়া উৎপাদিত তামাক সহজেই বিক্রি করে টাকা পাওয়ার কারণেও কৃষকরা আগ্রহী ছিল। তবে গেল কয়েক বছর ধরে পরিস্থিতি একটু একটু করে পাল্টাতে শুরু করেছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহযোগিতায় ‘দিশা’ নামে একটি স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা তামাক চাষ বন্ধে কাজ করছে। তারা তামাক চাষের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরে কৃষকদের সচেতন করছে। পাশাপাশি তামাকের মৌসুমে জমিতে অন্য ফসল চাষে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। উচ্চফলনশীল জাতের বীজ ও সারসহ কৃষি উপকরণ দিয়ে সাহায্য করছে।

ফলে উপজেলার দুটি ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার ২০০ কৃষক গেল কয়েক বছর ধরে তামাকের বদলে ফল-সবজিসহ অন্যান্য ফসলের চাষ করছেন। তামাকের চেয়ে এসব ফসল আবাদে লাভ বেশি হওয়ায় অন্য কৃষকরাও ঝুঁকছেন।

কৃষক সাইদুল ইসলাম, আবু সাঈদ ও মজিবুল হক জানান, তারা তিনজন মিলে সাত বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়ে একসঙ্গে কুল ও পেয়ারা বাগান করেছেন। মাত্র ৮ মাস আগে রোপণ করা কুলগাছ থেকে ফল পেতে শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছেন তারা। আরও সাড়ে ৩-৪ লাখ টাকার বিক্রি করতে পারবেন।

অপর কৃষক মজনু মল্লিক, ফারুক হোসেন ও বাহার আলী তামাকের জমিতে চাষ করেছেন ফুলকপি, লাউসহ বিভিন্ন সব্জি। তারা জানান, তামাক চাষে কোম্পানির কাছ থেকে কিছু সাহায্য পাওয়া যায়। তামাক সহজে বিক্রি করে টাকাও পাওয়া যায়। কিন্তু এক জমিতে বারবার তামাক চাষ করলে মাটির ঊর্বরা শক্তি কমে যায়। এছাড়া তামাক চাষে বাড়ির শিশু থেকে থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষকে ভীষণ পরিশ্রম করতে হয়। বর্তমানে বাজারে অনেক উচ্চ ফলনশীল জাতের সব্জি বীজ এসেছে। তাই তামাকের বদলে সবজি চাষ করছেন। একদিকে সবজি চাষে খরচ ও পরিশ্রম দুই-ই কম, অন্যদিকে দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো। এতে তারা সবজি চাষ করে তামাকের চেয়ে লাভবান হচ্ছেন।

দিশার প্রকল্প সমন্বয়কারী জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এই এলাকা থেকে তামাককে বিতাড়িত করে কৃষিজমি বাঁচাতে চাই। তাই পিকেএসএফ’র সহযোগিতায় আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা আধুনিক চাষাবাদের কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করার লক্ষ্যে কাজ করছে। কৃষকদের তামাকের বদলে উচ্চ ফলনশীল সবজি চাষে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নানা সহায়তা দিচ্ছে।
পিকেএসএফ’র উপ-ব্যবস্থাপক আব্দুল হাকিম প্রকল্প এলাকা ঘুরে বলেন, ‘কুষ্টিয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলায় তামাকের চাষ হয়। এসব এলাকার কৃষিজমি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণে বর্তমান সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে কুষ্টিয়াসহ কয়েকটি জেলায় তামাক বিরোধী প্রচারসহ কৃষকদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করছি। যাতে কৃষকরা তামাক চাষ থেকে সরে আসেন।’