মিনিকেট চালের খুচরা মূল্য, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬৫ টাকা, এখন তা বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। প্রচুর সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছর রেকর্ড পরিমাণ আমন ধানের উৎপাদন হয়েছে। শুধু সিন্ডিকেটের কারণেই চালের দাম বেড়েছে।
আজ শনিবার রাজধানীর মহাখালী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিনিখত মিনিকেট চাল ৭০-৮০ টাকা, ব্রি চালের দাম ২৮-৫৫ টাকা, নাজিরশাইল চালের দাম ৭০-৮০, দেশি মোটা চাল ৫০ ও পোলাওয়ের চালের দাম ১৩০-১৩৫ টাকা। এ ছাড়া এক বস্তা চালের দাম বেড়েছে আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা।স
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নানা অজুহাতে মিলাররা অধিক দামে চাল বিক্রি করায় পাইকারিপর্যায়ে বেড়েছে চালের দাম, যার প্রভাব পড়ছে খুচরো বাজারেও। অনেকেই আবার ইঙ্গিত করছেন নির্বাচনের প্রভাবকেও।
দেশে মোট চাল উৎপাদনের ৪০ শতাংশ হয় আমন মৌসুমে। কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ৭১ লাখ ৭৮ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। মোট ৫৮ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর ধানের আবাদ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাটা হয়েছে ৫৭ লাখ ২৭ হাজার হেক্টর বা সাড়ে ৯৭ শতাংশ জমির ধান। এখান থেকে চাল উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ ৯৩ হাজার টন। গড় ফলন হয়েছে হেক্টরপ্রতি ২ দশমিক ৯৮ টন। বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির ধান।
পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও অতিরিক্ত মুনাফার আশায় চাল মজুত করে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। মহাখালী কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী জনি বলেন, সব ধরনের চালের দাম ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। যা গত সপ্তাহেও কম ছিল। পাইকাররা বলছেন মিলার রেট বেশি, তাই দাম বেড়েছে। মূলত সিন্ডিকেটের ফলেই দাম বেড়ে গেছে।
ইয়াসিন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শাকিল আহমেদ বলেন, বাজারে চালের সংকট নেই, সরবরাহও ঠিক আছে। তবুও চালের দাম বেড়ে গেছে। আগামী দুই তিন মাসেও দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
নির্বাচনের প্রভাবে দাম বেড়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সুবিধা পেলে সবাই ব্যবসা করতে চায়।
সেলিম রাইচ ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারীর আবদুল কুদ্দুস বলেন, চালের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও সিন্ডিকেটের কারণে দাম বেড়ে গেছে। মিলাররা নানা কারণ দেখায়, কিন্তু মূলত দাম ইচ্ছে করে বাড়িয়েছে। আমাদেরও কিছু করার নেই। সরকার যদি সঠিকভাবে মনিটরিং না করে তাহলে এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমবে না।
এদিকে চালের বাজার বিভিন্ন সময় অস্থির হয়ে উঠলেও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে বরাবরই হিমশিম খেতে হয়েছে সরকারকে। তাই স্বল্প আয়ের মানুষকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে চাল বিতরণ করছে সরকার। চলতি অর্থবছরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এসব কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির কার্যক্রমও। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রথমবারের মতো সরকারের এই সংস্থা তাদের পণ্যে চাল যুক্ত করেছে, যা অনেক কম মূল্যে পাঁচ্ছেন ক্রেতারা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে চাল বিতরণ হয়েছে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত চাল আমদানি করেনি সরকার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে প্রায় ১০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল আমদানি হয়। গত নভেম্বরে মোটা ও মাঝারি আকারের চালের দাম কিছুটা বাড়লেও তা ডিসেম্বরে কমে আসে। তবে মাস না যেতেই আবার বাড়তে শুরু করেছে দাম। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ টন চাল মজুত রয়েছে।