হাওর বার্তা ডেস্কঃ গত বছর ২০২২ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন শিক্ষার্থী। এ বছর ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। গতবছরের তুলনায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন প্রায় অর্ধেক। তারপরও পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। শুধু শিক্ষার্থীরাই নন চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরাও।
জিপিএ-৫ পেয়েও কেন তারা ভর্তি নিয়ে চিন্তিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীরা জানান, যত শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে, দেশের উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠগুলোতে আসন সংখ্যা তার চেয়ে কম। উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফল করেও তাই পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে কঠিন লড়াই করতে হবে তাদের।
ভর্তি যুদ্ধে টিকলেই কেবল কপালের ভাঁজ কমবে। স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলা যাবে। ভাল ফলের জন্য তারা যে পরিশ্রম, পড়াশোনা করেছে। ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে তারচেয়ে অনেকগুণ বেশি পরিশ্রম করতে হবে।
শিক্ষাথীরা বলছেন, করোনা মহামারি, ডেঙ্গু ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ নানা কারণে এ বছর নিয়মিত লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটেছে। তাই এবছর জিপিএ-৫ অর্জন করা অনেকটা কষ্টসাধ্য ছিল। এরপরও কাঙ্খিত ফল পেয়ে যদি ভালো বিদ্যাপীঠে ভর্তির সুযোগ না পান, তাহলে তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে।
রাজধানীর উত্তরা রাজউক কলেজ থেকে এবার এইচএসসিতে আর্টসে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন নুশরাত হাসান টিকলি। আরটিভি নিউজকে তিনি বলেন, ভাল ফল করা যতটা কঠিন, তারচেয়ে অনেক বেশি কঠিন পছন্দের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি সুযোগ পাওয়া। অনেকে এসএসসি ও এইচএসসি দুটোতেই জিপিএ-৫ পেয়েও কাঙ্খিত মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেন না। আবার অনেকে ভর্তি পরীক্ষায় ভাল করার কারণে তুলনামূলক কম রেজাল্ট নিয়েও পছন্দের প্রতিষ্ঠানে চান্স পেয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, সামনে সেই ভর্তিযুদ্ধ। বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি ভাল করবো। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
ভিকারুন নিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসিতে বিজ্ঞানে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন মাহিকা। আরটিভি নিউজকে তিনি বলেন, ভাল রেজাল্টতো হলো। এবার মেডিকেল কিংবা বুয়েটে চান্স নিয়ে কথা। ভালভাবে চান্স পেলেতো আলহামদুলিল্লাহ। হবে কি হবে না। এই নিয়েইতো চিন্তা। তবে হ্যা, এবার ভর্তিযুদ্ধটা কিন্তু আরও কঠিন হবে। যেন ভাল করতে পারি সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।
একই কথা বলছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. হেমায়েত হোসেন বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য পছন্দের প্রতিষ্ঠানে আসনসংখ্যা খুবই সীমিত। এ অবস্থায় কঠিন ভর্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাদের ‘সোনার হরিণ’ নামের আসনটি অর্জন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে কঠিন ভর্তিযুদ্ধে তাদের টিকতে হবে। যেহেতু আসন সংখ্যা সীমিত। তাই প্রস্তুতিটা হতে হবে শতভাগ। এজন্য প্রচুর পড়তে হবে। ভাল ফল অর্জন সহজ, কিন্তু ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া বা চান্স পাওয়া তারচেয়ে শতগুণ কঠিন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, এবার পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিষয়ে ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ৭০ শতাংশ প্রথম পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন। বাকি ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী দ্বিতীয় পছন্দের প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তির শর্ত অনুযায়ী সাধারণত জিপিএ ৩ দশমিক ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা আবেদনের সুযোগ পান। এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ৯২ হাজার ৫৯৫ জন ছাড়াও জিপিএ-৫ এর নিচে (৩.৫ পর্যন্ত) শিক্ষার্থী আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৭৮৪ জন। এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশ করেছেন ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন।
ইউজিসির তথ্য অনুসারে, দেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারি-বেসরকারি মিলে আসন রয়েছে ১৩ লাখের মতো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোয় আসনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। বাকি আসন বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এর মধ্যে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সব মিলিয়ে আসন রয়েছে ৭০ হাজারের মতো। মেডিকেল ও ডেন্টালে আসন আছে প্রায় ১৩ হাজার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া ১০২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে সোয়া ২ লাখ। অপরদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কলেজে ডিগ্রি পাশ ও স্নাতকে ১০ লাখের বেশি আসন আছে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা নির্ধারিত নেই।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন যতই থাকুক, অর্ধশতাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৫-৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৭টি সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ, কয়েকটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেই ভর্তি হতে চান শিক্ষার্থীরা। মেডিকেল বুয়েটের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই থাকে সবার পছন্দের শীর্ষে।