সুরা মুখস্ত বলতে পারলে মুক্তি, নইলে মরবে

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মিদের প্রতি বন্দুক উঁচিয়ে হামলাকারীরা বলেন, এখানে কে কে মুসলমান। নামে মুসলিম হলে হবে না। সুরা মুখস্ত বলতে পারলে মুক্তি, নইলে মরবে।

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় শুক্রবার রাতে হামলাকারীদের সামনে যারা সুরা মুখস্ত বলতে পেরেছেন তাদের ছেড়ে দেয় বলে জানিয়েছে জিম্মিদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া একাধিক ব্যক্তি।

হামলার কিছুক্ষণ আগে শুক্রবার রাতে গুলশানের বাসিন্দা হাসনাত করিম নামের এক ব্যবসায়ী তার স্ত্রী শারমিন করিম, ১৩ বছর বয়সী মেয়ে সাফা এবং ৮ বছরের ছেলে রায়ানকে নিয়ে হলি আর্টিজান ক্যাফেতে যান। উদ্দেশ্য ছিল মেয়ে সাফার জন্মদিন উদযাপন।

পূর্বপশ্চিমকে তিনি জানান, রেস্টুরেন্টে ঢোকার ১০/১২ মিনিট পরেই বাইরে থেকে গোলাগুলির আওয়াজ আসে। এতে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ওই সময় দেশি-বিদেশি মিলিয়ে ৪০ জনের মতো গ্রাহক অবস্থান করছিল। বাইরে গোলাগোলির আওয়াজের মধ্যেই অস্ত্র হাতে প্রথমে তিনজন ও পরে আরো তিনজন বন্দুকধারী রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়ে। তারা অস্ত্র তাক করে সবাইকে শান্ত হয়ে চুপচাপ যার যার জায়গায় বসে থাকার আদেশ দেয়।

হাসনাত করিম বলেন, বন্দুকধারীরা বাংলাদেশিদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেনি। বরং তারা সব বাংলাদেশিকে রাতের খাবার সরবরাহ করে। তারা জিম্মিদের ধর্ম সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চেয়েছিল। তাদের কাছে যারা মুখস্ত বলেছে, তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকিদের ওপর অত্যাচার চালানো হয়।

তিনি জানান বন্দুকধারীদের একজন জিম্মিদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলেন, মুসলিম যারা আছো তাদের সুরা মুখস্ত বলতে হবে, নইলে মরবে।

শুক্রবার রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় কয়েকজন বন্দুকধারী ঢুকে ​দেশিও বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে। ১২ ঘন্টার এই জিম্মি ঘটনায় ২০ বিদেশি, ছয় সন্ত্রাসী ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে এক জাপানি এবং দুইজন শ্রীলঙ্কার নাগরিক রয়েছে। ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন এবং ডিবির এসি রবিউল ইসলাম। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের হামলা চালিয়ে আইএস মানুষকে জিম্মি করলেও বাংলাদেশে এটাই প্রথম।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর