মদন (নেত্রকোণা) প্রতিনিধিঃ নেত্রকোণা মদন উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে রমরমা নিয়োগ বাণিজ্য। বর্তমানে এ যেনো এক ওপেন-সিক্রেট বিষয়। নিয়োগ বাণিজ্যকে আড়াল করতে নিয়োগ পরীক্ষা নিজ প্রতিষ্ঠানে বা মদন উপজেলায় না নিয়ে, নেওয়া হয় পার্শ্ববর্তী উপজেলা কেন্দুয়া, মোহনগঞ্জ, আটপাড়া অথবা জেলা সদরে।
উপজেলার কদমশ্রী দাখিল মাদ্রাসায় গত ২৭ জানুয়ারী ৩ টি পদের বিপরীতে কয়েক লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যের শিকার সুনিল সহ অন্যান্য ভুক্তভোগীরা মাদ্রাসা ও প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও পাচ্ছে না ন্যায়বিচার। সুনিল, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাঈদুল ইসলাম খান মামুনের দারস্থ হলে, তিনি সর্বাধিক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, আদর্শ কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজেও কম্পিউটার ল্যাব-সহকারী, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া এই ত ৩ পদের জন্য গোপনে জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা ইতোমধ্যে নেয়া হয়ে গেছে। এ সবই চলছে এক বিশেষ সিস্টেমের ভিতরে। এখন শুধু ফরমালিটি বাকি।
এই সিস্টেম কেরামতি শুরু হয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল বারী মদন উপজেলায় যোগদানের পর থেকে। এমন আরো এক অভিযোগ উঠেছে উপজেলার গোবিন্দশ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কমিটির বিরুদ্ধে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের অফিস সহায়ক পদের নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয় নেত্রকোণা জেলা সদরে।
এ বিষয়ে গোবিন্দশ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক প্রতিনিধি মোঃ এনামুল হক জানান, আমি নিয়োগ কমিটির সদস্য অথচ আমাকে না জানিয়ে ৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষকের ভাতিজাকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দিতে নির্বাচিত করেছে। প্রধান শিক্ষকের ব্যাক্তিগত ব্যাংক একাউন্ট চেক করলেই তার সত্যতা মিলবে। প্রথমে তার একাউন্টে টাকা জমা রাখা হয়, পরে উক্ত টাকা উত্তোলন করে কয়েকজনের মাঝে বন্টন করেন প্রধান শিক্ষক।
তিনি আরো জানান, বেশ কিছু দিন আগে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক উক্ত পদে নিয়োগ দিবে বলে, তোফাজ্জল নামের এক ব্যাক্তির কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা এবং নজরুল নামের আরেক ব্যাক্তির কাছ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নেয়। অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিয়োগ দিতে রাজি না হওয়ায়, সিনিয়র শিক্ষক প্রতিনিধি মোঃ এমদাদুল হক সহ আমরা ২ জনকে না জানিয়েই নিয়োগ কার্যক্রম সমাপ্তি করে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়কে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।
ভুক্তভোগীদের একজন নজরুল মিয়া জানান, আমার ছেলেকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে, গতবছর ভাদ্র মাসে স্কুলের সভাপতি নিমন মিয়া আমার কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা নেয় এবং স্কুলের নাইটগার্ড মিলন মিয়া নিয়েছে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু তারা আমার ছেলেকে চাকরি দেয়নি। তারা ৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে হেডমাস্টারের ভাতিজাকে চাকরি দিয়ে দিচ্ছে। আমি ইউএনও স্যারকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছি।
প্রধান শিক্ষক মোঃ আজিজুর রহমান আকন্দ জানান, অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের জন্য কারোর কাছে থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হলেও এখনো কাউকে নির্বাচিত করা হয়নি। বিদ্যালয় ভবনের একটি কক্ষ বাসভবন হিসেবে ব্যবহার করছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।
তিনি আরো জানান, ট্রলার ঘাটের ইজারার টাকা সভাপতি ও কমিটির অন্যান্যরা জানে, আমি কিছুই জানি না। আর কেউ যদি ভাউচার বাণিজ্য করে, তা তো কেউ স্বীকার করে না। আমি যে ভাউচার বাণিজ্য করি, অভিযোগকারীরা তা প্রমাণ করুক।
প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জানান, তারা যে অভিযোগ করছে তা সম্পুর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট। সকলের সম্মতি ক্রমে আলোচনা সাপেক্ষেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। তিনি ৪ লক্ষ টাকা ঘোষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল বারী জানান, গত বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) অফিস সহায়ক পদে লিখিত পরিক্ষায় ৩ জন অংশগ্রহণ করেছিলো। পরীক্ষা কেন্দ্র ছিলো নেত্রকোণা আন্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। উক্ত নিয়োগের বিপরীতে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঘোষ গ্রহণের অভিযোগ তুলে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন একই প্রতিষ্ঠানের ২ সিনিয়র শিক্ষক প্রতিনিধি। তাই নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।