জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহবান

গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলায় বহু হতাহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। পৃথক বিবৃতিতে তারা এ সংকটময় পরিস্থিতিতে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।

খালেদা জিয়া: বন্দুকধারী সন্ত্রাসীদের কয়েকজন বিদেশী নাগরিকসহ অন্তত: ২০ জনকে জিম্মি করে দেশের ইতিহাসে রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি করার নজীরবিহীন ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দুষ্কৃতকারীদের কর্তৃক সংঘটিত প্রাণবিনাশী ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছি। অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ফলে সৃষ্ট অগণতান্ত্রিক সংস্কৃতি মিলে মিশে দেশে এমন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে যা পৈশাচিক স্বৈরতন্ত্রে অধ:পতিত হয়েছে। যার বিকৃত প্রতিক্রিয়া সারাদেশে ফুটে উঠতে শুরু করেছে। গত রাতের দুষ্কৃতকারীদের নির্মম রক্তাক্ত অভ্যূত্থান দেশে বিরাজমান দু:শাসনেরই বহি:প্রকাশ। আমরা বারবার উগ্রবাদীদের অমানবিক রক্তঝরা অশুভ পরিকল্পনা মোকাবেলা করার জন্য দলমত নির্বিশেষে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার আমাদের সেই আহবানকে উপেক্ষা করে বরং বিএনপিসহ বিরোধী দলের প্রতি বিষোদগারেই ব্যস্ত থেকেছে। প্রকৃত জঙ্গী দমনে কোন ধরনের ইতিবাচক তৎপরতা দেখানো তো দুরে থাক, বরং বিএনপিকে অভিযুক্ত করতে ব্লেমগেম খেলতে গিয়ে সরকার জঙ্গীদের স্বাস্থ্যবর্ধন করেছে।

তিনি বলেন, সরকারের অভিযানে গ্রেফতার ও বন্দুকযুদ্ধের নামে মানুষ হত্যা থেমে থাকেনি। সরকার প্রধান ও সরকারের লোকজন জঙ্গীবাদের দমনের নামে বেআইনী বিচারবহির্ভূত হত্যাকে জায়েজ করে বক্তব্য রেখে যাচ্ছে। এতো কিছুর পরও জঙ্গীদের বিবেকবর্জিত অপতৎপরতা থামাতে পারেনি সরকার। আজ ঝিনাইদহে শ্যামানন্দ দাস নামে একজন সেবায়েতকে কুপিয়ে হত্যা করেছে জঙ্গীরা। আইএস এর দায় স্বীকার করেছে। সুতরাং আজ সকালে হিন্দু পুরোহিত শ্যামানন্দ দাসকে কুপিয়ে হত্যা এবং রাতে গুলশানের লোমহর্ষক মানুষ জিম্মি ঘটনায় প্রমানিত হলো-সরকারের সপ্তাহব্যাপী ক্র্যাকডাউনের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপি দমন, জঙ্গীবাদ দমন নয়। আমি দুষ্কৃতকারীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত শ্যামানন্দ দাসের আত্মার শান্তি কামনা ও পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। গণমাধ্যম ও সংবাদ কর্মীদের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা নিপীড়ণমূলক ব্যবস্থা জারী রেখে গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে গিয়ে দেশে অমানবিক সভ্যতা বিধ্বংসী শক্তির উত্থান ঘটেছে। দেশে বিদ্যমান বহুমাত্রিক স্বৈরতান্ত্রিকতার কারনেই আনাচে কানাচে উগ্রবাদ বাসা বেঁধেছে। আমি আবারো সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি-এই নিষ্ঠুর বিবেকবর্জিত গণতন্ত্র ও সভ্যতা বিরোধী উগ্রবাদী শক্তিকে নির্মূল করতে দলমত নির্বিশেষে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টাকে কাজে লাগাই। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এখনই এই উগ্রবাদী শক্তিকে দমন করতে না পারলে এরা দীর্ঘতম যুদ্ধ চালিয়ে দেশের জনগণের শান্তি, সুস্থিতি, নিরাপত্তা বজায় রাখা কঠিন করে তুলবে। দেশের নিরাপত্তা বাহিনীসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসসব সদস্য অটুট মনোবল ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রক্তাক্ত জিম্মি ঘটনাকে মোকাবেলা করেছেন সেজন্য আমি দেশবাসী ও আমার দলের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। গতরাতের রক্তাক্ত ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভাইয়েরা যারা নিহত হয়েছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। আমি গতরাতে গুলশানে সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী ও কুটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং তাদের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

অপর এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মানুষ জিম্মি করে রক্তপাতের নজীরবিহীন ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিকল্পধারা: সন্ত্রাসী ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান।

নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জাননোর ভাষা আমাদের নেই। তারা এই ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। নেতারা নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

গণফোরাম: সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু এক বিবৃতিতে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দেশে যে কোন জঙ্গী হামলা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

জামায়াত: দুর্বৃত্তের সশস্ত্র হামলা এবং দেশী-বিদেশী নাগরিকদের জিম্মি করে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ ধরনের বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। তিনি নিহতদের প্রতি গভীর শোক ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।

ইসলামী ঐক্যজোট: তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় হামলা দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ। যে কোন মূল্যে এ ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে দেশ ও জাতিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। আজ লালবাগস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় নেতৃবৃন্দ একথা বলেন। জোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন- মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী প্রমুখ।

খেলাফত মজলিস: র্তীর নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, গুলশানের এ ভয়াবহ হামলার ঘটনা দেশ ও দেশের জনগণের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। দেশ ও দেশের জনগণকে বিপদাপন্ন করার জন্যে পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। এ হামলার সাথে জড়িতরা ইসলাম ও মুসলমানের শত্রু। তারা নিহত ও আহতদের জন্যে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং হতাহতদের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় জাতীয় নিরাপত্তা সমুন্নত রাখতে দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।

এনডিপি: এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মর্ত্তুজা এক বিবৃতিতে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

ইসলামী ঐক্য আন্দোলন: সাংগঠনিক সম্পাদক ডা সাখাওয়াত হুসাইন এক বিবৃতিতে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

তিনি এক বার্তায় বলেন, ইসলামের নামে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলা বরদাশত করা হবে না। বাংলাদেশকে ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের অংশ এ হামলা। এ হামলায় বিশ্ব সন্ত্রাসের জনক ইসরাইলের হাত থাকতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

খেলাফতে ইসলামী বাংলাদেশ: রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় ২০ বিদেশি নাগরিকসহ দুই পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খেলাফতে ইসলামীর আমির মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী ও মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান। এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, যারা এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তারা ইসলাম, দেশ ও মানবতার চিরশত্রু। এ শত্রুদের বিরুদ্ধে আলেম-উলামাসহ দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের রুখে দাঁড়াতে হবে।

বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি: বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি (বিআইপি)’র চেয়ারম্যান এম.এ রশিদ প্রধান ও মহাসচিব মহিউদ্দীন আহমেদ এক যৌথ বিবৃতিতে গুলশানের স্প্যানিশ রেষ্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ইসলামের নাম ব্যবহার করে এমন ন্যাক্কারজনক হামলা মেনে নেওয়া যায় না। নেতারা নিহত সকলের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। একই সাথে অভিযানে সফল হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।

ছাত্র শিবিব: স্প্যানিস রেস্টুরেন্টে একদল সন্ত্রাসীর সশস্ত্র হামলা এবং উপস্থিত দেশী-বিদেশী নাগরিকদের জিম্মি করার ঘটনার নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান ও সেক্রেটারী জেনারেল ইয়াছিন আরাফাত বলেন, নি:সন্দেহে এ হামলা জাতীয় নিরাপত্তা ব্যাবস্থার জন্য অনেক বড় হুমকি।

ইউনাইেটে মুসলিম উম্মাহ: রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলা ও জিম্মি পরিস্থিতির ঘটনার র্তীর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ‘ইউনাইেটে মুসলিম উম্মাহ বাংলাদেশ’ এর চেয়ারম্যার অলি উল্লাহ বুলবুল ও সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী। এছাড়া বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম এল) সাধারণ সম্পাদক দিলিপ বড়ুয়া, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির নেতারা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর