ঢাকা ০৫:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আল্লাহু আকবর বলে হলি আর্টিজেনে প্রবেশ করে সন্ত্রাসীরা, জিম্মি ২০ বিদেশি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৭:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ জুলাই ২০১৬
  • ৩৪৪ বার

রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কে একটি রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

গুলশানের হলি আর্টিজেন বেকারিতে সন্ত্রাসীরা বিদেশিসহ কমপক্ষে ২০জন নাগরিককে জিম্মি করে রেখেছে।

রেস্টুরেন্টের ভেতর থেকেই ৮-৯ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রথমে পুলিশের ওপর গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে। হোটেলের আশপাশ এলাকা পুলিশ ঘিরে রেখেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, সন্ত্রাসীদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাবের বিশেষ ইউনিট হোটেল থেকে জিম্মিদের উদ্ধারের পরিকল্পনা করছে।

হোটেলটির আশপাশের লোকজন জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে।

এর আগে গুলশানের ৭৯ নং রোডের হলি আর্টিজেন বেকারিতে সন্ত্রাসীদের সাথে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে চার পুলিশ সদস্যসহ ৬জন আহত হন।

ঘটনাস্থলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে গলায় গুলিবিদ্ধ হন মাইক্রো বাসচালক আব্দুল রাজ্জাক। পুলিশের অপর দুই কনস্টেবলের পায়ে ও মুখে গুলি লাগে।

পুলিশের আহত সদস্যদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ঘটনাস্থলসহ পুরো গুলশান-২ এলাকার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। ওই এলাকায় সাংবাদিকদেরও ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।

শুক্রবার

রাত সোয়া ৯টার দিকে গুলশান-২ নম্বরের কাছে হলি আর্টিজান বেকারি, লেকভিউ ক্লিনিক ও নর্ডিক ক্লাবের খুব কাছে গোলাগুলি শুরু হয়।

রাত পৌনে ১০টার দিকে গুলশান থানার ডিউটি অফিসার সাইদুর রহমান জানান, রাত ৯টার পরপর একদল সন্ত্রাসী গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বরে সড়কের একটি রেস্টুরেন্টে হামলা চালায়।

খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পরে পুলিশও সন্ত্রাসীদের দিকে গুলি চালায়।

উভয় পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। তাছাড়া গুলশান এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হলি আর্টিজান বেকারি, লেকভিউ ক্লিনিক ও নর্ডিক ক্লাবের খুব কাছে গোলাগুলি শুরু হয়। অন্তত ৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ার শব্দ শোনা গেছে।

হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি হয়ে পড়াদের মধ্যে আনুমানিক ২০ জনই বিদেশি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বেকারির সুপারভাইজার সুমন রেজা।

তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, রাত পৌনে নয়টার দিকে আট থেকে ১০ জন যুবক অতর্কিতে আর্টিজানে ​ঢুকে পড়ে। তাদের একজনের হাতে ছিল তলোয়ার, বাকিদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র।

তিনি বলেন, ঢুকেই তারা কয়েকটি ফাঁকা গুলি করে এবং আল্লাহু আকবর বলে চিৎ​কার করে। তখন ভেতরে ২০ জনের মতো বিদেশি না​গরিক ছিলেন।
সুমন নিজে ও আর্টিজানের আরেকজন কর্মী (ইতালির নাগরিক) দোতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে বাইরে আসতে সক্ষম হন।

সুমন বলেন, আমি ছাদে ছিলাম। ওরা যখন বোমা মারতে ছিল, তখন বিল্ডিং কাঁপতে ছিল। ওরা ১০-১২টা বোমা মারছে। মারতেই আছে, মারতেই আছে। মনে হচ্ছিল ওরা সামনের দিকে স্টেপ নিচ্ছিল। তখন ছাদ থেকে লাফ দেই।

সুমন রেজা বলেন, ভেতরে থাকা আমাদের কর্মীরা ফোন ধরতেছে না। আমাদের স্টাফদের মধ্যেও দুজন বিদেশি। আর্জেন্টাইন কর্মীর কোনো খোঁজ নেই।

সর্বশেষ রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে ভেতর থেকে অস্ত্রধারীরা পরপর দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এবং বেশ কয়েকটি গুলি ছোড়ে।

এ সময় চারদিকে ঘিরে থাকা র‍্যাব-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দৌড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যায়।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেকারির সামনে আহত অবস্থায় পুলিশের পোশাকধারী কয়েকজনকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পৌনে ১১টায় আবার গুলির শব্দ পাওয়া যায়।

তার কিছুক্ষণ আগে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহউদ্দিনসহ আহত কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আল্লাহু আকবর বলে হলি আর্টিজেনে প্রবেশ করে সন্ত্রাসীরা, জিম্মি ২০ বিদেশি

আপডেট টাইম : ১১:৫৭:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ জুলাই ২০১৬

রাজধানীর গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কে একটি রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

গুলশানের হলি আর্টিজেন বেকারিতে সন্ত্রাসীরা বিদেশিসহ কমপক্ষে ২০জন নাগরিককে জিম্মি করে রেখেছে।

রেস্টুরেন্টের ভেতর থেকেই ৮-৯ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রথমে পুলিশের ওপর গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে। হোটেলের আশপাশ এলাকা পুলিশ ঘিরে রেখেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, সন্ত্রাসীদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে। পুলিশ ও র‌্যাবের বিশেষ ইউনিট হোটেল থেকে জিম্মিদের উদ্ধারের পরিকল্পনা করছে।

হোটেলটির আশপাশের লোকজন জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা আল্লাহু আকবর ধ্বনি দিয়ে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে।

এর আগে গুলশানের ৭৯ নং রোডের হলি আর্টিজেন বেকারিতে সন্ত্রাসীদের সাথে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে চার পুলিশ সদস্যসহ ৬জন আহত হন।

ঘটনাস্থলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে গলায় গুলিবিদ্ধ হন মাইক্রো বাসচালক আব্দুল রাজ্জাক। পুলিশের অপর দুই কনস্টেবলের পায়ে ও মুখে গুলি লাগে।

পুলিশের আহত সদস্যদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ঘটনাস্থলসহ পুরো গুলশান-২ এলাকার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। ওই এলাকায় সাংবাদিকদেরও ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।

শুক্রবার

রাত সোয়া ৯টার দিকে গুলশান-২ নম্বরের কাছে হলি আর্টিজান বেকারি, লেকভিউ ক্লিনিক ও নর্ডিক ক্লাবের খুব কাছে গোলাগুলি শুরু হয়।

রাত পৌনে ১০টার দিকে গুলশান থানার ডিউটি অফিসার সাইদুর রহমান জানান, রাত ৯টার পরপর একদল সন্ত্রাসী গুলশান-২ নম্বরের ৭৯ নম্বরে সড়কের একটি রেস্টুরেন্টে হামলা চালায়।

খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পরে পুলিশও সন্ত্রাসীদের দিকে গুলি চালায়।

উভয় পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। তাছাড়া গুলশান এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হলি আর্টিজান বেকারি, লেকভিউ ক্লিনিক ও নর্ডিক ক্লাবের খুব কাছে গোলাগুলি শুরু হয়। অন্তত ৫০ রাউন্ড গুলি ছোড়ার শব্দ শোনা গেছে।

হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি হয়ে পড়াদের মধ্যে আনুমানিক ২০ জনই বিদেশি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বেকারির সুপারভাইজার সুমন রেজা।

তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, রাত পৌনে নয়টার দিকে আট থেকে ১০ জন যুবক অতর্কিতে আর্টিজানে ​ঢুকে পড়ে। তাদের একজনের হাতে ছিল তলোয়ার, বাকিদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র।

তিনি বলেন, ঢুকেই তারা কয়েকটি ফাঁকা গুলি করে এবং আল্লাহু আকবর বলে চিৎ​কার করে। তখন ভেতরে ২০ জনের মতো বিদেশি না​গরিক ছিলেন।
সুমন নিজে ও আর্টিজানের আরেকজন কর্মী (ইতালির নাগরিক) দোতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে বাইরে আসতে সক্ষম হন।

সুমন বলেন, আমি ছাদে ছিলাম। ওরা যখন বোমা মারতে ছিল, তখন বিল্ডিং কাঁপতে ছিল। ওরা ১০-১২টা বোমা মারছে। মারতেই আছে, মারতেই আছে। মনে হচ্ছিল ওরা সামনের দিকে স্টেপ নিচ্ছিল। তখন ছাদ থেকে লাফ দেই।

সুমন রেজা বলেন, ভেতরে থাকা আমাদের কর্মীরা ফোন ধরতেছে না। আমাদের স্টাফদের মধ্যেও দুজন বিদেশি। আর্জেন্টাইন কর্মীর কোনো খোঁজ নেই।

সর্বশেষ রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে ভেতর থেকে অস্ত্রধারীরা পরপর দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এবং বেশ কয়েকটি গুলি ছোড়ে।

এ সময় চারদিকে ঘিরে থাকা র‍্যাব-পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দৌড়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে যায়।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেকারির সামনে আহত অবস্থায় পুলিশের পোশাকধারী কয়েকজনকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। পৌনে ১১টায় আবার গুলির শব্দ পাওয়া যায়।

তার কিছুক্ষণ আগে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাহউদ্দিনসহ আহত কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।