হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাকার লোভেই ঢাকার আশুলিয়ায় একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কবিরাজ সেজে ভিকটিমদের বাসায় ঢুকেছিলেন সাগর আলী ও তার স্ত্রী ইশিতা বেগম। এরা চিকিৎসার নাম করে ওই পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করার পর বাসায় লুটপাট চালান। এ সময় মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পায় তারা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে একে একে বাসার সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে গাজীপুরের শফিপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে একই কৌশলে একই পরিবারের চারজনকে খুন করা হয়। ওই ঘটনায় সাগর জড়িত ছিলেন। ওই সময় র্যাব-১২ এর সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করেন। মাত্র ২০০ টাকার জন্য সাগর ওই খুন করেছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ফোর মার্ডার মামলায় সাড়ে তিন বছর কারাগারে থাকার পর চলতি বছরের জুনে জামিনে মুক্তি পান সাগর।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার একটি বাড়ির চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে বাবুল হোসেন (৫০), শাহিদা বেগম (৪০) ও তাদের ছেলে মেহেদী হাসান জয়ের (১২) অর্ধগলিত গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। বাবুল ও শাহিদা পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তাদের ছেলে মেহেদী হাসান স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। বাবুলের গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার গরুড়া (ফুলবাড়ী)।
হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে র্যাব জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর বাবুল হোসেন সাভারের বারইপাড়া এলাকায় একটি কবিরাজি ও ভেষজ ওষুধের দোকানে গিয়ে বাকবিতণ্ডা করছিলেন। কারণ, বাবুল ও তার পরিবারের সদস্যদের শারীরিক সমস্যার কারণে ওই দোকান থেকে ইতোপূর্বে ওষুধ নিয়েছেন। কিন্তু ওই ওষুধে কাজ হয়নি। এ সময় সাগর পাশের একটি দোকানে চা খাচ্ছিলেন। সাগরের সঙ্গে কবিরাজের বাকবিতণ্ডা শুনে সাগর সেখানে যান। জানতে পারেন, চিকিৎসায় ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করেও কোনো ফল পাননি বাবুল। পরে কৌশলে বাবুলকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন সাগর। কথা বলে সাগর বুঝতে পারেন, ভেষজ চিকিৎসার ওপর আস্থা আছে বাবুলের। তখন সাগর জানান, তিনি একজন কবিরাজ। তার (সাগর) স্ত্রী তারচেয়েও ভালো কবিরাজ। তারা দুইজনে বাবুলের সমস্যার সমাধান করে দিতে পারবেন। একপর্যায়ে চিকিৎসার জন্য বাবুলের সঙ্গে সাগর ৯০ হাজার টাকার চুক্তি করেন। ওই দিন রাতেই স্ত্রীকে নিয়ে বাবুলের বাসায় যান সাগর।
র্যাব পরিচালক বলেন, মৌখিক ওই চুক্তির পর সাগর তার স্ত্রীকে বিষয়টি জানান। তারা পরিকল্পনা করেন বাবুলের বাসায় গিয়ে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার কথা বলে পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করবেন। এরপর বাসায় থাকা টাকাপয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাগর গাজীপুরের মৌচাক এলাকার একটি ফার্মাসি থেকে এক বাক্স (৫০টি) ঘুমের ওষুধ কেনে। শরবতের সঙ্গে ওই ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ভেষজ ওষুধ বলে পরিবারের সবাইকে খাইয়ে দেন সাগর ও ইশিতা। এতে তিনজনই অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর সবার হাত-পা বেঁধে ফেলে। বাসায় লুটপাট শুরু করে। কিন্তু মাত্র পাঁচ হাজার টাকা খুঁজে পায় তারা। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে তিনজনকে বটি দিয়ে কুপিয়ে খুন করেন সাগর-ইশিতা দম্পতি। খুনের পর তারা আত্মগোপনে চলে যান।
কমান্ডার মঈন বলেন, টাঙ্গাইলের মধুপুরে চার খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান সাগর। কারাগারে থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে যুক্ত এক ব্যক্তির সঙ্গে সাগরের পরিচয় হয়। ওই ব্যক্তিও খুনের মামলায় কারাগারে আছেন। সাগর কারাগারে ওই ব্যক্তির সেবা-শুশ্রূষাসহ বিভিন্ন কাজ করে দিতেন। ওই ব্যক্তি তার রাজনৈতিক এক প্রতিপক্ষকে খুনের প্রস্তাব দেন সাগরকে। এই শর্তে রাজি হওয়ার পর সাগরের জামিনে সহায়তা করেন ওই রাজনৈতিক ব্যক্তি। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর কারাগারে থাকা ওই রাজনৈতিক নেতার সহযোগীরা সাগরকে একটি অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যান। সেখানে সাগরকে তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়। পরে ওই রাজনৈতিক নেতার সহযোগীদের কাছ থেকে সাগর আরও কিছু টাকা নেন। কিন্তু শর্ত অনুযায়ী ওই প্রতিপক্ষকে খুন না করে মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান সাগর। অবৈধপথে গত জুলাই মাসে তিনি পাশের দেশে চলে যান। সেখানে ২০-২৫ দিন অবস্থান করে আগস্টে দেশে ফেরেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় তার শ্বশুরবাড়িতে (ভাড়া বাসায়) যান। এর দুই দিন পর স্ত্রীকে নিয়ে আশুলিয়ায় একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করেন।