ঢাকা ০৮:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুমিল্লায় বাড়ছে বিষমুক্ত খাদ্যের উৎপাদন চাষাবাদে ‘কেঁচো সার’ ব্যবহার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৩:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • ১৯৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুমিল্লায় ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এই সার মাটির পুষ্টিমান বৃদ্ধি ও মাটিকে সমৃদ্ধ করে এবং এটি পরিবেশবান্ধব। এতে ফসলের উৎপাদন বাড়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। ফলে এ জেলায় সুস্বাদু ও বিষমুক্ত খাদ্যের জোগানও বাড়ছে। সরকারি সহায়তা পেলে দেশের কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে এই জৈব সার। এর ফলে রাসায়নিক সারের আমদানি ও দাম কমবে।

জানা যায়, রাসায়নিক সার মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। এই সার ব্যবহার করে উৎপাদিত ফসলও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে কেঁচো সার জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে কুমিল্লায় অনেকেই এ সার তৈরি করছেন ব্যক্তি উদ্যোগে।

জেলার চান্দিনার পিহর গ্রামের সাইফুল ইসলাম। কাজ করতেন বেসরকারি একটি আইটি সেকশনে। ওই প্রতিষ্ঠানের কেঁচো সারের উদ্যোগ তার নজরে পড়ে। পরে ২০২১ সালে করোনাকালে চাকরি ছেড়ে কেঁচো সার উৎপাদনের উদ্যোগ নেন। স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় মাত্র ১০ কেজি কেঁচো ও ১৬টি রিং দিয়ে জৈব সার উৎপাদন শুরু করলেও এখন রিংয়ের সংখ্যা ২০০টি।

প্লান্ট পাওয়ার অর্গানিক ফার্টিলাইজার খামারের মালিক সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতি মাসে তিনি তার খামার থেকে ৭-৮ টন জৈব সার ও ১০০ কেজি কেঁচো বিক্রি করছেন। পাইকারি কেজিপ্রতি সার ১৫ টাকা এবং কেঁচো দুই হাজার টাকা। স্থানীয় কৃষকের চাহিদা মিটিয়ে তার এ সার চলে যাচ্ছে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলায়।

কোঁচো সার ব্যবহারকারী কৃষকরা জানান, শাকসবজি, ফলমূল ও ধানের জমিতে এ সার প্রয়োগে সুফল পাচ্ছেন তারা। এমনকি মাছের খাদ্য হিসাবেও ব্যবহার করছেন চাষিরা। কেঁচো সার ফসলি জমির মাটি নরম ও উৎপাদিত গাছ সতেজ রাখে। বিশেষ করে ধানখেতের পাতা সবুজ, মোটা ও চড়া করতে সহায়তা করে। এতে স্বাভাবিকের তুলনায় ফসলের উৎপাদনও বাড়ছে। চান্দিনা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল হোসাইন বলেন, সাইফুল ইসলামের কেঁচো সার উৎপাদনে সফলতা ও চাহিদা দেখে পিহর গ্রামেই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। এ গ্রামে প্রায় ডজনখানেক নারী ও পুরুষ ব্যক্তি উদ্যোগে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। নিজের ফসলি জমিতে ব্যবহারের পাশাপাশি বিক্রি করে হচ্ছেন স্বাবলম্বী।

কৃষিবিদরা বলছেন, জমিতে বিভিন্ন রাসায়নিক সারের ব্যবহারে প্রতি মৌসুমে ফসলের পরিমাণ বাড়লেও শক্তি নষ্ট হচ্ছে মাটির। দূষিত হচ্ছে পানি ও বায়ু। তাই ভোক্তার স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে জৈব সারের বিকল্প নেই। পরিবেশবান্ধব এ সার তৈরি হচ্ছে কেঁচো ও ছত্রাকের মাধ্যমে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক-কৃষাণির উচিত রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহার করা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, শুধু পিহর গ্রাম নয়, কেঁচো ও ছত্রাক থেকে জৈব সার উৎপাদন হচ্ছে কুমিল্লার লাকসামের গুনতী, বরুড়া ও দেবিদ্বারসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কুমিল্লায় বাড়ছে বিষমুক্ত খাদ্যের উৎপাদন চাষাবাদে ‘কেঁচো সার’ ব্যবহার

আপডেট টাইম : ১২:৫৩:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুমিল্লায় ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এই সার মাটির পুষ্টিমান বৃদ্ধি ও মাটিকে সমৃদ্ধ করে এবং এটি পরিবেশবান্ধব। এতে ফসলের উৎপাদন বাড়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। ফলে এ জেলায় সুস্বাদু ও বিষমুক্ত খাদ্যের জোগানও বাড়ছে। সরকারি সহায়তা পেলে দেশের কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে এই জৈব সার। এর ফলে রাসায়নিক সারের আমদানি ও দাম কমবে।

জানা যায়, রাসায়নিক সার মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে। এই সার ব্যবহার করে উৎপাদিত ফসলও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অন্যদিকে কেঁচো সার জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে কুমিল্লায় অনেকেই এ সার তৈরি করছেন ব্যক্তি উদ্যোগে।

জেলার চান্দিনার পিহর গ্রামের সাইফুল ইসলাম। কাজ করতেন বেসরকারি একটি আইটি সেকশনে। ওই প্রতিষ্ঠানের কেঁচো সারের উদ্যোগ তার নজরে পড়ে। পরে ২০২১ সালে করোনাকালে চাকরি ছেড়ে কেঁচো সার উৎপাদনের উদ্যোগ নেন। স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় মাত্র ১০ কেজি কেঁচো ও ১৬টি রিং দিয়ে জৈব সার উৎপাদন শুরু করলেও এখন রিংয়ের সংখ্যা ২০০টি।

প্লান্ট পাওয়ার অর্গানিক ফার্টিলাইজার খামারের মালিক সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতি মাসে তিনি তার খামার থেকে ৭-৮ টন জৈব সার ও ১০০ কেজি কেঁচো বিক্রি করছেন। পাইকারি কেজিপ্রতি সার ১৫ টাকা এবং কেঁচো দুই হাজার টাকা। স্থানীয় কৃষকের চাহিদা মিটিয়ে তার এ সার চলে যাচ্ছে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলায়।

কোঁচো সার ব্যবহারকারী কৃষকরা জানান, শাকসবজি, ফলমূল ও ধানের জমিতে এ সার প্রয়োগে সুফল পাচ্ছেন তারা। এমনকি মাছের খাদ্য হিসাবেও ব্যবহার করছেন চাষিরা। কেঁচো সার ফসলি জমির মাটি নরম ও উৎপাদিত গাছ সতেজ রাখে। বিশেষ করে ধানখেতের পাতা সবুজ, মোটা ও চড়া করতে সহায়তা করে। এতে স্বাভাবিকের তুলনায় ফসলের উৎপাদনও বাড়ছে। চান্দিনা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইকবাল হোসাইন বলেন, সাইফুল ইসলামের কেঁচো সার উৎপাদনে সফলতা ও চাহিদা দেখে পিহর গ্রামেই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। এ গ্রামে প্রায় ডজনখানেক নারী ও পুরুষ ব্যক্তি উদ্যোগে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। নিজের ফসলি জমিতে ব্যবহারের পাশাপাশি বিক্রি করে হচ্ছেন স্বাবলম্বী।

কৃষিবিদরা বলছেন, জমিতে বিভিন্ন রাসায়নিক সারের ব্যবহারে প্রতি মৌসুমে ফসলের পরিমাণ বাড়লেও শক্তি নষ্ট হচ্ছে মাটির। দূষিত হচ্ছে পানি ও বায়ু। তাই ভোক্তার স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে জৈব সারের বিকল্প নেই। পরিবেশবান্ধব এ সার তৈরি হচ্ছে কেঁচো ও ছত্রাকের মাধ্যমে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষক-কৃষাণির উচিত রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহার করা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, শুধু পিহর গ্রাম নয়, কেঁচো ও ছত্রাক থেকে জৈব সার উৎপাদন হচ্ছে কুমিল্লার লাকসামের গুনতী, বরুড়া ও দেবিদ্বারসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে।