হাওর বার্তা ডেস্কঃ বরগুনার পাথরঘাটায় বঙ্গোপসাগরের মোহনায় গড়ে তোলা হয়েছে হরিণঘাটা বনাঞ্চল। সংরক্ষিত এ বনাঞ্চল থেকে কেওড়া ফল সংগ্রহের নামে কাটা হচ্ছে গাছ।
অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের বন ও বিট কর্মকর্তাকে ‘ঘুষ’ দিয়ে কেওড়া ফল সংগ্রহের কথা বলে বনে ঢোকে অসাধু একটি চক্র। এরপর কেওড়া ফলের পাশাপাশি বনের গাছ কেটে নিচ্ছে চক্রটি। এভাবে বন উজাড় বন্ধ এবং উপকূলের বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা।
পাথরঘাটা বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৬ সালে এখানে ২০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে বনায়ন কর্মসূচির আওতায় নতুন বন সৃজন শুরু হয়। ফলে বিশেষ করে সাগরতীরের লালদিয়া চরে বনাঞ্চলের পরিধি বেড়ে চলেছে। বর্তমানে এ বন ৫ হাজার ২৬৯ একরজুড়ে বিস্তৃত। দৃষ্টিনন্দন এ বনে রয়েছে প্রাকৃতিক কেওড়া, গেওয়া, সুন্দরী আর ঝাউবন।
২০১৫ সালে বনাঞ্চলটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হয়। সুবিশাল এ বনের বৃক্ষরাজির মধ্যে কেওড়াগাছের সংখ্যাই বেশি।
সম্প্রতি হরিণঘাটা বনাঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে, গভীর বনে ১৫-২০ জনের একটি দল কেওড়া ফল সংগ্রহ করছে। তারা গাছের বড় বড় ডাল কেটে ফেলছেন।
তাদেরই একজন আবদুল হক। তিনি বলেন, সাগরে ও নদীতে মাছ শিকারের ফাঁকে ফাঁকে কেওড়া ফল সংগ্রহ ও বিক্রি করে সংসার চালাই। বনবিভাগকে ‘টাকা দিয়ে’ কেওড়া সংগ্রহের অনুমতি নিয়েছি।
তবে কত টাকায় অনুমতি পাওয়া গেছে, তা বলতে চাননি তিনি।
এসময় বেশ কিছু কেটে ফেলা গাছের গুঁড়ি সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এদিকে গাছ কাটার কথা অস্বীকার করে আবদুল হক বলেন, আমরা শুধু কেওড়া ফল পাড়ি, কারা গাছ কেটেছে জানি না।
এছাড়া বনবিভাগের কর্মীদের বিরুদ্ধে সংরক্ষিত বনের গাছ বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সাংবাদিকরা এসেছেন শুনে আগেই অফিস বন্ধ করে কোথাও চলে যান পাথরঘাটার টেংরা সাব ক্যাম্পের ইনচার্জ মনির।
স্থানীয়দের দাবি, পাথরঘাটা উপজেলার টেংরা, মাঝের চর, চর লাঠিমারা, জ্ঞানপাড়া এবং বিহঙ্গ দ্বীপের সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে প্রতিদিন শতাধিক মণ কেওড়া ফল সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে আরও দুই মাস এভাবে ফল সংগ্রহ করা হবে।
হরিণঘাটা এলাকার জেলে নুরুল বলেন, কেওড়া মৌসুম শুরুর পর থেকে কেওড়া সংগ্রহের নামে বনের গাছ কেটে পাচার করে একটি চক্র। বনবিভাগের রেঞ্জ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার বিট কর্মকর্তা প্রতি বছরই ঘুষ নিয়ে কেওড়া সংগ্রহের অনুমতি দেন। এ সুযোগে স্থানীয় অসাধু একটি চক্র গাছ কেটে বিক্রি করে।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বনবিভাগ পাথরঘাটা রেঞ্জের বন কর্মকর্তা ও হরিণঘাটা এলাকার বিট কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম।
তিনি বলেন, আমাদের লোকবল সংকটের কারণে কাঠ পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে পারছি না। সংরক্ষিত বনে কেওড়া ফল সংগ্রহের জন্য আমরা কাউকে অনুমতি দিই না, দিতে পারি না।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।