আজ (বুধবার) লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৩৮ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৯৩ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। যেখানে সর্বোচ্চ ৬৪ রান এসেছে মুশফিকের ব্যাট থেকে। তাছাড়া হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন সাকিবও। জবাবে ৩৯ ওভার ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৮ রান এসেছে ইমামের ব্যাট থেকে। বাংলাদেশের হয়ে ২৪ রানে ১ উইকেট শিকার করে সেরা বোলার শরীফুল। ৭ উইকেটের বড় হারে ফাইনালের সমীকরণ কিছুটা হলেও কঠিন করে ফেলেছে বাংলাদেশ।
১৯৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা খুব একটা ভালো করতে পারেনি পাকিস্তান। নতুন বলে দুর্দান্ত ছিলেন শরীফুল ইসলাম। নিজের প্রথম ওভারেই পেয়েছেন মেইডেন। পরের ওভারেও উইকেটের দেখা পেতে পারতেন। তার বলে স্লিপে ক্যাচ তুলেছিলেন ফখর। কিন্তু সেটি নিতে যেভাবে ঝুঁকতে হতো, তার পুরো চেষ্টা করেননি নাঈম। ফলে সুযোগ হারিয়েছে বাংলাদেশ।
জীবন পেয়েও বেশি দূর এগোতে পারেননি ফখর। দশম ওভারের প্রথম বলটি ফুল লেংথে করেছিলেন শরীফুল। ভেতরের দিকে ঢোকা সেই বলে ফ্লিকের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন এই ওপেনার। বল সরাসরি প্যাডে আঘাত হানে, সঙ্গে সঙ্গেই আঙুল তোলেন আম্পায়ার। কিন্তু ফখর রিভিউ নেন। তবে কাজে আসেনি সেটি। ফলে বোলিংয়ে প্রথম সাফল্যের দেখা পায় বাংলাদেশ।
এরপর বাংলাদেশ টানা দুইবার রিভিউ নিয়েও সফল হতে পারেনি। দুইবারই অল্পের জন্য বেঁচে যায় পাকিস্তান। বলা যায় স্বাগতিকরা কপালের জোরেই বেঁচে যায়। তবে ১৬তম ওভারে ভাগ্য দেবতা বাংলাদেশের দিকে চোখ তুলে তাকায়। তৃতীয় বলটি স্টাম্পের ওপর গুড লেংথে করেছিলেন তাসকিন। সেখানে ডিফেন্স করতে গিয়ে এডজ হয়ে বল চলে যায় বাবর আজমের স্টাম্পে। পাকিস্তান অধিনায়ক সাজঘরে ফেরেন ২২ বলে ১৭ রান করে।
২৫তম ওভারে মিরাজের শর্ট লেংথের বলে পুল করে ছক্কা মারেন ইমাম। সে শটেই ফিফটি স্পর্শ করেন এ বাঁহাতি ওপেনার, যার জন্য লেগেছে ৬১ বল। এরপর মিরাজের ওপর আরও চড়াও হন ইমাম। কিন্তু ৩৩তম ওভারে মিরাজের ড্রিফটকে পরাস্ত করতে পারেননি পাকিস্তানি ওপেনার, স্লগ সুইপ মিস করে হয়েছেন বোল্ড। ৮৪ বলে ৭৮ রান করেছেন ইমাম।
বাংলাদেশের সাফল্য বলতে এতটুকুই। বাকি গল্পটা পাকিস্তানের। ইমাম আউট হওয়ার পর আগা সালমানকে সঙ্গে নিয়ে বাকি পথটা নিরাপদেই পাড়ি দিয়েছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। পেয়েছেন ব্যাক্তিগত হাফসেঞ্চুরির দেখাও। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ৬৩ রানে।
এর আগে ইনিংসের প্রথম বলেই শাহিন আফ্রিদির দুর্দান্ত এক ইনসুইংয়ে পরাস্ত হন নাঈম শেখ। পরের পাঁচটা বলও স্বস্তিতে খেলতে পারেননি এই ব্যাটার। তাতে ওভার শেষে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন নাঈম। কিন্তু আরেক ওপেনার মিরাজ এক বলের বেশি টিকতে পারেননি। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলটি গুড লেন্থে করেছিলেন নাসিম শাহ। সেখানে লেগের দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করেন মিরাজ। কিন্তু বল চলে যায় সোজা মিড অনে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডারের হাতে। তাতে রানের খাতা খোলার আগেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
উইকেটে এসেই দারুণ এক বাউন্ডারিতে শুরু করেছিলেন লিটন দাস। পরের ওভারে নাসিমকে আরও দুই বাউন্ডারি হাঁকান। কিন্তু এমন শুরু পেয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে আফ্রিদির ব্যাকঅব লেন্থ থেকে লাফিয়ে উঠা বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৩ বলে ১৬ রান।
গোল্ডেন ডাক খেয়ে মিরাজ ফেরার পরও অন্য প্রান্তে অবিচল ছিলেন নাঈম শেখ। শুরুতে একটু শেইকি মনে হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছিলেন। খেলেছেন দারুণ কিছু শটও। কিন্তু আরও একবার ভালো শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারলেন না। হাঁটলেন মিরাজ-লিটনের পথেই। অষ্টম ওভারের তৃতীয় বলটি খাটো লেন্থে করেছিলেন রউফ, সেখানে পুল করতে গিয়ে বল সোজা ওপরে উঠে যায়, বোলার দৌড়ে এসে নিজেই তালুবন্দি করেন। সাজঘরে ফেরার আগে ২৫ বলে ২০ রান এসেছে এই ওপেনারের ব্যাট থেকে।
এশিয়া কাপের আগেও ফর্মের তুঙ্গে ছিলেন তৌহিদ হৃদয়। কিন্তু চলমান এই আসরে যেন নিজের ছায়া হয়ে আছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচে সুবিধা করতে পারেননি। এবার সুপার ফোরে এসেও ব্যর্থ তিনি। ৪৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে দল যখন ধুঁকছে তখন উইকেটে আসেন হৃদয়। এমন সময় তার কাছে প্রত্যাশিত ছিল লম্বা ইনিংস। তবে ২ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। রউফের বলে বোল্ড হয়ে উল্টো দলকে আরও বিপদে ফেলেছেন। তাতে দলীয় অর্ধশতকের আগেই টপ অর্ডারের চার ব্যাটারকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ।
টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে দলের হাল ধরেছেন সাকিব-মুশফিক। এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মিলে পঞ্চম উইকেটে একশ রানের জুটি গড়েছেন। তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফেরে টাইগার শিবিরে। তবে ২০তম ওভারে ফিরতে পারতেন সাকিব। পঞ্চম বলে নাসিমকে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছিলেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। কিন্তু সেটা রাখতে পারেননি নাসিম। ফলে ব্যক্তিগত ৩২ রানে জীবন পেয়েছেন সাকিব।
জীবন পেয়ে ৫৩ বলে তুলে নেন ব্যক্তিগত হাফ সেঞ্চুরি। কিন্তু এরপর আর বেশি দূর এগোতে পারলেন না। ৩০তম ওভারের প্রথম বলে ফাহিম আশরাফকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানার কাছে ফখর জামানের হাতে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাট থেকে এসেছে ৫৭ বলে ৫৩ রান।
সাকিবের পর হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মুশফিকও। ৩০তম ওভারের তৃতীয় বলটি লেগ স্টাম্পের ওপর করেছিলেন ফাহিম। সেটি ফাইন লেগের দিকে ঘুরিয়ে ২ রান নিয়ে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন মুশফিক। এই মাইলফলক ছুঁতে ৭১ বল খেলেছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার।
ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দিয়ে সাত নম্বরে পাঠানো হয়েছিল শামীম হোসেনকে। সেটার প্রমাণও দিলেন উইকেটে এসেই। ৩৪তম ওভারে আফ্রিদিকে ছক্কা হাঁকিয়ে ভালোই শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরের ওভারেই রীতিমতো নিজেকে বিসর্জন দিলেন এই ব্যাটার। ইফতিখারকে টেনে লেগ সাইডে মারতে গিয়ে টপ এজড হয়ে ধরা পড়েন। তাতে ২৩ বলে ১৬ রানে থামেন তিনি।
পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে সাকিব যখন সাজঘরে ফেরেন তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৪৭ রান। সেখান থেকে আর ৪৩ রান যোগ করতেই পরের ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৩৮তম ওভারে রউফের টানা দুই বলে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক ও তাসকিন আহমেদ।
শেষ ৩ রান তুলতেই লেজের সারির ৪ ব্যাটারকে হারায় বাংলাদেশ। তাতে ১৮৯ রানে ৬ উইকেট থেকে ১৯৩ রান তুলতেই অলআউট হয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের হয়ে ১৯ রানে ৪ উইকেট শিকার করে দিনের সেরা বোলার রউফ। তাছাড়া আফ্রিদির ঝুলিতে গেছে ৩ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ- ১৯৩/১০ (৩৮.৪ ওভার) (নাঈম ২০, সাকিব ৫৩, মুশফিক ৬৪; হারিস ৪/১৯, নাসিম ৩/৩৪)
পাকিস্তান- ১৯৪/৩ (৩৯.৩ ওভার) (ফখর ২০, ইমাম ৭৮, বাবর ১৭, রিজওয়ান ৬৩*; শরিফুল ১/২৪)