ঢাকা ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কী বার্তা নিয়ে ঢাকায় আসছেন কপ-২৮ প্রেসিডেন্ট

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:১০:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩
  • ১০৮ বার

কপ-২৮ সম্মেলনকে সামনে রেখে কয়েক ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরে আগামী বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) ঢাকায় আসছেন জোটটির প্রেসিডেন্ট সুলতান আহমেদ আল জাবির। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা তার এ সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘের ২৮তম জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ-২৮ আয়োজন করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমিরাতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে বাংলাদেশের সমর্থন চাইবে আমিরাত। কেননা, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সেজন্য হয়ত ঢাকা সফর করবেন কপ-২৮ প্রেসিডেন্ট।

ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, হঠাৎ করে কপ-২৮ প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের বার্তা এসেছে। তিনি খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ঢাকা সফর করবেন। হতে পারে সেটা কয়েক ঘণ্টার জন্য, বিকেলে এসে সন্ধ্যায় ঢাকা ছেড়ে যেতে পারেন তিনি।

সফরে আলোচনার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ কূটনীতিক বলেন, সফরটি দ্বিপক্ষীয় নয়। বাংলাদেশ সবসময় কপ সম্মেলনে যোগ দেয়। তিনি যেহেতু কপ-২৮ প্রেসিডেন্ট অবশ্যই জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে কথা হবে। এর বাইরে দ্বিপক্ষীয় কোনো বিষয়ে আলোচনা থাকছে কি না, সেটাও বলতে পারছি না। আসলে আমিরাত এ সফর নিয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা দেয়নি।

অন্য একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, কপ-২৮ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সশরীরে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে আমিরাত। সরকারপ্রধানকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাতে কপ-২৮ প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কপ-২৮ প্রেসিডেন্ট আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির গ্রুপ সিইও। সেক্ষেত্রে এ সফরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাবে ঢাকা।

এদিকে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) ঢাকায় নিযুক্ত আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলি আল হামুদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন। কপ-২৮ প্রেসিডেন্ট ঢাকায় এসে মন্ত্রণালয়ে যে ভেন্যুতে বক্তব্য দেবেন সেটি পরিদর্শন করে যান তিনি।

জানা গেছে, কপ-২৮ প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হতে পারে। এছাড়া তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের জুনের শুরুতে কপ-২৬ প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা ঢাকা সফর করেছিলেন। ওই সময়ে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় কপ-২৬ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে মিশরের শার্ম এল-শেখে কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলন যোগ দেননি সরকারপ্রধান।

এ বিষয়ে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও স্ট্যামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কপ-২৮ প্রেসিডেন্ট যদি বাংলাদেশ সফরে আসেন, সেটার অবশ্যই গুরুত্ব আছে।

জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সেই অর্থে দায়ী নয়। কপ-২৬ এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত ৪৮ দেশের হয়ে জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন। উনি ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলেন। কপ-২৭ এ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর জোরালো ভূমিকার অনেকটাই অর্জিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর দাবিটা কিন্তু আলোচনায় এসেছে। এতে করে কপ-২৯ এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো অর্থ পাওয়ার আশা রাখছে।

ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, দুবাই বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনে অন্যতম। ইউরোপের দেশগুলো ২০৩০ সাল নাগাদ জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত যানবাহনের ঘোষণা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বাংলাদেশ জীবাশ্ম জ্বালানির অন্যতম বাজার। ফলে এ বাজারটা কপ-প্রেসিডেন্সিতে গুরত্বপূর্ণ। কেননা, বাংলাদেশ যদি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চলে যায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবকিছু মিলিয়ে তারা বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

প্রসঙ্গত, কনফারেন্স অব দ্য পার্টিসের সংক্ষিপ্ত রূপ কপ। এটি বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিপর্যয় মোকাবিলায় জাতিসংঘের একটি উদ্যোগ। ১৯৯৫ সালে কপের প্রথম সম্মেলন হয়। ১৯৯৯ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে কপের জলবায়ু সম্মেলনে ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ ইস্যুটি প্রথমবারের মতো সামনে আসে।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। সবশেষ, গত বছরের নভেম্বরে মিশরের শার্ম এল-শেখে কপ-২৭ অনুষ্ঠিত হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কী বার্তা নিয়ে ঢাকায় আসছেন কপ-২৮ প্রেসিডেন্ট

আপডেট টাইম : ০১:১০:২৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩

কপ-২৮ সম্মেলনকে সামনে রেখে কয়েক ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরে আগামী বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) ঢাকায় আসছেন জোটটির প্রেসিডেন্ট সুলতান আহমেদ আল জাবির। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা তার এ সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকার একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘের ২৮তম জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ-২৮ আয়োজন করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমিরাতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে বাংলাদেশের সমর্থন চাইবে আমিরাত। কেননা, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সেজন্য হয়ত ঢাকা সফর করবেন কপ-২৮ প্রেসিডেন্ট।

ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, হঠাৎ করে কপ-২৮ প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের বার্তা এসেছে। তিনি খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ঢাকা সফর করবেন। হতে পারে সেটা কয়েক ঘণ্টার জন্য, বিকেলে এসে সন্ধ্যায় ঢাকা ছেড়ে যেতে পারেন তিনি।

সফরে আলোচনার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ কূটনীতিক বলেন, সফরটি দ্বিপক্ষীয় নয়। বাংলাদেশ সবসময় কপ সম্মেলনে যোগ দেয়। তিনি যেহেতু কপ-২৮ প্রেসিডেন্ট অবশ্যই জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে কথা হবে। এর বাইরে দ্বিপক্ষীয় কোনো বিষয়ে আলোচনা থাকছে কি না, সেটাও বলতে পারছি না। আসলে আমিরাত এ সফর নিয়ে স্পষ্ট কোনো বার্তা দেয়নি।

অন্য একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, কপ-২৮ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সশরীরে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে আমিরাত। সরকারপ্রধানকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাতে কপ-২৮ প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর হতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কপ-২৮ প্রেসিডেন্ট আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির গ্রুপ সিইও। সেক্ষেত্রে এ সফরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাবে ঢাকা।

এদিকে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) ঢাকায় নিযুক্ত আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলি আল হামুদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন। কপ-২৮ প্রেসিডেন্ট ঢাকায় এসে মন্ত্রণালয়ে যে ভেন্যুতে বক্তব্য দেবেন সেটি পরিদর্শন করে যান তিনি।

জানা গেছে, কপ-২৮ প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হতে পারে। এছাড়া তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের জুনের শুরুতে কপ-২৬ প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা ঢাকা সফর করেছিলেন। ওই সময়ে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় কপ-২৬ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে মিশরের শার্ম এল-শেখে কপ-২৭ জলবায়ু সম্মেলন যোগ দেননি সরকারপ্রধান।

এ বিষয়ে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও স্ট্যামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কপ-২৮ প্রেসিডেন্ট যদি বাংলাদেশ সফরে আসেন, সেটার অবশ্যই গুরুত্ব আছে।

জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সেই অর্থে দায়ী নয়। কপ-২৬ এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত ৪৮ দেশের হয়ে জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন। উনি ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর পক্ষে ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলেন। কপ-২৭ এ কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর জোরালো ভূমিকার অনেকটাই অর্জিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর দাবিটা কিন্তু আলোচনায় এসেছে। এতে করে কপ-২৯ এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো অর্থ পাওয়ার আশা রাখছে।

ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, দুবাই বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনে অন্যতম। ইউরোপের দেশগুলো ২০৩০ সাল নাগাদ জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত যানবাহনের ঘোষণা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বাংলাদেশ জীবাশ্ম জ্বালানির অন্যতম বাজার। ফলে এ বাজারটা কপ-প্রেসিডেন্সিতে গুরত্বপূর্ণ। কেননা, বাংলাদেশ যদি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে চলে যায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবকিছু মিলিয়ে তারা বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে।

প্রসঙ্গত, কনফারেন্স অব দ্য পার্টিসের সংক্ষিপ্ত রূপ কপ। এটি বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিপর্যয় মোকাবিলায় জাতিসংঘের একটি উদ্যোগ। ১৯৯৫ সালে কপের প্রথম সম্মেলন হয়। ১৯৯৯ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে কপের জলবায়ু সম্মেলনে ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ ইস্যুটি প্রথমবারের মতো সামনে আসে।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। সবশেষ, গত বছরের নভেম্বরে মিশরের শার্ম এল-শেখে কপ-২৭ অনুষ্ঠিত হয়।