ঢাকা ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসুন,পাশে আছি আমরা সুযোগ করে দেবো : প্রধানমন্ত্রী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৫:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০২৩
  • ৭৫ বার

আগামী দিনে ব্যবসায়ীদের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। সেই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সবসময় ব্যবসায়ীদের পাশে আছে।

শনিবার (১৫ জুলাই) রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ী সম্মেলন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই উপস্থিত ছিলেন। তারা শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই দাবি করে আবারও তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসায়ীদের সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা সবসময় আপনাদের সহায়তা করে যাবো। আমরা কোনো হাওয়া ভবন করিনি, খাওয়ার ব্যবস্থাও করিনি। স্বাধীনভাবে যেন ব্যবসা করতে পারেন, সে সুযোগ করে দিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন যেন বৃদ্ধি পায়, সে ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ এবং সেই ৮১ সালের বাংলাদেশ অনেক তফাৎ। অনেকেই বলেছিলেন যে, এত ব্যাংক দিয়ে কী হবে? বাংলাদেশের অর্থনীতি তো এতবড় না যে এত ব্যাংক লাগবে। আমার কথা ছিল, অর্থনীতি তো এত ছোট থাকবে না, অর্থনীতি বড় করার জন্যই তো আমাকে দিতে (ব্যাংক) হবে। কাজেই সেইভাবেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে টক শো’র নামে টক টক কথা বলা হয় অভিযোগ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এক একটা কাজ করতে গিয়ে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়। মেট্রোরেল করার সময় শুনতে হলো, ৩৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেট্রোরেল করার কী দরকার। তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করলেই তো নাকি সব সমাধান হয়ে যায়। অবশ্য ভালোই একদিকে। আমি বেসরকারি খাতে অনেক টেলিভিশন দিয়েছি, সেখানে সবাই টকশো করে আর টক টক কথা বলেন। সেই টক টক কথা শুনতে হয়। মাঝে মাঝে আমি বলি, আপনারা শুধু টক টক বলেন কেন? কথা যদি টক-ঝাল-মিষ্টি হয় তখন না সুস্বাদু হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন তো বলে দিল, এত টাকা খরচ করে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল করার কী দরকার ছিল। মানে আপনি যাই করতে যান, কিছু লোকের মানসিকতাই হচ্ছে কিছুই ভালো লাগে না। তাই কিছুই ভালো লাগে না লোকের কথা ভুলে গিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য যা করা দরকার সেটাই করতে হবে।’

এ সময় তিনি কুইক রেন্টালের বিরোধিতাকারীদেরও সমালোচনা করেন। তিনি জানান, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র না করলে তখন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেতো না। কুইক রেন্টালে ৯০ হাজার কোটি টাকা খরচ নিয়ে যারা সমালোচনা করেন তাদের উদ্দেশে বলেন, এত বছরে বিদ্যুৎ পেয়ে যে ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি করল এর দ্বারা যে কত লাভ হয়েছে সেটা তো বলেন না।

শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ না হতো এবং পানির মতো টাকা খরচ করে টিকা যদি না দিতাম, তাহলে পরিস্থিতি কী হতো? এটা কেন করলাম, সেটার পেছনে অনেকে দুরভিসন্ধি খোঁজে। এটা কিছু লোকের মানসিক দৈন্যতা। এগুলো থাকবেই। ন্যায় ও সত্যের পথে থাকলে যতই বিভ্রান্তি ছড়াক কোনো ক্ষতি করতে পারে না।

সামনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এজন্য দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনকিউবেটর সেন্টার তৈরি করে কম্পিউটার ট্রেনিং দেওয়া শুরু করেছি। তাছাড়া স্কুল লেভেল থেকে কম্পিউটার ল্যাব করে দিচ্ছি, সেখানে ট্রেনিং দিচ্ছি। পাশাপাশি ন্যানো টেকনোলজির জন্য একটি আইনও করে দিয়েছি। ন্যানো টেকনোলজির ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি। আইন ইতিমধ্যে কেবিনেট অনুমোদন দিয়েছি। দ্রুতই আইন পার্লামেন্টে পাস করে দেব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে ওঠে সে জন্য এসব পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশে সেতু নির্মাণের মাধ্যমে সেতুবন্ধন তৈরি করেছি। এটা ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে সহজ হবে। সড়ক যোগাযোগসহ সবধরনের অবকাঠামো করে দিয়েছি। অনলাইনে সব ধরনের সেবা দিচ্ছি, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

এ সময় নতুন বাজার খুঁজতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। তিনি জানান, ইউরোপ-আমেরিকায় মন্দা চলছে। সেখানে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তাছাড়া সেখানে রফতানি খরচও বেড়ে গেছে। এজন্য বিকল্প বাজার খোঁজার তাগিদ দেন তিনি।

এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ব্যবসায়ী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দেশের ব্যবসায়ী নেতা, বিভিন্ন চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনের শুরুতে এফবিসিসিআইয়ের ৫০ বছর এবং এই যাত্রায় দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের অবদানের ওপর একটি থিম সং পরিবেশিত হয়। বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩-এর ফলাফলের ওপর একটি অডিও-ভিজ্যুয়ালও প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩-এর ফলাফল সংকলন করে তৈরি করা প্রতিবেদনও উন্মোচন করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসুন,পাশে আছি আমরা সুযোগ করে দেবো : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট টাইম : ১১:১৫:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০২৩

আগামী দিনে ব্যবসায়ীদের সামনে নানা চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। সেই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার সবসময় ব্যবসায়ীদের পাশে আছে।

শনিবার (১৫ জুলাই) রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ী সম্মেলন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই উপস্থিত ছিলেন। তারা শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই দাবি করে আবারও তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।

আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসায়ীদের সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা সবসময় আপনাদের সহায়তা করে যাবো। আমরা কোনো হাওয়া ভবন করিনি, খাওয়ার ব্যবস্থাও করিনি। স্বাধীনভাবে যেন ব্যবসা করতে পারেন, সে সুযোগ করে দিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন যেন বৃদ্ধি পায়, সে ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ এবং সেই ৮১ সালের বাংলাদেশ অনেক তফাৎ। অনেকেই বলেছিলেন যে, এত ব্যাংক দিয়ে কী হবে? বাংলাদেশের অর্থনীতি তো এতবড় না যে এত ব্যাংক লাগবে। আমার কথা ছিল, অর্থনীতি তো এত ছোট থাকবে না, অর্থনীতি বড় করার জন্যই তো আমাকে দিতে (ব্যাংক) হবে। কাজেই সেইভাবেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে টক শো’র নামে টক টক কথা বলা হয় অভিযোগ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এক একটা কাজ করতে গিয়ে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়। মেট্রোরেল করার সময় শুনতে হলো, ৩৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেট্রোরেল করার কী দরকার। তিন হাজার কোটি টাকা খরচ করলেই তো নাকি সব সমাধান হয়ে যায়। অবশ্য ভালোই একদিকে। আমি বেসরকারি খাতে অনেক টেলিভিশন দিয়েছি, সেখানে সবাই টকশো করে আর টক টক কথা বলেন। সেই টক টক কথা শুনতে হয়। মাঝে মাঝে আমি বলি, আপনারা শুধু টক টক বলেন কেন? কথা যদি টক-ঝাল-মিষ্টি হয় তখন না সুস্বাদু হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন তো বলে দিল, এত টাকা খরচ করে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল করার কী দরকার ছিল। মানে আপনি যাই করতে যান, কিছু লোকের মানসিকতাই হচ্ছে কিছুই ভালো লাগে না। তাই কিছুই ভালো লাগে না লোকের কথা ভুলে গিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য যা করা দরকার সেটাই করতে হবে।’

এ সময় তিনি কুইক রেন্টালের বিরোধিতাকারীদেরও সমালোচনা করেন। তিনি জানান, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র না করলে তখন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেতো না। কুইক রেন্টালে ৯০ হাজার কোটি টাকা খরচ নিয়ে যারা সমালোচনা করেন তাদের উদ্দেশে বলেন, এত বছরে বিদ্যুৎ পেয়ে যে ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি করল এর দ্বারা যে কত লাভ হয়েছে সেটা তো বলেন না।

শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ না হতো এবং পানির মতো টাকা খরচ করে টিকা যদি না দিতাম, তাহলে পরিস্থিতি কী হতো? এটা কেন করলাম, সেটার পেছনে অনেকে দুরভিসন্ধি খোঁজে। এটা কিছু লোকের মানসিক দৈন্যতা। এগুলো থাকবেই। ন্যায় ও সত্যের পথে থাকলে যতই বিভ্রান্তি ছড়াক কোনো ক্ষতি করতে পারে না।

সামনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এজন্য দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনকিউবেটর সেন্টার তৈরি করে কম্পিউটার ট্রেনিং দেওয়া শুরু করেছি। তাছাড়া স্কুল লেভেল থেকে কম্পিউটার ল্যাব করে দিচ্ছি, সেখানে ট্রেনিং দিচ্ছি। পাশাপাশি ন্যানো টেকনোলজির জন্য একটি আইনও করে দিয়েছি। ন্যানো টেকনোলজির ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি। আইন ইতিমধ্যে কেবিনেট অনুমোদন দিয়েছি। দ্রুতই আইন পার্লামেন্টে পাস করে দেব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে ওঠে সে জন্য এসব পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশে সেতু নির্মাণের মাধ্যমে সেতুবন্ধন তৈরি করেছি। এটা ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে সহজ হবে। সড়ক যোগাযোগসহ সবধরনের অবকাঠামো করে দিয়েছি। অনলাইনে সব ধরনের সেবা দিচ্ছি, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

এ সময় নতুন বাজার খুঁজতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। তিনি জানান, ইউরোপ-আমেরিকায় মন্দা চলছে। সেখানে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তাছাড়া সেখানে রফতানি খরচও বেড়ে গেছে। এজন্য বিকল্প বাজার খোঁজার তাগিদ দেন তিনি।

এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ব্যবসায়ী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দেশের ব্যবসায়ী নেতা, বিভিন্ন চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনের শুরুতে এফবিসিসিআইয়ের ৫০ বছর এবং এই যাত্রায় দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের অবদানের ওপর একটি থিম সং পরিবেশিত হয়। বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩-এর ফলাফলের ওপর একটি অডিও-ভিজ্যুয়ালও প্রদর্শিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩-এর ফলাফল সংকলন করে তৈরি করা প্রতিবেদনও উন্মোচন করেন।