ঢাকা ০২:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেকর্ড ভাঙার দৌড়ে ডেঙ্গু, ভয়াবহ হচ্ছে পরিস্থিতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩
  • ৮৯ বার

যেন রেকর্ড ভাঙার প্রতিযোগিতায় নেমেছে ডেঙ্গু। মঙ্গলবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১ হাজার ৫৪ জন। সেই সংখ্যা বুধবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪৬ জনে। অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে রোগী বাড়ল ১৯২ জন। এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫ জন। দুদিন ধরে রোগী হাজারের ওপরে ভর্তি হচ্ছে। তাদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর ঠাঁই মিলছে না।

অপরদিকে ঢাকার বাইরে সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। তৈরি হচ্ছে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি। আক্রান্তদের কে কখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এ নিয়ে শঙ্কায় থাকেন ভুক্তভোগীরা। এই যখন বাস্তবতা, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, ডেঙ্গুর বর্তমান অবস্থাকে জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা দিতে হবে সরকারকে। তারা মনে করেন, আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বড় ধরনের অবনতির দিকে যেতে পারে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেও এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু। সরকারি হিসাবেই গেল এক সপ্তাহে (৬-১২ জুলাই) ৫ হাজার ৬৮৮ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় মারা গেছেন ২৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের মধ্যে ৬ জুলাই বৃহস্পতিবার ৬৬১ জন, শুক্রবার ১৮১ জন, শনিবার ৮২০ জন, রোববার ৮৩৬ জন, সোমবার ৮৮৯ জন, মঙ্গলবার ১ হাজার ৫৪ এবং বুধবার ১ হাজার ২৪৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৮১২ জন ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হন। এমন নাজুক পরিস্থিতিতেও এখনো অনেক হাসপাতালে আক্রান্তদের মশারি ব্যবহার নিশ্চিত করানো যাচ্ছে না।

ডেঙ্গুর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। সব হাসপাতালে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড বা কর্নার খোলা হয়নি। বিভিন্ন হাসপাতালে অন্য রোগীদের সঙ্গে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। সুস্থ হওয়ার পর রোগীর জটিলতায় পোস্ট ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া ক্লিনিকও চালু করা হয়নি। অনেক হাসপাতালের আঙিনায় নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম যুগান্তরের কাছে দাবি করেন, ডেঙ্গুর যে কোনো পরিস্থিতি রোধে অধিদপ্তরের সক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে কী অবস্থা হবে নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। প্রাদুর্ভাব বাড়লে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র আছে। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ আছে। রোগী বাড়তে থাকলে হাসপাতালে শয্যা বাড়ানো হবে। জেলা হাসপাতালগুলোতে রোগীদের সেবার ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকায় প্রকোপ বেশি হওয়ায় দক্ষিণ সিটির মহানগর জেনারেল হাসপাতাল ও উত্তর সিটির ডিএনসিসি হাসপাতাল, গাবতলীর লালকুঠি হাসপাতালকে ডেঙ্গুর জন্য প্রস্তুত করা হবে।

রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গু ভাইরাসের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। সেই সঙ্গে এবার এডিস মশার চরিত্র বদলাচ্ছে। আগে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা শুধু দিনে কামড়াত। এখন রাতেও কামড়াচ্ছে। এমনকি অন্যান্য মশাও এডিসের জীবাণু বহন করছে। পরিষ্কার ও ময়লা উভয় পানিতে এডিসের লার্ভা জন্ম নিচ্ছে। দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্তদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা বেশি দেখা দিচ্ছে। তাই পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই এসব মোকাবিলা করতে হবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও রোগতত্ত্ববিদ ডা. মুশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ডেঙ্গু সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এখন সরকারকে জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করতে হবে। এটি মোকাবিলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সব দপ্তরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যেসব ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই সেখানে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য অস্থায়ী কেন্দ্র করতে হবে। কেউ পজিটিভ হলেই তাকে মশারির ভেতর রাখতে হবে। বয়স্ক, গর্ভবতী ও শিশু ডেঙ্গু পজিটিভ হলে বেশি ঝুঁকি থাকে। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দুটি হাসপাতাল ব্যবহার করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, মশা নিধনে মাঠ পর্যায়ে থেকে শুরু করে প্রত্যেক অলিগলিতে প্রচুর সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দিতে হবে। তাদের কীটতত্ত্ববিদ দিয়ে অন্তত দুদিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে জরুরি ভিতিত্তে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আক্রান্তদের মশারির মধ্যে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। টানা পাঁচ বছর এই কার্যক্রম চালাতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে মশা বাড়ায় এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে কলকাতা সফল হয়েছে। ফলে পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।

৫০ টাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা: এদিকে আগামী এক মাস সব সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো যাবে। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক বিশেষ সতর্ক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।

ডেঙ্গুর ২৪ ঘণ্টার চিত্র: গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে নতুন ১ হাজার ২৪৬ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা চলতি বছরে একদিনে হাসপাতালে সর্বোচ্চ ভর্তির রেকর্ড। এ সময়ে মারা গেছেন পাঁচ ডেঙ্গু রোগী। এর আগে মঙ্গলবার একদিনে ডেঙ্গু জ্বরে ১ হাজার ৫৪ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ সময়ে রেকর্ড সাত জন মারা যান। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১ হাজার ২৪৬ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন ভর্তি রোগীর ৭০৯ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৩৭ জন ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে সারা দেশে সর্বমোট ৩ হাজার ৭৯১ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৫৩০ জন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে ১ হাজার ২৬১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ১৬ হাজার ১৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ঢাকায় ১১ হাজার একজন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে ৫ হাজার ১৪২ জন। একই সময়ে দেশে সর্বমোট ছাড়া পেয়েছেন ১২ হাজার ২৬৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ছাড়প্রাপ্ত আট হাজার ৪০২ জন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে তিন হাজার ৮৬২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনসহ এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

রেকর্ড ভাঙার দৌড়ে ডেঙ্গু, ভয়াবহ হচ্ছে পরিস্থিতি

আপডেট টাইম : ০১:০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০২৩

যেন রেকর্ড ভাঙার প্রতিযোগিতায় নেমেছে ডেঙ্গু। মঙ্গলবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১ হাজার ৫৪ জন। সেই সংখ্যা বুধবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪৬ জনে। অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে রোগী বাড়ল ১৯২ জন। এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫ জন। দুদিন ধরে রোগী হাজারের ওপরে ভর্তি হচ্ছে। তাদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর ঠাঁই মিলছে না।

অপরদিকে ঢাকার বাইরে সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। তৈরি হচ্ছে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি। আক্রান্তদের কে কখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এ নিয়ে শঙ্কায় থাকেন ভুক্তভোগীরা। এই যখন বাস্তবতা, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেছেন, ডেঙ্গুর বর্তমান অবস্থাকে জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা দিতে হবে সরকারকে। তারা মনে করেন, আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বড় ধরনের অবনতির দিকে যেতে পারে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেও এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু। সরকারি হিসাবেই গেল এক সপ্তাহে (৬-১২ জুলাই) ৫ হাজার ৬৮৮ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় মারা গেছেন ২৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের মধ্যে ৬ জুলাই বৃহস্পতিবার ৬৬১ জন, শুক্রবার ১৮১ জন, শনিবার ৮২০ জন, রোববার ৮৩৬ জন, সোমবার ৮৮৯ জন, মঙ্গলবার ১ হাজার ৫৪ এবং বুধবার ১ হাজার ২৪৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৮১২ জন ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হন। এমন নাজুক পরিস্থিতিতেও এখনো অনেক হাসপাতালে আক্রান্তদের মশারি ব্যবহার নিশ্চিত করানো যাচ্ছে না।

ডেঙ্গুর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। সব হাসপাতালে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড বা কর্নার খোলা হয়নি। বিভিন্ন হাসপাতালে অন্য রোগীদের সঙ্গে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। সুস্থ হওয়ার পর রোগীর জটিলতায় পোস্ট ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া ক্লিনিকও চালু করা হয়নি। অনেক হাসপাতালের আঙিনায় নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম যুগান্তরের কাছে দাবি করেন, ডেঙ্গুর যে কোনো পরিস্থিতি রোধে অধিদপ্তরের সক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে কী অবস্থা হবে নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। প্রাদুর্ভাব বাড়লে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র আছে। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ আছে। রোগী বাড়তে থাকলে হাসপাতালে শয্যা বাড়ানো হবে। জেলা হাসপাতালগুলোতে রোগীদের সেবার ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকায় প্রকোপ বেশি হওয়ায় দক্ষিণ সিটির মহানগর জেনারেল হাসপাতাল ও উত্তর সিটির ডিএনসিসি হাসপাতাল, গাবতলীর লালকুঠি হাসপাতালকে ডেঙ্গুর জন্য প্রস্তুত করা হবে।

রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গু ভাইরাসের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। সেই সঙ্গে এবার এডিস মশার চরিত্র বদলাচ্ছে। আগে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা শুধু দিনে কামড়াত। এখন রাতেও কামড়াচ্ছে। এমনকি অন্যান্য মশাও এডিসের জীবাণু বহন করছে। পরিষ্কার ও ময়লা উভয় পানিতে এডিসের লার্ভা জন্ম নিচ্ছে। দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্তদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা বেশি দেখা দিচ্ছে। তাই পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই এসব মোকাবিলা করতে হবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও রোগতত্ত্ববিদ ডা. মুশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ডেঙ্গু সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এখন সরকারকে জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করতে হবে। এটি মোকাবিলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সব দপ্তরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যেসব ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই সেখানে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য অস্থায়ী কেন্দ্র করতে হবে। কেউ পজিটিভ হলেই তাকে মশারির ভেতর রাখতে হবে। বয়স্ক, গর্ভবতী ও শিশু ডেঙ্গু পজিটিভ হলে বেশি ঝুঁকি থাকে। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দুটি হাসপাতাল ব্যবহার করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, মশা নিধনে মাঠ পর্যায়ে থেকে শুরু করে প্রত্যেক অলিগলিতে প্রচুর সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দিতে হবে। তাদের কীটতত্ত্ববিদ দিয়ে অন্তত দুদিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে জরুরি ভিতিত্তে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আক্রান্তদের মশারির মধ্যে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। টানা পাঁচ বছর এই কার্যক্রম চালাতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে মশা বাড়ায় এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে কলকাতা সফল হয়েছে। ফলে পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।

৫০ টাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা: এদিকে আগামী এক মাস সব সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকায় ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো যাবে। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক বিশেষ সতর্ক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।

ডেঙ্গুর ২৪ ঘণ্টার চিত্র: গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে নতুন ১ হাজার ২৪৬ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা চলতি বছরে একদিনে হাসপাতালে সর্বোচ্চ ভর্তির রেকর্ড। এ সময়ে মারা গেছেন পাঁচ ডেঙ্গু রোগী। এর আগে মঙ্গলবার একদিনে ডেঙ্গু জ্বরে ১ হাজার ৫৪ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ সময়ে রেকর্ড সাত জন মারা যান। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১ হাজার ২৪৬ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন ভর্তি রোগীর ৭০৯ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৩৭ জন ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে সারা দেশে সর্বমোট ৩ হাজার ৭৯১ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ৫৩০ জন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে ১ হাজার ২৬১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ১৬ হাজার ১৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ঢাকায় ১১ হাজার একজন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে ৫ হাজার ১৪২ জন। একই সময়ে দেশে সর্বমোট ছাড়া পেয়েছেন ১২ হাজার ২৬৪ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ছাড়প্রাপ্ত আট হাজার ৪০২ জন এবং ঢাকার বাইরে সারা দেশে তিন হাজার ৮৬২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনসহ এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।